৬০ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা / ১৬ জুন, ২০২৩ / ৩২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
প্রাণঘাতী হামলা রক্তাক্ত আঘাত অতিক্রম করে বামফ্রন্ট ও সহযোগীদের মনোনয়ন পেশ
পূর্ব বর্ধমান জেলার বড়শুলে তৃণমূলের হামলার প্রতিরোধ।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দৃপ্ত প্রতিরোধের মেজাজ আর অদম্য জেদ নিয়েই এবারে পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বের শুরু থেকে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন বামপন্থীরা। সিপিআই(এম) সহ বামফ্রন্টের অন্যান্য শরিকদলের প্রার্থীরা জেলায় জেলায় শাসকদল তৃণমূলের হিংস্র আক্রমণকে রুখে দিয়েই মনোনয়ন পত্র জমা দিচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেস ভেবেছিল ২০১৮ সালের কায়দায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের স্থবির ভূমিকায় সরকারি প্রশাসনের সাহায্যে সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করে পঞ্চায়েতকে কব্জা করে নেবে। কিন্তু তারা শুরুতেই টের পেয়ে গেছে যে, এবারে ২০১৮-র পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব নয়। তারই সুস্পষ্ট চিত্র দেখা গেছে মুর্শিদাবাদের রানিনগর, ডোমকল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, ভাঙড় সহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। যেকোনো মূল্যে পঞ্চায়েতকে দখলে রাখতে তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা আগের বারের মতোই এবারেও হিংস্র আক্রমণ করে বামফ্রন্ট সহ বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দিতে চেয়েছে। ১৫ জুন এই প্রতিবেদন ছাপতে যাবার সময়ে সর্বশেষ ঘটনায় জানা গেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের দাসপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস দলের প্রার্থীরা মিছিল করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাবার সময় তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা এলোপাথাড়ি বোমা বর্ষণ করে ও গুলি চালায়। পুলিশও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে বলে জানা গেছে, এই ঘটনায় ২ জন সিপিআই(এম) কর্মী গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। এই বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদে এদিনই রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং নির্বাচন কমিশন দপ্তরের সামনে জরুরি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
এর আগেও চোপড়ায় বিরোধীদের মনোনয়ন বানচাল করতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা সিপিআই(এম)’র দু’জন নেতাসহ কংগ্রেসের চারজনকে অপহরণ ও মারধর করে। এর প্রতিবাদে চোপড়ায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বামপন্থীরা। এরপর বেগতিক বুঝে সবাইকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অপহরণকারীরা।
চোপড়ায় মাথায় গুলির আঘাতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সিপিআই(এম) কর্মী মনসুর আলি।
এর আগে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন, উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় সিপিআই(এম) নেত্রী সোমা দাশ সহ পার্টি কর্মীরা তৃণমূলের হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন, আক্রমণ করা হয়েছে আরও নানা জায়গায়। কিন্তু সমস্ত বাধা ও আক্রমণকে মোকাবিলা করেই অদম্য জেদ আর প্রতিরোধী মেজাজে মনোনয়ন পত্র জমা দিচ্ছেন বামপন্থী সহ বিরোধী প্রার্থীরা। বিভিন্ন জেলায় বিশেষকরে দক্ষিণবঙ্গে বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেস এবং আইএসএফ-ও এই প্রতিরোধে শামিল থাকছে। গত ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাথমিক পর্ব থেকেই রাজ্যবাসী শাসকদলের হামলা-সন্ত্রাসের যে ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই তাঁরা এক ভিন্ন ছবি দেখছেন। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, এবারের নির্বাচনের প্রাথমিক পর্বেই মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ আর জেদি মনোভাব যেমন এক নতুন আবহ তৈরি করছে, তেমনি শাসক দল তৃণমূলকেও কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে এনে ফেলেছে।
