৫৮ বর্ষ ১০ম সংখ্যা / ১৬ অক্টোবর ২০২০ / ২৯ আশ্বিন ১৪২৭
নির্বাচন কমিশনকে সীতারাম ইয়েচুরির চিঠি
আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং অবাধ করতে সিপিআই(এম)সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি মূলত নির্বাচনে অর্থবলের ব্যবহার, সামাজিক মাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া) নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পক্ষপাতদুষ্ট পরিস্থিতি এবং ইভিএম মেশিন ব্যবহার সংক্রান্ত কারচুপির অভিযোগ সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
চিঠিতে সীতারাম ইয়েচুরি নির্বাচনে অর্থবলের দাপট সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেছেন, কেন্দ্রে নানা আইন পরিবর্তন করে শাসকদল বিজেপি তাদের নির্বাচনী তহবিল বাড়িয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি সরকার যে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছে তাতে কর্পোরেট অর্থের দাপট বেড়েছে। নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে এই নির্বাচন এবং প্রকল্প সম্পর্কে তাদের আপত্তির কথা হলফনামা দিয়েই জানিয়েছিল। তাতে কমিশন সেই সময় জানিয়েছিল কেন্দ্রের নির্বাচনী বন্ড রাজনৈতিক দলের তহবিলের স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে একটা বড়ো প্রশ্ন তুলে দেবে। কমিশনের সেই আশঙ্কা আজ সঠিক বলেই প্রমাণিত হয়েছে।২০১৭ সালে কেন্দ্রের সরকার জনপ্রতিনিধিত্ব আইন আয়কর আইন ও কিছু আর্থিক আইন পরিবর্তন করে বন্ড থেকে সংগৃহীত অর্থ নিয়ে কমিশনের নজরে আনা বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার ফলে এই শাসকদলের অর্থের দাপাদাপি বেড়েছে। আগে কোনো বিদেশি সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি দেশের কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারি আছে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে এমন সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ করা যেত না। নয়া-আইনের ফলে রাজনৈতিক দলে বিদেশি কোম্পানির অর্থের দাপট অবাধ হয়ে গেছে। নির্বাচনে বিদেশি শক্তির অর্থের থেকে দূরে রাখতে যে আইন ছিল তা তুলে দেওয়া হলো। এতে নির্বাচনে বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণ অনিবার্য হয়ে গেল। এগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন কিভাবে সংবিধানের ৩২৪ ধারা মেনে এতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে তা নিয়ে।
সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর দ্বিতীয় প্রস্তাবে তুলে ধরেছেন নির্বাচনের শাসকদলের দ্বারা মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পরিকাঠামোর প্রসঙ্গ। তিনি লিখেছেন, আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে বিজেপি বিপুল অর্থের দাপটে মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। যা নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের সমান সুবিধা ও অধিকার থাকার যে নীতি রয়েছে তা লঙ্ঘন করছে। তিনি এ প্রসঙ্গে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র প্রচারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অমিত শাহ জনসভায় বলেছিলেন তাঁদের দলের রয়েছে ৩২ লক্ষ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ। মনে করা হচ্ছে যারা এক ঘণ্টার মধ্যে দেশের সত্যি-মিথ্যা যে কোনো বার্তা প্রচার করে তা প্রতিষ্ঠা করে দিতে পারে। আবার বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা তাদের সমীক্ষায় জানাচ্ছে, ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল সংখ্যক ভুয়ো সংবাদ ছড়াচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। বিহারের আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি তাদের ভার্চুয়াল প্রচার চালাতে রাজ্যে ৭২,০০০ এলইডি টিভি বসিয়ে প্রচার শুরু করেছে। ২৫০০ আইটি সেল এবং ৭২,০০০ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ-কে তাদের নির্বাচনী প্রচারে লাগাবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নেটওয়ার্ক-এর বিস্তারের পাশাপাশি চলছে বিপুল অর্থখরচ ও তার কর্মী নিয়োগ। কর্পোরেট অর্থ জোগানের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া স্বাভাবিকভাবেই গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন ইয়েচুরি।
ইভিএম মেশিন ব্যবহারের কারচুপি প্রসঙ্গে যে অভিযোগ রয়েছে তা দূর করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন, এ ক্ষেত্রে কারচুপির সুযোগ যাতে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে। চিঠিতে লিখিত প্রস্তাবে জানানো হয়েছে, ইভিএম’র ভোটের তথ্য সরাসরি চলে যাবে ভিভিপ্যাটে, তা আর বাইরে কোথাও যাবেনা। এভাবে ইভিএমে কারচুপি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিহার নির্বাচনে সেই ব্যবস্থাই চালু করার দাবি করেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।