E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৮ সংখ্যা / ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ / ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

ভোটযুদ্ধ - কিছু কথা

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


হালে দেশে গোটাকয়েক ভোট হয়ে গেল। যার কোনোটা নজর কেড়েছে, কোনোটা কাড়েনি। কোনোটা নিয়ে মিডিয়া উচ্ছ্বসিত, আবার কোনোটা নিয়ে নয়। কোনোটার ফলাফল নিয়ে নাকি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও সাড়া পড়ে গেছে। আবার কোনোটায় ‘তেনাদের’ কৃপাদৃষ্টি তেমন পড়েনি। ফলে ফলাফল যাই হোক না কেন, তা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পাঁচ রাজ্যের গোটাকয়েক বিধানসভা এবং একটি লোকসভা আসনের উপনির্বাচন, দিল্লির পুর নির্বাচন এবং হিমাচল প্রদেশ ও গুজরাটের বিধানসভা ভোট কয়েকটা বিষয় খুবই স্পষ্ট করে দিয়েছে। যা নিয়ে কিছু বলার আগে ভোটের ফলাফলগুলো একবার দেখে নেওয়া দরকার। কারণ তথাকথিত ‘গেরুয়া ঝড়’-এর নিরিখে এই ফলাফল অবশ্যই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

দিল্লি পুরসভা, গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা ভোটের পাশাপাশি ভোট হয়েছিল ছত্তিশগড়ের ভানুপ্রতাপপুর, ওডিশার পদমপুর, রাজস্থানের সর্দারশহর, বিহারের কুরহানি, উত্তরপ্রদেশের খাটৌলি ও রামপুর কেন্দ্রে। এগুলো সবই বিধানসভা কেন্দ্র। এর সঙ্গে ছিল উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরী লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। যে আসন শূন্য হয়েছিল সমাজবাদী পার্টির মূলায়ম সিং যাদবের মৃত্যুতে। যদিও মোট আসনের হিসেবে বিচার করা হয় তাহলে ভোট হয়েছিল দিল্লি পুরসভার ২৫০ আসন, হিমাচল প্রদেশের ৬৮ আসন, গুজরাটের ১৮২ আসন, পাঁচ রাজ্যের ৬ বিধানসভা আসন এবং উত্তরপ্রদেশের একটি লোকসভা আসন। অর্থাৎ ভোট হয়েছিল মোট ৫০৭ আসনে। এবার দেখা যাক ফলাফল কী হল।

দিল্লি পুরসভা নির্বাচন

গত ৪ ডিসেম্বর দিল্লি পুরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অফ দিল্লি বা এমসিডি-র ভোট গণনা হয় ৭ ডিসেম্বর। ২৫০ আসন বিশিষ্ট এমসিডি-র শেষ নির্বাচনে উত্তর দিল্লি, দক্ষিণ দিল্লি এবং পূর্ব দিল্লির মোট ২৭২ আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১৮১ আসন। আম আদমি পার্টির দখলে ছিল ৪৯ আসন এবং কংগ্রেসের দখলে ছিল ৩১ আসন। ২০১২ সালের নির্বাচনে বিজেপি পায় ১৩৮ আসন, কংগ্রেস ৭৭ এবং বিএসপি ১৫ আসন। তখনও অবশ্য আম আদমি পার্টির জন্ম হয়নি বা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল নির্বাচনী ময়দানে আসেনি। আপ জন্ম নেয় ২০১২ সালের নভেম্বরে। এরও আগে ২০০৭ সালের নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ১৬৪ আসন। কংগ্রেস পায় ৬৭ আসন। বিএসপি পায় ১৭ আসন। যেবার প্রথম কংগ্রেসের হাত থেকে দিল্লি পুরসভা ছিনিয়ে নেয় বিজেপি।

