৫৮ বর্ষ ১০ম সংখ্যা / ১৬ অক্টোবর ২০২০ / ২৯ আশ্বিন ১৪২৭
দুঃস্বপ্নের ফেরিওয়ালা
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ছোটোবেলায় আমাদের পাড়ায় ফেরিওয়ালাদের হরেকরকম ডাক শুনে বেড়ে উঠেছি। হাওড়া শহরের সেই সময়ের মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত যে অঞ্চলে আমার ছোটোবেলা কেটেছে সেখানে ‘শানওয়ালা, ধারওয়ালা’, ‘সিল কাটাও’, ‘শোনপাপড়ি-সন্দেশ’, ‘কাগজ-পুরানা কাগজ খাতা বহি’, ‘বিস্কুট চাই বিস্কুট’ ইত্যাদি ভিন্ন সুরের ডাকে ভরে থাকতো দিন। ছিলো ঢং ঢং করে কাঁসার থালা বাজিয়ে বাজিয়ে বাসন বিক্রি। এঁদের হরেক ডাকের আড়ালে লুকিয়ে থাকতো নিজের নিজের জিনিস বিক্রির ভাবনা। রুটি রুজির তাগিদ। ছোটোবেলার দেখা সেই মানুষগুলো কখন যেন অজান্তেই হয়ে গেছিলো বিস্কুট কাকু, কাগজ কাকু। এখনও কানে বাজে সেইসব ডাক। নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন থাকতে থাকতে কানে বাজেন রবীন্দ্রনাথ - ‘বাসন-ওয়ালা থালা বাজায়;/সুর করে ওই হাঁক দিয়ে যায়/আতা-ওয়ালা নিয়ে ফলের ঝোড়া;’ ঘোর কেটে যায় দুঃস্বপ্নের ফেরিওয়ালার হাঁকে। চোখের ওপর দেখতে পাই - বাসন-ওয়ালা থালা বাজায়;/ সুর করে ওই হাঁক দিয়ে যায়,/ ব্যাঙ্ক নেবে গো, আছে ট্রেনের তোড়া।/ সঙ্গে শিল্প সরকারি সব/ জলের দরে দেশের গরব/ইচ্ছেমতো আছে প্যাকেজ মোড়া।
দুরাত্মার নাকি ছলের অভাব হয় না। প্রাচীন প্রবাদ। বর্তমান যুগে একটু পাল্টানো যেতেই পারে। এখন যেমন বিজ্ঞাপনের যুগে ফেরিওয়ালাদের পি আর ইভেন্টের অভাব নেই। বিজ্ঞাপনের অভাব হয়না। চোখের নিমেষে কিছু বোঝার আগে মাল বেচে দিতে ঢালেরও না। পাকিস্তান থেকে চায়না, ৩৭০ থেকে করোনা, তিন তালাক থেকে রাম মন্দিরের বাহানা - ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলে কখনও মাল বেচার হাতিয়ার, কখনও কেয়ারস ফান্ডের, কখনও আত্মনির্ভরতার মুখোশ, কখনও শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিলামে তোলার কারসাজি, কখনও সাম্প্রদায়িক ঘেন্না ছড়ানোর ঢাল। করোনার মাস্কের আড়ালে অবাধ লুটের রাজত্ব। একদিকে ১৪ কোটি মানুষের কাজ হারানো। সর্বস্ব হারিয়ে পথের ভিখিরি হওয়া। আর অন্যদিকে এই সময়েই আম্বানি, আদানিদের আরও আরও ফুলে ফেঁপে ওঠা। কারোর ৭৩ শতাংশ, কারোর ৪৬ শতাংশ সম্পদ বৃদ্ধি। আর মাল বেচার পি আর ইভেন্টের পথ মসৃণ করতে ময়দানে নেমে পড়েন অভিনেতা অভিনেত্রীর পাল। সঙ্গে পোঁ-এর দল। বশংবদ মিডিয়া। কখনও ট্যুইট, কখনও ফেসবুক, কখনও ফেক নিউজ, কখনও ভুয়ো টিআরপি রেটিং - ভার্চুয়াল আচ্ছে দিনের আড়ালে দেশের গভীরতম বুরে দিনের আবাহন। ‘নেশন ওয়ান্টস টু নো’ প্রশ্ন উঠলেও উত্তর দেবার আগেই মুখ চেপে ধরার কৌশলী খেলায় দেশের খেটে খাওয়া মানুষের বরাদ্দ বোড়ের এক ঘর চাল। না ডান, না বাম। চৌষট্টি খোপের খেলায় সোজা পথে হেঁটে কোনাকোনি মৃত্যু। কখনও রাজা, কখনও মন্ত্রী, কখনও ঘোড়া, কখনও গজ, কখনও নৌকা - যে সুযোগ পাবে সেই মারবে। আর মূল খেলা তো বোড়ের সঙ্গে বোড়েকে লড়িয়ে দেবার। উলুখাগড়াদের নিয়ে অত ভাবার সময় কোথায়?
