৬০ বর্ষ ৩১ সংখ্যা / ১৭ মার্চ, ২০২৩ / ২ চৈত্র, ১৪২৯
আক্রান্ত সংসদীয় দল
ত্রিপুরা নিয়ে আলোচনার নোটিশ খারিজ রাজ্যসভায়
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ত্রিপুরায় ভোট-পরবর্তী গেরুয়া শিবিরের হিংসার রাজনীতি, সন্ত্রাসে ভয়াবহ অবস্থা। বিজেপি কর্মীরা জয়ের উল্লাসে জ্বালিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের বই, সাধারণ মানুষের ঘর, রাবার বাগান। প্রতিদিন রাজ্য পুড়ছে। রুটি-রুজি কেড়ে নিয়ে একেকটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত সিপিআই(এম) কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন ঘর ছাড়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাসে ত্রিপুরা এখন দেশের প্রথম সারিতে। মানুষের জীবন-যন্ত্রণা দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও শাসকদল বিজেপি নেতৃত্ব, সরকার কার্যত অন্ধ। মুখ্যমন্ত্রীর দায়সারা বিবৃতি সন্ত্রাসে কার্যত ঘৃতাহুতির শামিল। সংসদীয় প্রতিনিধিদল ত্রিপুরায় শাসকদলের হিংসা সন্ত্রাস দেখতে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। নিরাপত্তাহীনতায় তাঁদের সফরসূচি কাটছাঁট করতে হয়েছে। রাজ্যসভায় ত্রিপুরা নিয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়ে সিপিআই সাংসদ বিনয় বিশ্বম এবং সন্তোষ কুমার নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশ খারিজ করে দিয়েছেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকর।
হামলা সংঘটিত করতে গিয়ে প্রতিরোধের মুখে আহত হওয়া এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে ১৩ মার্চ। গত ২ মার্চ ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিন বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রের গোর্খাবস্তি এলাকায় সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস নেতা, কর্মীদের বাড়িতে ব্যাপক আক্রমণ সংঘটিত করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। সংঘবদ্ধ ওই আক্রমণের মূল অভিযুক্ত ছিলেন গোর্খাবস্তির তপনকুমার ভৌমিক। তখনই তিনি আহত হয়েছিলেন।
আক্রান্ত সংসদীয় দল
ত্রিপুরায় ভয়াবহ নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের পরিস্থিতি নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় স্তরে। তুলে ধরা হবে রাষ্ট্রপতির কাছে। উত্থাপন করা হবে লোকসভা ও রাজ্যসভায়। তুলে ধরা হবে গোটা দেশের মানুষের সামনেও। ত্রিপুরায় সন্ত্রাসদীর্ণ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সাংসদরা দৃঢ়ভাবে একথা জানিয়েছেন আগরতলার স্টেট গেস্ট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলনে। সাংবাদিক সম্মেলনের আগে রাজভবনে যান সাংসদরা। রাজ্যপালের সাথে সাক্ষাৎ করে সুনির্দিষ্টভাবে চার দফা দাবি সনদ তুলে দেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে এলামারাম করিম বলেন, ত্রিপুরার মানুষের উপর যে অত্যাচার ও আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে তা কোনো সভ্য দেশে ভাবা যায় না। আক্রান্তদের কাছে ছুটে যাবার ক্ষেত্রে সাংসদদের উপরও যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে তা সরাসরি সংসদের উপর, গণতন্ত্রের পীঠস্থানের উপর ও সংবিধানের উপর আক্রমণ। তিনি বলেন, আমরা আসার আগে ত্রিপুরার মুখ্যসচিবকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু রাজ্যে আসার পর একবারও সাংসদদের খবর নেননি তিনি। এটা শুধু অশোভনই নয়, সাংসদদের প্রতি সরাসরি অপমান করা। এই বিষয়টি লোকসভার অধ্যক্ষের নজরে আনা হবে।
