৫৯ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা / ১০ জুন, ২০২২ / ২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত এমএসপি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালো সারা ভারত কৃষক সভা
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আবারও কৃষকদের প্রতারণার অভিযোগ আনল সারা ভারত কৃষক সভা (এআইকেএস)। এআইকেএস’র পক্ষ থেকে খরিফ ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-তে নামমাত্র বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণা প্রসঙ্গে ৯ জুন প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। এই প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং ফসলের লাভজনক এমএসপি’র বিধিবদ্ধ অধিকারের দাবিতে আবারও সারাদেশের কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ সমাবেশের ডাক দিয়েছে এআইকেএস।
এআইকেএস’র ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, মোদি সরকার ২০২২-২৩ খরিফ মরসুমের জন্য ঘোষিত এমএসপি’তে, চাল, ভুট্টা, অড়হর, বিউলি এবং চিনাবাদামের জন্য মাত্র ৭ শতাংশ এবং বাজরার জন্য মাত্র ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে আবারও কৃষকদের সাথে প্রতারণা করেছে। অধিকাংশ ফসলে এই বৃদ্ধি অর্থনীতির সাধারণ মুদ্রাস্ফীতিকে খুব সামান্যই প্রভাবিত করবে।
ওই বিবৃতিতে এআইকেএস’র পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে যখন এই নগণ্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, তখন জ্বালানি এবং অন্যান্য উপকরণের উচ্চমূল্য, সারের সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকদের উৎপাদন খরচ তীব্রভাবে বেড়েছে। এমনকী গত মরসুমেও সারের সরবরাহে ঘাটতির কারণে ব্যাপক কালোবাজারি হয়েছিল। সম্প্রতি কয়েক মাস পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ, বেলারুশ এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য।
এটাও উল্লেখ্য, এই নগণ্য বৃদ্ধি এমন একটি সময়ে করা হয়েছে যখন বিশ্বব্যাপী খাদ্যদ্রব্যের দাম খুব বেশি। এর অর্থ হলো, ভোজ্য তেল এবং ডালের মতো পণ্যগুলি, যেগুলির জন্য ভারত আমদানি-নির্ভর, সেগুলি আমদানির জন্য উন্নত দেশগুলির কৃষক, যাঁরা তৈলবীজ এবং ডাল চাষ করেন, তাঁদের আমাদের দেশের কৃষকদের জন্য প্রস্তাবিত মূল্যের অনেক বেশি মূল্য পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারতের আমদানি-নির্ভরতা কমানোর জন্য আমাদের নিজেদের কৃষকদের লাভজনক দাম দেওয়ার পরিবর্তে সরকার তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।
সরকার আরও একবার, উৎপাদন খরচের চেয়ে এমএসপি’র মাধ্যমে প্রতিশ্রুত প্রাপ্তি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর দাবি করছে। ২০২২-২৩-এর খরিফ মরসুমের জন্য উৎপাদন খরচ সম্পর্কে সরকার ব্যাপক কম অনুমান করেছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যা করা হচ্ছে তা হলো, মোট খরচের (সি২) উপর প্রাপ্য গণনা করার পরিবর্তে, কৃষকের নিজস্ব সম্পদের খরচ বাদ দিয়ে শুধু এ২+এফএল খরচের উপর গণনা করা হচ্ছে। এটি কৃষকদের সাথে করা একটি প্রতারণা। কারণ এমএসপি উৎপাদনের মোট খরচকে সম্পূর্ণভাবে মেটাতে পারছে না।
বিবৃতিতে এআইকেএস দাবি করেছে যে, সরকারের স্বামীনাথন কমিশনের সি২+৫০ শতাংশের ফর্মুলা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। মোট উৎপাদন খরচের একটি বাস্তবসম্মত বরাদ্দ তৈরি করে এবং তার উপর কৃষকদের ৫০ শতাংশ রিটার্ন প্রদান নিশ্চিত করা উচিত। সরকারকে ডাল, তৈলবীজ এবং বাজরার জন্য সরকারি সংগ্রহের যথাযথ ব্যবস্থা রাখা নিশ্চিত করতে হবে যাতে কৃষকদের এই ফসলগুলির আরও বেশি চাষে উৎসাহিত করা যায় এবং ডাল ও তৈলবীজের জন্য ভারতের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করা যায়। ভোজ্যতেল এবং ডালগুলিকে গণ বণ্টন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা কৃষকদের এই কম জল খরচের ফসল চাষে উৎসাহিত করবে, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত করবে।
এটা সকলেরই জানা যে, যেহেতু দেশের বেশিরভাগ অংশে সরকারি সংগ্রহের কোনও যথাযথ ব্যবস্থা নেই, তাই ভারতের কৃষকদের একটি ছোটো অংশই কেন্দ্রীয় সরকারের গতকালের ঘোষণা অনুযায়ী নগন্য এমএসপি’র সুবিধা পেতে সক্ষম হবে।
এআইকেএস ওই বিবৃতিতে মোদি সরকারের প্রতিশ্রুত এমএসপি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য এবং ফসলের লাভজনক এমএসপি’র বিধিবদ্ধ অধিকারের দাবিতে আবারও সারাদেশের কৃষকদের ঐক্যবদ্ধভাবে সমাবেশ করার আহ্বান জানিয়েছে।