E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ১৭ জুলাই ২০২০ / ১ শ্রাবণ ১৪২৭

সোচ্চার চিন্তা

এরপরে ছেলেমেয়েরা কি শুধু ‘হনুমান চালিশা’ মুখস্থ করতে বাধ্য হবে?

পল্লব সেনগুপ্ত


ভারতবর্ষের সনাতনী ঐতিহ্যে নাকি বলা হয়, গেরুয়া রঙ হলো ত্যাগের প্রতীক। তা ভাল; তবে তথাকথিত শাস্তর-টাস্তরে কোথায় যে এমন পয়গাম জারি করা হয়েছে তার হদিশ কিন্তু কেউ দিতে পারছেন না! সে যাই হোক, শিক্ষায় গৈরিকীকরণের যে-বেলাজ হেউৎ উঠেছে বিজেপি’র আমলে, তার সাম্প্রতিকতম নজির পাওয়া গেল ‘সিবিএসই’-ওরফে-‘সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন’-এর কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারের হুকুমবরদারির ফলে সিলেবাসে যে ‘ত্যাগের’ মহিমা দেখাতে বাধ্য হয়েছেন - তার অনুষঙ্গে।

এর আগে ‘আইসিসিআর’, ‘আইসিএইচআর’ প্রভৃতি সাংস্কৃতিক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের তাঁবে-থাকা মানুষদের কর্তৃত্বে বসিয়ে দিয়ে যে অপহ্নব শুরু হয়েছে, তারই ‘কিশোর পাঠ্য সংস্করণ’ ‘সিবিএসই’ বোর্ডের আসন্ন ১০ম এবং ১২শ ক্লাসের চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ছাঁটাই করা পাঠ্যক্রম। করোনা-মহামারীর উপলক্ষে অসংখ্য ঘটমান-বিপর্যয়েরই অংশ হচ্ছে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিগুলোয় ক্লাস না হতে পারা। তবু যেভাবেই হোক ফাইনাল পরীক্ষাগুলো যেহেতু নিতেই হবে, তাই পরিবর্তিত এই বিপন্ন পরিপ্রেক্ষিতে পাঠ্যক্রমের কিছুটা মুলতবি রাখা দরকার যে, সেটা অনস্বীকার্য। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এই অসহায়-সময়কালের সুযোগে ছাঁটাই হবে সেই সব বিষয়গুলিই যা আমাদের সুস্থ, স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক এবং সমদর্শী ধ্যানধারণার সম্পর্কে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মনকে গড়ে তোলে? করোনা প্যানডেমিকের অজুহাতে দিব্যি গৈরিকীকরণের প্রসার ঘটানো হবে? শুধু এটাই নয়, এই উপলক্ষে পাঠ্যতালিকা থেকে বিজ্ঞানেরও এমন-এমন কিছু বিষয় এবং অধ্যায় ছেঁটে দেওয়া হয়েছে, যার পরিণামে পরবর্তী পর্যায়ে - ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল বা সায়েন্সের হায়ার স্টাডির স্তরে গিয়ে ছেলেমেয়েগুলো অগাধ জলে হাবুডুবু খাবে।

