E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৮ সংখ্যা / ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ / ১ পৌষ, ১৪২৮

১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুরসভার ভোট


৯১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআই(এম) প্রার্থী সুরজিৎ সেনগুপ্তর সমর্থনে মিছিল।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের রায় অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। কমিশনের তরফে তৎপরতা শুরু হলেও এই সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কতটা নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই বিরোধী দলগুলির তরফের জমা পড়া বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশনের শ্লথতায় সংস্থার দায়বদ্ধতার অভাব নিয়েও বারবার প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।

১৫ ডিসেম্বর রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে কলকাতার সমস্ত বুথে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হবে। ভোট গণনা কেন্দ্রেও এই ক্যামেরা লাগানো হবে বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে। ২১ ডিসেম্বর কলকাতার ভোট গণনা হবে ১৩ থেকে ১৬ রাউন্ড এর মধ্যে। আবার ১৫ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যে ১১১ টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে। কবে নির্বাচন হচ্ছে কত দফায় নির্বাচন হচ্ছে তা ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে। কর্পোরেশন নির্বাচন সংক্রান্ত বিজেপি’র তরফে করা একটি মামলা এখনও সিঙ্গল বেঞ্চে শুনানির জন্য রয়েছে। ওই মামলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় পৌর ভোট গ্রহণ করার আরজি জানানো হয়েছিল। ওই মামলার ১৬ ডিসেম্বর শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৪ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিটি বুথের পাশাপাশি স্ট্রং রুমেও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।

এদিকে ভোট যতই এগিয়ে আসছে ততোই মরিয়া হয়ে উঠছে শাসকদল। তৃণমূলের অন্দরমহল স্নায়ুচাপে ভুগছে ভোটারদের আপাত নিস্পৃহতায়। ওদিকে ১৪১টি ওয়ার্ডের পুরবাসীদের ক্ষোভের আঁচ নানা সূত্রে পৌঁছে গিয়েছে তাই উন্নয়ন তো দূরের কথা লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের প্রভাব নিয়েও নিশ্চিন্ত হওয়ার জায়গায় নেই ঘাসফুলের পার্টি। তাই দরকারে সব কিছু করার নিদান দিয়েছেন স্বয়ং নেত্রী।

বিজেপি’র কোনো আশা নেই এখানে, তাই বিজেপি নেতাদের কোনো উৎসাহ নেই পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে। তারা তৃণমূলকে এখন কোনো ধাক্কা দিতে চায় না। হাল বুঝে বিজেপি কর্মীরা ভিড়ছেন তৃণমূলে। শেষ মুহূর্তে এই ভিড় আরও বাড়ছে। কারণ বামফ্রন্টের ভোট বেড়ে যাওয়ার সমস্ত সম্ভাবনাই স্পষ্ট। তাই যাঁরা আগে বিজেপি’কে ভোট দিয়েছেন তাঁরা এখন কি করবেন এই প্রশ্নের উত্তরে কলকাতার এক বিজেপি’র প্রার্থী বলেছেন , ‘ সিপিএমে কিছু ভোট চলে যেতে পারে দু’দিক থেকেই আমাদের ক্ষতি হবে’। তবে বিজেপি প্রার্থীরাও বলছেন, তৃণমূল চোরাগোপ্তা হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু বামফ্রন্ট প্রার্থীদের, সিপিআই(এম) কর্মীদের অবশ্য চোরাগোপ্তা নয় প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলীরা।

কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করেও তৃণমূল জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। ইভিএমে ভোটাররা ঘাসফুলের পাশের বোতাম টিপবেন কিনা সে ব্যাপারে রয়েছে প্রবল ধন্ধ। কারণ বর্ষায় নগরবাসীর দুয়ারে জল এবং আমফানের টাকা লুট থেকে বেআইনি প্রমোটিং, বেআইনি বহুতল, পরিবেশ বিধি শিকেয় তুলে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি লুট, করপোরেশনে ২৮ হাজার স্থায়ী পদ ফাঁকা, মোদি মমতার সৌজন্যে আকাশছোঁয়া পেট্রোল-ডিজেলের দাম, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, টেট পরীক্ষায় দুর্নীতি, কর্পোরেশনের স্কুলে স্কুলছুট-এর সংখ্যা বৃদ্ধি, ভয়ঙ্কর মহামারীর মধ্যেও টিকা জালিয়াতি, মজুরিতে ভাগ বসানো তৃণমূলীরাজ, কাজের অনিশ্চয়তা, বস্তি উচ্ছেদ, মেয়র থেকে ডেপুটি মেয়র সহ সবধরনের তৃণমূলী পৌর প্রতিনিধিদের লাগাতার সম্পদ বৃদ্ধি সমস্তই যাচ্ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে, শাসকদলের বিরুদ্ধে। সিন্ডিকেট, ক্লাব এবং সিভিক পুলিশ দিয়ে এই ক্ষত মেরামত করা যাবে না সে সম্পর্কে নিশ্চিত ববি হাকিমরা। তাই বৈভব প্রদর্শন করে মানুষকে প্রভাবিত করার নির্লজ কৌশল নিচ্ছে তারা।বাজারি পত্রিকা অবশ্য নেমে পড়েছে বেকায়দায় পড়া তৃণমূলের পাশে। তাই ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে উৎসুক দুই তৃণমূল মেয়র ববি হাকিম এবং শোভন চ্যাটার্জিকে দিয়ে খতিয়ান উগরিয়েছে তারা। তাতে অবশ্য সমস্যা বেড়েছে বৈ কমেনি। যেখানে শোভন চ্যাটার্জি বলেছেন,’ মাঝে মাঝে অন্ধকারে হাতড়াই আর ভাবি এরা করছেন কি? নতুন কোনো কাজ তো নেইই উলটে আমি মেয়র থাকাকালীন হাতে নেওয়া কাজগুলো শেষ হলো না। নির্বাচনী ইস্তাহারেও কাজের চেয়ে অকাজের কথাই বেশি। শুধু গালভরা গল্প আছে বাস্তব নেই’।

আবার ববি হাকিমের যে কথা নিয়ে রাজ্যজুড়ে হাসির রোল উঠেছে তা হলো, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বিল্ডিং বিভাগের বেআইনি বাড়িকে আইনি করার ব্যবস্থাটা তুলে দিই’।

আর মমতা ব্যানার্জি নির্বাচনী জনসভায় যা বলেছেন সেটায় বোধোদয়ের থেকে খড়কুটো আকরানোর চেষ্টাই বেশি। তাঁর বক্তব্যকে অবশ্য তরুণ ভোটাররা ২০২১ সালের সেরা রসিকতা বলে মনে করছেন। ১৫ ডিসেম্বর উত্তর কলকাতার ফুল বাগানে পুরভোটের প্রথম প্রচারে গিয়ে তৃণমূলেশ্বরী বলেছেন, ‘...আগামীদিনে আমাদের লক্ষ্য রাজ্যের শিল্পায়ন আর কর্মসংস্থান তৈরি করা ...দেখিয়ে দেবো ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করে’!