E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ১৬ জুলাই, ২০২১ / ৩১ আষাঢ়, ১৪২৮

আরএসএস-বিজেপি’র ভিতরে সংঘাত তীব্র হচ্ছে

গৌতম রায়


কোভিড পরিস্থিতির ভিতরে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে ঘোরাফেরা করছে, তাতে এই আশঙ্কা ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে যে, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের পরিচালনাধীন বিজেপি’র সঙ্গে আরএসএস’র একটা ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। কেরালা বিধানসভার সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের পর সেই রাজ্যে বিজেপি এবং তাদের মূল মস্তিষ্ক আরএসএস’র ভিতরে যেভাবে প্রকাশ্য সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে - তার পরিপ্রেক্ষিতে এদের ভিতরকার রাজনৈতিক সমীকরণ ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই।

কেরালাতে বিজেপি’র দৈনন্দিন কার্যকলাপে অতিরিক্ত মাথা ঘামাচ্ছে বিজেপি, তার সঙ্ঘের এই বেশি সক্রিয়তা ঘিরেই তাদের ভোটে ফল খারাপ হয়েছে - বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর কেরালা বিজেপি’র এই পর্যবেক্ষণ এখন আর গোপন নেই (০৫/৬/২১, আনন্দবাজার পত্রিকা)। বিজেপি’র পক্ষ থেকে এই রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ফলে আরএসএস-ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এইমুহূর্তে কেরালায় বিজেপি’র রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কাজকর্ম সম্পর্কে তারা কিছুটা দূরত্ব রেখে চলছে। এই ‘দূরত্বে’র কথাটা কৌশলগত কারণে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির বলছে কি না- সেটা সময়ের প্রেক্ষিতেই ভালোভাবে বুঝতে পারা যাবে।

বিজেপি কেরালাতে আরএসএস’র অতি সক্রিয়তার যে অভিযোগ সঙ্ঘ শিবিরে তুলেছে, তার একটা রাজনৈতিক প্রেক্ষিত আছে।এইবারের ভোটের অনেকটাই আগে থেকে আরএসএস’র বেশ কিছু জঙ্গি শাখা সংগঠন কেরালাতে বামপন্থী ছাত্র-যুব কর্মীদের উপর ধারাবাহিক হিংসাত্মক কার্যকলাপ করে চলেছে। গত কয়েক বছরে সঙ্ঘ পরিবারের আক্রমণে কেরালাতে বেশ কিছু বামপন্থী ছাত্র যুব কর্মী শহিদ হয়েছেন।

আরএসএস’র এই ক্রমবর্ধমান হিংসাত্মক কার্যাবলী কেরালার মানুষকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ করে তুলছিল। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মানুষ, নতুন ভোটার, ছাত্র-যুবর ভিতরে সঙ্ঘের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে ঘিরে একটা বড়ো রকমের ঘৃণার মানসিকতা তৈরি করে দিয়েছিল।

সঙ্ঘের এই হিংসাত্মক কাজের বাড়বাড়ন্ত ঘিরে ভোটের আগে থেকেই কেরালাতে বিজেপি’র সঙ্গে আরএসএস’র একটা স্নায়ুযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হতে শুরু করেছিল। সবরিমালা ঘিরে কংগ্রেস এবং বিজেপি’র যে অবস্থান সেটি নতুন প্রজন্মের ভোটারদের ক্ষুব্ধ করলেও জাতপাতের লড়াইকে উস্‌কে দেওয়ার প্রশ্নে বিজেপি-তে মোদীর দখলদারি তীব্র হলেও সঙ্ঘের সঙ্গে মোদীর বিজেপি’র কোনো নীতিগত সংঘাত নেই। কিন্তু কেরালাতে স্বল্প সংখ্যক মুসলমানের পাশাপাশি সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের উপরে বেশ কিছুদিন ধরেই হিংসাত্মক আক্রমণ করে চলেছিল আরএসএস এবং তার বিভিন্ন রকমের শাখা সংগঠনগুলি।