।। দুই ।।
একটু বিশদভাবে বলি বরং। মানবীয়-তথা-আর্টসের সিলেবাসে মোট যে ৩০% অংশ বাতিল করা হয়েছে তার মধ্যে এইসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছেঃ ক্লাস নাইনের সিলেবাস থেকে বাদ গেছে এদেশের সংবিধানে প্রদত্ত গণতান্ত্রিক অধিকার এবং খাদ্য বিষয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা (অর্থাৎ, রেশন দেওয়া) - এ দু’টি বিষয়। ক্লাস টেনে এত দিন যা-যা পড়ানো হতো এতকাল, তার থেকে চেঁছে ফেলা হয়েছে এগুলি : গণতন্ত্র এবং বহুমতের বৈচিত্র্য; ধর্ম, বর্ণ-তথা-কাস্ট প্রথা; নারী-পুরুষের (সমান) অধিকার; গণআন্দোলন এবং গণসংগ্রাম; গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ। এগারো ক্লাসের পাঠ্যক্রমে আর পড়ানো হবে না এগুলি : যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনপদ্ধতি; স্থানীয়ভাবে স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা; নাগরিকত্ব; জাতীয়তাবাদ। ওই এগারো ক্লাসেরই বাণিজ্য-পাঠ্যক্রমে বাদ দেওয়া হয়েছে (বহুচর্চিত, বিজেপি সরকার প্রবর্তিত) জিএসটি সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা। বারো ক্লাসেই (অর্থাৎ, চূড়ান্ত সার্টিফিকেট পাবার পরীক্ষার আগে) সবচেয়ে বেশি কাঁচি চালানো হয়েছে। যা-যা বাদ পড়েছে, দেখুন : (ইতিহাসের কোর্সে) দেশভাগের প্রসঙ্গ; বিভিন্ন কৃষক-আন্দোলন, জমিদারি প্রথার উদ্ভব ও বিলুপ্তি; ভারত রাষ্ট্রের গঠনের ইতিহাস; (রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে) ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের পরিবর্তনের ধারা; প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক; বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন; (সমাজবিজ্ঞানের কোর্সে) ভারতীয় গণতন্ত্রের মৌলিক স্বরূপ এবং বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পরিবর্তনের প্রভাবে সমাজব্যবস্থা; (বাণিজ্য পাঠ্যক্রমে) ডি-মনেটাইজেশ্যান তথা নোটবন্দি বিষয়ের মূল ধারণা।

এইবারে বিজ্ঞান শাখার সিলেবাসের ছাঁটাইয়ের চেহারাটা একবার দেখুন এবং শিহরিত হোনঃ (পদার্থবিদ্যায়) গতি-সংক্রান্ত নিয়মাবলি; আলোক-সংক্রান্ত বিদ্যা; বৈদ্যুতিন মাধ্যম; (রসায়ন বিদ্যায়) ‘পি-ব্লক’ উপাদানসমূহ - অর্থাৎ, অক্সিজেন-নাইট্রোজেন-ফসফরাস-কার্বন-ক্লোরিন-ফ্লুরিন ইত্যাদি; পরিবেশ-সংক্রান্ত রসায়ন; রসায়নে বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ঘটানোর পদ্ধতিসমূহ ইত্যাদি। (গণিত বিদ্যায়) ত্রিমাত্রিক জ্যামিতি; সংখ্যার অনবচ্ছিন্নতা ও পৃথকীকরণ; দ্বিপদ-উপপাদ্য তথা বাইনোমিয়াল থিওরেম; (জীববিদ্যায়) মানবশরীর এবং জন্মপ্রক্রিয়া ইত্যাদি।

।। তিন ।।
যে তালিকা এতক্ষণ ধরে আপনারা পড়েছেন, তা কিন্তু সম্পূর্ণ নয়। পাঠ্য-বর্জনের ফর্দে আরও বেশ কিছু বিষয় আছে, তবে সেগুলি উল্লেখ করা বিষয়গু‍‌লোর মতো অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু যে তালিকা উপরে দেওয়া হয়েছে, তাতেই তো অভিজ্ঞ শিক্ষকরা অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এ যেন সেই দেশভাগের সময়ের সেই র্যা ডক্লিফ অ্যাওয়ার্ডের মতো! সেখানে যেমন তাঁর লাল পেনসিলের দাগে একই বাড়ির খাবার ঘর পড়েছিল ভারতে আর শোবার ঘর পড়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে - এখানেও তেমনি যদৃচ্ছা কাঁচি চা‍‌লিয়ে সমস্ত পাঠ্যক্রমটাকেই যা‍‌কে বলে ‘ঘেঁটে ঘ’, তাই করে দেওয়া হয়েছে! কিন্তু কেন? এটা কি এই বিপর্যয়ী, রাক্ষসিবেলায় বিভ্রান্ত এবং দুশ্চিন্তিত ছেলেমেয়েগুলোকে কিছু স্বাচ্ছন্দ্য দেবার মহ‌ৎ বাসনায়, না-কি, এর আড়ালে নিগূঢ় কিছু উদ্দেশ্য আছে?

