৫৮ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ১৬ জুলাই, ২০২১ / ৩১ আষাঢ়, ১৪২৮
‘এত সব যাচ্ছে কোথায়?’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ইদানীং কিছুটা বিভ্রান্ত। বিভ্রান্তি প্রতি পদে। উঠতে, বসতে, শুতে, খেতে, ঘুমোতে। বিভ্রান্তি নিয়েই যাপন। বিভ্রান্তি ‘অরাজনৈতিক’ শব্দটা নিয়ে। বিভ্রান্তি পারিপার্শ্বিক নিয়ে। বিভ্রান্তি কপালকুণ্ডলা উপন্যাসে মাহেশের রথের মেলায় এসে রাধারাণীর হারিয়ে যাওয়া নিয়ে। বিভ্রান্তি জুনিয়র বেসিক স্কুল থেকে পাওয়া স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে। বিভ্রান্তি শহরের বুক থেকে আস্ত একটা খাল গায়েব হয়ে যাওয়া নিয়ে। আজন্মকাল সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন করতে শিখে আসা মনন কড়া গলায় আঙুল তুলে প্রশ্ন করতে ভুলে যাচ্ছে কীভাবে বিভ্রান্তি তা নিয়েও!
।। এক ।।
কয়েক সপ্তাহ আগে একটা লেখায় বেশ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ভুয়ো শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছিল। তখন জানা ছিল না এত তাড়াতাড়ি মহাভারত শেষ করে দেবার পর একটা হরিবংশ সংযোজন করতে হবে। ঘটনাচক্র একেই বলে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন এই রাজ্যের এক বিজেপি সাংসদ। যিনি নির্বাচনী এফিডেভিটে লিখেছিলেন - মাধ্যমিক পাশ। আর মন্ত্রী হবার পরেই তাঁর নামের সঙ্গে লোকসভার ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে তিনি ব্যাচেলর অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনস (বিসিএ), এডুকেটেড অ্যাট বালাকুড়া জুনিয়র বেসিক স্কুল। এ রাজ্যে, এ দেশে এখন সবই সম্ভব। মন্ত্রী যখন লিখেছেন তখন জুনিয়র বেসিক স্কুল থেকে স্নাতক নিশ্চয়ই হওয়া যায় ! সত্যিই মাননীয় মন্ত্রী কোথা থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন বা আদৌ গ্র্যাজুয়েট কিনা তা জেনে আমাদের লাভ? স্টেশন তৈরি হবার আগেই তো কেউ কেউ সেই স্টেশনে চা বিক্রি করেছেন। আমরা কোনোদিন প্রশ্ন করেছি? করি না, কারণ ব্যাপে না। উলটে আমাদের তো গর্বিত হওয়া উচিত। যে, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মাননীয় রাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে খুন, খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, লুঠ, চুরি, মহিলাদের ওপর উৎপীড়নের বিভিন্ন ঘটনায় মোট ১১টা মামলা আছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) জানিয়েছে - নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায় ৭৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে ৩৩ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই রয়েছে ফৌজদারি মামলা। শতাংশের হিসেবে যা ৪২ শতাংশ। এডিআর-এর রিপোর্ট অনুসারে - এই ৩৩ জনের মধ্যে ২৪ জনের (৩১ শতাংশ) বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, ডাকাতির মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। মোট ৭৮জন মন্ত্রীর মধ্যে ৭২ জনই কোটিপতি এবং এদের গড় সম্পদের পরিমাণ ১৬.২৪ কোটি টাকা। জাহাজের খবর নিতে যাবেন না। আদা বেচে সুখে থাকুন। অবশ্য দেশের অর্থনীতি আপনাকে আদা বিক্রির লাভটুকুও ঘরে তুলতে দিচ্ছে না। তবে আদানি গোষ্ঠী মুম্বাই এয়ারপোর্ট অবশেষে নিজেদের দখলে আনতে পেরেছে। আর অতিমারীর সময়েই অন্য অনেকের মত তাদেরও সম্পদ বেড়েছে বেশ কয়েক গুণ। গত মে মাসে প্রকাশিত ব্লুমবার্গ-এর বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে তিনি এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্পদের অধিকারী। যার পরিমাণ ৬৭.৬ বিলিয়ন ডলার।
