৬০ বর্ষ ১৮ সংখ্যা / ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ / ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
প্রসঙ্গঃ সাবঅলটার্ন এবং নগরায়ণ
অশোক ভট্টাচার্য
আমার এই নিবন্ধের বিষয়টি ‘সাবঅলটার্ন’ - সহজ বাংলায় যাকে বলা হয়ে থাকে ‘নিম্নবর্গীয়’ - তা নিয়ে। তার সাথে যুক্ত করেছি নগরায়ণকে। আন্তোনিও গ্রামসিই এই সাবঅলটার্ন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। যদিও গ্রামসি ‘সাবঅলটার্ন’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন ‘সর্বহারা’ শব্দটির বিকল্পে সরকারি সেন্সরশিপকে এড়িয়ে তাঁর ‘প্রিজনস্ নোট’ যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে। অন্যদিকে তিনি কিন্তু সাবঅলটার্ন আর প্রলেতারিয়েতের মধ্যে ভিন্নতর অর্থেও ব্যবহার করেছিলেন - শুধুমাত্র প্রতিশব্দ অর্থে নয়। তিনি ছ’টি খণ্ডে তাঁর সমস্ত কারাগারের নোট হিসাবে প্রায় ৩,০০০ পৃষ্ঠার ৩২টি খাতা জেলের বাইরে পাঠিয়েছিলেন। তা পাঠিয়েছিলেন তাঁর বোনের কাছে। ১৯৩৭ সালে অসুস্থ অবস্থায় কারাগারের থেকে বের হবার ৭ দিনের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। ১৯৪৮ সালে প্রিজন্স্ নোট বুক প্রথম বই আকারে ইতালীয় ভাষায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালের আগে পর্যন্ত তাঁর লেখাগুলিকে বলা হয় প্রি-প্রিজন্স্ নোট।
গ্রামসি ছিলেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একজন আপসহীন যোদ্ধা। ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। ইতালির ফ্যাসিস্ট কর্ণধার মুসোলিনির বিরুদ্ধে সে দেশের মানুষকে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছিলেন, ‘হেজেমনি’ বা আধিপত্যবাদের কথা। তাঁর প্রশ্ন ছিল ইতালির ফ্যাসিবাদীরা কেন ক্ষমতায় আসতে পারল আর কেনই বা তা টিকিয়ে রাখতে পারল? এক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদীদের পক্ষে সবচেয়ে বড়ো ঢাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজ। মুসোলিনি এটা সম্ভব করতে পেরেছিলেন একদল বুদ্ধিজীবীকে তাঁর স্তাবকে পরিণত করে। এছাড়া মুসোলিনি সমগ্র ইতালিতে এক সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ঘটিয়েছিলেন - গ্রামসি একেই শাসকশ্রেণির ‘হেজেমনি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। গ্রামসি বলেছিলেন শাসকশ্রেণির হেজেমনির প্রাচীর ভাঙতে হবে। চেতনার জগৎকে আঘাত করে ফ্যাসিবাদের পালটা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। লড়াইটা চেতনার স্তরে আনতে হবে। এই লড়াইতে প্রাথমিকভাবে মুসোলিনি পরে হিটলাররা জয়লাভ করেছিল বলেই ফ্যাসিবাদ বা নাৎসিবাদ কায়েম করতে পেরেছিল। নাগরিক সমাজ, নাটক, চলচ্চিত্র সহ জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক মাধ্যমগুলোতে নিজেদের সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ ঘটানোর মধ্য দিয়েই এটা ঘটানো হয়েছিল। গ্রামসি নিবিড়ভাবে সাংস্কৃতিক চর্চাও করতেন। তাঁর লেখা সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ বা কালচারাল হেজেমনি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তরুণ বয়সে তাঁর প্রথম প্রকাশিত নিবন্ধটি ছিল সেই সময়ে ইতালির একটি নাটকের রিভিউ বা পর্যালোচনা। গ্রামসি ইতালির বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে গেছেন। একদল বুদ্ধিজীবীকে বলেছেন অর্গানিক বুদ্ধিজীবী, অন্যদলকে বলেছিলেন ট্রাডিশনাল। প্রথম দল নীতি ও আদর্শের ওপর অবিচল থাকেন, সহজেই তাঁদের নীতি ও আদর্শ শাসকদলের কাছে বিক্রি করেন না। অন্যদল বুদ্ধিজীবী থাকেন শাসকশ্রেণির পক্ষে। তারা ঘনঘন নীতি পরিবর্তন করেন। শাসকশ্রেণির নির্দেশে বা তাদের পছন্দ মতো গল্প, সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র তৈরি করে থাকেন। তারা থাকেন শাসকশ্রেণির হেজেমনি বা আধিপত্যের অধীনে।
ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর শিল্পায়ন ও নগরায়ন এবং সাবঅলটার্ন
এ প্রসঙ্গেই ‘সাবঅলটার্ন’ বা ‘নিম্নবর্গীয়’ প্রশ্নে আসা যেতে পারে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ বা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে শিল্পায়নের মধ্যে দিয়েই ইয়োরোপের বহু দেশে নতুন এক শ্রেণির উদ্ভব হয় তা হলো শ্রমিকশ্রেণি বা সর্বহারা শ্রেণির। কিন্তু ইতালির মতো ইয়োরোপের কিছু দেশে সর্বত্র তা সমভাবে বিকশিত হয়নি। সেই সময়কালে শিল্পায়নকে ভিত্তি করেই নগরায়ণের সৃষ্টি হয়েছিল। মার্কস এবং এঙ্গেলস কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে শিল্প পুঁজির বিকাশকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কারণ তার মধ্য দিয়ে সংগঠিত সর্বহারা শ্রেণির আবির্ভাব হয়েছিল পুঁজিবাদের গর্ভ থেকেই। একই সাথে ইয়োরোপের গ্রামীণ জীবনের পরিবর্তে নগরায়ণ আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। যে নগরায়ণকে মার্কস এবং এঙ্গেলস গ্রামীণ নির্বুদ্ধিতার অবসান ‘End of Rural Idiocy’ এবং আলোকায়ন বা ‘Enlightenment’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ইয়োরোপের ইতালি ছিল এমন একটি দেশ - যে দেশে শিল্পায়ন এবং নগরায়ণও সুষমভাবে বিকশিত হয়নি। গ্রামসি এই শিল্পায়ন এবং নগরায়ণে ইতালির পিছিয়ে পড়া দক্ষিণাংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে সংগঠিত উৎপাদনভিত্তিক শিল্প শ্রমিকদের থেকে আর্থিকভাবে দুর্বল গরিব মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি। ইতালিকে তখন বলা হতো পাশ্চাত্যের ভারত। গ্রামসি এই সকল আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদেরই বলতে চেয়েছেন ‘সাবঅলটার্ন’। যদিও সাবঅলটার্ন ইংরেজি শব্দটি সামরিক বাহিনীতে নিম্ন বা অধস্তন কর্মী বলে বলা হয়ে থাকে। সেই সময়েতে শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও উন্নয়ন কেন্দ্রীভূত ছিল মূলত ইয়োরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলিকে কেন্দ্র করে। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার অসংখ্য দেশ উপনিবেশ হিসেবে নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত ছিল। পরবর্তীতে দেখা গেছে মার্কস শিল্পোন্নত দেশে বিপ্লবের অধিক সম্ভাবনার কথা বললেও - লেনিনের নেতৃত্বে সেই বিপ্লব সোভিয়েত রাশিয়ায় সম্পন্ন হয় সর্বপ্রথম। যা একটি শিল্পোন্নত দেশ ছিল না। পরবর্তীকালে চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা সহ এশিয়াতে, লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যেখানে সমাজ পরিবর্তন বা বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল - সেখানে বিপ্লব সংগঠিত করতে শ্রমিকদের তুলনায় বেশি ভূমিকা ছিল কৃষক ও নিপীড়িত জনসাধারণের। গ্রামসি বোঝাতে চেয়েছেন ইতালিতে শাসকবর্গ যে ইতিহাস লিখে গেছেন তারা রাজা, বাদশা বা উচ্চবর্গীয় বা ‘এলিট’ প্রকৃতির। সেই ঐতিহাসিকরা এলিটদের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে গেছেন। গ্রামসি বলতে চেয়েছেন এলিটরা জেনে বুঝেই এই সমস্ত সাবঅলটার্ন বা নিম্নবর্গীয় মানুষদের জীবনের কথা - তাদের লড়াই আন্দোলনের কথা লিপিবদ্ধ করেননি। এদের ইতিহাস না লেখাটা উচ্চবর্গীয়দের ইচ্ছাকৃত এবং এভাবে তা অলিখিতই রয়ে যায়। এই সাবঅলটার্ন বা নিম্নবর্গীয়দের না বলা এবং না লেখা ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার কাজকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তিনিই প্রথম নিম্নবর্গীয়দের অলিখিত এবং উপেক্ষিত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার কাজ শুরু করেছিলেন তাঁর প্রি-প্রিজন্স্ নোট বুকে।
ভারতে সাবঅলটার্ন ও ইতিহাস চর্চা
ভারতে রণজিৎ গুহ, গায়ত্রী চক্রবর্তী (স্পিভাক), দীপেশ চক্রবর্তী, পার্থ চ্যাটার্জি প্রমুখ বহু আলোচনা বা গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, সাবঅলটার্নরা কোনো একটি বিশেষ শ্রেণি বা রাষ্ট্র নয়, এরা একটি সামাজিক গ্রুপ বা গোষ্ঠী। এরা মূলত উত্তর ঔপনিবেশিক তথা তৃতীয় বিশ্বের দেশের অধিবাসী। গায়ত্রী চক্রবর্তী (স্পিভাক), যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। সেখানেই তিনি গবেষণা করে পিএইচডি প্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত। তিনি দেখিয়েছেন সাবঅলটার্ন বা নিম্নবর্গীয়রা সাধারণভাবে রয়েছেন সামাজিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক দিক দিয়ে মূল ধারার কিছুটা বাইরে। গায়ত্রী নিজেকে মার্কসবাদে বিশ্বাসী ফেমিনিস্ট বা নারীবাদী বলে মনে করেন। তাঁর কথায় সাবঅলটার্নরা মহিলা, কৃষ্ণাঙ্গ, আদিবাসী, দলিত, শ্রমজীবী মানুষ, কৃষক, তফশিলি, সামাজিকভাবে বঞ্চিত যে কোনো মানুষ হতে পারেন। সমাজে তাদের কথা বলার অধিকার বা তাদের কথা যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতাও সীমাবদ্ধ। দেশে বা সমাজে এদের অবদান অলিখিতই থেকে যাচ্ছে। এদের নিয়েই গায়ত্রী চক্রবর্তীর গবেষণাপত্র ‘ক্যান দ্য সাবঅলটার্ন স্পিক? (Can the subaltern speak?), কী নিজেদের কথা বলতে পারে? সাবঅলটার্নরা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে থাকে এলিট বা উচ্চবর্গীয়দের আধিপত্য বা হেজেমনির অধীনে। এরা তাদের কথা প্রকাশ করতে বা প্রকাশ করার সুযোগও সেভাবে পায় না। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, শহরগুলির উন্নয়ন বা পরিষেবা প্রদান বিষয়ে ওয়ার্ড বা নাগরিক কমিটিতে অংশগ্রহণ বা মতামত প্রদানে তাদের ভূমিকা গুরুত্বহীন থাকে। আইন বা বিধি অনুযায়ী ওয়ার্ড কমিটি বা নাগরিক কমিটিতে গরিব শহরবাসী, মহিলা, বস্তিবাসীদের প্রতিনিধিদের থাকার কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের বাদ দিয়েই এই সমস্ত কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। ওয়ার্ড বা নাগরিক কমিটিগুলি পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে শহরের এলিটদের দ্বারা। শহরের উন্নয়নে অগ্রাধিকার বা গুরুত্ব পেয়ে থাকে এলিটদের মতামত। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শহরের সৌন্দর্যায়ন করা বা যানযট মুক্ত করার নামে এলিট নাগরিক সমাজের চাপে বস্তি বা হকার উচ্ছেদ করা হয়।
বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যেও দলিত, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া সদস্যদের কণ্ঠ থাকে ক্ষীণ। ফলে বহু ক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করছে পরিচিতি ভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন। এই সমস্ত নিম্নবর্গীয় মানুষদের বলা হয়ে থাকে তারা তাদের নিজেদের জীবনের সমস্যার কথা নাকি বলতে পারে না। তাই দরকার এলিটদের মাধ্যমে সমস্যাগুলি যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়া!
