E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ৪ ফাল্গুন, ১৪২৯

আদালতে নিয়োগ দুর্নীতি কার্যত কবুল রাজ্য সরকারের


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ এরাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি যে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে তা নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত ও হাইকোর্টের রায়ে প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক শীর্ষ আধিকারিক, পর্ষদ কর্তা এবং তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-মাতব্বররা বেআইনিভাবে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি দিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলেছে। এই পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২,৮২০ জন শিক্ষাকর্মীর চাকরির সুপারিশ বাতিল করতে নির্দেশ দেয় এসএসসি-কে। আদালতের নির্দেশের পর যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের যে নিয়োগ করা হয়েছে, তা কার্যত মেনে নিতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার। সেই অনুযায়ী প্রথম দফায় ১,৯১১ জন শিক্ষাকর্মীর নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এসএসসি জানিয়েছে, এই চাকরি প্রার্থীদের নাম প্রত্যাহার করা হলো।

এই সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্ট তার নির্দেশে বলেছে বেআইনি চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। এদের বেতন বন্ধ হবে। এতদিন যে বেতন পেয়েছেন তা কয়েক দফায় ফিরিয়ে দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক থেকে শুরু করে একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ এবং গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে সিবিআই যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা আদালতের পর্যবেক্ষণেই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সিবিআই আদালতে যে রিপোর্ট জমা দিচ্ছে তা গোপন থাকছে।

নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের একটি বড়ো অংশ আদালতের হাতেই রয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে গ্রুপ ডি পদে যে নিয়োগ হয়েছে তার ৫০ শতাংশের বেশি বেআইনিভাবে হয়েছে। এই ৫০ শতাংশকে এখনো চিহ্নিত করেনি এসএসসি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্রথম দফায় মাত্র ১,৯১১ জনের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে তারা। হাইকোর্ট বেআইনিভাবে এই নিয়োগ বাতিল করার পর বলেছে, যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে। একথা বলার পাশাপাশি এসএসসি-কে সতর্ক করে হাইকোর্ট বলেছে, ওয়েটিং লিস্টে যে সমস্ত প্রার্থীরা রয়েছেন, এখনই সেখান থেকে নিয়োগ করা যাবে না। কারণ ওই ওয়েটিং লিস্টে যাদের নাম রয়েছে, সেখানেও ওএমআর বিকৃত করে নাম ঢোকানো রয়েছে।

এদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে মুখ খুলতে বলেছেন। এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সুবীরেশ ভট্টাচার্যের পরিবারকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার মধ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এই নির্দেশও দিয়েছেন যে, যতদিন না নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছেন, ততদিন তিনি তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রি এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ব্যবহার করতে পারবেন না। ওএমআর শিট বিকৃত করে যখন চাকরি দেওয়া হয়েছে তখন তিনিই ছিলেন এসএসসি’র চেয়ারম্যান। ফলে এই মামলায় তাঁকে যুক্ত করা হচ্ছে।

এদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা-দুর্নীতির মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন ফের খারিজ করে দিয়েছে আদালত। বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, তদন্তকারী সংস্থার কেস ডায়েরিতে তদন্তের যে গতিপ্রকৃতি দেখা যাচ্ছে, সেই অনুযায়ী দুর্নীতিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জড়িত থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, এই অবস্থায় তিনি জামিন পেলে সাক্ষ্য ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা যে হবে না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

এছাড়া এদিনের শুনানিতে বিদ্যাসাগরকে সামনে রেখে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, কেউ আজীবনের সাধনায় কীভাবে শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে এক শতাব্দী এগিয়ে দেন, আর কেউ কেউ কী করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পিছিয়ে দেন একশো বছর - সেই প্রসঙ্গে এদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং পার্থর নাম উঠে আসে আদালতে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সিবিআই তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি বর্তমানে হাজতে থাকা মানিক ভট্টাচার্যের পুত্র সৌভিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লুক আউট নোটিশ জারি করেছে। প্রসঙ্গত, গত ৭ ডিসেম্বর আদালতে ১৫০ পাতার যে চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি তাতে নিয়োগ কেলেঙ্কারির মূল হোতা মানিক ভট্টাচার্য, তাঁর স্ত্রী, পুত্র এবং তৃণমূল ঘনিষ্ঠ শিক্ষা ব্যবসা‌য়ী তাপস মণ্ডলের নাম রয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকার লেনদেনের তদন্তেই বারে বারে সামনে আসে কীর্তিমান এই বিধায়ক পুত্রের নাম। জানা যাচ্ছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে টাকার লেনদেনে পরিবারের অ্যাকাউন্টগুলিও ব্যবহার করেন মানিক ভট্টাচার্য।