৬০ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ৪ ফাল্গুন, ১৪২৯
কলকাতায় নওসাদ সিদ্দিকি সহ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে সুবিশাল প্রতিবাদ মিছিল
কলকাতায় বামফ্রন্ট সহ বিরোধীদের ডাকা মহামিছিল।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ রাজ্যে মিথ্যা মামলায় নির্বাচিত বিধায়ককে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে, দুষ্কৃতীরা খুলে-আম অবাধে দৌরাত্ম্য করে বেড়াবে, আর চোর জালিয়াতরা থাকবে বহাল তবিয়তে তা আর চলতে দেওয়া হবে না - জানিয়ে দিল কলকাতায় বামফ্রন্ট সহ বিরোধীদের ডাকা মহামিছিল। ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা অচল করা সুবিশাল মিছিল থেকে নওসাদ সিদ্দিকি সহ মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বাকি রাজনৈতিক বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে এরপর গোটা বাংলা স্তব্ধ হয়ে যাবে বলে পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে দিলেন সাধারণ মানুষ।
রামলীলা ময়দান থেকে রানী রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত আয়োজিত এই মিছিল থেকে অসংখ্য প্রতিবাদী প্লাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন আর উত্তাল স্লোগানমুখর কণ্ঠ জানিয়ে দিল তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ছে। অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ, দুর্নীতি এবং দলদাস পুলিশ এবং প্রশাসনের নির্যাতনের জেরে শাসক তৃণমূলের পা থেকে মাটি সরতে আরম্ভ করেছে।
এদিকে কলকাতা শহরজুড়ে বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে যখন আন্দোলন চলছে, তখন হেয়ার স্ট্রিট থানার মামলায় চার্জশিট পেশের পরেও নতুন মামলা সাজিয়ে আটকে রাখা হলো নওসাদ সিদ্দিকীকে। ফের মিথ্যা মামলায় বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীকে নিজেদের হেপাজতে নিলো কলকাতা পুলিশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁকে হেপাজতে নিলো নিউমার্কেট থানা। পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশেই লালবাজার এই চক্রান্তে নেমেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বিধায়ক নিজেও একই অভিযোগ করেছেন আগেই।
এদিন বেলা দেড়টা নাগাদ শুরু হয় মিছিল। মৌলালি পেরিয়ে এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে এগিয়ে রানী রাসমণি রোডে শেষ হয় মিছিল। মিছিল শুরুর আগে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, গণতন্ত্রের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনের প্রতিবাদ আরও জোরালো হবে।
সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিন সাংবাদিকদের বলেন, বিরোধী কণ্ঠ রোধ করাই হলো আরএসএস এবং তৃণমূলের গেমপ্ল্যান। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় একমাত্র বিরোধী বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। নওসাদকে কিনতে চেয়েছিল পারেনি, তাই মিথ্যা মামলা দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি চাননা প্রতিবাদী মুসলমানরা এক জায়গায় আসুক। তাই ভয় পেয়ে ভাঙড় কাণ্ড ঘটিয়েছেন। মমতা ব্যানার্জি তাঁর পক্ষের মোল্লা মৌলবীকে মঞ্চে বসাতে পারেন কিন্তু গরিবের কথা বলে এমন কোনো মুসলিম জননেতাকে সহ্য করতে পারেন না। আমরা কাপ্পান সিদ্দিকীকে দেখেছি নওশাদ সিদ্দিকীকেও দেখছি। যোগীর পুলিশ, মোদির পুলিশ, মমতার পুলিশ একই রকম আচরণ করে।
সিপিআই(এম), সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক সহ বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি ছাড়াও আইএসএফ, ওয়েলফেয়ার পার্টি এবং আরও বহু সংগঠন তাদের পতাকা নিয়ে এই মিছিলে শামিল হয়। বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম ছাড়াও মিছিলে ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা শমীক লাহিড়ী, অনাদি সাহু, কল্লোল মজুমদার, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা জীবন সাহা, আইএসএফ নেতা শামসুর আলি মল্লিক, লক্ষীকান্ত হাঁসদা প্রমুখ।
এদিন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয় মিছিল। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সভায় মীনাক্ষী মুখার্জি সহ আরসিপিআই নেতা মিহির বাইন, সিপিআই নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপি নেতা মহম্মদ শফিউল্লাহ সহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন সমস্ত চোরেরা থাকবে জেলের ভেতরে। কারণ স্বৈরাচারীরা শেষ কথা বলে না, শেষ কথা বলবে সাধারণ মানুষ।