৫৮ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ১৬ জুলাই, ২০২১ / ৩১ আষাঢ়, ১৪২৮
দেশে মোদী সরকারের স্বৈরাচারী শাসনে হেপাজতে স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু
সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) হেপাজতে মানবাধিকার কর্মী ও জেসুইট প্রচারক ৮৪ বছর বয়স্ক ফাদার স্ট্যানিসলাস লর্ডুস্বামীর (সংক্ষেপে স্ট্যান স্বামী নামে পরিচিত) মৃত্যু ধাক্কা দিয়েছে দেশের বিবেককে। একে মৃত্যু না বলে হেপাজতে হত্যা বলাই শ্রেয়। ‘যদি এই ভাবে চলতে থাকে, তাহলে আমি বরং যন্ত্রণা সইব, হয়তো কিছুদিনের মধ্যে মারাই যাব...’ - আদালতের সামনে জামিনের আবেদনে বলেছিলেন ভীমা কোরেগাঁও মামলার প্রবীণতম অভিযুক্ত ফাদার স্ট্যান স্বামী। বলেছিলেন,তিনি হাসপাতালে ভরতি হতে চান না, নিজের স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে চান। তাঁর জামিন হয়নি। ৫ জুলাই আবারও এমন এক জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল বোম্বে হাইকোর্টে। তার কিছু আগেই দুপুর দেড়টায় তাঁর মৃত্যু হয়।
স্ট্যান স্বামীর হেপাজতে হত্যার ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি মেরি লেলর বলেছেন,‘মর্মান্তিক খবর। এই আচরণ ক্ষমার অযোগ্য’। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার রক্ষা সংস্থার মুখপাত্র লিজ থরোসেল বলেছেন,‘মানবাধিকার রক্ষায় আজীবন কাজ করে গিয়েছেন ফাদার স্বামী। অথচ তাঁকে কোনোরকম বিচার ছাড়াই সন্ত্রাসবাদী তকমা সেঁটে জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে স্বামী সহ ১৬ জন জেলবন্দিকে নিয়ে তিন বছর ধরে বারংবার বলে আসা হয়েছে। তাঁদের মুক্তির আরজিও জানানো হয়েছে’।
দেশে ভিন্নমতাবলম্বী ও সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ত কায়দায় চক্রান্ত করে বিনাবিচারে আটক ও অত্যাচারের যে প্রক্রিয়া ভারতে ২০১৪ সাল থেকে মোদী সরকার চালু করেছে - তার সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ ভীমা কোরেগাঁও-র সাজানো মামলা। চক্রান্ত করে যেভাবে ১৬ জন বুদ্ধিজীবী-কবি-অধ্যাপক-আইনজীবী-মানবাধিকার কর্মীকে বিনা বিচারে বছরের পর বছর ইউএপিএ আইনে আটক রাখা হয়েছে - তা ঔপনিবেশিক শাসনের কথা মনে করিয়ে দেয়। যেভাবে এই সাজানো মামলায় দিনের পর দিন অশীতিপর বন্দিদের আইনগত সুযোগ সুবিধা ও চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে তা একমাত্র স্বৈরশাসনেই সম্ভব। আমেরিকার আর্সেনাল কনসালটিং-এর তদন্ত রিপোর্ট উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার বিশদ প্রতিবেদন থেকে বহুদিন আগেই জানা গিয়েছে যে, চক্রান্ত করে দশটি চিঠি রোনা উইলসনের ল্যাপটপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উইলসনের ল্যাপটপে একটি গোপন ফোল্ডারে ম্যালওয়ার ব্যবহার করে দু’ বছর ধরে ওই চিঠিগুলি ঢোকানো হয়েছিল। ম্যালওয়ার ব্যবহার করে ওই কম্পিউটারে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারিও করা হয়েছে। আর্সেনালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাদের পরীক্ষায় প্রমাণ বিকৃত করার অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা এটি। দু’বছর ধরে ওই কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করেছে ম্যালওয়ার ব্যবহারকারী। ভীমা কোরেগাঁও ও অন্যান্য মামলায় মুখর হওয়ার জন্য সরকারি আক্রমণের মুখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে ভারত ত্যাগ করে চলে যেতে বাধ্য করেছে মোদী সরকার।
ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেই গণতান্ত্রিক ভারতের জন্ম। ভিন্ন মত প্রকাশের ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার আমাদের সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এই অধিকারগুলি গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান। সংবিধানের ১৯ নং ধারায় বাক্ স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার সমস্ত ভারতবাসীর স্বীকৃত অধিকার হিসাবে সংবিধান প্রণেতারা সুরক্ষিত করে গিয়েছেন। তাই রাষ্ট্রের কোনও পদক্ষেপ বা নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার রয়েছে ভারতবাসীর।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মতপ্রকাশের ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকারের ওপর ক্রমান্বয়ে আক্রমণ চালিয়ে দানবীয় ইউএপিএ এবং দেশদ্রোহের ঔপনিবেশিক ধারা ১২৪এ যথেচ্ছ প্রয়োগ করে চলেছে মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির স্বাধীন সত্তাকে হরণ করে সিবিআই, ইডি, এনআইএ, নারকোটিকস্ কন্ট্রোল ব্যুরো প্রভৃতিকে সুকৌশলে মোদী সরকারের আজ্ঞাবহ করে তোলা হয়েছে। এই সংস্থাগুলিকে ভিন্নমতাবলম্বী, আরএসএস এবং বিজেপি বিরোধীদের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর সাথে চলেছে ভিন্নমত পোষণকারীদের দেশদ্রোহী হিসাবে চিহ্নিত করা। ভিন্ন মতাবলম্বী ও সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দৈহিক আক্রমণও নামিয়ে আনা হচ্ছে।