ভোটের খানিকটা আগে থেকে কেরালা জুড়ে আরএসএস’র শাখা সংগঠনগুলি যে চোরাগোপ্তা খুন জখম চালাচ্ছিল, তাতে বেশ কিছু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ মারা যান। এই হত্যাকাণ্ডগুলি ঘিরে দেশের ভিতরে যেমন নিন্দার ঝড় বইতে থাকে, আন্তর্জাতিক স্তরেও তেমনটাই চলে।ফলে ইয়োরোপের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বিজেপি’র বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথা উচ্চারিত হতে থাকে। পাশ্চাত্য দুনিয়াতে মোদীর ভাবমূর্তি ঘিরে আবারও একটা প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দেওয়ার মতো সম্ভাবনা দেখা দেয়। বিষয়টি স্বয়ং মোদীকেও যথেষ্ট বিব্রত এবং বিরক্ত করে।

আরএসএস’র এই কার্যকলাপ ঘিরে সঙ্ঘ কিন্তু কখনোই কেরালাতে ভোটের আগে নরম মনোভাব নেয়নি। সঙ্ঘ এবং সঙ্ঘ পরিবার কেরালাতে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে, বিশেষ করে কমিউনিস্টদের পরাজিত করবার উদগ্র বাসনায় চেয়েছিল আরও বেশি বেশি জঙ্গি পথে হিন্দুত্ববাদী শিবির হাঁটুক। সবরিমালা মন্দিরে দলিত রমণীদের প্রবেশাধিকারকে ঘিরে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশ কার্যকর করবার ক্ষেত্রে পিনারাই বিজয়নের সরকারের ভূমিকাকে ঘিরে জাতিদাঙ্গার পরিবেশ রচনাতে বেশি উদগ্রীব ছিল আরএসএস। কেরালাতে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবিরের সামাজিক প্রযুক্তির মোকাবিলায় বামপন্থীরা যে পাল্টা সামাজিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন, তাতে সঙ্ঘ বিপর্যস্ত হলেও, ভোটের আগে পর্যন্ত এই বিধ্বস্ততাকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির স্বীকার করতে চায়নি।

অপর পক্ষে মোদীর ইমেজের পক্ষে আরএসএস’র লাইন যে একটা ক্ষতিকর প্রবণতা তৈরি করছে, সেটা বুঝে নিজেদের ভিতরে আরএসএস’র খবরদারি ঘিরে মৃদু গুঞ্জন তুলেই চুপচাপ থেকেছিল বিজেপি। কারণ, তারা ভেবেছিল যে, যদি আরএসএস’র লাইন অনুসরণ করে কমিউনিস্টদের হটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারা যায়, তবে মন্দ কি? সেই ক্ষমতা যখন অধরাই থাকল বিজেপি’র কাছে তখন ভোটের আগে বা ভোটের সময়ে আরএসএস’র খবরদারি ঘিরে এখন সোচ্চার হয়েছে বিজেপি।আর সঙ্ঘের বিরুদ্ধে বিজেপি’র এই সোচ্চার হওয়ার পিছনেও মূল ভূমিকা রয়েছে আরএসএস-কে চাপে ফেলার অভিসন্ধিতে মশগুল মোদী-অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতাদের ভূমিকা।

কয়েকদিন আগে কোচিতে সঙ্ঘ এবং বিজেপি নেতাদের একটি সমন্বয় বৈঠক হয়।সেই বৈঠকে বিজেপি এবং আরএসএস’র প্রাদেশিক স্তরের শীর্ষ নেতারা ছিলেন। আরএসএস’র প্রান্ত কার্যবাহ পি এন ঈশ্বরন, প্রান্ত প্রচারক হরিকৃষ্ণের মতো সঙ্ঘের প্রথম সারির নেতারা ছিলেন। বিজেপি’র পক্ষ থেকে ছিলেন তাদের প্রাদেশিক সভাপতি কে সুরেন্দ্রন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি মুরলীধরন, প্রাক্তন রাজ্যপাল কুম্মানাম রাজশেখরন প্রমুখ। বিজেপি’র কেরালা প্রাদেশিক শাখাকে রাজনীতিকরণের উপরে সেই বৈঠকে ঝাঁজালো বক্তব্য রেখেছেন মুরলীধরন। কেবলমাত্র একটা নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় লক্ষ্যেই যদি বিজেপি-কে পরিচালিত করা হয়, তাহলে দল কখনোই সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে না - এই কথা সেই বৈঠকে খুব জোরের সঙ্গেই মুরলীধরন বলেছেন। সংগঠনগতভাবে নেতৃত্বের প্রশ্নে একটা নতুন ধরনের বিতর্কও যে সঙ্ঘের পরিসরে তৈরি হচ্ছে তা ওই বৈঠকে মুরলীধরনের বক্তব্যের ভিতর দিয়ে উঠে এসেছে।