একটানা ১৫ বছর দিল্লি পুরসভা দখলে রাখার পর এবারই প্রথম বিজেপি'র দলীয় ‘আচ্ছে দিন’-এ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে বিজেপি। অবশ্য শুধু ক্ষমতাচ্যুত হওয়াই নয়। বিজেপি’র ভোট শতাংশের হার কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। যদিও মিডিয়ার আলোচনায় বারবার ভোটের হার তুলে ধরা হয়েছে গত বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে। যেখানে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে বিজেপি'র ভোটের হার খুব একটা কমেনি। বরং ভোটের হারে ধস নেমেছে আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেসের। কিন্তু বিষয়টা কি সত্যিই তাই? আমরা বরং একবার দেখে নিতে পারে এমসিডি’র শেষ ভোটে কোন রাজনৈতিক দল কত শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

২০১৭ সালে ১৮১ আসন জেতা বিজেপি মোট ভোট পেয়েছিল ২৫,৭৫,১১৬ এবং ভোটের হার ছিল ৩৬.০৮ শতাংশ। আপ পায় ১৮,৭১,৯৬৪ ভোট এবং ভোটের হার ২৬.২৩ শতাংশ। কংগ্রেস পেয়েছিল ১৫,০৪,৯৬৪ ভোট এবং ভোটের হার ২১.০৯ শতাংশ। ২০২২-এর ভোটে ১৫ বছর পর ক্ষমতাচ্যুত বিজেপি। এবারের নির্বাচনে আম আদমি পার্টি বা আপ পেয়েছে ৩০,৮৪,৯৫৭ ভোট এবং ভোটের হার ৪২.০৫ শতাংশ। বিজেপি পেয়েছে ২৮,৬৭,৪৭২ ভোট এবং ভোটের হার ৩৯.০৯ শতাংশ। কংগ্রেস পেয়েছে ৮,৫৬,৫৯৩ ভোট এবং ভোটের হার ৯.৪১ শতাংশ। অর্থাৎ সরল হিসেবে আপের ভোট বেড়েছে ১৫.৮২ শতাংশ এবং বিজেপির ভোট বেড়েছে ৩.০১ শতাংশ। অন্যদিকে কংগ্রেসের ভোট কমেছে ৯.৪১ শতাংশ। বিজেপি’র ভরা বাজারে তথাকথিত বিজেপি বিরোধী এক দলের ১৫.৮২ শতাংশ বা প্রায় ১৬ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি নিশ্চয়ই রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ এবং অবশ্যই আরও তাৎপর্যপূর্ণ দিল্লির বুকে কংগ্রেসের ভোটের হার প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ কমে যাওয়া।

হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন

মিডিয়ার প্রচার এবং বিজেপি’র আইটি সেলের প্রচার অনুযায়ী দেশে বিজেপি ঝড় চললেও এবার পালাবদল হয়েছে পাহাড়ি এই রাজ্যে। ৬৮ আসন বিশিষ্ট এই বিধানসভায় ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেসের কাছে ক্ষমতা হারিয়েছে বিজেপি। ২০১৭ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৪৪ আসন এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ২১ আসন। বিজেপি’র প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৮,৪৬,৪৩২ এবং ভোট শতাংশ ৪৮.৮ শতাংশ। বিরোধী কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৫,৭৭,৪৫০ এবং প্রাপ্ত ভোটের হার ৪১.৭ শতাংশ। ২০২২-এর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ৪০ আসনে এবং বিজেপি জিতেছে ২৫ আসন। এবার কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ১৮,৫২,৫০৪ এবং ভোটের হার ৪৩.৯০ শতাংশ। পরাজিত বিজেপি ভোট পেয়েছে ১৮,১৪,৫৩০ এবং ভোটের হার ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ আসনসংখ্যার নিরিখে কংগ্রেস এবং বিজেপি’র মধ্যে ১৫ আসনের পার্থক্য থাকলেও প্রাপ্ত ভোট (৩৭,৯৭৪) এবং ভোটের হারে (.৯০) এই ব্যবধান খুব একটা বেশি নয়। যদিও বিজেপি’র বাড়বাড়ন্তের সময়ে কংগ্রেসের এই জয় অবশ্যই উল্লেখযোগ্য।

