E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ১৭ জুলাই ২০২০ / ১ শ্রাবণ ১৪২৭

দুঃসময়ের চালচিত্র - ৩

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


আপনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। কোনো তবলিগি জামাত সংযোগের কারণে আপনি সংক্রমিত কিনা সে প্রশ্ন করে বিব্রত করছি না। আপনি যেদিন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থালা বাজিয়েছিলেন, হাততালি দিয়েছিলেন, ট্যুইট করে অমাবস্যা বুঝিয়েছিলেন, ‘ওঁরা’ তখনও আপনার ওপর ভরসা করেছিল। হয়তো আপনার কথায় ভরসা করে, আবেগে ভেসে, না বুঝেই থালা বাজিয়েছিল, হাততালি দিয়েছিল। আপনার হাততালি দেবার ছবি শেয়ার করে, ফরোয়ার্ড করে গর্বিত হয়েছিল। তারপরে ৫ এপ্রিল। যেদিন আপনি ঘরের আলো নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাত ৯টায় ৯ মিনিট বোঝাতে ব্যস্ত হয়েছিলেন, তখন ওঁদেরই অনেকে রাস্তায় হাঁটছে। পাগলের মতো একটু খাবার চাইছে। একটু জল চাইছে। অসহায়ের মতো বাড়ি ফিরতে চাইছে। আপনি তখন হয়তো মোমবাতি জ্বালানোর পর, আকাশের দিকে টর্চ মারার ফটোসেশনের পর, ক্লান্ত হয়ে ‘মাহাত্ম্য প্রচারে’ রাত ১১.৫৯ মিনিটে নম্বর দিয়ে ট্যুইট করতে বসেছেন - T3492 “হ্যায় অন্ধেরী রাত পর দীয়া জলানা কব মানা হ্যায়”… এরপর ৬ এপ্রিল আপনি ফেক ছবি ব্যবহার করে আবার ট্যুইট করলেন - The World sees us - we are ONE…ওঁরা তখনও হাঁটছে। আপনার কোনো ছবি মুক্তি পেলে আবারও ওঁরাই একদম সামনের সারিতে বসে পর্দায় আপনাকে দেখা মাত্র পর্দার গায়ে পয়সা ছুঁড়ে আপনাকে অভিনন্দন জানাবে। ‘ওঁরা’ এমনই…

অনেক ট্যুইটেই আপনি যেমন ফেক ছবি ব্যবহার করেন, বিতর্ক হবার পরে বাজার বজায় রাখতে সেই ট্যুইট মুছে দেন, তেমনই একটা ট্যুইট আপনি মুছে দিয়েছেন। ট্যুইট নম্বর - T3479। যাতে লিখেছিলেন: “২২ মার্চ, বিকেল ৫টা। অমাবস্যা। মাসের অন্ধকারতম দিন। ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া অশুভ শক্তি সবথেকে বেশি শক্তিশালী হবে। শাঁখ বাজালে তাঁর কম্পনে ভাইরাস আক্রমণ ধ্বংস হবে…” ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশ্বাস করুন। আপনাকে নিয়ে এর থেকে বেশি শব্দ খরচের রুচি নেই। দুঃসময়ের চালচিত্র-৩-এর জন্য যেটুকু প্রয়োজন ছিল, সেটুকুই। আপনি নিজের বা অন্য কারো প্রচারের জন্য যেমন ট্যুইটকে ব্যবহার করে বাজার তৈরি করেন, এও অনেকটা সেরকম। সত্যি তুলে ধরার জন্য আপনারই ট্যুইট ব্যবহার করা। আসলে বুঝে হোক অথবা না বুঝে, অজান্তেই একটা সত্যি কথা এই ট্যুইটে আপনি বলে ফেলেছিলেন। “…অন্ধকারতম দিন”। যার সূচনা অনেক আগে হলেও সেদিন থেকেই বোধহয় দেশের আকাশটা আরও বেশি বেশি করে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়েছে। এ বোধহয় এক আজব ‘খুড়োর কল’। সুকুমার রায় তো কবেই বলে গেছেন: ‘কল করেছেন আজবরকম চণ্ডীদাসের খুড়ো-/সবাই শুনে সাবাস বলে পাড়ার ছেলে বুড়ো।’ যে কলের ফাঁদে বন্দি হয়ে যাচ্ছে ভারতের মানুষ। পেটে গামছা বেঁধে বেঁচে থাকার প্রাণপণ যুদ্ধ করতে করতেও যারা ওই ‘আচ্ছে দিন’-এর খুড়োর কলের চক্করে হাততালি দিতে বাধ্য হচ্ছে, মোমবাতি জ্বালাতেও। বিপণন করে দেবার জন্য মূল্যের বিনিময়ে ‘বিকাও আপনারা’ তো আছেনই। ভাত ছড়ালে কাকের অভাব এ দেশে কবেই বা হয়েছে!