এবার নাকি কীসব মলমাস টাস পড়েছে। তাই পিতৃপক্ষ দেবীপক্ষে ব্যাপক লাঠালাঠি। নাহলে হিসেবমতো এতদিনে দুর্গাপুজো শেষ হয়ে যাবার কথা। মলমাসের জেরে পুজো পিছিয়ে গেলেও অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, রুটি রুজির লড়াইতে অবশ্য কোনো মলমাস নেই। তবে মা নাকি আসছেন দোলায়। ফল - মড়ক। যদিও মড়ক এবার অনেক আগেই এসে গেছে। মহামারী বা অতিমারী যাই বলি না কেন, তার ধাক্কায় দেশে ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ১১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। প্রতিদিনই যাচ্ছেন। আরও যাবেন। ট্র্যাজেডি এখানেই। এখনও বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, সরকারি ব্যর্থতার কারণে নয়। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী তবলিগি জামাত (পড়ুন মুসলমান)। করোনা আসার ছ’মাস পরেও এখনও বহু মানুষ বিশ্বাস করেন না যে, থালা বাজিয়ে, ঘর অন্ধকার করে মোমবাতি জ্বালিয়ে করোনা তাড়ানো যায়নি। বিজ্ঞানে কুসংস্কারের কোনো জায়গা নেই। ওগুলো সবই ছকবাজির একেকটা অংশ, ছেলেভোলানো খেলা। মাল বেচার প্রস্তুতিপর্ব। সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে গণ হিস্টিরিয়া তৈরির পি আর ইভেন্ট। ‘মোদীজি নে যব কিয়া, তব শোচ সমঝ করই কিয়া হোগা।’ ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। বাত মে পয়েন্ট হ্যায়। মোদী থাকলে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বেচাও মুমকিন, কর্পোরেটের ঋণ মকুব, পকেট ভরাও মুমকিন। আর ফাউ হিসেবে আচ্ছে দিনের নামে আম আদমির বরবাদিও মুমকিন।
কী যে মুশকিলের কাণ্ড। বলতে গেছিলাম একটু ভালো ভালো কথা। পাঁচ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির গল্প। কোথা থেকে ফেরিওয়ালা, ফেক নিউজ এসে একগাদা শব্দ খেয়ে ফেললো। লিখতে বসে এত গল্প বললে হয়? একটু একটু হকিকত বলতে হবে তো। এবার নাহয় তাই একটু বলি। গত ১৩ অক্টোবর, মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে আইএমএফ-এর ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুক। যে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে - অর্থাৎ ১ এপ্রিল ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ সময়ে ভারতের জিডিপির হার কমতে পারে ১০.৩ শতাংশ। যা কমে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের নিচে চলে যেতে পারে। ভারতের মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন দাঁড়াবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার। যেখানে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন দাঁড়াবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার। ডব্লুইও আশঙ্কা করছে গত চার বছরে ভারতের অর্থনীতিতে এটাই রেকর্ড পতন হতে চলেছে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত জুন মাসে আইএমএফ জানিয়েছিলো ভারতের জিডিপি কমতে পারে ৪.৫ শতাংশ। গত ৯ অক্টোবর, শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন - বর্তমান আর্থিক বছরে দেশের অর্থনীতিতে ৯.৫ শতাংশ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর আগেই বর্তমান আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপিতে ২৩.৯ শতাংশ ঘাটতির কথা জানিয়েছিলো সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিকাল অফিস বা সিএসও। ভারতের অর্থনীতির হাল যে শুধু অপরিকল্পিত লকডাউনের কারণেই হয়েছে তা নয়। করোনা আসার আগেও ভারতের অর্থনীতির হাল বেহালই ছিলো। করোনা তাকে আরও সঙ্গিন করে দিয়েছে এই যা। এসব নিয়ে তর্কাতর্কি, চায়ের দোকানে কয়েক ভাঁড় চা বেশি খাওয়া, কফি হাউসে কিছুটা বেশি সময় কাটানো যেতেই পারে। যদিও তাতে পাঁচ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির গল্পের চিঁড়ে কতটা ভিজবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাবে।
