৫৭ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ১৭ জুলাই ২০২০ / ১ শ্রাবণ ১৪২৭
কবি ভারভারা রাও সহ বিনা বিচারে বন্দি রাজনৈতিক ও সমাজকর্মীদের মুক্তি ও চিকিৎসার দাবি সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশের বিভিন্ন জেলে বন্দি বিশিষ্ট কবি-বুদ্ধিজীবী ভারভারা রাওসহ রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মী অনেকেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁদের সবাইকে মুক্তির দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। সিপিআই(এম)-র পক্ষ থেকে এদের যথোপযুক্ত চিকিৎসার দাবিও জানানো হয়েছে।
এদিকে অবিলম্বে মেডিক্যাল পরীক্ষার দাবি জানিয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে ১৩ জুলাই বোম্বে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছেন জেলবন্দি কবি, সমাজকর্মী ভারভারা রাও।
এর পাশাপাশি সিপিআই(এম) মহারাষ্ট্র রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকেও নবি মুম্বাইয়ের তালোজা কারাগারে বন্দি অশীতিপর কবি ও বুদ্ধিজীবী ভারভারা রাওয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে অবিলম্বে তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তরের দাবি জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগে বিনাবিচারে ২২ মাস ধরে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্য তাঁকে এভাবে বিনাবিচারে বন্দিজীবন কাটাতে হচ্ছে। সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তাঁর শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে, তিনি একা হাঁটাচালা করতে পারছেন না, এমনকি সাহায্য ছাড়া দাঁত ব্রাশও করতে পারছেন না। তাঁর সোডিয়াম-পটাশিয়াম লেভেল ক্রমাগত কমছে, যা আরও কমতে থাকলে তাঁর মস্তিষ্ককে স্থায়ীভাবে ক্ষতি করতে পারে। পার্টির মহারাষ্ট্র রাজ্য কমিটির ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে: বিভিন্ন কারাগারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এই অবস্থায় চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকা ভারভারা রাও ভয়াবহ প্রাণঘাতী অবস্থার মুখে পড়তে পারেন। তাঁর পাশাপাশি ভীমা কোরোগাঁও মামলায় ডঃ আনন্দ তেলতুম্বদে, গৌতম নভলখা, সুধা ভরদ্বাজ, অধ্যাপিকা সোমা সেনদের মতো অনেকেই বিনা বিচারে বিভিন্ন জেলে বন্দি রয়েছেন। এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। পার্টির মহারাষ্ট্র রাজ্য কমিটি কোভিড-১৯ এর বিপজ্জনক সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে এই সমস্ত বন্দির মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, কবি ভারভারা রাওকে জনপ্রতিবাদের জেরে গত ১৩ জুলাই মুম্বাইয়ের জে জে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অসমেও বিজেপি সরকার কৃষক নেতা অখিল গগৈকে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করে গুয়াহাটি জেলে বন্দি করে রেখেছে। জেলে তিনি করোনা সংক্রমিত হওয়ায় তাঁকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। এমনই এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এই রাজনৈতিক ও সমাজকর্মীদের অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন জানিয়েছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষবিদ থেকে সমাজ কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, জেলবন্দি রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীদের কেউ কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অতিরিক্ত কয়েদিদের ভিড়ে জেলের ভিতরের পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয়। সাধারণ সুযোগ-সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এরফলেই তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। এঁদের অনেকেরই কো-মর্বিডিটি আছে এবং দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা ওষুধ খেয়ে আসছেন।
এ প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো আরও বলেছে, অখিল গগৈ-র কোভিড পটিজিভ ধরা পড়েছে। ভারভারা রাওয়ের শারীরিক অবস্থাও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জেলে আবদ্ধ এবং অস্বাস্থ্যকর অবস্থার জন্য গৌতম নভলখা, আনন্দ তেলতুম্বদে, সুধা ভরদ্বাজ, সোমা সেনের মতো প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মীরা যে কোনো সময়ে করোনা সংক্রমিত হতে পারেন। অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের মধ্যে অধ্যাপক সাইবাবার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তিনি ৯০ শতাংশ শারীরিক দিক থেকে প্রতিবন্ধী, ১৯টি রোগে আক্রান্ত। যার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে আবার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, এমনকি রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষ দূত গত বছর তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন।
একারণেই সমস্ত রাজনৈতিক বন্দির অবিলম্বে জামিন এবং তাঁদের যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবার দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।