লেখাটার প্রথম দুটো প্যারা পড়ে ফেলবার পর একটুও রাজনীতি খুঁজে না পেয়ে যাঁরা এতক্ষণে মনে মনে আমার বাপান্ত করতে শুরু করেছেন, মনে মনে ভাবছেন-এ ব্যাটাচ্ছেলের লেখায় রাজনীতি কোথায়? তাঁদের কানে কানে বলি-প্রথমত, আমি জবরদস্ত রাজনৈতিক লেখা লিখতে পারি না। আর দ্বিতীয়ত-‘এখন রাজনীতি করার সময় নয়’। করোনাকালে রাজনীতি কোরো না। এখন সবকিছুই অরাজনৈতিক। অ্যা-পলিটিক্যাল। ইংরেজি এই শব্দের মাঝে ভুলেও ‘A’-র পরে স্পেস ছাড়া যাবে না। ওই একটা স্পেস মেরে দিয়েই তো শ্রমজীবী মানুষ মারার খেলা। সব পলিটিক্যাল ঘটনাই তাই এখন অ্যাপলিটিক্যাল।

যেমন, প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেবার পর রাতারাতি রাষ্ট্রপতির সুপারিশে পেছন দিয়ে রঞ্জন গগৈ-এর রাজ্যসভার সাংসদ হওয়া অরাজনৈতিক। অথবা এই সময়েই রামমন্দির নির্মাণ শুরু হওয়াটাও। এই সময় বেছে বেছে দেশজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করা মানুষজনকে গ্রেপ্তার করা অথবা মধ্যপ্রদেশে সরকার ফেলে দেওয়াও অরাজনৈতিক, আবার রাজ্যসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীকে হারাতে শেষলগ্নে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের দৌড়াদৌড়ি করাও অরাজনৈতিক। করোনা আক্রান্ত মানেই বেশিরভাগের তবলিগি জামাত যোগ আছে বলাও যেমন অরাজনৈতিক, তেমনই পি এম কেয়ারস ফান্ডের নামে গোপন ট্রাস্ট, যার অডিট হবে না, আরটিআই হবে না, তেমন ট্রাস্ট করাও অরাজনৈতিক। আর এসবের বাইরে আমফান ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষের ত্রাণের চাল চুরি, কিংবা ক্ষতিপূরণের টাকা চুরি তো নেহাত ৭৫%-২৫% শতাংশের ব্যালেন্স শিট মেলাতে। ওটা আব্বুলিশ। চোর চোর খেলার সময় অত ধরলে হয়? ‘‘বলব কি আর কলের ফিকির, বলতে না পাই ভাষা,/ঘাড়ের সঙ্গে যন্ত্র জুড়ে এক্কেবারে খাসা।’’

অরাজনৈতিক ঘটনা আরও আছে। এই যেমন - বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, ২০০৫ অনুসারে ২৫ মার্চ গোটা দেশে যখন ‌লকডাউন চালু হলো, তখন থেকেই CCTA সহ বিভিন্ন চা বাগান ম্যাানেজমেন্টের একটাই দাবি ছিল, চা বাগান খোলা রাখতে হবে। যদিও ইউনিয়নের চাপে চা বাগান বন্ধ রাখা হয়। এরপর ৩ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নোটিশ দিয়ে জানায়, ৫০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে চা বাগানের উৎপাদন চালানো যাবে। ফের বিরোধিতা করে ইউনিয়ন। এর একদিন পরে ফের নোটিশ দিয়ে জানানো হয় ১৫ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে কাজ চালানো যাবে। ১১ এপ্রিল আবার এক নোটিশে বলা হয় ২৫ শতাংশ কর্মী দিয়ে উৎপাদন শুরু করা যাবে। দুই সরকারের সারকুলারেই বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুসারে লকডাউন চলাকালীন সমস্ত শ্রমিককে তাদের বেতন দেবার কথা বলা হলেও বহু ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার নির্দেশ পালন করা হয়নি। যে বেতন অরাজনীতি দিয়ে আদায় করা যাবে না। যা আদায় করার জন্য শ্রমিকদের রাজনীতি করা ছাড়া অন্য উপায় নেই। ‘‘সামনে তাহার খাদ্য ঝোলে যার যেরকম রুচি-’’…