১২ অক্টোবর প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুসারে আগস্ট মাসে দেশের শিল্পোৎপাদনের হার ৮ শতাংশ কমেছে। ইনডেক্স অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন (আইআইপি)-র তথ্য অনুসারে উৎপাদনের হার ৮.৬ শতাংশ হয়েছে। পাশাপাশি খনি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ৯.৮ শতাংশ এবং ১.৮ শতাংশ কমেছে। সেপ্টেম্বরে রিটেইল ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৭.৩৪ শতাংশ। বিশেষত, খাদ্যদ্রব্যের দামের উপর নির্ভর করেই এই মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। অগস্ট মাসে কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স ছিল ৬.৬৯ শতাংশ। যা গত বছর সেপ্টেম্বরে ছিল ৩.৯৯ শতাংশ। আগস্ট মাসে যেখানে খাদ্যদ্রব্যের দাম ৯.০৫ শতাংশ ছিল, সেপ্টেম্বরে তা ১০.৬৮ শতাংশে দাঁড়ায়।
অর্থনীতি বিষয়টা বড়ো জটিল। জিডিপি, পাঁচ ট্রিলিয়ন, পারক্যাপিটা ইনকাম, কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স - শব্দগুলো শুনতে গালভরা হলেও আসলে বেশ প্যাঁচের। তাই যেটা শুনতে সহজ লাগে তাই নাহয় বলা যাক। সম্প্রতি অক্সফ্যাম কমিটমেন্ট টু রিডিউসিং ইনইকুয়ালিটি ইনডেক্স প্রকাশ করেছে। বাঙলা করলে দাঁড়াতে পারে বৈষম্য দূরীকরণ সংকল্প সূচক। এই সূচক অনুসারে - বিশ্বের ১৫৮ টা দেশের মধ্যে শ্রমিক অধিকার রক্ষার নিরিখে ভারতের স্থান ১৫১ নম্বরে। আগের ১৪১ তম স্থান থেকে আরও দশ ধাপ পিছিয়ে গিয়েছে ভারত। গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ একের পর এক বিজেপি-শাসিত রাজ্য করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই শ্রম আইন হয় বাতিল, না-হয় সংশোধনের কাজে হাত দিয়েছে। শ্রম আইনের ৪৪ টা বিধি কমিয়ে ৪ টে করার পরিকল্পনা নিয়েছিল কেন্দ্র। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা মালিকপক্ষকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। যে বিবাদের জল গড়িয়েছে আইএলও পর্যন্ত। সিআইআরআর-এর এই রিপোর্ট নতুন করে সেই প্রশ্ন আবারও উঠলো। কেন্দ্রীয় সরকার যতই সাফল্যের দাবি করুক এই রিপোর্ট অনুসারে সরকারি নীতি, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, কর ব্যবস্থা ও শ্রমিক অধিকার—সবমিলিয়ে ভারত ১২৯তম স্থানে। স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচের নিরিখে ভারত শেষের দিক থেকে ৪ নম্বরে। রিপোর্ট অনুসারে, ৭০ শতাংশ মানুষই চিকিৎসা খরচ নিজেরাই দেন।
এত শক্ত শক্ত জিনিস লিখতে গিয়ে বেশ বুঝতে পারছি এবার মাথাটা একটু টিপটিপ করতে শুরু করেছে। মাথায় অক্সিজেন কম যাচ্ছে কিনা কে জানে! মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর দাবি মতো এ রাজ্যে অবশ্য একজনেরই মাথায় অক্সিজেন কম যায় বলে রাজ্যবাসী জানে। তাই তিনি মাঝে মাঝে ‘পুলিশকে বোম মারুন’ টারুন গোছের হুমকি টুমকি দিয়ে থাকেন। আমার যেহেতু অষ্টোত্তর শতনাম নেই তাই আমার ওই সম্ভাবনা বোধহয় কম। তবে হলেও বিশেষ চিন্তার কিছু ছিলোনা। কারণ টারবাইন ঘুরিয়ে কীভাবে হাওয়া থেকে অক্সিজেন আলাদা করে তা বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে মোটামুটি আবিষ্কারের পথে। শয়নে স্বপনে জাগরণে বিক্রির ধান্দা মাথায় ঘুরলে হাওয়া থেকে অক্সিজেন কেন, আকাশ থেকে মেঘ, রোদ্দুরও হয়তো কোনদিন বেচে দেওয়া যাবে! এই যেমন দিনকয়েক আগে ডেনমার্ক-এর এক সংস্থার সিইও-র