কী উদ্দেশ্য যে আছে সেটা খুব অল্পকথায় কিন্তু খুবই স্পষ্ট ভাষায় সীতারাম ইয়েচুরি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, মহামারীকে উপলক্ষ করে মোদী সরকার আমাদের সংবিধানের যেগুলি হ‍‌লো মৌলিক প্রাণসত্তা-বৈচিত্র্য, বহুত্ববাদ, গণতন্ত্রবোধ সেগুলিকে বর্জন করতে চাইছে। আর সেটা করার অন্তর্নিহিত হেতু আরএসএস দলের ধর্মান্ধ, জাতি-বর্ণভেদী, ভিন্নমত-অসহিষ্ণুতা কেন্দ্রিক যে ফ্যাসিস্তসুলভ মতাদর্শ আছে, তাকেই শক্তিশালী করার স্বার্থে। আসলে এইভাবে দেশের সংবিধানকেই ধ্বংস করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

এর আগে বিজেপি সরকার দেশের ইতিহাসকে ছিন্নভিন্ন করতে চেয়েছে পাঠান এবং মুঘল শাসকদের আমলের বিস্তৃত অধ্যয়নকে বন্ধ করতে চেয়ে। ঐতিহাসিক স্থান নামগুলি পালটে দিয়ে, ভারতীয় সংস্কৃতির পরম্পরায় ইসলামীয় অবদান অস্বীকারের প্রয়াস করে এবং উর্দুভাষার বিস্তারে বাধা দিয়ে (যদিচ, ভারতের উর্দুভাষীদের মধ্যে ১/৪ অংশই অমুসলিম!) ... কিন্তু এবারে তারা যা করছে তাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম জ্ঞানবিজ্ঞানের জগৎ সম্পর্কে আধো-আঁধারির মধ্যে ঢুকে পড়বে।

আর ওরা তো সেটাই চায়। তা না হলে, ১২ ক্লাসের বেলায় না হলে যে খামযুক্তি দিচ্ছে ওরা, সেটাও তো ৯-১০-১১ ক্লাসের বেলায় খাটে না! তাদের তো আর সামনে ফাইনাল সার্টিফিকেটের পরীক্ষা দিতে হবে না সামনের বার। তা তো তারা দেবে যথাক্রমে ৩, ২ এবং ১ বছরেরও বেশি পরে। তাহলে? কোন্‌ যুক্তিতে ওই ক্লাসগু‍‌লোর কোর্স ছাঁটাই হলো? ... আবার দেখুন, দেশজোড়া প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে চাপের চোটে ওরা এখন বলছেন যে, এটা করা হয়েছে (না-কি) মাত্র ২০২০-’২১ সালের পরীক্ষার ক্ষেত্রেই এবং যা-যা বাদ গে‍‌ছে, তা তো এনসিইআরটি’র কোর্সের বইতে রইল, তাহলে তো ইচ্ছে করলে (?!?) কেউ সেগুলো থেকে সে-সব পড়েশুনে নিতে পারে!

এটা কী ধরনের রসিকতা বলুন তো! ১২ ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা সিবিএসই’র (কচুকাটা!) কোর্স পড়বে পরীক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে, আর পাশাপাশি এনসিইআরটি’র বইগুলোও পড়বে শুধু ভাল করে লেখাপড়া শেখার জন্য? এত সময় তাদের থাকছে? এত টাকাপয়সা (এক্সট্রা সেট হিসাবে এনসিইআরটি’র বইগুলো কেনার জন্য) তাদের অভিভাবকদের পক্ষে এই অর্থনৈতিক দুঃসময়ে কি আদৌ সম্ভব? এতো সেই ফরাসি বিপ্লবের ঠিক আগে ওদেশের রানি মারি আঁতোয়ানেতের সেই কুখ্যাত উক্তিরই সমান আপত্তিকর একটা কথা! (ওই রানি প্যারি মহানগরীর পথে বুভুক্ষু মানুষের মিছিল দেখে বলেছিলেন, ‘‘রুটি নেই বলে খেতে পাচ্ছে না? তো ওরা কেক কিনে খাক না!’’) বিজেপি’র অনুগত এবং ফাঁকিবাজিতে দড় এমন কিছু কিছু শিক্ষককে নিয়ে ওরা ইতি-উতি বলাতে চেষ্টা করছে যে, যা হয়েছে সেটা ভালোই হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাদ-ছাদ না দিয়ে কোর্স শেষ করা যাবে না! তাই? তা হলে, বহু হ্যাজোর-গ্যাজোর বিষয় তো ঠিক টিকিয়ে রাখা হলো; সেগুলো বাদ দিয়ে এগুলোই তো রেখে দেওয়া যেত? তাই নয় কি?