১০ মার্চ বাম-কংগ্রেস সাংসদ দল তিনটি গ্রুপে সফর শুরু করেছিল বিজেপি-র বর্বর বাহিনীর হাতে আক্রান্ত এলাকাগুলি সরজমিনে দেখতে। বহু ধ্বংসচিহ্ণ প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁরা। কিন্তু বিশালগড়ের নেহালচন্দ্রনগর বাজারে বিজেপি-র সশস্ত্র বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হয় একটি সংসদীয় দল। ভাঙচুর করা হয় তাঁদের গাড়ি। বোমাবর্ষণ করা হয়। মোহনপুরের একটি এলাকায় সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দিকে তেড়ে আসে এক উন্মত্ত বিজেপি দুর্বৃত্ত। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় দল বাতিল করেছে তাদের পরের দিনের সফরসূচি।
নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস পর্যবেক্ষণে রাজ্যে আসা সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসের সাংসদ দল বিশালগড় মহকুমার নেহালচন্দ্রনগরে অগ্নিদগ্ধ বাজারে পৌঁছুতেই তাদের উপর শাসকদলের আশ্রিত দুর্বৃত্তরা অতর্কিত এবং বেপরোয়া আক্রমণ চালায়। সাংসদ দলের কনভয়ের একটি গাড়ি সম্পূর্ণ ভাঙচুর করে দুর্বত্তরা। এদের ছোঁড়া ইট-পাটকেলে আরও দু’টি গাড়ি আংশিক ভেঙেছে। ঘটনাস্থল থেকে তড়িৎগতিতে সরে যাওয়ায় সাংসদ দলে থাকা উভয় দলের নেতৃবৃন্দ অল্পেতে প্রাণে রক্ষা পান।
আক্রান্ত সাংসদ দলে ছিলেন রাজ্যসভার সিপিআই(এম) সাংসদ এলামারাম করিম এবং লোকসভার কংগ্রেস সাংসদ আবদুল খালেক ছাড়াও সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী, সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা ডাঃ অজয় কুমার, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি বীরজিৎ সিনহা, দলের কার্যকরী সভাপতি সুশান্ত চক্রবর্তী, বিধায়ক গোপাল রায় প্রমুখ।
ক্ষতচিহ্ন
দলটি বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্তে বিজয়োল্লাসে মত্ত শাসকদলের একাংশ দুর্বৃত্তের বিরোধী দলের কর্মী সমর্থকদের উপর, তাদের বাড়ি-ঘর, জীবিকা ও সম্পদের উপর আক্রমণের ক্ষতচিহ্ন প্রত্যক্ষ করেন। সেখানে প্রাক্তন সাংসদ ঝর্না দাস, বিধায়ক রামু দাস, বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের বিজিত ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী পার্থ রঞ্জন সরকারও এই দলের সঙ্গে ছিলেন। শারীরিক নিগ্রহই শুধু নয়, সাংসদ দলটি প্রত্যক্ষ করেছেন জয়ের উল্লাসে শাসকদলের দুর্বৃত্তরা এতোটাই নিচে নেমেছে যে, বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের মা-বোনদের শ্লীলতাহানি পর্যন্ত করে। বাড়ি-ঘরে হামলা করে সম্পদের ক্ষতি, উপার্জনের পথ বন্ধ করে জীবিকার ক্ষতির দৃষ্টান্তগুলো প্রত্যক্ষ করেছেন সাংসদরা।
