E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩১ সংখ্যা / ১৭ মার্চ, ২০২৩ / ২ চৈত্র, ১৪২৯

শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে সব বাধা টপকে ছাত্রদের বিধানসভা অভিযান


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ছাত্র আন্দোলনের দুর্বার স্রোতে পুলিশ প্রশাসনের ব্যারিকেড ভেঙে বিধানসভার দ্বার প্রান্তে পৌঁছে আরও বড়ো লড়াইয়ের বার্তা দিল সংগ্রামী ছাত্ররা। ১০ মার্চ লড়াইয়ের চেতনায় দৃপ্ত তারুণ্যের প্রবাহে শেষ পর্যন্ত হার মানল পুলিশি দমনপীড়ন। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচাতে এবং রাজ্যের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে ১০ মার্চ বিধানসভা অভিযানের ডাক দিয়েছিল এসএফআই। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী মিছিল করে পৌঁছায় বিধানসভার সামনে। সেখানে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে দ্রুততার সঙ্গে এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য সহ আরও কয়েকজন এসএফআই কর্মী বিধানসভার গেটে উঠে ছাত্রছাত্রীদের দাবিসনদ টাঙিয়ে দেন। এসএফআই’র ডাকে এদিনের এই দুর্বার আন্দোলন রাজ্য সরকারের সর্বনাশা নীতি ও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এবং শাসকদলের দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের দৃপ্ত স্বাক্ষর রেখে গেল।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের তৃণমূল সরকার প্রাথমিক স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই লাটে তুলে দিচ্ছে। একদিকে স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে কলেজের ফি বাড়িয়ে হোস্টেল-স্কলারশিপ বন্ধ করে সার্বিকভাবে শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেবার অভিসন্ধি চালাচ্ছে। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজ্যের পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষ। প্রাথমিকস্তরে ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে সংখ্যালঘু, তপশিলি জাতিভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। তবুও শিক্ষা দপ্তরের কোনো হেলদোল নেই। উলটে স্কুল তুলে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে বামফ্রন্ট সরকার বছরে এক হাজার স্কুল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল, সেখানে তৃণমূলের আমলে গত ১২ বছরে ১৪ হাজার স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে স্কুলগুলিতে অন্তত ২৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনার সুযোগ মিলত। এসএফআই সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করছে, স্কুল তুলে দেবার এই প্রক্রিয়া আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষা নীতি (এনইপি) মডেলকে রাজ্যে জায়গা করে দেবার চক্রান্ত।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও একইভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রান্তিক মানুষ। কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে আদিবাসীদের হোস্টেল। সংখ্যালঘু থেকে শুরু করে সমস্ত অংশের ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার সহায়তায় চালু থাকা স্কলারশিপ হয় বন্ধ করা হচ্ছে, না হয় অনিয়মিত করে দিচ্ছে প্রশাসন। অপরদিকে পাল্লা দিয়ে চলছে পড়াশোনার খরচ। এর পাশাপা‍‌শি চলছে তৃণমূলের দুর্বৃত্তদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য। কলেজ‍‌-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতির জন্য হাজার হাজার টাকা তোলা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা তাদের এই সমস্ত সমস্যার কথা তুলে ধরার কোনো জায়গা পাচ্ছে না। নজিরবিহীনভাবে রাজ্যে ৬ বছর বন্ধ করে রাখা হয়েছে ছাত্র-সংসদের নির্বাচন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সুষ্ঠু পাঠনপাঠন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশকে বানচাল করে দেওয়া হচ্ছে। এই সমস্ত বিষয়গুলি লিখিত আকারে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে তুলে দেবার লক্ষ্যেই ১০ মার্চ, বিধানসভা অভিযানের ডাক দিয়েছিল এসএফআই। ছাত্রনেতা আনিস খানের হত্যাকাণ্ডের ১ বছর পরও খুনীদের কোনো শাস্তি হয়নি। বরং বিভিন্নভাবে তাঁর পরিবারকে সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা হয়েছে। এদিনের বিধানসভা অভিযানে এই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গেই তুলে ধরে এসএফআই।

এদিনের বিধানসভা অভিযানকে কেন্দ্র করে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চল থেকে দু’টি মিছিল সংগঠিত করে এসএফআই। পুলিশ প্রশাসন বিভিন্নস্থানে ব্যারিকেড করে রাস্তা আটকে নানাভাবে মিছিল দু’টির পথ অবরুদ্ধ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু সফল হয়নি। পু‍‌লিশকে এড়িয়েই বিধানসভার গেটে পৌঁছে যান এসএফআই নেতৃত্ব। বিধানসভার গেটের উপর দাঁড়িয়ে সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপটেড। বলেছিলাম বিধানসভায় আসব, এসেছি। হাওড়া স্টেশন চত্বরে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের উপর পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখানে এসএফআই’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, সর্বভারতীয় নেত্রী দীপ্সিতা ধর, শিল্পা মণ্ডল সহ ১১ জন ছাত্র ও ২৬ জন ছাত্রীকে আটক করে শিবপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অপরদিকে বিধানসভার সামনে থেকে সৃজন ভট্টাচার্য সহ ৯৭ জন এসএফআই কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে সবাইকেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিন শিবপুর থানা থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রনেতা ময়ূখ বিশ্বাস বলেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির ধারায় রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে তৃণমূলের সরকার। মোদির রেসিপিতে রান্না করছেন মমতা ব্যানার্জি। আর তাতে বিষক্রিয়ার শিকার বাংলার গোটা একটি প্রজন্ম। ছাত্রদের স্বার্থে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা লড়ছি লড়ব।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এদিন একদিকে মহার্ঘভাতা ও ১৩ লক্ষ শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে রাজ্যজুড়ে কর্মচারীদের অভূতপূর্ব ধর্মঘট এবং অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার দাবি ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিধানসভা অভিযান - ছাত্রছাত্রী ও কর্মচারীদের দুই ধারার আন্দোলনের প্রবাহে কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।