মুরলীধরন বলেছেন, কেরালাতে নীচুতলায় বহু কর্মী বিজেপি-তে এসে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন।অথচ এইসব কর্মীরা কখনোই নেতা হচ্ছেন না। নেতা হচ্ছেন সঙ্ঘের থেকে চাপিয়ে দেওয়া লোকজনেরাই। নেতা, মণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা লোকজনের বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার কথাও সেই বৈঠকে মুরলীধরন তোলেন। তার বক্তব্যকে বৈঠকে উপস্থিত বিজেপি’র সব নেতাই সমর্থন জানান।

এই বৈঠকের যে খবর বাইরে বেরিয়ে এসেছে তার ভিত্তিতে একটা কথা জোর দিয়ে বলতে হয় যে, নিজেদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’র উপর থেকে সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণ আলগা হওয়ার একটা প্রবণতা ক্রমশ তীব্র হতে শুরু করেছে।আর এই প্রবণতা যতো বাড়বে ততোই বিজেপি’র ভিতরে সঙ্ঘ নিয়ন্ত্রিত বিজেপি’র নেতা, বিশেষ করে কর্মীদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ নিয়ন্ত্রিত বিজেপি’র নেতা-কর্মীদের দূরত্ব বাড়তেই থাকবে।আর এই দূরত্ব যতো বাড়তে থাকবে ততোই সংঘাতের পরিবেশও তীব্র হবে। জাতীয়স্তরের মতোই সব রাজ্যগুলিতেও আরএসএস নেতৃত্ব চাইছেন, নিজেদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’র উপর সঙ্ঘের আলগা হয়ে আসা নিয়ন্ত্রণকে জোরদার করতে। আবার আগের মতো জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। আর এই জায়গাটা নতুন করে তৈরি করতে হলে আরএসএস’র দরকার বিজেপি’র উপর থেকে মোদী-শাহের নিয়ন্ত্রণ আলগা করা। আবার ক্ষমতায় কেবল টিকে থাকা নয়, নিজের নিয়ন্ত্রণকে কণ্টকশূন্য করতে মোদীর ও দরকার এখন দলের উপর সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণের রাশ আলগা করা। যেটার পক্ষে তিনি কেরালাতে সওয়াল করিয়েছেন মুরলীধরনকে দিয়ে। কিছুটা সফলও হয়েছেন। কারণ, আরএসএস কেরালার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিজেপি’র সঙ্গে সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে। আর এই প্রেক্ষিতে বলতেই হয়, সাতের দশকের শেষ দিকে মোরারজি দেশাইয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বকালে দ্বৈত সদস্যপদ ঘিরে বিতর্কের মতো একটা বড়ো মতাদর্শগত বিসংবাদ হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শিবিরে বোধহয় আসতে চলেছে।

বিজেপি দলটির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটির সঙ্গে আরএসএস নেতাদের সংঘাত- সংঘর্ষ এখন ক্রমেই তীব্র হতে চলেছে। বিজেপি দলটি বা তার পূর্বসূরি ভারতীয় জনসঙ্ঘে একটা সময় পর্যন্ত আরএসএস পরিমণ্ডলের বাইরের কোনো মানুষ সাধারণ কর্মীর বাইরে কখনোই নেতৃত্ব উঠে আসতে পারতো না। দেশাই মন্ত্রীসভাতে যখন যোগ দেয় জনসঙ্ঘ তার পূর্ববর্তী পর্যায়ে দলের উপর আরএসএস’র এই কঠিন-কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল। সেই নিয়ন্ত্রণ ঘিরেই দেশাই মন্ত্রীসভাতে পুরনো কংগ্রেসীদের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হয়েছিল সঙ্ঘপন্থীদের। সেই সংঘাতের জেরেই আর ইন্দিরা গান্ধীর প্রচেষ্টাতেই কিন্তু অকালে পতন হয়েছিল দেশের প্রথম অকংগ্রসী সরকারের। পরবর্তীতে বিজেপি তৈরি হওয়ার সময়কাল থেকেই এই দলটির সব কিছুর নিয়ন্ত্রক আরএসএস।

অটলবিহারী বাজপেয়ী যে তিনদফায় দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেই সময়ে বিজেপি দলটির এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সবরকমের নিয়ন্ত্রক ছিল এই আরএসএস। সরাসরি বিজেপি কখনো না করা অরুণ শৌরিকে যে মন্ত্রী করা হয়েছিল বাজপেয়ী ক্যাবিনেটে, সেই শৌরিও আরএসএস’র পরিমণ্ডলের বাইরের কোনো মানুষ ছিলেন না। মন্ত্রী হওয়ার আগে ‘এমিনেন্ট হিস্টৌরিয়ান’ ইত্যাদি যেসব বই অরুণ শৌরি লিখেছিলেন, সেইসব বইগুলি ছিল একেবারেই আরএসএস’র হিন্দু সাম্প্রদায়িক অবস্থানের প্রতিধ্বনি। আর এই সময়ে দল সরকারে আছে বলে একটা অংশের মানুষ আরএসএস’র বাইরের পরিমণ্ডল থেকে বিজেপি’র কাছাকাছি এসেছিল। সেই অংশটি কিন্তু কখনোই বিজেপি’র অন্দরমহলে ঠাঁই পায় নি। আর ২০০৪ সালে বাজপেয়ী সরকার পরাজিত হওয়ার পর সঙ্ঘ পরিমণ্ডলের বাইরে থেকে আসা অংশটি ধীরে ধীরে বিজেপি থেকে সরেও গিয়েছিল।

আরএসএস’র সার্বিক সাহায্য ছাড়া বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদীর একক গরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা কখনোই সম্ভবপর হতো না। এই একক গরিষ্ঠতা নিয়েই দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই সুপ্রিম কোর্টের রায় মোতাবেক ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর তথাকথিত রামমন্দিরের শিলান্যাস হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ভবিষ্যৎ কি কিছুটা তমসাচ্ছন্ন করে দিয়েছে? শিয়ালের কুমিরছানা দেখানোর মতো মন্দির-মসজিদ ইস্যুকে অবলম্বন করে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের যে তাসটিকে জোরদারভাবে খেলতো গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শিবির - সেই তাসটা ওদের কাছে মন্দিরের শিলান্যাস হয়ে যাওয়ার পর আর কার্যকর নয়। হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার সর্বোচ্চ উগ্রতা বিজেপি-কে ভোট রাজনীতিতে যে সুবিধা দিয়েছে, সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদের প্রেক্ষিত কি সেইরকম সুবিধা ভোটের বাক্সে বিজেপি-কে দেবে? মন্দির তৈরির জিগির যতোখানি বেকারি, দারিদ্র্য, ছাঁটাই, পেট্রোপণ্য সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের আগুনছোঁওয়া দামকে ভুলিয়ে রাখতে পারতো, মন্দির তৈরি শুরু হয়ে যাওয়ার পর আর তেমনভাবে ভোলানো হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কোভিড জনিত পরিস্থিতি দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে ভয়াবহ সঙ্কট ডেকে এনেছে, তা মোদী সরকারকে যেভাবে অপ্রিয় করে তুলেছে, সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি’র উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণকে আগের মতো করে তুলতে সঙ্ঘও তাই অনেকখানি বেশিই তৎপর হয়ে উঠেছে।

উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাটে আগামী বছরের শুরুতে যে বিধানসভার ভোট হতে চলেছে, সেই ভোট জিততে কৌশলগত ক্ষেত্রে অনেক অদলবদল আনছেন মোদী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা রদবদলের নামে কার্যত পুনর্গঠন মোদীর এই কৌশলেরই একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই ভোটগুলিতে বিজেপি হেরে যাক, এটা কখনোই আরএসএস চায় না।কিন্তু প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে থাকুক - এইটা একান্তভাবেই চায় আরএসএস। তাই নিজের লোক অজয় বিশোয়াত ওরফে স্বঘোষিত ‘যোগী’ আদিত্যনাথ একটু বেশি মোদী ঘেঁসা হয়ে গেলেও তাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘মিম’ এবং ওয়াইসিকে দিয়ে উত্তরপ্রদেশে মুসলিম ভোট বিভাজনের খেলাটির সুতো যে আরএসএস’র হাতেই রয়েছে - একথাও অনেকটাই নিশ্চিতভাবেই বলতে পারা যায়। কেরলে হিন্দুত্ববাদীদের ভিতরে এই অভ্যন্তরীণ সংঘাতের আবর্ত আগামীদিনে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তের অনেককিছুই ইঙ্গিত করছে।