সঙ্গে অনলাইন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন - উইন্ড টারবাইন দিয়ে শুধু যে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায় তাই নয়। এই টারবাইন ব্যবহার করে পরিশ্রুত জল এবং অক্সিজেনও তৈরি করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে, টারবাইন গ্রামাঞ্চলে পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও টারবাইনের মাধ্যমে হাওয়া থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করা যেতে পারে। বিজ্ঞানের ব্যবস্থা কিছুটা উন্নত করতে পারলেই। যেখানে এই টারবাইন লাগানো হবে সেখানে ওপর দিয়ে যে হাওয়া যাবে তা থেকে কীভাবে অক্সিজেন সংগ্রহ করা যায় সেটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কিন্তু যদি হাওয়া থেকে অক্সিজেন আলাসদা করা যায় এবং এই অক্সিজেনের বাজার ধরা যায় তাহলে এক টারবাইন থেকে পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং অক্সিজেন সংগ্রহ তিনটে কাজ করা যাবে। কাজেই আগামীদিনে আরএসএস-এর ‘মা দুর্গা’র চ্যালার অক্সিজেনের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
ফেরিওয়ালা দিয়ে শুরু করে ফেক নিউজ হয়ে জিডিপি, অক্সিজেন - বহু কিছু বলা হয়ে গেছে। লেখাটা এখানেই শেষ করতে পারলে হয়তো আপনি কম বিরক্ত হতেন। কিন্তু আরও দু’একটা কথা না বললে মুড়িঘণ্টর স্বাদ ভালো হবেনা। মুড়োটাই তো এখনও দেওয়া হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে এক বেসরকারি জুয়েলারি সংস্থার বিজ্ঞাপন নিয়ে দেশজুড়ে যা হলো এবং সেই সংস্থা তাঁদের বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নিয়ে যেভাবে আত্মসমর্পণ বা সমঝোতা করল তা বড়ো খারাপ ইঙ্গিত দেয়। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরির এই খেলা, এ বিপদ গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে। উত্তর- পূর্ব দিল্লি হিংসার ঘা এখনও দগদগে। তার পরেও গত ছ’মাসের করোনা বিপর্যয়ের সময়েও এই প্রবণতা যে একটুও কমেনি এই ঘটনা তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল। করোনার সময়ে তবলিগি জামাত, পালঘড় গণপিটুনি নিয়ে মিথ্যা প্রচার, মুম্বাইতে স্টেশনের ধারে অভিবাসী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরতে চেয়ে জমায়েত ঘিরে সাম্প্রদায়িক প্রচার, রাস্তায় অপছন্দের ধর্মের নিরীহ সবজি বিক্রেতাকে নৃশংস মার, ফেসবুক ট্যুইটারে ঘৃণা সূচক পোস্ট - সবই আমরা দেখেছি, হজম করে নিয়েছি, ভুলে গেছি। যদিও রাজনীতির ফেরিওয়ালাদের রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম না জুড়ে দিতে পারলে ক্ষমতার স্বাদ পুরোপুরি উপভোগ করা হয়ে ওঠে না। তাই ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে বিদ্বেষের চাষ চলছে গোপনে, প্রকাশ্যে, হোয়াটস অ্যাপে, ফেসবুকে, ট্যুইটারে।
নিজের জ্ঞানগম্যি যেহেতু খুবই কম তাই রবীন্দ্রনাথের শরণ না নিলে কিছুতেই বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজে পাইনা। এটা ১৪২৭। তিনি ১৩১৪ বঙ্গাব্দে তাঁর ‘ব্যাধি ও প্রতিকার’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন - “…শাস্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্বন্ধে পরস্পরকে এমন করিয়া ঘৃণা করিবার তো কোনো বিধান দেখি না। যদি-বা শাস্ত্রের সেই বিধানই হয় তবে সে শাস্ত্র লইয়া স্বদেশ-স্বজাতি-স্বরাজের প্রতিষ্ঠা কোনোদিন হইবে না। মানুষকে ঘৃণা করা যে দেশে ধর্মের নিয়ম, প্রতিবেশীর হাতে জল খাইলে যাহাদের পরকাল নষ্ট হয়, পরকে অপমান করিয়া যাহাদিগকে জাতিরক্ষা করিতে হইবে, পরের হাতে চিরদিন অপমানিত না হইয়া তাহাদের গতি নাই।…”