।। দুই ।।
মুম্বাই ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আদানি গ্রুপের শেয়ার রয়েছে ৭৪ শতাংশ। জিভিকে গ্রুপ থেকে ৫০.৫ শতাংশ শেয়ার এবং এয়ারপোর্টস কোম্পানি সাউথ আফ্রিকা, বিগভেস্ট গ্রুপের মতো ছোটো ছোটো সংস্থাগুলি থেকে ২৩.৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছে আদানি। গত ১৩ জুলাই নিজের ট্যুইটারে গৌতম আদানি লেখেন - "বিশ্বমানের মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। মুম্বাইকে গর্বিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমরা। ব্যবসা, অবসর এবং বিনোদনের জন্য ভবিষ্যতের বিমানবন্দর ইকোসিস্টেম তৈরি করবে আদানি গোষ্ঠী। স্থানীয়দের জন্য আমরা হাজার হাজার কর্মসংস্থানের যোগান দেব।" তবে এই ধাপে ধাপে দখলদারির একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ৬টি বিমানবন্দর বেসরকারিকরণ করা হবে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আদানি গ্রুপ এয়ারপোর্ট ক্ষেত্রে প্রবেশ করে এবং ৬টি এয়ারপোর্ট পায়। ২০২০-র ২৮ জুলাই তারিখে জিভিকে গ্রুপের একাধিক অফিসে ইডি তল্লাশি চালায় দুর্নীতির অভিযোগে। এরপর ২০২০ সালের জুলাই মাসে জিভিকে গ্রুপ আদানি গ্রুপের কাছে তাদের মুম্বাই এয়ারপোর্টের অংশের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আদানি গোষ্ঠী মুম্বাই এয়ারপোর্ট অধিগ্রহণ করে। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে ক্রোনোলজি মেনে কাকতালীয় কিছু খুঁজে পেলে আমার কিছু করার নেই। এই সমস্ত ঘটনাই যে কোনো সংবাদপত্রের ফাইলে খুঁজে পাওয়া যাবে।
।। তিন ।।
বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ নিয়ে কথা চলছে। গত জুন মাসে একাধিক পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক ও একটি পাবলিক সেক্টর জেনারেল ইনসিয়োরারের নাম কোর গ্রুপ অফ সেক্রেটারিজ অন ডিসইনভেসমেন্টের কাছে পাঠিয়েছে নীতি আয়োগ। সরকারের নতুন বেসরকারিকরণ নীতির আওতায় এই ব্যাঙ্কগুলিকে বিক্রি করা হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি আর্থিক বছরে বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা এবং পাবলিক সেক্টর কোম্পানি বিক্রি করে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা তোলা হবে। এই তালিকায় আছে ২টি পিএসইউ ব্যাঙ্ক এবং একটি ইনসিয়োরেন্স কোম্পানি।
এই বিষয়েই আরও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থসচিব টি ভি সোমনাথন। ১৪ জুলাই এক অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়েছেন - মোদি সরকারের আর্থিক সংস্কারের নীতিতে সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে একে একে বেসরকারিকরণ করা হবে। কৃষি, খাদ্য, সার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ভরতুকি বরাদ্দ কমানোই লক্ষ্য। তিনি জানিয়েছেন, 'ধীরে ধীরে সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বেসরকারিকরণ হবে। খুবই সামান্য কিছু ব্যাংক থাকবে সরকারি ব্যাংক হিসেবে।' অর্থসচিবের কথায়, 'দেশের আর্থিক সংস্কার করতে ভরতুকি সংস্কার করা দরকার। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে ভরতুকি দেওয়া হয়, তা আদৌ সঠিক জায়গায় হচ্ছে কিনা তা দেখা দরকার। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মান বাড়ানোর জন্য ভরতুকি অবশ্যই দরকার।'
একদিকে সাধারণ মানুষের জন্য ভরতুকি কমাতে কমাতে একসময় পুরোপুরি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা। আর অন্যদিকে বছরে বছরে কর্পোরেটদের মোটা অঙ্কের ঋণ মকুব করে দেওয়া। এভাবেই প্রতিদিন দেশের বুকে ‘আচ্ছে দিন’-এর নতুন সংজ্ঞা লেখা হচ্ছে। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের নথিভুক্ত সংগঠন মহারাষ্ট্র স্টেট ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন জানিয়েছে, ২০১৪-১৫ আর্থিক বছর থেকে ২০১৯-২০ আর্থিক বছর পর্যন্ত মোট ৬,১০,৬৬৮ কোটি টাকা কর্পোরেট ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছে।
এই সংগঠনের দেওয়া হিসেব অনুসারে ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুব করা হয়েছে ২৬,৪০৭ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুব করা হয়েছে ৩৯,১৩১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুব করা হয়েছে ৫৪,১৫২ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুব করা হয়েছে ১,২৯,৫০৪ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুব করা হয়েছে ১,৮৩,১৬৩ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুব করা হয়েছে ১,৭৮,৩০৩ কোটি টাকা। গত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের সাকেত গোখলের করা এক আরটিআই-এর উত্তরে আরবিআই এক তালিকা দিয়েছিল। যে হিসেব অনুসারে দেশের প্রথম ৫০ জন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকায় শীর্ষে আছেন মেহুল চোকসি, যতীন মেহতা, রামদেব ও বালকৃষ্ণ প্রমুখ। কাদের পৌষমাস আর কাদের সর্বনাশ কে জানে?
।। চার ।।
অবশ্য এতক্ষণ ধরে যা যা বললাম এগুলো দেশের কোনো সমস্যাই নয়। অন্তত সোশ্যাল মিডিয়া বা সাধারণ মানুষের আলোচনার সিংহভাগে এসব নেই। বরং এখনকার নতুন ট্রেন্ড অনুসারে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি নিয়ে জোরদার আলোচনা, টেক্সটের আদানপ্রদান। প্রচুর জনসংখ্যার জন্য দেশের কী কী সমস্যা - এইসব। সেদিন আর খুব বেশি দূরে নেই যেদিন প্রচার হতে শুরু করবে - এই জনসংখ্যার জন্যই দেশের উন্নয়ন ঠিকমতো করা যাচ্ছেনা। তা নাহলে এতদিনে আচ্ছে দিন এসেই যেত। অর্থনীতি যদিও বলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অর্থ হলো তা কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন দৃঢ় হয়। তবে অর্থনীতি মেনে রাজনীতি করতে হলে ক্ষমতা নাও জুটতে পারে।
আপাতত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি নিয়ে ঘোষণা করে ফেলেছেন যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশের সুরে সুর মিলিয়েছে অসম, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি বিজেপি শাসিত রাজ্য। বিহারে তো এনডিএ-র দুই শরিকের মধ্যে এই নীতি নিয়ে রীতিমতো বিবাদ বেধে গেছে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যে যে আলোচনার শুরু এতদিনে তা প্রকাশ্যে এসেছে। ঘোষণা অনুসারে যাদের দু'টির বেশি সন্তান থাকবে তাদের কোনোরকম সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবেনা।
যদিও দেশের লোকসভা সাংসদদের মধ্যে ১৪৯ জনের ৩টি বা তার বেশি সন্তান। যার মধ্যে বিজেপি সাংসদের সংখ্যা ৯৬। ৫ এবং ৪টি করে সন্তান আছে যথাক্রমে ১২ এবং ২১ জন বিজেপি সাংসদের। আর উত্তরপ্রদেশে ৩০৪ বিজেপি বিধায়কের মধ্যে ১৫২ জনের সন্তান সংখ্যা ৩ বা তার বেশি। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে ১জন বিধায়কের ৮টি সন্তান আছে। ১ জনের ৭টি সন্তান আছে। ৮ জন বিধায়কের ৬টি করে, ১৫ জন বিধায়কের ৫টি করে, ৪৪ জন বিধায়কের ৪টি করে, ৮৩ জন বিধায়কের ৩টি করে সন্তান আছে। আইনের রূপায়ণ বিজেপি'র ঘর থেকে শুরু হবে কিনা জানা নেই।
এবার যদি একটু পরিসংখ্যানে আসি তাহলে দেখা যাবে উত্তরপ্রদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মোটেই বেশি নয়। বরং বেশ কম এবং গত দু’দশকে তা কমার দিকে। জনগণনার তথ্য অনুসারে ১৯৯১ থেকে ২০০১ - এই সময়কালে উত্তরপ্রদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.৩৩ শতাংশ। যা ২০০১ থেকে ২০১১ - এই সময়কালে কমে হয়েছে ১.৮৫ শতাংশ। রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যা ৭৯.৭ শতাংশ এবং মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৯.৩ শতাংশ। তাই জনসংখ্যা খুব বেড়ে যাচ্ছে বলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ জরুরি - এটা কুযুক্তি ছাড়া অন্য কিছু নয়।
তাহলে কেন? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতেই এই নীতি, বিল, আইন নিয়ে মাতামাতি কেন ? আসলে আমরা জ্ঞানে হোক বা অজ্ঞানে, জেনে বা না জেনে বিশ্বাস করি (আমাদের বিশ্বাস করিয়ে দেওয়া হয়েছে) - দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কোনো এক বিশেষ সম্প্রদায়ই দায়ী (যা আদপেই সত্যি নয়, সেনসাসের তথ্য সেরকম বলে না)। দেশের যাবতীয় সমস্যা থেকে নজর ঘুরিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয় সামনে নিয়ে আসার পেছনের রাজনীতিটা বোধহয় লুকিয়ে আছে সেখানেই। লক্ষ্য একটাই। আরও তীব্র মেরুকরণ তৈরি। ২০২২-এই তো পাঁচ রাজ্যের মরণ বাঁচন। সেখানে জনসংখ্যা নীতি নিয়ে মানুষকে খেপিয়ে তুলতে না পারলে তো ভোটের সময় ভ্যাকসিনের ঘাটতি, অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু, করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, লকডাউনের বিপর্যয় তাড়া করবে। প্রশ্নবাণে জর্জরিত হবার থেকে প্রশ্নপত্র পালটে দিলেই উত্তর দেবার দায় থাকবে না। সহজে বাজার গরম।
।। পাঁচ ।।
এতক্ষণ অনেক কথা হলো। এবার একটু অন্য কথা বলা যাক। ত্রাণ চুরি, ত্রিপল চুরি, বালি চুরি, চাল চুরির, ওষুধ চুরির কাহিনি তো আমরা অনেক শুনেছি। কিন্তু খাল চুরির কাহিনি বোধহয় এই প্রথম। তা আবার খোদ শহর কলকাতার বুকে। যেখানে নাকি আস্ত একটা খাল বেমালুম চুরি হয়ে গেছে। হেড অফিসের বড়োবাবুর গোঁফ চুরি না যেতেও তিনি ক্ষেপে গেছিলেন। আস্ত খাল চুরি হয়ে গেলে বড়োবাবু কী করতেন কবি লিখে যাননি। তবে আমাদের ‘বড়োবাবু’দের খুব একটা হেলদোল কিছু আছে বলে শোনা যায়নি।
কলকাতা সংলগ্ন মহেশতলায় নাকি খাল চুরি হয়ে গেছে। আস্ত একটা নিকাশি খাল বুজিয়ে তৈরি হয়ে গেছে সারি সারি দোকান, বাড়ি। কার মদতে খাল চুরি তা জানতে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে প্রশাসন। যে এলাকায় এই খাল সেখানে সাংসদ, বিধায়ক সবই বোধহয় রাজ্যের শাসকদলের। যাদের দোর্দণ্ডপ্রতাপে এলাকায় মাছি গলার ক্ষমতা নেই। কাজেই খালচুরির পালের গোদা খোঁজার পরিণাম কী হবে তা সকলেরই জানা। সারদা, নারদ, টেট থেকে শিক্ষা তো কিছু কম হয়নি।
লেখাটা যে বিভ্রান্তি নিয়ে শুরু করেছিলাম লেখার শেষেও সেই বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। অঞ্জন দত্ত-এর একটা জনপ্রিয় গান মনে পড়ছে - ‘যাচ্ছে জুটে কত ভণ্ডের ভক্ত, যাচ্ছে ঝরে কত মানুষের রক্ত, এত সব যাচ্ছে কোথায়?’ প্রশ্ন একটাই - এত সব যাচ্ছে কোথায়? আমরাই বা যাচ্ছি কোথায়? শেষ যুদ্ধ কবে শুরু?