৬০ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ৪ ফাল্গুন, ১৪২৯
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা বর্তমান সময়ে জরুরি প্রয়োজন
সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটি আয়োজিত ডিজিটাল সামিট থেকে ঘোষণা
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ডিজিটাল সামিট-এ বক্তব্য রাখছেন সূর্য মিশ্র।
হেঁটে অথবা নেটে - এই বিষয়ে বিতর্ক অপ্রয়োজনীয় হলেও বিগত কয়েক বছর ধরেই সেই বিতর্ক চলছে। বামপন্থীদের কাছে রাস্তায় থাকাটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে সঙ্গী করে বাম প্রচার আরও বেশি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এখানে কোনো বিতর্কের প্রশ্নই নেই। আমরা যতটা রাস্তায় আছি ততটাই নেটেও আছি এবং সেই মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যেই এই ডিজিটাল সামিট। ১১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার কলকাতা নিউটাউনের রবীন্দ্র তীর্থে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি আয়োজিত ডিজিটাল সামিট থেকে এই তথ্যই উঠে এসেছে।
সামিটে বিভিন্ন বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া, করপোরেট মিডিয়া, গোদি মিডিয়ার একপেশে প্রচার আক্রমণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আসন্ন লড়াই সংগ্রামের প্রচারের ক্ষেত্রে নিজেদের আরও শাণিত, সংহত করে নেওয়ার চেষ্টাতেই এই সামিট। অসম লড়াই লড়তে নেমে নিজেদের হাতে যতটুকু অস্ত্র আছে সেই অস্ত্রকে আরও ভালো করে চিনে নেওয়া, বুঝে নেওয়া, প্রয়োগ শিখে নেওয়া।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ ডিজিটাল সামিটের উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারি না। পেশাদারদের নিয়োগ করতে পারি না। তাই আমরা আমাদের কর্মী বাহিনীর মধ্যে থেকেই এই লড়াইকে সংহত করার চেষ্টা করছি। আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচারকে নিচুতলায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’
তিনি আরও বলেন, আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের সাথে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা। ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম এই মুহূর্তের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার পেছনের অন্যতম চালিকাশক্তি। আজকাল রাজনৈতিক প্রোগ্রামিংয়ের মূল উপাদানগুলির মধ্যে একটি হলো প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার। ২০১৯ সাল থেকে এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।
ডিজিটাল সামিটে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘মিথ্যাকে সত্য করার প্রচার চলছে। ডিজিটাল মিডিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। রাজ্য ও দেশের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। এর প্রতিরোধে বামপন্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। রাস্তায়, মাঠে লড়াইয়ের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারকেও গুরুত্ব দিতে হবে।’’ রাজ্যের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মিশ্র আরও বলেন, “মিথ্যা ও দুর্নীতির জাল ছিঁড়ে জনগণের পঞ্চায়েত গড়তে হবে।”
নিউটাউনের রবীন্দ্রতীর্থে আয়োজিত ডিজিটাল সামিটের স্লোগান ছিল - ‘হেঁটেও আছি, নেটেও আছি’। অর্থাৎ রাস্তায় থাকার পাশাপাশি বামপন্থীরা নেটেও সক্রিয়। রাজ্যের সব জেলার প্রতিনিধিরা এই ডিজিটাল সামিটে অংশ নেন এবং মতবিনিময় করেন। সম্মেলনের সমাপ্তিসূচক বক্তব্য পেশ করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ১২১ জন প্রতিনিধি (১৩ জন মহিলা এবং ১০৮ জন পুরুষ) সহ মোট ১৭৬ জন এই সামিটে অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ছিলেন রাজ্য কেন্দ্রের ১৫ জন, রাজ্য সোশ্যাল মিডিয়া পার্টি টিমের ১২ জন, অন্যান্য সদস্য ১০ জন, ইএসডিএ এবং ওয়েবসাইট থেকে ৬ জন, সিটু-র পক্ষে ২ জন, হিন্দি ২ জন, এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই-এর পক্ষ থেকে ২ এবং ১ জন এবং বিবিধ ক্ষেত্রের ২ জন সদস্য।
সামিটের দ্বিতীয় পর্বে ‘সোশ্যাল মিডিয়া ও আমাদের ভূমিকা’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সান্ত্বন চট্টোপাধ্যায়। ‘বিকল্প মাধ্যম’ প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক অঞ্জন বেরা। অধ্যাপক নন্দিনী মুখোপাধ্যায় ‘আধুনিক প্রযুক্তি এবং আমাদের কাজের পদ্ধতি’ সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করেন। ‘সাইবার আইন’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন আইনজীবী শামিম আহমেদ এবং অধ্যাপক ঈশিতা মুখোপাধ্যায় ‘জেবিসিএসএসআর’ প্রসঙ্গে বক্তব্য পেশ করেন। সামিটের এই পর্বে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য অতনু সাহা।
দলীয় নেতাদের বক্তব্যের পাশাপাশি প্রতিনিধিদের বিভিন্ন ‘রাউন্ড টেবিল’, ‘ক্লিনিক’ এবং ‘ওরিয়েন্টেশন’-এ ভাগ করে মত বিনিময় হয়। যার মধ্যে পোর্টাল এবং ওয়েবসাইট-এর রাউন্ড টেবিলে আলোচনায় অংশ নেন ৪৪ জন। ভিডিয়োগ্রাফির রাউন্ড টেবিলে ৩০ জন, গ্রাফিক্স এবং বিবিধ বিভাগে ২৮ জন করে এবং ট্যুইটার রাউন্ড টেবিলে ২৬ জন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তিনটি ওরিয়েন্টেশন টেবিলে বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পলাশ দাশ, অতনু সাহা, অজয় দাশগুপ্ত, প্রসূন ভট্টাচার্য, শতরূপ ঘোষ, মধুজা সেন রায় এবং সুদীপ সেনগুপ্ত।
সেশনে তাত্ত্বিক সমীক্ষার সারাংশ সহ ভিডিয়ো তৈরি করা থেকে শুরু করে গ্রাফিক্স বা পোস্টার তৈরি করা পর্যন্ত প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়। এছাড়াও বিষয়বস্তুকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় সেই বিষয়েও বিভিন্ন জেলা থেকে সুস্পষ্ট প্রস্তাব পেশ করা হয়। প্রচারে জেলা বা স্থানীয়-পর্যায়ের বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। আলোচনা থেকে যান্ত্রিক এবং প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা উঠে আসে।