।। চার ।।
এগুলো পাগলামি? না, মূর্খতা? না রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধি? প্রথম দুটো হলে পরে সাফাই দেওয়া হ‍‌তো সরকার এবং তার অনুগতদের পক্ষ থেকে। তাই অবশ্য তৃতীয়টাই এখানে বুঝতে হবে। বাণিজ্য ও বিজ্ঞানের ছাঁটাই কোর্সের কথায় পরে আসছি। আগে মানববিদ্যার পাঠ্য নিয়ে আলোচনাটা সারা যাক! কী কী বাদ গেল, আর একবার দেখুন : গণতান্ত্রিক অধিকার; গণতন্ত্র ও বহুমতের বৈচিত্র্য; ধর্ম-বর্ণ (কাস্ট) নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমানাধিকার; গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ কী কী; যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনপদ্ধতি; স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা; নাগরিক অধিকার; জাতীয়তাবাদ; দেশ-বিভাগের ইতিহাস; কৃষক আন্দোলন; জমিদারি প্রথার অবসান; দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের ধারাক্রম ও পরিবর্তন; প্রতিবেশী বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক; বিশ্বায়ন ও ভারতের সমাজব্যবস্থা। অর্থাৎ, যে সব বিষয় সম্পর্কে একটি বাড়ন্তবুদ্ধি, বাড়ন্তবিদ্যা ছেলে বা মেয়ের অবহিত থাকা অতি-আবশ্যিকভাবে উচিত - বেছে বেছে ঠিক সেগুলিকেই ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যের তালিকায় দেখুন, ঠিক একই ব্যাপার। বাদ গেছে, জিএসটি এবং ডি-মনেটাইজেশন - অর্থাৎ, যে দু’টি অর্থনৈতিক সংস্কার (থুড়ি, সংহার!) করে বিজেপি সরকার দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড দুব্‌লা করে দিয়েছে, ঠিক সেই দুটি বিষয়! যাতে, বিকাশমান বুদ্ধির ছেলেমেয়েরা ওগুলি নিয়ে প্রশ্নমনস্ক না হতে পারে - তার জন্যই এটা করা। বিজ্ঞানের সিলেবাসে সত্যিই র্যাওডক্লিফ অ্যাওয়ার্ডের অপস্মৃতি ফিরে এসেছে। কেন কাটা হলো এটা ওটা, সেটা তার কোনও যুক্তি।

ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথেমেটিক্স-বা‌য়োলজি ইত্যাদি সম্পর্কে বি‍‌জেপিওয়ালাদের ধ্যানধারণার হাস্যকরতা নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই - তাই এই মূঢ়-উন্মাদপনায় বিস্মিত হচ্ছি না আমরা। বাক্রুব্ধ হচ্ছি।

একটাই প্রশ্ন, সিবিএসই এই মূর্খতা এবং শয়তানির কাছে আত্মসমর্পণ করল কেন? ইউ‍‌জিসি যে ফতোয়া জারি করেছে স্নাতক স্নাতকোত্তর স্তরের চুড়ান্ত পরীক্ষা সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিতেই হবে বলে (যদিও এভাবে দিন-তারিখ ঠিক করার অধিকার তাদের নেই), তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তো স্পষ্ট! সরকার দেখাতে চাইবে ওই সময়ের মধ্যে করোনা মহামারী সামলে উঠেছে দেশ! কিন্তু সিলেবাস ছাঁটাইয়ের মধ্যে তো শয়তানিটা আরও নিগূঢ়! ...তবে কি, আর সব পড়াশুনো জলাঞ্জলি দিয়ে এরপরে ছাত্রদেরকে শুধু ‘হনুমান চালিশা’ মুখস্থ করতে বলা হবে?