মোদী সরকারের আমলে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিনা বিচারে ইউএপিএ ধারায় আটকের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি গত ৯ মার্চ লোকসভায় এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু ও গ্রেপ্তারের যে সংখ্যা জানিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ শতাংশ, আর ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বেড়েছে ৭২ শতাংশ। ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু ও গ্রেপ্তার (ব্রাকেটে গ্রেপ্তারের সংখ্যা) করা হয়েছে যথাক্রমে ৮৯৭ (১১২৮), ৯২২ (৯৯৯), ৯০১ (১৫৫৪), ১১৮২ (১৪২৫) ও ১২২৬ (১৯৪৮)। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ মামলা ৩০৬টি দায়ের হয়েছে মণিপুরে এবং সর্বোচ্চ গ্রেপ্তার ৪৯৮ জন উত্তরপ্রদেশে। লোকসভায় প্রশ্নের জবাবে মোদী সরকার জানিয়েছিল যে,২০১৬ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে ইউএপিএ ধারায় আটকদের মধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে মাত্র ২.২ শতাংশ।
মোদীর আমলে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে ক্রমশ নাগরিক অধিকারগুলি খর্ব করা হচ্ছে। ওভার দি টপ বা ওটিটি চলচ্চিত্র, টুইটার, ফেসবুক, সমাজমাধ্যম সহ অন্য মাধ্যমের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটবার পর এবার চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণেও হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্যে সিনেমাটোগ্রাফ (সংশোধনী) বিল আনতে চলেছে মোদী সরকার। এই বিলে ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া চলচ্চিত্রকেও পুনরায় বিবেচনা ও সংশোধনের জন্য সেই ফিল্ম চেয়ে পাঠাতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ এর আগে কর্ণাটক হাইকোর্টের যে রায়ের ওপর মান্যতা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, সেই রায়ে বলা হয়েছিল সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সংশোধনী থাকতে পারে না। চলচ্চিত্রের ওপর মোদী সরকারের এই আক্রমণের বিরুদ্ধে শিল্পী,পরিচালক ছাড়াও সমাজের অন্য অংশের বিশিষ্ট ১৪০০ জনের স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবাদপত্র কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। কর্মজীবনের কোনো স্পর্শকাতর বিষয় জনসমক্ষে আনা বা আত্মজীবনী হিসাবে প্রকাশ নিষিদ্ধ করে একটি নতুন নিয়ম গত ৩১ মে কেন্দ্রীয় সরকার চালু করেছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রাক্তন আমলা এবং সরকারি আধিকারিকদের পেনশন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এভাবে ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতার সমস্ত ক্ষেত্রকে স্বৈরাচারী পথে নিয়ন্ত্রণ করার পথে হাটছে মোদী সরকার।
ভারতের সাংবাদিকদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ, হত্যা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে মোদীর আমলে। মিডিয়ার স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সদা তৎপর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্থা ‘রিপোর্টাস সান্স ফ্রন্টিয়ার’ (Reporters Sans Frontier) অর্থাৎ রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডার - আরএসএফ’র ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৪২তম। এবারের ৩৭ জনের বিশেষ তালিকায় পাকিস্তানের ইমরান খান, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান,মায়ানমারের সামরিক প্রধান মিন অং হ্লাইং সহ আরও ৩৪ জনকে রাখা হয়েছে সেন্সরশিপ যন্ত্রপাতি তৈরি করে প্রেসের স্বাধীনতা পদদলিত করে সাংবাদিকদের নির্বিচারে কারাগারে বন্দি বা প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে হত্যার জন্য। এই তালিকায় নরেন্দ্র মোদীকেও যুক্ত করা হয়েছে।
বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা যে গুরুতর অবক্ষয়ের মুখে তার আরও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিচার বিষয়ক সম্মেলনে ‘বিচারব্যবস্থা এবং পরিবর্তনশীল বিশ্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায়। আমাদের দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সহ ২০টি দেশের বিচারপতির উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ভাষণের শেষে ধন্যবাদসূচক বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিচারপতি অরুণ মিশ্র নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিশ্বস্তরের দ্রষ্টা’ (‘ভার্সেটাইল জিনিয়াস’)। সেই অরুণ মিশ্র আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। একইভাবে অবসর গ্রহণের পর প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত করার পর সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার সাংবিধানিক পৃথকীকরণ নিয়ে সর্বত্র প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। কারণ রাম মন্দির,রাফাল সহ অনেকগুলি মামলায় সরকারের পক্ষে তাঁর রায় সম্পর্কে জনমানসে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।