এরকম অরাজনৈতিক ঘটনা আরও ঘটেছে। যেমন, গত ২৯ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর এক নির্দেশ দিয়েছিল। যে নির্দেশ অনুসারে, লকডাউন চলাকালীন সময়ে কোনো সংস্থা কোনো কর্মচারীর বেতন কাটতে পারবে না। যে নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় কিছু সংস্থা। ১৮টা পিটিশন জমা পরে এর বিরোধিতায়। ১৮ মে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। গত ৪ জুন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, দেশে লকডাউন-মধ্যবর্তী সময়ে কর্মচারীদের বেতন না দিলেও নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে ১২ জুন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। বিচারপতি অশোক ভূষণ, বিচারপতি এস কে কাউল এবং বিচারপতি এম আর শাহ-র বেঞ্চ জানায় - বিভিন্ন সংস্থা বাধ্য হয়েছে কাজকর্ম বন্ধ রাখতে। সেই অবস্থায় তাদের সম্পূর্ণ মজুরি দিতে বলা কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার। এরপর ১২ জুন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত এই সমস্ত নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। জুলাই মাস এখনও শেষ হয়নি। আর মালিককে শ্রমিক না দেখলে কে দেখবে? মালিকের মুনাফা বাড়ানোর দায়িত্ব শুধু নিলে হবে? ক্ষতির দায়ভারও তো শ্রমিককেই ঘাড়ে তুলে নিতে হবে। লকডাউনের জন্য কোনো সংস্থার ১০ শতাংশ, কোনো সংস্থার ১৫ শতাংশ মুনাফা কমেছে। আর শ্রমিকদের বেতন? বহু জায়গাতেই কেটে নেওয়া হয়েছে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। মালিক পি এম কেয়ারস ফান্ডে মোটা টাকা ডোনেশন দিয়েছেন। দায় বহন করতে হয়েছে শ্রমিকদের একদিনের বেতন দিয়ে। এরকম উদাহরণও আছে। আর যাঁরা সোজাসুজি ছাঁটাই হয়ে গেছেন বা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা তো সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, কাজ হারানো শ্রমিকের সংখ্যাটা ১৪ কোটির আশেপাশে।

অবশ্য এই সময়েই সূর্যকান্ত মিশ্রও রাজনীতি না করতেই বলেছিলেন। গত ১৮ মার্চ এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন: “আমাদের কাছে করোনাই এখন মূল বিষয়, প্রধান বিষয়, জরুরি বিষয়। রাজনৈতিক-সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে অপেক্ষা করা যেতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করাই এখন আমাদের সামনে মুখ্য চ্যালেঞ্জ। মানুষকে সঙ্গে নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। মানুষের সহযোগিতা ছাড়া কারোর শক্তি নেই এই বিপদ প্রতিহত করা।”

আসলে শতকরার হিসেব মনে না রেখেই বামপন্থীরা ওরকম বলেই থাকেন, করেও থাকেন। এঁরা পাড়ায় পাড়ায় কমিউনিটি কিচেন করে মানুষের পাশে দাঁড়ান, হেল্পলাইন খুলে জল-খাবার নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান, জনস্বাস্থ্য অনলাইন খুলে এই দুঃসময়ে মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেন, অসহায় মানুষকে রেশন পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেন। আবার এসবের পরেও রেশন দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন, মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো, আরও বেশি টেস্ট, মানুষের চিকিৎসার দাবি নিয়ে শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে প্রতিবাদ করে গ্রেপ্তারও হন। শুভ্রজিৎ ভট্টাচার্য, অশোক রুইদাস, মনীষা দাসদের হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রতিবাদ জানান। বামকর্মীদের পুলিশ লাঠিপেটা করে, হিঁচড়ে হিঁচড়ে, ধাক্কা মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়, আর অন্য রাজনৈতিক দলের আটককর্মীদের থানায় বসিয়ে জামাই আদরে পাঁঠার মাংস ভাত খাওয়ায়। এই বাম কর্মীরাই জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিকদের কাছে ‘চীনের দালাল’, ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা পান। যদিও এখনও পর্যন্ত খবরের কাগজের প্রথম পাতায় কোনো চীনা কোম্পানির পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনে একজনও বামপন্থী নেতাকে দেখা যায়নি। আরে বাপু, সবকিছু অত মনে রাখতে গেলে চলে নাকি? ‘‘মন বলে তায় খাব খাব, মুখ চলে তায় খেতে,/মুখের সঙ্গে খাবার ছোটে পাল্লা দিয়ে মেতে’’…

লেখাটার নাম যদিও ‘দুঃসময়ের চালচিত্র’ তবু এই শেষ মাস পাঁচেক ভারতে কার যে দুঃসময়, আর কার যে সুসময় সেটাই এখনও স্পষ্ট করে বুঝে উঠতে পারিনি। খোলাখুলিই বলি, কথায় কথায় আদানি আম্বানি টাটা ফাটাদের টেনে এনে দু’চারটে গরম গরম কথা বলা একদম পছন্দ করি না। না হয় এই সময়েই আদানি-আম্বানিরা একের পর এক বাণিজ্যিক ‘ডিল’ করেছেন, আম্বানি বিশ্বের সর্বাধিক ধনী মানুষ হয়েছেন। তাঁদের সুসময় নিয়ে ঈর্ষা করতে হবে নাকি? এই সময়েই তো দেশের বহু মানুষের চাকরি চলে গেছে, মাইনে অর্ধেক হয়ে গেছে, বাড়ির কাজের দিদিরা বহু বাড়িতেই মাইনে পাননি। বলা ভালো দেওয়া হয়নি। এসব ভেবে লাভ কী? আম্বানী এত বিলিয়ন ডলারের মালিক হলেন। এটা দেশের পক্ষে সুসময় নয়? কারো কাছে বিদেশভ্রমণে, থুড়ি বিদেশ সফরে না যেতে পারাটা দুঃসময় হতে পারে আবার কারো কাছে লকডাউনে আটকে পরে বাড়ি ফিরতে না পারাটা দুঃসময় হতে পারে। ভেবে লাভ? কারো কাছে টিভি ক্যামেরার সামনে ‘মন কী বাত’ বলাটা সুসময় হতে পারে, আবার কারো কাছে রাস্তায় আটকে আপনজনদের সঙ্গে কথা না বলতে পারাটা দুঃসময় হতে পারে। ভেবে লাভ? চীনের হাতে নিহত ভারতের কুড়িজন সৈনিকের পরিবারের কাছে যেমন দুঃসময়, উল্টোদিকে এই ভয়ঙ্কর সময়ে লেহ-তে ফটোসেশন করতে পারাটা কি সুসময় নয়? কারোর পৌষমাস আনতে গেলে কারোর না কারোর সর্বনাশ তো হতেই হবে। তা নাহলে যে প্রবাদ মিথ্যে হয়ে যাবে। গোমূত্রে সর্বরোগের ওষুধ খুঁজে পাওয়া, গোরুর কুঁজে সোনা খুঁজে পাওয়া দেশে প্রবাদ মিথ্যে হয়ে গেলে সেটাই তো সবথেকে বড় দুঃসময়।

আলোচনাটা ছিল করোনা নিয়ে। অবশ্য করোনা এখন আর কোনো বিষয় নয়। দেশের দুই প্রথমসারির সংবাদ চ্যানেল ১৪ জুলাই, মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছে: করোনা সংক্রমিত ‘তিনি’ নিজে নিজে হিসু করেছেন, ‘তাঁর’ পায়খানা হয়েছে। লেখাটার প্রথম দিকে কোথাও একটা ‘অন্ধকারতম দিন’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছিলাম। গত ১২ জুলাই, রবিবার দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারত করোনা মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবার পরে আজ বৃহস্পতিবার, ১৬জুলাই কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দশ লাখ ছুঁই ছুঁই। মৃত ২৪,৯১৫ হাজার। শেষ ১৫ দিনে দেশে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ৪ লাখ মানুষ। জুলাইয়ের শেষে এই ‘উল্লেখযোগ্য ভূমিকার’ ফলাফল আরও স্পষ্ট হবে। রাজ্যবাসীর কাছে বিগত কয়েক বছরে ‘উন্নয়ন’, ‘অনুপ্রেরণা’ যেমন বীভৎস শব্দ হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে, আগামীদিনে এই ‘উল্লেখযোগ্য ভূমিকা’ শব্দের অর্থও বীভৎস হতে চলেছে বলেই মনে হয়। তখন হয়তো ভারতবাসী একসুরে বলে উঠবে: ‘‘সবাই বলে সমস্বরে ছেলে জোয়ান বুড়ো,/অতুল কীর্তি রাখল তবে চণ্ডীদাসের খুড়ো।’’