মোহনপুরে বিজেপি’র সন্ত্রাসের ধ্বংসস্তূপ স্বচক্ষে দেখেন সিপিআই(এম) সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সহ বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের সাংসদরা। এলাকার পর এলাকায় ধ্বংসস্তূপ ও সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া মানুষের কথা শুনতে গিয়েও সাংসদরা রেহাই পেলেন না। পুলিশের সামনেই রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর দিকে তেড়ে আসে মোহনপুরের এক পরিচিত বিজেপি দুষ্কৃতকারী। বামফ্রন্ট-কংগ্রেস সাংসদ দলের উপর কেবল আক্রমণের চেষ্টা নয়, সংসদীয় দলের সামনেই এক দুষ্কৃতকারী হুমকি দেয় ধংসস্তূপে পরিণত করা বাড়িতে আবারও আক্রমণ করার। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বললেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মাদার অফ ডেমোক্রেসিতে সাংসদদেরও রেহাই নেই।
ধ্বংসের সঙ্গে লুট
একটা পাড়ায় বিজেপি’র ভোট কমিয়ে দিয়েছেন এই ছিল ‘অপরাধ’। তাই শাসকদলের দুর্বৃত্তরা পেট্রোল বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে বাড়ি। ছুঁড়েছে ৪টি গুলি। টিনের চাল উড়ে গেছে। পুড়ে ছাই সব আসবাবপত্র। লুট হয়ে গেছে গ্যাস সিলিন্ডার, চুলা, বাসনপত্র পর্যন্ত। নিজের বাড়িতে থেকে দুটো ভাত ফুটিয়ে খাবার ব্যবস্থাও নেই সোমা শীল রায়ের। বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রের দক্ষিণ নারায়ণপুরে সেই পুড়ে যাওয়া বাড়িতে দাঁড়িয়ে সাংসদ দলের সামনে সে কথা জানালেন নিজেই। থাকতে পারছেন না নিজের বাড়িতেও।
বামুটিয়া, বড়জলা এবং রামনগর কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা সফর করেন সিপিআই(এম) সাংসদ পি আর নটরাজন এবং সিপিআই সাংসদ বিনয় বিশ্বমের দল। সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর, প্রাক্তন বিধায়ক রতন দাশ, সিপিআই(এম) সদর মহকুমা কমিটির সম্পাদক শুভাশিস গাঙ্গুলি, বামুটিয়া ও বড়জলা কেন্দ্রের দুই নবনির্বাচিত বিধায়ক নয়ন সরকার ও সুদীপ সরকার।
চার দফা দাবি
রাজ্যপালের সাথে সাক্ষাৎ করে সুনির্দিষ্টভাবে চার দফা দাবি সনদ তুলে দেন সংসদীয় দল।
দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে - এখনই গোটা প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাস বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে হবে। আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে আক্রমণকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনৈতিক সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজারের বেশি পরিবার যাদের বাড়িঘর, সম্পদ ও জীবন-জীবিকার উপর আঘাত নামিয়ে আনা হয়েছে তাদের আর্থিক ক্ষতির সব দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করার জন্য সর্বদলীয় বৈঠক করে কমিটি গঠন করতে হবে। ছোটো গাড়ি, অটোরিকশা, ই-রিকশাসহ পরিবহণ শ্রমিক ও মালিক যারা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন না, তাদের আয়-উপার্জন ফেরাতে হবে। যাতে পুনরায় স্বাধীনভাবে নিরাপদে তারা যানবাহন চালিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারেন সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
দাবিগুলি সম্পর্কে যথাযথ ভূমিকা নেবেন বলে সাংসদদের আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপাল সত্যদেব নারায়ণ আর্য। রাজভবন থেকে ফিরে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন সাংসদরা। আগরতলা স্টেট গেস্ট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলন করেই ত্রিপুরা সফরের অভিজ্ঞতা এবং রাজ্যপালকে দেওয়া দাবিগুলির বিষয়বস্ত তুলে ধরেন সাংসদরা। রাজ্যপালের সাথে সাক্ষাৎকালে এবং সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য এলমারাম করিম, পি আর নটরাজন, রঞ্জিতা রঞ্জন, বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, বিনয় বিশ্বম, এ এ রহিম এবং লোকসভার সদস্য আবদুল খালেক। সঙ্গে ছিলেন নবনির্বাচিত বিধায়ক জীতেন্দ্র চৌধুরী, বীরজিৎ সিন্হা, গোপাল রায়, প্রাক্তন সাংসদ ডাঃ অজয় কুমার, প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ পবিত্র কর, প্রাক্তন বিধায়ক আশিস কুমার সাহা, সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেত্রী জারিতা লাইফলাঙ প্রমুখ।
মিথ্যা মামলা
বাড়ি ঘরে আক্রমণ, লুটপাট অগ্নিসংযোগ, বোমা বাজি শুধু নয়, বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে দেদার। কয়েক বছর ধরে রাজ্যে থাকেন না বিরোধী দলের এমন নেতা কর্মীর ছেলেকেও যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে মামলায়। এই মিথ্যা মামলা ঘিরে একাংশ পুলিশের থানা স্তরের অফিসারের ভূমিকায়ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বাধারঘাট বিধানসভার বৈষ্ণব টিলার এমন একটি ঘটনা ঘিরে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন এই কেন্দ্রের বিজিত বামফ্রন্ট প্রার্থী পার্থ রঞ্জন সরকার। মিথ্যা মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সমর্থক বাড়ির সরকারি কর্মচারী থেকে সত্তরোর্ধ পেনশনারদেরও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না।
বিভীষিকা
সাব্রুম মহকুমার ছোটোখিল এলাকায় শাসকদলের বিজয়োল্লাসে বিভিন্ন বাড়িঘর এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। সেই চেহারাই স্বচক্ষে দেখে এলেন সাব্রুমের বিধায়ক, সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী। প্রথমে যান ছোটোখিলে রঞ্জিত দে-র বাড়িতে। শাসকদলের দুর্বৃত্তদের লাগানো আগুনে তাঁর বাড়ি ভস্মীভূত। সেই ঘটনা ৩ মার্চ রাতে। রঞ্জিত দে’র একমাত্র বসত ঘরটি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। রঞ্জিত দে’র মেয়ে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ঘরে থাকা তার যাবতীয় বইপত্র পুড়ে যায় আগুনে।
বিলোনীয়া মহকুমাজুড়ে অবাধে চলছে সন্ত্রাস। বাড়িঘর ভাঙচুর অব্যাহত রয়েছে। বিলোনীয়া মহকুমার বিভিন্ন বাজারে শত শত দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন করে ভাঙচুর করা হয় ঋষ্যমুখ বিধানসভার রাকেশ মহাজন, জয়পুরের শংকর রায়, রাজনগর বিধানসভার রাজনগরের ভুলন শীল, দুর্গাপুরের মাধুরী দাস, জয়চাঁদপুরের মনমোহন দাসের বাড়ি। ভেঙে দেয় কাসারি এলাকার শম্ভু বৈদ্যের গাড়ি ও ট্রাক্টর। দৈহিকভাবে আক্রান্ত হন চিত্তামারার কচ্ছইববা এলাকার ভুবন দে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ঈশানচন্দ্রনগরের কৃষ্ণ শীলের বাড়ি। রাজনগর বিধানসভার রাধানগরের নেপাল দেবের রাবার বাগান। স্বদলীয় দুর্বৃত্তদের লাগানো আগুনে বিজেপি-র পৃষ্ঠপ্রমুখ চিত্তামারার জয়পুর এলাকার কান্তি লাল দেবের বাড়ি ছাই হয়ে যায়। এই ঘটনায় বিজেপি-র এক দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জিরানীয়া ও রানিরবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সন্ত্রাস জারি রেখেছে শাসকদল। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা এতে আতঙ্কিত। শাসকদলের কতিপয় দুর্বৃত্ত বিরোধী দলের কর্মী, সমর্থক ছাড়াও ইট ভাটা মালিক, ব্যবসায়ী, কর্মচারী সহ গরিব মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদার জুলুম করছে।
সূর্যমণিনগর বিধানসভার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে শাসকদল। মণ্ডল নেতাদের নেতৃত্বে মানুষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে হামলা হুজ্জতি চলছে লাগামহীনভাবে। পাল্লা দিয়ে চলছে লাগামহীন চাঁদার জুলুমও। মধুবন, কাঁঠালতলি, রানিরখামার এলাকায় প্রতিরাতে চলছে বাড়িঘর ভাঙচুর, হামলা ইত্যাদি। চলছে মোটা অংকের চাঁদা আদায়। বিমল দত্ত নামে বিরোধী দলের এক কর্মীর বাড়িতে তার মেয়ের বিয়ের সবকিছু প্রস্তুতি চলছিল। শাসকদলের দুর্বৃত্তরা ওই বাড়িতে বোমাবর্ষণ করে। ফলে সেই বাড়িতে মেয়ের বিয়ে হয়নি। অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিতে হয়েছে।
অভিভাবকের অভিজ্ঞতা
তোর ছেলে কোথায় - বলেই শুরু করে ভাঙচুর। কেটে দেয় ঘরের বিদ্যুৎ লাইন। তারপর আমার ছেলেকে নিয়ে ওরা বল খেলেছে স্যার। এরপর কথা বলতে গিয়েই কান্নায় বার বার আটকে যাচ্ছিল বৃদ্ধা মায়ের কণ্ঠস্বর। কান্না ভেজা স্বরেই তিনি বলে চলেন, ২ মার্চের পর থেকে আমরা সবাই বাড়ি ছাড়া। সেদিন রাতে সবাই জঙ্গলে রাত কাটিয়েছি।
আমার মেয়েটার পড়াশোনার কী হবে? এতটুকু বলার পর কান্নায় আর কিছু বলতেই পারেনি আরেক মা। শিশু কোলে আরেক মায়ের আর্তনাদ - আমার স্বামী, পরিবারকে বাঁচান স্যার, আজ নয়দিন পরও হুমকি আসছে, বাড়ি ফিরলে খুন করে ফেলবে।
স্যার ওরাতো হিন্দুত্ববাদী দল। আমার ঠাকুর ঘরটাও ভেঙে ফেলেছে। ভাতের হাড়িটা পর্যন্ত নেই। আজ নয় দিন স্ত্রীকে নিয়ে আমি বাড়ি ছাড়া। বলছিলেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা।
রাজ্য সফররত সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সামনে এভাবেই বিজেপি-র বল্গাহীন সন্ত্রাসের খণ্ডচিত্র তুলে ধরেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের আক্রান্ত, বাড়িঘর ছাড়া মানুষজন।
রেশন বঞ্চনা
সন্ত্রাসের আবহে রেশন সামগ্রী থেকেও বঞ্চিত বহু পরিবার। একে অনেকটা দেরিতে রেশন দোকানগুলিতে পৌঁছেছে মার্চ মাসের বরাদ্দ। অন্যদিকে বিরোধী দলের সাথে সম্পর্ক রেখে চলা পরিবারের লোকেদের ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না রেশন দোকানের দরজায়। এমন অভিযোগ আসছে বহু স্থান থেকে। বহু মানুষ বাড়িঘর ছাড়া। রেশন সামগ্রী তুলতে যেতে পারছেন না। বহু মানুষকে একপ্রকার ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছে। অভিযোগ,কোথাও কোথাও রেশন বিলি নিয়েও চলছে সংকীর্ণ রাজনীতি। বিরোধী দলে আস্থা রাখার তকমা জুড়ে দিয়ে রেশন দোকানের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না। ডিলারদের উপরও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। হুমকির মুখে থাকা গরিব অংশের মানুষ চাইছেন অন্তত রেশন সামগ্রী নিয়ে দলবাজি বন্ধ হোক। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক সরকার। সকলে যাতে রেশন আনতে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করা হোক প্রশাসন থেকে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়েই রাস্তায় নেমে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে।