৫৯ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ৩ জুন, ২০২২ / ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
পরিবেশ যত্নের সূচকে কে কোথায়?
তপন মিশ্র
এবছর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় (ইয়েল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ল অ্যান্ড পলিসি), কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (সেন্টার ফর ইন্টার ন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক), ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, এবং ইয়োরোপিয়ান কমিশন (জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টার)-এর যৌথ উদ্যোগে পৃথিবীর ১৮০টি দেশের পরিবেশ যত্নের উদ্যোগের পরিমাপ করে তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে অতি সম্প্রতি। যদিও আগে বেশ কয়েক বছর এমনটাই হয়েছিল। এই রিপোর্ট একটি সূচকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যার নাম “ইপিআই” (এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স) বা পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে উদ্যোগের সূচক। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরপরই ভারত সরকার পরিমাপের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সূচকের মাধ্যমে ফলাফল যাচাইয়ের আগে দেখে নেওয়া যাক এই সূচকটা কী এবং কতটা বিজ্ঞানসম্মত।
একথা স্বীকার করতে বাধা নেই যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির ঘাড়ে পরিবেশ রক্ষার দায় চাপানোর প্রবণতা রয়েছে। উন্নত দেশগুলির নিজেদের দায় এড়ানোর তাগিদ এই দায় চাপানোর প্রয়াসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে শুরু করে জাতিসঙ্ঘ এবং তার পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ইউএনইপি (ইউনাইটেড নেশসনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম) সহ প্রায় সমস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার ক্ষেত্রেই আমেরিকা সহ প্রথম বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের প্রভুত্ব বিরাজ করছে। তারা সাদাকে কালো এবং কালোকে সাদা করতে পারে। আমাদের ত্রুটি হলো - তাদের অনুগত ভৃত্যের মতো অনুসরণ করা। ছাতি চওড়া হলেও সংগঠিতভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কোনো মুরোদ আমাদের রাষ্ট্রনেতাদের নেই। এই আনুগত্য আসলে পুঁজিবাদের প্রতি এবং মুক্তবাজার ব্যবস্থার প্রতি শর্তহীন তাঁবেদারি।
কিন্তু এক্ষেত্রে যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং সূচকসমূহ ব্যবহার করা হয়েছে তা অনেকটাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়। একটি সূচক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করতে হয় সেগুলি হলো - প্রথমত, তথ্য সংগ্রহের জন্য যে বিভাগগুলি নির্বাচন করতে হয় অর্থাৎ এক্ষেত্রে যে যে পরিবর্তনগুলি পরিবেশ রক্ষার উপর প্রভাব ফেলতে পারে সেগুলির নির্বাচন। দ্বিতীয়ত, কোনো বিভাগ এবং উপবিভাগের গুরুত্ব (ওয়েটেজ) কতটা তা নির্ধারণ করা। তৃতীয়ত, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো বিভাগ যাতে বাদ পড়ে না যায় তার প্রতি প্রত্যয়ী যত্নশীল হওয়া এবং চতুর্থত, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব বর্জন করা ইত্যদি। প্রথম দুটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত কিন্তু শেষ দুটি ক্ষেত্রে তথ্য প্রভাবিত করা অসম্ভব নয়।
ইপিআই পদ্ধতি কী এবং তা কতটা বিজ্ঞানসম্মত?
পরিবেশ রক্ষার সূচক আসলে দেশের মানুষকে দূষণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে কতটা সেই দেশ রক্ষা করতে পারছে তার পরিমাপক। এখানে বিশেষজ্ঞরা পরিবেশের ১১টি ক্ষেত্র এবং সেগুলির মধ্যে ৪০টি কার্যকারিতা সূচক (performance index)-কে নির্ধারণ করেছেন। এই পদ্ধতিকে ‘ডাটা-ডিরাইভড পারফরমেন্স অ্যানালিসিস' (‘data-derived performance analyses’) বলা হয়।
এক্ষেত্রে সমস্ত দেশের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সর্বজনীন পরিমাপক (scale) ব্যবহার করা হয়েছে। এর পরিমাপকের মাধ্যমে দেশগুলির নিজের ঘোষিত পরিবেশ নীতির মাধ্যমে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলি কতটা অর্জন করা গেছে তার পরিমাপ করা হয়েছে।
যেমন ধরা যাক, অপ্রচলিত শক্তির উপর নির্ভরশীলতা দূষণের মাত্রা অনেকটা কমাতে পারে। ভারতের ঘোষিত শক্তি নীতি হলো, ২০২২ সালের মধ্যে অপ্রচলিত শক্তির একটি বিশেষ ক্ষেত্র যেমন বায়ুচালিত শক্তি ১০০,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করা। ২০২১ সালের নভেম্বরে আমরা মাত্র ৪০,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পেরেছি। পরমাণু বিদ্যুৎ এখন দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্র ৪.২ শতাংশ পূরণ করে। কিন্তু আমাদের ঘোষিত লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে এই পরিমাণকে ৯ শতাংশতে বৃদ্ধি করা। কিন্তু এই লক্ষ্যগুলি থেকে আমাদের দেশ এখনও অনেকদূরে। এগুলির কতটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি তা ইপিআই সূচকের মাধ্যমে পরিমাপ করা কোনভাবেই অবৈজ্ঞানিক নয়।
বর্তমানে যে পরিমাপ ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয় তা ২০২০ সালে নির্ধারিত এবং আগের পরিমাপ ব্যবস্থার অনেকটা পরিমার্জন করে এই নতুন পদ্ধতি তৈরি হয়ছে। এবারে সূচক তৈরির ক্ষেত্রে দুটি পরিমাপযোগ্য বিষয়কে আলাদা করে বিচার করা হয়েছে। প্রথমটি হলো, পরিবেশের স্বাস্থ্য এবং দ্বিতীয়টি হলো সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রগুলির টিকিয়ে রাখার প্রয়াস। প্রথমটির জন্য ৪০ শতাংশ গুরুত্ব (ওয়েটেজ) এবং দ্বিতীয়টির জন্য ৬০ শতাংশ গুরুত্ব নির্ধারিত হয়েছে। প্রথমটির মধ্যে যে উপবিভাগগুলি আছে সেগুলি হলো, বাতাসের গুণমান, জলের গুণমান এবং জীবনীক্রিয়ায় (খাদ্যগ্রহণ, নিশ্বাস প্রশ্বাস ইত্যাদি) ভারি ধাতুর উপস্থিতি। দ্বিতীয়টির মধ্যে রয়েছে - জলের উৎস, কৃষি ব্যবস্থা, অরণ্য এবং তার সংরক্ষণ, জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং আবাসস্থল (হ্যাবিটাট) সংরক্ষণ, শক্তির ব্যবহার এবং জলবায়ু ইত্যাদি। প্রত্যেকটির জন্য শতাংশের হিসাবে গুরুত্ব নির্ধারিত হয়। এভাবেই একটি দেশ ১০০-র মধ্যে মোট কত নম্বর বা সূচক পাচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে সেই দেশের স্থান (রাঙ্ক) নির্ধারিত হয়।
রিপোর্টের সাধারণ কয়েকটি কথা
ইপিআই রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে, এই পরিমাপক যেমন একদিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনো দেশের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি কতটা পালিত হচ্ছে তা বোঝা যায় তেমনই অন্যদিকে দেশগুলিকে ভবিষ্যতে তাদের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে এই রিপোর্ট সাহায্য করবে। এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য ৩/৪ পাতার একটি সারমর্ম (সামারি ফর পলিসিমেকারস্ - Summary for Policymakers)-ও প্রকাশ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের একটি স্থানে বলা হয়েছে যে, সাধারণভাবে ইপিআই কোনো এক দেশের সম্পদের (প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মানবসম্পদ)-এর সঙ্গে সমানুপাতিক হারে যুক্ত। কিন্তু ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কেউ একটু বেশি যত্নশীল আবার কেউ একটু কম।
২০২১ গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তিতে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ অর্থাৎ ২০৫০ সাল নাগাদ নেট-শূন্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের লক্ষ্য (অর্থাৎ বিভিন্ন উৎপাদন ভিত্তিক কর্মকাণ্ড থেকে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন হবে ঠিক সমপরিমাণ গ্যাস শোষণের ব্যবস্থা থাকবে। ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই অক্সাইড জমা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না) স্থাপন করেছে। যদিও এই লক্ষ্য অনুসরণে অধিকাংশ দেশ কতটা প্রয়াস গ্রহণ করছে তাতে সন্দেহ আছে। ২০২২ সালে প্রকাশিত ইপিআই এই লক্ষ্যগুলি অর্জন করার ক্ষেত্রে কোন দেশ কতটা সচেষ্ট তা এই সূচক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
এই সূচক বলছে যে, পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এই অব্যবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর সামান্য কয়েকটি দেশ যেমন ডেনমার্ক এবং গ্রেট ব্রিটেন বাদ দিলে অন্য কোনো দেশই নেট-জিরো নির্গমনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। লক্ষণীয় হলো যে, ইপিআই’র উদ্যোক্তারা এবং বিজ্ঞানীরা মূলত আমেরিকার হওয়া সত্ত্বেও তারা এই প্রতিবেদনে আমেরিকা অপারগতার কথা বার বার উল্লেখ করেছে।
আমেরিকা কেন অপরিচ্ছন্ন?
আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদের কথা তো বিষ-সমান, এদেশের বামপন্থীরা বলে কিন্তু তা শোনে না আমাদের প্রশাসন। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে সীমাহীন অনৈতিক বিষাক্ত পদক্ষেপের কয়েকটি কথা এই রিপোর্টে উল্লেখিত আছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সমকক্ষ (পশ্চিমী দেশ বা গ্লোবাল ওয়েস্ট)-দের ছাড়িয়ে গেছে। ২২টি ধনী গণতান্ত্রিক (প্রতিবেদনের ভাষায়) দেশের মধ্যে ২০তম স্থানে এবং সামগ্রিকভাবে পৃথিবীতে ৪৩তম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। এই তুলনামূলকভাবে নিম্ন অবস্থান ট্রাম্প প্রশাসনের সময় পরিবেশগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে পিছু হাঁটার নীতিকে প্রতিফলিত করে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমেরিকার কয়লাভিত্তিক শক্তি উৎপাদন হ্রাস না করার সিদ্ধান্ত পরিষ্কার বলে দেয় যে, কার্বন হ্রাসের কোনো দায়বদ্ধতা আমেরিকা সরকারের নেই। বিশেষ করে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং মিথেন গ্যাস নির্গমনের ক্ষেত্রে দুর্বল পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে আমেরিকার এই অধোগতি। এর অর্থ হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রশমিত করার জন্য কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অপারগ। অথচ এই সময়কালে উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার জন্য নীতি প্রণয়ন করেছে (পৃষ্ঠা x, Leaders and Laggards, EPI, 2022)।
আমাদের দেশের কথা
ইপিআই’র সামগ্রিক বিচারে ১৮০টি দেশের মধ্যে আমাদের স্থান খুব নিচে অর্থাৎ ১৫১ নম্বরে। শতাংশের হিসাবে ১০০-র মধ্যে আমাদের প্রাপ্তি মাত্র ১২.৯। আমাদের ঠিক উপরে অর্থাৎ ১৩.২ শতাংশ পেয়ে ১৫০ নম্বরে রয়েছে আফ্রিকার এক দরিদ্র দেশ উগান্ডা। তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ইয়োরোপের একটি ছোট্ট দেশ লুক্সেমবার্গ। এর প্রাপ্তি ৭৯.১ শতাংশ।
নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনায় আসা যাক। ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণে এখন বিশ্বে প্রথম এবং দ্বিতীয়। ইন্দোনেশিয়া এখন পৃথিবীর সমস্ত দেশের প্লাস্টিকের দ্বারা সমুদ্র দূষণের ১৬ শতাংশ করে। ভারতের এব্যাপারে অবদান হলো ১৩ শতাংশ। চীন এক সময়ে এই দিকে অনেকটা সামনে থাকলেও এখন সেই দেশের প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। দ্বীপ রাষ্ট্রগুলি যেমন মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস ইত্যাদি এক্ষেত্রে অনেকটা সাবধান এবং বিপদের মুখেও। ২০১৮ সালে মোদি সরকার বুক চাপড়ে দাবি করে যে, এই দূষণ অনেকটা কমিয়ে ফেলবে। কিন্তু তা হয়নি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাস্টিক দূষকদের তালিকায় ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতের পরে আছে যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকা, ব্রাজিল এবং থাইল্যান্ড। মুক্তবাজার ব্যবস্থায় আমাজন, ফ্লিপকার্ট ইত্যাদির অনিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
এই পরিসরে সমস্ত তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়, তা সত্ত্বেও একটি তথ্য দেওয়া দরকার মনে করছি। পৃথিবীজুড়ে জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশের উদ্যোগ অনেকটা পেছনে। জাপানের আইচি শহরে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ‘কনভেনশন অন বায়োডাইভারসিটি’র কনফারেন্স অফ পার্টিজ (সিওপি)-তে কয়েকটি লক্ষ্য ঠিক করা হয়। আমাদের দেশও এই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী। কনভেনশনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল, ২০২০ সালের মধ্যে পৃথিবীর স্থলভাগের সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রের ১৭ শতাংশকে সুচারুরূপে সংরক্ষিত করতে হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে এধরনের মাত্র ১২.৬ শতাংশকে সংরক্ষণের আওতায় আনা গেছে। এক্ষেত্রে কেবল ৪২টি দেশ তাদের স্থলভাগের ১৭ শতাংশ বা তার বেশি এই ধরনের অংশকে সংরক্ষণের আওতায় আনতে পেরেছে। এই সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ম্যানগ্রোভ, প্লাবিত তৃণভূমি, সাভানা, আর্দ্র-চওড়া পাতার অরণ্য, তুন্দ্রা অঞ্চল ইত্যাদি। এই বিচারে দেখলে জৈববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্র ও প্রজাতির আবাসস্থল সংরক্ষণে আমাদের দেশের স্থান ১৭৯ নম্বরে অর্থাৎ শেষ থেকে ২য় স্থানে। আমাদের প্রাপ্ত নম্বর মাত্র ৫.৮ শতাংশ।
ভাবার বিষয়
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সেটি হলো, এমন অবস্থা বজায় থাকলে, ভারত, চীন, আমেরিকা এবং রাশিয়া এই চারটি দেশ ২০৫০ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ বিশ্ব গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী থাকবে। আর একটি তথ্য হলো, পৃথিবীর মোট ২৪টি দেশ যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপরিছন্ন দু’ডজন’ (ডার্টি টু ডজেন dirty two-dozen) ২০৮০ সাল নাগাদ পৃথিবীর মোট ৮০ শতাংশ কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমের জন্য দায়ী থাকবে। সন্দেহ নেই যে, এর মধ্যে আমাদের দেশ এবং আমেরিকা এই ‘ডার্টি টু-ডজেন’-এর মধ্যে রয়েছে।
এই সূচক সম্পর্কে ভারত সরকারের বক্তব্য হলো যে, গাণিতিক পদ্ধতির অপব্যবহার এবং চক্রান্ত করে আমাদের দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তাই যদি হয় সমানভাবে আমেরিকার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আমরা যদি এমনটাই খোলামেলা অর্থাৎ স্বচ্ছ একটি পদ্ধতি তৈরি করে নিজেদের অগ্রগতি পরিমাপ করতে পারি তাহলে তো সমস্যা থাকে না। তা না করে সমস্ত কিছু অস্বীকার করার এই প্রবণতা বিজ্ঞানের পদ্ধতিকে অস্বীকার করার শামিল। ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার তাঁবেদারি করতে গিয়ে নিজেদের অধোগতিকে অস্বীকার করার চেষ্টা হঠকারী অবস্থান ছাড়া আর কিছুই নয়।