৬০ বর্ষ ৩১ সংখ্যা / ১৭ মার্চ, ২০২৩ / ২ চৈত্র, ১৪২৯
নাসিক থেকে মুম্বাই - এগিয়ে চলেছে কৃষকদের মহামিছিল
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আবার লঙ মার্চে শামিল মহারাষ্ট্রের কৃষকরা। দৃঢ় পদক্ষেপে কৃষকরা এগিয়ে চলেছেন সে রাজ্যের রাজধানীর উদ্দেশ্যে। কৃষিপণ্যের দাম, বিশেষত পেঁয়াজের দামের অভূতপূর্ব পতনের কারণে সংগ্রহ মূল্য সহ ভরতুকির হার বৃদ্ধির দাবিতেই এই লঙ মার্চ। সারা ভারত কৃষক সভা (এআইকেএস)-র ডাকে কৃষকদের সুবিশাল মিছিল মুম্বাইয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে। মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে ১৭ দফা দাবি আদায় করার লক্ষ্যে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা এসে জমা হন নাসিকের দিন্দোরিতে। ১৩ মার্চ সেখান থেকেই শুরু হয় ১০ হাজার কৃষকের এই সুবিশাল মিছিল। সুবিশাল এই মিছিলের ছবি ধরা পড়েছে ড্রোন ক্যামেরাতেও।
কৃষকদের দাবির মধ্যে রয়েছে ফসলের ন্যায্য দাম, ১২ ঘণ্টা অবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জোগান, পেঁয়াজ এবং তুলা, সয়াবিন, অড়হর ডালের জন্য লাভজনক মূল্য, কৃষকদের লাভ হয় এমন সংগ্রহমূল্য স্থির করা সহ অন্যান্য দাবি। চলতি বছরে পেয়াঁজ চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন কৃষকরা। হঠাৎই বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন তাঁরা। পেঁয়াজের জন্য প্রতি কুইন্টাল ২,০০০ টাকা এবং রপ্তানি নীতিতে পরিবর্তন সহ অবিলম্বে কুইন্টাল প্রতি ৬০০ টাকা ভরতুকি তাঁদের অন্যতম প্রধান দাবি।
এআইকেএস-র সর্বভারতীয় সভাপতি এবং পলিট ব্যুরো সদস্য অশোক ধাওয়ালে, সিপিআই(এম) মহারাষ্ট্র রাজ্য সম্পাদক উদয় নারকার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জেপি গাভিট, এআইডিডব্লিউএ’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম ধাওয়ালে এবং এআইকেএস রাজ্য সম্পাদক অজিত নাওয়ালে, সিআইটিইউ নেতা ডি এল কারাদ পদযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বিধানসভায় পেঁয়াজের বর্ধিত দাম ঘোষণা করতে বাধ্য হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মত কৃষক নেতৃত্বের।
মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করবে বলেও কথা রাখেনি। কৃষকরা তা নিয়ে ক্ষুব্ধ। রাজ্যের বিরোধী নেতা অজিত পাওয়ার এবং সিপিআই(এম) বিধায়ক বিনোদ নিকোলে দাবি করেছেন, অবিলম্বে কৃষি সমস্যা মেটাতে মহারাষ্ট্র সরকারের বৈঠকে বসা উচিত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে জানিয়েছেন কুইন্টাল প্রতি মাত্র ৩০০ টাকা দিতে পারবে সরকার। তাতেই ঘি পড়েছে ক্ষোভের আগুনে।
এই মিছিলে কৃষকদের সঙ্গে পা মিলিয়েছেন আশা কর্মী থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অসংগঠিত শ্রমিকরা। লঙ মার্চে হাঁটছেন আদিবাসী আন্দোলনের কর্মীরাও। মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে তাদেরও একগুচ্ছ দাবি রয়েছে।
১৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সবুজ ছোলা, দুধ, এবং হীরদার সংগ্রহ মূল্য বৃদ্ধি, কৃষকদের সম্পূর্ণ ঋণ মকুব, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মকুব, দৈনিক ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ, বৃষ্টি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকদের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য সরকার এবং বিমা কোম্পানি কর্তৃক ক্ষতিপূরণ; সমস্ত বনভূমি, চারণভূমি, মন্দির, ওয়াকফ এবং বেনামি জমি চাষিদের নামে ন্যস্ত করা, প্রধানমন্ত্রীর হাউজিং স্কিমের ভরতুকি ১.৪০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা, এ সম্পর্কে একটি নতুন সমীক্ষা শুরু করা এবং ‘ডি’ তালিকায় আবেদনকারীদের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ; কেরালা সূত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রদান, বার্ধক্য এবং বিশেষ পেনশনের পরিমাণ প্রতি মাসে ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা, ২০০৫ সালের পরে যোগদানকারী সরকারি কর্মচারীদের জন্য পুরনো পেনশন স্কিম পুনরায় চালু, আংশিক সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়কে ১০০ শতাংশ অনুদান, সরকারের সমস্ত শূন্যপদ পূরণ, সমস্ত চুক্তি কর্মী এবং প্রকল্প কর্মীদের সরকারি কর্মচারী হিসাবে নিয়মিত করা; এবং সরকারি পদে নিযুক্ত ভুয়ো আদিবাসীদের সরিয়ে প্রকৃত আদিবাসীদের নিয়োগ।
পুরনো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনার দাবিতে কৃষকদের সঙ্গেই মিছিলে হাঁটছেন বহু সরকারি কর্মী, বিশেষ করে যাঁরা ২০০৫ সালের পর চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। আশা কর্মীরা পেনশন ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সরব এই মিছিলেই।