এবারের হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনে আরও এক উল্লেখযোগ্য বিষয় ‘দেশ কে গদ্দারোকো, গোলি মারো শালোকো’ স্লোগান তোলা বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সংসদীয় কেন্দ্রের সবকটি আসনেই বিজেপি’র হার। যিনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা প্রেম কুমার ধুমলের পুত্র। তাঁর হামিরপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাঁচ কেন্দ্র - হামিরপুর, সুজনপুর, বারসার, নাদৌন এবং ভরাঞ্জ - সবজায়গাতেই পরাজিত বিজেপি। এরমধ্যে চারটি আসনে জয়ী কংগ্রেস এবং একটি আসনে জয়ী নির্দল। হামিরপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন তৃতীয় স্থান। যে কেন্দ্রে গত নির্বাচনে বিজেপি’র জয়ের ব্যবধান ছিল ৭,২৩১। হাওয়া বিজেপি’র পক্ষে অথবা নয় তা বোঝার জন্য এই তথ্য বোধহয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

পাঁচ রাজ্যের উপনির্বাচন

হিমাচল প্রদেশ এবং গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গেই ভোট হয় পাঁচ রাজ্যের ৬টি বিধানসভা আসনে এবং ১টি লোকসভা আসনে। যারমধ্যে মুলায়ম সিং যাদবের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া মৈনপুরী আসন নিজেদের দখলেই রেখেছে সমাজবাদী পার্টি (এসপি)। মৈনপুরী কেন্দ্রে জয়ের পাশাপাশি রাজ্যের খাটৌলি বিধানসভা আসন বিজেপি’র কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে এসপি-আরএলডি জোট। অন্যদিকে রামপুর আসনে কিছু সময় পিছিয়ে থাকলেও শেষে জয়লাভ করেছে বিজেপি।

মৈনপুরী লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি’র রঘুরাজ শাক্যকে ২.৯ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জিতেছেন এসপি প্রার্থী ডিম্পল যাদব। খটৌলিতে, এসপি-আরএলডি জোটের মদন ভাইয়া ২২,০৫৪ ভোটের ব্যবধানে বিজেপি’র রাজকুমারী সাইনিকে পরাজিত করে আসনটি জিতেছেন। রামপুর আসনে সমাজবাদী প্রার্থীকে হারিয়ে বিজেপি জিতেছে ৩১,১৫৮ ভোটে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খাটৌলিতে বিজেপি’র সমর্থনে থাকা দলিত ভোট এবার গেছে সমাজবাদী-আরএলডি জোট প্রার্থীর দিকে। এই কেন্দ্রের অধিকাংশ গ্রামে জিতেছেন জোট প্রার্থী। সংখ্যার বিচারে মোট গ্রামের মধ্যে ৪৪টি বুথে জয় পেয়েছেন জোট প্রার্থী এবং ২৫টিতে জয়ী বিজেপি। তাঁদের মতে, মুসলিম, গুর্জর, জাঠ এবং দলিত ভোটের এক শক্তিশালী জোট বিজেপি’র জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিহারের কুরহানি কেন্দ্রে ৩,৬৪৯ ভোটে বিজেপি প্রার্থীর জয় এলেও ছত্তিশগড়ের ভানুপ্রতাপপুর কেন্দ্রে বিজেপি পরাজিত হয়েছে ২১,১৭১ ভোটে। রাজস্থানের সর্দারশহর কেন্দ্রে বিজেপি’র পরাজয় ২৬,৮৫২ ভোটে এবং ওডিশার পদমপুর কেন্দ্রে বিজেপি’র পরাজয় ৪২,৬৭৯ ভোটে। অর্থাৎ বিজেপি ঝড়-এর যে কল্পিত খবর প্রচারিত হয় তা সব রাজ্যে যে কার্যকরী নয় এই ফলাফলই তার প্রমাণ।

গুজরাট বিধানসভা নির্বাচন

১৮২ আসনবিশিষ্ট গুজরাট বিধানসভায় বিজেপি এককভাবে ক্ষমতায় একটানা ২৭ বছর। ১৯৯০-এর নির্বাচনে গুজরাটে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কংগ্রেস পায় ৩৩ আসন। বিজেপি পায় ৬৭ আসন এবং জনতা দল পায় ৭০ আসন। জনতা দল এবং বিজেপি’র জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৫ সালে একক শক্তিতে ১২১ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। কংগ্রেস পায় ৪৫ আসন। ১৯৯৮ সালে ফের বিধানসভা নির্বাচন হয় গুজরাটে। এবার বিজেপি পায় ১১৭ আসন এবং কংগ্রেস পায় ৫৩ আসন। গুজরাট গণহত্যা-পরবর্তী ভোটে বিজেপি পায় ১২৭ আসন এবং কংগ্রেস পায় ৫১ আসন। ২০০৭-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১১৭ এবং কংগ্রেস ৫৯ আসন। ২০১২-র নির্বাচনে বিজেপি পায় ১১৭ এবং কংগ্রেস ৬১ এবং সর্বশেষ গুজরাট বিধানসভা আসনে বিজেপি পায় ৯৯ আসন এবং কংগ্রেস পায় ৭৭ আসন। এবারের নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে ১৫৬ আসন এবং কংগ্রেস পেয়েছে ১৭ আসন। ৫ আসন পেয়ে আপ উঠে এসেছে তৃতীয় স্থানে।

২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে গুজরাটে বিজেপি’র প্রাপ্ত ভোট ছিল ১,৪৭,২৪,৪২৭ এবং প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৯.০৫ শতাংশ। কংগ্রেস সেবার পেয়েছিল ১,২৪,৩৮,৯৩৭ ভোট এবং প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪১.৪৪ শতাংশ। ২০২২-এ বিজেপি’র প্রাপ্ত ভোট ১,৬৭,০৭,৯৫৭ এবং প্রাপ্ত ভোটের হার ৫২.৫০ শতাংশ। কংগ্রেসের ৮৬,৮৩,৯৬৬ ভোট এবং প্রাপ্ত ভোটের হার ২৭.২৮ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে উঠে আসা আপ পেয়েছে ৪১,১২,০৫৫ ভোট এবং প্রাপ্ত ভোটের হার ১২.৯২ শতাংশ। অর্থাৎ বিজেপি’র ভোট বেড়েছে ৩.৪৫ শতাংশ এবং কংগ্রেসের ভোট কমেছে ১৪.১৬ শতাংশ। অন্যদিকে আপ-এর ভোট বেড়েছে ১২.৮২ শতাংশ। কংগ্রেসের কমে যাওয়া ভোটের সিংহভাগই যে আপ-এর বাক্সে জমা হয়েছে এই পরিসংখ্যান থেকে তা পরিষ্কার। বাকিটুকু গেছে বিজেপি বা অন্যান্যদের ঝুলিতে। এক্ষেত্রে এটাও স্পষ্ট দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা, মোরবি সেতু কাণ্ড, বিলকিস বানো বিতর্কের পরেও বিজেপি প্রায় মসৃণভাবেই জয়লাভ করেছে গুজরাটে। কারণ এই রাজ্যের নির্বাচন বিজেপি’র কাছে ছিল প্রেস্টিজ ফাইট। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখরক্ষার লড়াই। তাই টাকা থেকে শুরু করে প্রশাসন - সর্বশক্তি নিয়োগ করে গুজরাটে লড়তে নেমেছিল বিজেপি। অন্যান্য রাজ্যে ব্যর্থ হলেও এই রাজ্যে তাদের ব্যতিক্রমী সাফল্য এবং এই সাফল্যের প্রচারের আড়ালে ঢেকে দেওয়া হয়েছে অন্যান্য ক্ষেত্রে বিজেপি’র বড়ো পরাজয়কে।

আরও কয়েকটা কথা

ক্ষমতা দখলের জন্য জয় পরাজয়ের খুব একটা তোয়াক্কা যে বিজেপি করেনা তা সাম্প্রতিক অতীতে বারবার বিভিন্ন রাজ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তা সে কর্ণাটক হোক, কিংবা মধ্যপ্রদেশ অথবা মহারাষ্ট্র অথবা গোয়া কিংবা উত্তর পূর্বের কোনো রাজ্য। রাজস্থানে অপারেশন লোটাসের চেষ্টা করেও সাফল্য আসেনি বিজেপি’র। অপারেশন লোটাস বা রিসর্ট পলিটিক্সের মাধ্যমে কীভাবে নির্বাচিত বিধায়কদের কেনাবেচা করে সরকার উলটে দিতে হয়, কীভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে হয় তার সব মাস্টারস্ট্রোকই তথাকথিত চাণক্যদের বাঁয় হাত কা খেল। ফলে হিমাচল প্রদেশ বা এমসিডি-তে বিরোধীরা ক্ষমতাসীন হলেও তাঁরা যে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেনই তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তা হলে এখন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর নাম হতো কমল নাথ, কর্ণাটকের কুমারস্বামী অথবা মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরে। যদিও বিষয়টা সেরকম নয়।

হিমাচল প্রদেশেও একইরকম আশঙ্কা আছে। হয়তো বা সেই কারণেই ভোটের গতিপ্রকৃতি লক্ষ করেই নির্বাচনী ফল প্রকাশের দিন সকাল সকাল হিমাচলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক বিনোদ তাওড়ে। যাতে উদ্বেগ বাড়ে কংগ্রেস শিবিরে। এরপরেই রাজ্য থেকে দূরে কোথাও প্রার্থীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। এগিয়ে থাকা প্রার্থীদের রাজস্থানের জয়পুরের একটি বিলাসবহুল রিসর্টে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। হিমাচলের কংগ্রেস ইনচার্জ তাজিন্দর সিং বিট্টু জানান, ‘‘আমরা আমাদের বিধায়কদের চণ্ডীগড়ে নিয়ে যাচ্ছি। কারণ বিজেপি বিধায়ক কেনাবেচার চেষ্টা করবে, যেমনটি তারা অতীতে বহুবার করেছে।’’ প্রায় একই কথা বলেন ভূপেশ বাঘেলও।

এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা যুক্ত করে নেওয়া ভালো। কারণ ক্ষমতা দখলের জন্য তো শেষ পর্যন্ত টাকা লাগে। যদিও নির্বাচনী বন্ডের দৌলতে এখন এই টাকার উৎস সাধারণ মানুষের জানার বাইরে। আর এসবিআই জানিয়েছে গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে মোট ৬৭৬.২৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। আর এটি ঘটেছে ১১ থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে। নির্বাচনী বন্ড নিয়ে আরটিআই করেছিলেন লোকেশ বাত্রা নামে এক ব্যক্তি। যাঁর প্রশ্নের উত্তরে এসবিআই জানিয়েছে, নির্বাচনী বন্ড বিক্রির ২৩তম পর্বে ৬৭৬.২৬ কোটি টাকা পেয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

সাম্প্রতিক এই নির্বাচন নিয়ে প্রচার যাই হোক না কেন, একটা কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে, বিজেপি-কে অপ্রতিরোধ্য বলে প্রচার চালানোর যতই চেষ্টা করা হোক না কেন - বিজেপি কোনো অপ্রতিরোধ্য শক্তি নয়। সেই শক্তিকে রুখে দেবার ক্ষমতা মানুষেরই আছে। আগামীদিনেও সেই শক্তিকে রুখবে মানুষই। হয়তো হিমাচল প্রদেশের মানুষ, দিল্লির মানুষ, পাঁচ রাজ্যের মানুষ ২০২২-এর শেষপ্রান্তে এসে সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন।