E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ১৭ জুলাই ২০২০ / ১ শ্রাবণ ১৪২৭

কমরেড পদ্মনিধি ধরের জীবনাবসান


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সিপিআই(এম) হাওড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রাক্তন সদস্য ও প্রাক্তন বিধায়ক কমরেড পদ্মনিধি ধরের জীবনাবসান হয়েছে। ১০ জুলাই রাত বারোটায় বালির নিশ্চিন্দায় বাসভবনেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তিনি ভুগছিলেন, কয়েকদিন আগেই নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীনও ছিলেন। বাড়িতে ফেরার তিনদিনের মধ্যেই তিনি প্রয়াত হলেন।

কমরেড পদ্মনিধি ধরের স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই কন্যা রয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম)’র হাওড়া জেলার নেতৃবৃন্দ। ১১ জুলাই তাঁর মরদেহ পাটির হাওড়া জেলা কমিটির দপ্তর অনিল বিশ্বাস ভবনে নিয়ে আসা হলে পার্টির রক্ত পতাকা ও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, পাটি নেতা দীপক দাশগুপ্ত, পার্টির জেলা কমিটির সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার সহ নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন গণসংগঠনের পক্ষ থেকেও কমরেড পদ্মনিধি ধরের মরদেহে মাল্যদান করা হয়। ১১ জুলাই রাতে বালি পাঠক পাড়া শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। কমরেড পদ্মনিধি ধরের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র। শোক জ্ঞাপন করে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, দীপক দাশগুপ্ত ও বিপ্লব মজুমদার সহ নেতৃবৃন্দ।

১৯৩৫ সালের ২২ জুলাই বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বানোয়ারিপাড়ার বাইশআড়ি গ্রামে পদ্মনিধি ধরের জন্ম। বাইশআড়ি হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি পরিবারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। বেলুড় টিফিন বাজার এলাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তখন বেলুড় স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তী কালে ভদ্রকালী ক্যাম্প ঘুরে নিশ্চিন্দা ২নং কলোনিতে উদ্বাস্তু প্লট পেয়ে চলে আসেন। ভর্তি হন বালি শান্তিরাম বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে। সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন পেশায় কঠিন সংগ্রাম করেছেন তিনি। ট্রেনে ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকা বিক্রি, একসরা থেকে সবজি এনে ঘোষপাড়া বাজারে বিক্রি, বেলুড়ে ন্যাশনাল রবারে ২টাকা রোজের শ্রমিকের চাকরি, এইরকম জীবন সংগ্রামের মধ্যেই প্রাইভেটে বিএ এবং এমএ পাশ করেন। পরে শিক্ষকতা করেন প্রথমে দুর্গাপুর পল্লিমঙ্গল বিদ্যামন্দিরে, পরবর্তীতে নিশ্চিন্দা চিত্তরঞ্জন বিদ্যালয়ে।

উদ্বাস্তু জীবনের কঠিন সংগ্রামের মধ্যেই কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন কমরেড পদ্মনিধি ধর। ১৯৫৪ সালে প্রয়াত কমরেড পতিতপাবন পাঠক ও প্রয়াত কমরেড নন্দদুলাল ব্যানার্জিদের প্রচেষ্টায় বালি গ্রামাঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম শাখা গড়ে ওঠে চারজনকে নিয়ে। কমরেড পদ্মনিধি ধরছিলেন তাঁদের অন্যতম। বালি গ্রামাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক, কৃষক ও ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের দাবির আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৬ সালে পার্টির কোনা লোকাল কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬০ সালে পার্টির হাওড়া জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগ হলে তিনি সিপিআই(এম)-এ যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে পার্টির নিশ্চিন্দা লোকাল কমিটি গঠিত হলে কমরেড পদ্মনিধি ধর তার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে বালি জগাছা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে বাংলা বিহার একীকরণ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকায় একমাস জেলে বন্দি ছিলেন। ১৯৬৬ সালে খাদ্য আন্দোলনে যুক্ত থাকায় পিডি অ্যাক্টে গ্রেপ্তার হয়ে ফের একবছর কারাবাস করেন।

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সিপিআই(এম)’র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিধায়ক নির্বাচিত হন। বিধানসভায় শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যও ছিলেন। সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর রাজ্যস্তরের নেতৃত্বে ছিলেন। বালি গ্রামাঞ্চল ক্রীড়া সমিতির তিনি সভাপতি ছিলেন।

জেলে বন্দিজীবন ছাড়াও তিনি বেশ কয়েকবছর আত্মগোপন করে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে আধা ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের সময়ে ১৯৭১ সালে এলাকা ছাড়া হয়ে হাওড়ায় থাকতেন। সেখানে কিছুদিন ব্যাঁটরা মধুসূদন পাল চৌধুরি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। কংগ্রেসী দুষ্কৃতীদের আক্রমণে শিক্ষকতা ও এলাকা ছেড়ে থাকতে বাধ্য হন। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১২সাল পর্যন্ত তিনি পার্টির হাওড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।