এবারের নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু স্বাভাবিক হবে,নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন কী ভূমিকা পালন করবে তা নিয়ে সংশয়-আশঙ্কার অবকাশ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে রাজীব সিনহা নিযুক্ত হবার পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই উপযুক্ত প্রস্তুতি ও পরিকাঠামো তৈরি না করেই নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হয়। ফলে আশঙ্কা মতোই মনোনয়ন পত্র জমার প্রথম দিন থেকেই রাজ্যের সর্বত্র চূড়ান্ত অব্যবস্থা,বিশৃঙ্খলা,হয়রানির মুখে পড়তে হয় মনোনয়ন জমা দিতে আসা বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের। এর সঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস তাদের স্বভাব অনুযায়ী হামলা ও খুন করে, গণ্ডগোল বাধিয়ে, বামপন্থী সহ বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দিতে চেষ্টা করেছে। এভাবেই এরা চেয়েছে আগের বারের মতো গণতন্ত্রকে পদদলিত করে পঞ্চায়েত দখল করতে।
তৃণমূলের এই গণতন্ত্র নিধনের চেহারা প্রকট হয়েছে গত কয়েকদিনের চোপড়া, ভাঙড়, ক্যানিং সহ বেশ কিছু এলাকায় এদের তাণ্ডবের ঘটনায়। ১৩ জুন ভাঙড়-২ ব্লকে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে বোমা,গুলি চালায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। এসব প্রতিরোধ করেই সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্ট প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পরদিন ভাঙড়-১ ব্লক দপ্তরে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে প্রায় একই ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এদিন বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন আটকাতে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের জড়ো করে বাসন্তী হাইওয়েতে কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করা হয়। রাস্তায় যানবাহন নির্বিচারে ভাঙচুর চালানো হয়। মনোনয়ন কেন্দ্রের ১ কিলোমিটার পরিধির মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও তা কার্যত নস্যাৎ করে ভাঙড়-১ ব্লক অফিসের পিছনে লাঠি, বোমা মজুত করে শাসক দল। ব্যাপক বোমাবাজি, গাড়ি ভাঙচুর চলে, পুলিশের গাড়িও ভাঙা হয়। পুলিশ প্রশাসন সব দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
এদিন শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ক্যানিং। এখানে সিপিআই(এম) দপ্তরে ঢুকে বেপরোয়া আক্রমণ চালায় তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী। সিপিআই(এম) প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলে দেয়। মহিলা প্রার্থীদেরও নিগৃহীত করা হয়।
সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী ভাঙড়,ক্যানিং ও মন্দিরবাজারের ঘটনার উল্লেখ করে জেলা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
আসলে তৃণমূলের উদ্দেশ্য গ্রামীণ মানুষের স্বার্থে পঞ্চায়েত পরিচালনা নয়, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত দখল করে অবাধে লুটের রাজত্ব চালিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যেই এরা শুরু থেকেই হামলা-হুমকি ও সন্ত্রাসের পথ নিয়েছে। রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনও অন্যান্য ঘটনার মতো এক্ষেত্রেও দলদাসের ভূমিকা নিয়ে চলেছে। শাসক দলের তাঁবেদার হয়ে বামপন্থী সহ বিরোধীদের মনোনয়ন পেশে নানাভাবে বাধা দিচ্ছে, শাসক দল আক্রমণকারীর ভূমিকায় থাকলেও তাদের আড়াল করে সিপিআই(এম) সহ অন্যন্য বিরোধীদের ওপর চড়াও হচ্ছে, এমনকী শাসক দলের কথায় বিরোধীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, গ্রেপ্তার পর্যন্ত করছে। তবে এবারে শাসক দল প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে একতরফাভাবে হামলা চালিয়েও পার পাচ্ছেনা। বিভিন্ন জায়গায় তাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে। ৯ জুন মনোনয়ন পেশের প্রথম দিনই এই দৃশ্য দেখা গেছে মুর্শিদাবাদের রানিনগর ১নম্বর ব্লকে। এখানে ব্লক অফিসে হামলার চেষ্টা হয়েছিল,কিন্তু পালটা প্রতিরোধের মেজাজ দেখে পিছু হটে তৃণমূলীরা। শাসক দলের বাইক বাহিনী বাইক ফেলেই পালায়,এমনকী প্রতিরোধী মেজাজের মুখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। এই দৃশ্য দেখে টালবাহানা করার সাহস দেখায়নি ব্লক অফিসের কর্মচারীরা। সিপিআই(এম) প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র তুলতে দেওয়া সহ তাদের মনোনয়নপত্র জমা নিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। এদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা-১, ডেবরা, সবং, পিংলায় প্রশাসনের সমস্ত অসহযোগিতা উড়িয়েই বেশিরভাগ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা।
এদিকে গত ৯ জুন নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর দিনই মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে তৃণমূলের বিরোধিতা করায় ফুলচাঁদ শেখ নামের এক কংগ্রেস কর্মীকে খুন করা হয়। তৃণমূলী হামলায় আহত হন কয়েকজন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে জেলা সিপিআই(এম)। এদিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার ১০টি ব্লকে নানা অজুহাতে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি প্রশাসন। বেশ কিছু জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতে যাবার সময় সিপিআই(এম) প্রার্থীদের ওপর হামলা চালায় তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা।
রানিনগরের পর মুর্শিদাবাদের ডোমকলেও প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে শাসক দলকে। এখানে সশস্ত্র তৃণমূলীরা বিডিও অফিস অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং সশস্ত্র তৃণমূলীদের হটিয়েই বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন, ডিসিআর কেটে মনোনয়ন জমা দেন। এখানে বিরোধী দলের মনোনয়ন ঠেকাতে কোমরে পিস্তল গুঁজে এসে হাতেনাতে ধরা পড়ে গ্রেপ্তার হন সারাংপুর তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বাসির মোল্লা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোমরে পিস্তল গুঁজে যে তৃণমূল নেতা বিরোধীদের মনোনয়ন বানচাল করতে হামলা চলাতে গিয়েছিল, তার নামে নামে লঘু ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অথচ তৃণমূলের হামলা রুখে দিয়ে মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেবার দেবার জন্য সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস দলের ৫২ জন কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অবৈধ জমায়েত, মারধর, অস্ত্র নিয়ে আঘাত, ছিনতাই এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সেই সাজানো মামলার জেরেই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনিতে তৃণমূলী হামলা রুখে দিয়েই বিডিও অফিসে ঢুকে সিপিআই(এম) প্রার্থীদের পক্ষে ডিসিআর কাটা হয়। আগের দিন সিপিআই(এম) প্রার্থীদের কাছ থেকে ডিসিআর কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, মারধর করা হয়েছিল অনেককে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিরোধ হয় সেখানে।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে বীরভূম জেলা পরিষদের কোনো আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি বিরোধীরা। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদ দখল করেছিল তৃণমূল। কিন্তু এবারে চিত্র ভিন্ন। ইতিমধ্যেই সেখানে জেলা পরিষদের অধিকাংশ আসনেই বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস যৌথভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এখানে সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেছেন,আমরা সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও তার দোসর লুটেরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপকতম ঐক্য গঠনের ডাক দিয়েছি। তাতে প্রতিদিন মানুষের আস্থা বাড়ছে। এই জেলায় যৌথ লড়াইয়ে সর্বতোভাবে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে সিপিআই(এমএল), সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও সিপিআই(এমএল-এনডি)।
