৬০ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ৪ ফাল্গুন, ১৪২৯
রাজ্য বাজেট - প্রতারণা ও দিশাহীনতার জ্বলন্ত সাক্ষ্য
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কাজের সুযোগ সৃষ্টি, পরিকাঠামো উন্নয়ন, গ্রামোন্নয়ন, থেকে সামাজিক সুরক্ষা - রাজ্যের অগ্রগতির প্রধান ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ কমিয়ে আর্থিক বিকাশের সম্ভাবনাকে কার্যত শূন্য করে দেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে এবারের রাজ্য বাজেটে। ১৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় ২০২৩-২৪ সালের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সিএজি’র সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে এ রাজ্যের বাজেটের উল্লিখিত অর্থ বরাদ্দ এবং বাস্তবে তার প্রকৃত ব্যয়ের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই আর্থিক অরাজকতার ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেই এই বাজেট পেশ করা হয়েছে, যেখানে উত্তরণের কোনো দিশা নেই, রয়েছে ভাঁওতা। মুখ্যমন্ত্রী যদিও দাবি করেছেন এই বাজেট কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তৈরি, সেই দাবিকে ভিত্তিহীন বলেছেন সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী।
বাজেটে মূলধনী খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। কর্ম সংস্থানের কোনো নতুন ঘোষণা নেই, নেই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নতুন কোনো ঘোষণা। রাজ্যের ৩৩৫৭টি পঞ্চায়েতের গ্রামোন্নয়নের চালু প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি নামমাত্র- ১৪২২ কোটি টাকা। আর্থিক বিকাশের জন্য গত বছরের বরাদ্দ ছিল ৫৭,০৪৯.২০ কোটি টাকা। এবছর মাত্র ১৩৬ কোটির মতো বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৭,১৮৭.৯৪ কোটি টাকা। আবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো চিরকুট থেকে দেখে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য মাত্র ৩ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করলেও বাজেট প্রস্তাবে লিখিতভাবে এর কোনো উল্লেখ নেই যা কার্যত প্রতারণার শামিল। ডিএ নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলনরত রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা এর প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। বাজেটে মদ বিক্রি থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা আয়ের পথ দেখানো পাশাপাশি ঋণকে আয়ের সূত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, রাজ্য চলবে ধারের টাকা আর মদ বিক্রির টাকায়।
আদানির হাতে তুলে দেওয়া দেউচা পাঁচামি নিয়ে সরকার কী করতে চায় তার উল্লেখ থাকলেও ঘটা করে ঘোষণা করা তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে ওই গোষ্ঠীর বিনিয়োগ নিয়ে কোনো কথা নেই বাজেটে। তেমনই নেই গণ্ডা গণ্ডা শিল্প সম্মেলন থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাবের বাস্তবায়নের হদিশ।
অদ্ভুত বিষয় হলো, বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে যে পরিমাণ আয় হবে বলে রাজ্য সরকার দাবি করেছে বাজেট প্রস্তাবে, তার ২৫.৪ শতাংশ আসবে বাজার থেকে ধারের মধ্যে দিয়ে। ধার যে বাড়তেই থাকবে তা সরকারের গত ১১ বছরের বাড়তি ঋণের বোঝা থেকেই পরিষ্কার। বামফ্রন্ট সরকারের তুলনায় তার সরকার সফল এ কথা মমতা ব্যানার্জি গায়ের জোরে বলার চেষ্টা করলেও শুধু ঋণের প্রসঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার ৯১৯. ৯ কোটি টাকা, এখন যা বেড়ে প্রায় তিনগুণ।
রাজ্যের জনসংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে আর রাজ্য সরকারের ঋণ ছুঁয়েছে প্রায় ছয় লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজ্যবাসীর মাথাপিছু ঋণ প্রায় ৬০ হাজার টাকা। বাজেটের সরকারি নথিতেই জানানো হয়েছে, আগামী আর্থিক বছরে সেই ধার ৪৭ হাজার ৮২৫. ৫২ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে।
বাজেট সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ভুল তথ্য দিয়ে হাস্যকর বাজেট পেশ করেছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী যদিও দাবি করেছেন এই বাজেট কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তৈরি, সেই দাবিকেও ভিত্তিহীন বলেছেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি লেদার কমপ্লেক্সের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, গাদাগুচ্ছের ভুল তথ্য পেশ করা হয়েছে। ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা সম্পর্কে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের ফের অপমান করলেন। কেন্দ্রীয় সরকার ডিএ ঘোষণা করলে বকেয়া ফের ৩৬ শতাংশে পৌঁছাবে মার্চ মাসে। রাস্তাশ্রী নামের নতুন প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, ঠিকাদারদের পাওনা মেটাতে পারছে না সরকার, মোটা টাকা তোলা দিয়ে কাজ করতে রাজি হচ্ছে না ঠিকাদাররা। নতুন প্রকল্প ঘোষণয় লাভ হবে না গ্রামের মানুষের। দেউচা পাঁচামি প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার দাবি করেছে দেড় লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। কবে কয়লা উঠবে কেউ জানে না তা। তার আগেই বহু মানুষ জীবিকা হারাবেন, আর মমতা ব্যানার্জি সেই প্রকল্পকে কর্মমুখী বলে দাবি করছেন!