গত বছর ২৭ জুন বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভুষণ টুইটে লিখেছিলেন, ‘‘যখন ভবিষ্যতে ইতিহাসবিদরা ফিরে তাকিয়ে বিচার করবেন জরুরি অবস্থা জারি না করেও কীভাবে দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছিল। তাঁরা বিশেষভাবে দেখবেন এই ধ্বংসের কাজে সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতির ভূমিকা কী ছিল।’’ প্রশান্ত ভূষণকে দোষী সাব্যস্ত করে এক টাকা জরিমানা করলেও তাঁর উত্থাপিত প্রশ্নগুলির আজও নিরসন হয়নি।
ভিন্ন মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে মোদী সরকারের স্বৈরাচারী ভূমিকায় আদালতের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলেই। আদালত সঠিক পদক্ষেপ নিলে স্ট্যান স্বামীর হেপাজতে নির্মমভাবে মৃত্যু হতো না। ‘জামিন হচ্ছে নিয়ম, জেল হচ্ছে ব্যতিক্রম’ - রাজস্থান সরকার বনাম বালচাঁদ ওরফে বালিয়া মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশিকা আজ মোদীর স্বৈরাচারী রাজত্বে ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত। জরুরি অবস্থার সময়েও বিনা বিচারে আটক আইন মিসা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে এক আবেদন ৪-১ রুলিং-এ সরকারি ভাষ্যকেই গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বিচারপতি এইচ আর খান্না ভিন্ন রায়ে উল্লেখ করেছিলেন, “সংবিধান কোনও কর্তৃপক্ষকেই এমন অধিকার দেয়না যাতে তিনি হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাসের বিল বাতিল করে দিতে পারেন। এমনকি জরুরি অবস্থা চলাকালীনও কোনও মানুষকে তাঁর জীবন ও স্বাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায়না।” জরুরি অবস্থার মধ্যে এইচ আর খান্নার সাহসিক ও ঐতিহাসিক এই ভিন্ন রায় আজও প্রাসঙ্গিক।
অথচ আজ ইউএপিএ মামলায় ধৃতদের জামিন পাওয়া কঠিনতম। প্রতিহিংসার মনোভাব থেকে তদন্তে ঢিলেমি বা সময় নষ্ট করা হচ্ছে। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার দায়ে ধৃত মোদী অনুগত সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামী সাত দিনের মধ্যে জামিন পেয়ে গেলেও ৮৪ বছরের স্ট্যান স্বামীকে জামিন মঞ্জুর করা হয়না। হাথরস-কাণ্ডের খবর করতে আসা কাপ্পান সিদ্দিকি সহ অন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলায় দীর্ঘদিন তাঁদের দেশদ্রোহী হিসাবে জেলে থাকতে হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি ইউএপিএ ধারায় ১৮০ দিন তাঁদের আটক করে রাখতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নানা অজুহাতে বছরের পর বছর আটকে রাখা হচ্ছে।
অতি সম্প্রতি আদালতের রায়ে সুরঙ্গ শেষে কিছুটা আলোর আভাস দেখা যাচ্ছে। ‘‘প্রতিবাদের অধিকার এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মধ্যে পার্থক্য যদি আবছা করে দেওয়া হয়, তবে তা গণতন্ত্রের জন্য দুঃখের দিন’’ - সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কারণে বিনা বিচারে আটক আইন ইউএপিএ’র বিভিন্ন ধারায় আটক জেএনইউ’র ছাত্রী নাতাশা নারোয়াল,দেবাঙ্গনা কলিতা এবং জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ ইকবালের জামিন মঞ্জুর করতে গিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট এই মূল্যবান মন্তব্যটি করেছে। সিএএ বিরোধী আন্দোলনের মুখ হিসাবে এঁদের বিরুদ্ধে সাজানো ইউএপিএ ধারা প্রয়োগ করা হয় দিল্লি দাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে। দিল্লি হাইকোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বৈরাচারী মোদী সরকার লজ্জা পাবে ভাবলে ভুল হবে। এই ঐতিহাসিক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিকে অবিলম্বে ছাড়ার দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
কিছু দিন পূর্বে শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা দুইটি পৃথক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছিলেন - দেশদ্রোহ আইনের সীমারেখাকে নূতন করে সংজ্ঞায়িত করার সময় এসেছে। আশা করা যায় যে, দেশের নাগরিকদের ওপর বিজেপি-আরএসএস-এর স্বৈরশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়ে দেশের নাগরিকদের কারাগার থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ সর্বোচ্চ আদালত গ্রহণ করবে। স্ট্যান স্বামীর হেপাজতে মৃত্যুতে দেশব্যাপী স্লোগান উঠেছে ‘মোদী তোমার হাতে রক্ত লেগে’।