মনোনয়নপত্র জমা দেবার পর্বে মিনাখাঁয় এক জঘন্যতম হিংসাত্মক ঘটনার নজির তৈরি করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মনোনয়ন কেন্দ্রের ১ কিলোমিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেই নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন জমা দেওয়া বানচাল করতে সেই ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই সশস্ত্র হামলা চালায় তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। এখানে বটতলায় সিপিআই(এম) মিনাখাঁ এরিয়া কমিটি দপ্তরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে মহিলা আন্দোলনের নেত্রী সোমা দাশ, যুব নেতা রানা রায় সহ একাধিক পার্টিকর্মীকে। এই অফিসে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেবার কাজ চলছিল। সেখানে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা। ১২ জুন বিভিন্ন এলাকার দুষ্কৃতকারীদের জড়ো করে পার্টি দপ্তর ঘিরে রেখে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে খুনের হুমকি দিতে থাকে তৃণমূলীরা। তারপর পার্টি অফিসের বাইরে রাখা বামকর্মীদের বাইক নেবার চেষ্টা করলে কর্মীরা বেরিয়ে এসে বাধা দিতেই শুরু হয় ইটবৃষ্টি। এরপর লাঠি, বাঁশ নিয়ে তৃণমূলীরা পার্টি অফিসে ঢুকে পড়ে, তখন সোমা দাশ বাধা দিতেই তাঁর মাথায় লাঠির আঘাত করে। তিনি রক্তাক্ত হন, আক্রান্ত হন যুব নেতা রানা রায় সহ আরও অনেকে। তখন পুলিশ বাধা দিতে গেলে তারাও আক্রান্ত হন। যদিও দলদাস পুলিশ পরে তা অস্বীকার করেছে। ঘটনার সময় উপস্থিত পার্টি নেতা সায়নদীপ মিত্র, সৌরভ চক্রবর্তীরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ কার্যত দাঁড়িয়ে থেকে এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। এদিনের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে সিপিআই(এম) উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় ও রাজ্য কমিটি। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়।
তৃণমূলের সন্ত্রাস-হামলা সত্ত্বেও সেসব প্রতিরোধ করে পূর্ব বর্ধমানের বড়শুল, বাঁকুড়ার সোনামুখী, ইন্দাস, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ সহ বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা।
পঞ্চায়েতে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়। এখানে শাসক দল তৃণমূল নির্বিচারে বোমাবাজি করে, পুলিশের সামনেই মুহুর্মুহু গুলি চালায়। এতে আইএসএফ'র এক প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হন, আহত হন অনেকে। তবুও পালটা প্রতিরোধ হয় এখানে। হাজারো মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। মানুষের এই প্রতিরোধের মুখে তৃণমূলের বাহিনী পালাতে বাধ্য হয়। দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী নেতা আরাবুল ইসলামকে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে কোনোমতে পালাতে সাহায্য করে। এই তৃণমূলী নেতার ছেলে হাকিবুলের গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় একাধিক তাজা বোমা। ক্ষিপ্ত জনগণের রোষে সেই গাড়িটি সহ তৃণমূলের ৫টি গাড়ি ভাঙচুর হয়। অন্য গাড়ি থেকেও বোমা উদ্ধার হয়। প্রতিরোধের মুখে পড়ে আরাবুলের পুত্রকেও এলাকা ছেড়ে পালাতে হয়। এমনই এক ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হওয়া সত্ত্বেও দিনের শেষে ভাঙড়-২ নম্বর ব্লকে পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই বেশিরভাগ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বামফ্রন্ট এবং আইএসএফ প্রার্থীরা।
এদিকে ১৩ জুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে কমিশনের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। পার্টির পক্ষ থেকে অভিযোগে বলা হয়েছে,পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরেই শাসক দল রাজ্যকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। আর কমিশন চুপচাপ বসে আছে! কমিশন কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারছে না।
এই সামগ্রিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ জুন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মানুষের মেজাজ দেখে শাসক দল বুঝে নিক, ২০১৮ সাল আর ২০২৩ এক নয়। গণতান্ত্রিক অধিকার ছনিয়ে নেবার চেষ্টা হলে মানুষ আর সহ্য করবেন না, পালটা প্রতিরোধ হবেই।