এই সমস্ত গবেষকের মতে আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যত বড়ো বড়ো নেতৃত্বকে আমরা জানি, তাঁরা সবাই একটি বিশেষ শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেন, মধ্যবিত্ত বা এলিট শ্রেণির। ইতিহাসে এদের কথা যেভাবে লেখা হয়ে থাকে, অজস্র নিম্নবর্গীয় বা সাবঅলটার্ন মানুষদের অবদান বা ভূমিকার কথা অলিখিতই রয়ে যাচ্ছে। নিম্নস্তর থেকে ইতিহাস না লিখলে সেই ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হবে না, তা থেকে যাবে অসম্পূর্ণ। এই সমস্ত গবেষক এরকম মতই প্রকাশ করে থাকেন।
আমি আগেই বলেছি নিম্নবর্গীয় মানুষরা মূলত উন্নয়নশীল বা দক্ষিণ গোলার্ধের অধিবাসী। বড়ো বড়ো শহরে বা মেট্রো শহরে ধনী বা গরিব বস্তিবাসীরা ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পাশাপাশি বসবাস করলেও, তাদের জীবনযাত্রার মধ্যে থাকে বিস্তর পার্থক্য। অন্যদিকে ভারতের মতো দেশে ৯০ শতাংশ শহরই ক্ষুদ্র ও সেন্সাস টাউন। ভারতে ৪০ শতাংশ শহরের মানুষ এই সমস্ত ক্ষুদ্র শহরে বসবাস করেন। এক তৃতীয়াংশ মানুষ বস্তিবাসী বা গরিব শহরবাসী। শহর বা নগর উন্নয়নে তাদের কথা অগ্রাধিকারে থাকে না।
এইসব নিয়েই আবার কিছু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবং একবিংশ শতাব্দীর নগরায়ণের গতি-প্রকৃতির ভিত্তিতে আমাদের দেশে নিম্নবর্গীয় বা সাবঅলটার্ন নগরায়ণ নিয়ে এই লেখকের কিছু ব্যক্তিগত উপলব্ধি এই নিবন্ধে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে আলোচনার জন্যে উপস্থাপিত করার এক প্রয়াতস নেওয়া হয়েছে। এই লেখক চায় বিষয়টি নিয়ে আরও চর্চা হোক, হোক অধ্যয়ন।
ভারত হচ্ছে এ রকম একটি দেশ যেখানে অজস্র নিপীড়িত, অত্যাচারিত, বঞ্চিত মানুষের বসবাস। আমাদের দেশে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি মানুষ এই ধরনের বঞ্চনার শিকার। এরা নিম্নবর্গীয় বা সাবঅলটার্ন। ভারতে বা এশিয়া মহাদেশে প্রথম সাবঅলটার্ন স্টাডিজ বা অধ্যয়ন করেছিলেন রণজিৎ গুহ। তিনি ছিলেন মার্কসবাদী দর্শনে বিশ্বাসী একজন বামপন্থী। দীর্ঘদিন ম্যাঞ্চেস্টার ও সাসেক্স বিশ্ববিদ্যলয়ে অধ্যাপনা করেছেন এবং সাবঅলটার্ন স্টাডি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। তিনিই প্রথম উদ্যোগ নেন ভারত সহ এশিয়ার উপনিবেশ-পরবর্তী দেশসমূহে সাবঅলটার্নদের বিশেষ করে কৃষকদের ইতিহাস তুলে ধরার। তিনি দেখিয়েছেন এই সাবঅলটার্নরা এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকায় অনেক বেশি সংখ্যায় বসবাস করে। ভারতে আরও যাঁরা সাবঅলটার্ন স্টাডি করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম দীপেশ চক্রবর্তী। তিনি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন শুধু এদের ইতিহাস লিখলেই চলবে না, সমাজে তাদের অবদান, তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, খাদ্যাভ্যাস - এই সমস্ত বিষয়গুলিকে সামনে আনতে হবে। ইতিহাস লিখতে হবে নিচুতলা থেকে - উঁচুতলা থেকে নয়। লিখতে হবে তাঁদের নতুন ইতিহাস - আর্থিক ইতিহাস, সামাজিক ইতিহাস।
(শেষাংশ আগামী সংখ্যায়)