E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৬ সংখ্যা / ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৩১ ভাদ্র, ১৪২৮

ত্রিপুরায় মানুষকে সংগঠিত করেই বিজেপি’র হিংসার রাজনীতির মোকাবিলা করা হবে

সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি, মানিক সরকার


বিজেপি’র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আগরতলায় -
ফ্যাসিস্ত বর্বরতার বিরুদ্ধে ১০ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ মিছিলে শামিল ত্রিপুরার মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ত্রিপুরার জনগণকে সমবেত করেই বিজেপি’র হিংসাত্মক রাজনীতির মোকাবিলা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। গত ১৪ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে এ কে জি ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরায় শাসক বিজেপি দলের ভয়াবহ আক্রমণের বিবরণ দিতে গিয়ে তাঁরা বলেছেন, ত্রিপুরাকে একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিস্টসুলভ শাসনের গবেষণাগার বানাচ্ছে বিজেপি। যদি সে রাজ্যে তারা সফল হয় তবে ভবিষ্যতে দেশের অন্য রাজ্যে এবং গোটা দেশেই এই শাসন কায়েম হবে।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরার পার্টি নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ত্রিপুরায় কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও গণতান্ত্রিক অধিকার বিপন্ন হচ্ছে তাও তুলে ধরেন।

এদিন এক বিবৃতিতে ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরায় বিজেপি’র হিংসাত্মক কার্যকলাপের বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ওই আক্রমণে সিপিআই(এম)’র ৪২, আরএসপি'র ১, সিপিআই(এমএল)’র একটি অফিস আক্রান্ত হয়েছে,পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে। বেনজির দৌরাত্ম্যের ঘটনায় সিপিআই(এম)’র রাজ্য দপ্তরে আক্রমণ চালানো হয়েছে। ওই অফিস পুড়িয়ে দেবার চেষ্টা হয়েছিল। দুর্বৃত্তরা অফিস প্রাঙ্গণে ঢোকে এবং দশরথ দেবের মূর্তি ভেঙে দেয়। রহস্যজনকভাবে এই আক্রমণের এক ঘণ্টা আগে সি আরপিএফ জওয়ানদের সরিয়ে নেওয়া হয়। বিজেপি’র দুর্বৃত্তরা সিপিআই(এম) সমর্থকদের ৬৭টি বাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে ও লুট করেছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে কীভাবে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারকে তাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে যেতেও বাধা দেওয়া হয়েছে।

এদিন বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালে বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত ৬৬২টি পার্টি অফিস, বামপন্থী গণসংঠনের ২০৪টি অফিস, সিপিআই(এম) সদস্য-সমর্থকদের ৩৩৬৩টি বাড়ি ও ৬৫৯টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বা ভাঙচুর করা হয়েছে। মহিলাদের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গত ৭-৮ সেপ্টেম্বরের আক্রমণের সময়ে বিজেপি’র বাহিনী ‘জয় শ্রীরাম’ আওয়াজ তুলে লোহার রড, পেট্রোল বোমা নিয়ে হামলা চালিয়েছে। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে এবং বিজেপি’র নেতা- মন্ত্রীরা আক্রমণকে মদত দিতে প্ররোচনামূলক বিবৃতি দিয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, পূর্ব পরিকল্পিত ও সচেতনভাবেই এই আক্রমণ সংগঠিত করা হয়েছে। সাংবিধানিক অধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার আক্রান্ত। তিন বছরের রাজত্বে বিজেপি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে। মানুষের প্রতিবাদের সামনের সারিতে রয়েছে সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা। আক্রমণের রাজনৈতিক কারণ এটিই।কমরেড দশরথ দেবের নেতৃত্বে রাজবাড়ি ঘেরাও হয়েছিল, ভারতভুক্তির আন্দোলন হয়েছিল। তাঁর মূর্তিও ভাঙা হয়েছে।

সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ৭-৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নীরব রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার পর্যন্ত করা হয়নি। এ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের মদতেরই ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি আরও বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে তিন দিন আগে চিঠি দিয়েছিলাম। এখনো তিনি সময় দিলেন না। তিনি ৭-৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং হিংসার অবসান ঘটানোর দাবি জানান।

সাংবাদিক সম্মেলনে মানিক সরকার বলেন, ত্রিপুরায় সংবিধান কাজ করছে না। ৪২ মাস বিজেপি’র সরকার চলছে। এই সরকারের সাফল্য শূন্যের থেকেও কম। বামফ্রন্টের আমলে তৈরি হওয়া গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলিকে বিজেপি দখল করেছে, বিরোধীদের ভোটে দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি।২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ব্যাপক রিগিং হয়েছে। কোনও বিরোধীদেরই কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার কোনোটিই রক্ষিত হয়নি। মিডিয়াও আক্রান্ত। মহামারীর মধ্যে ৩৫ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। ৫টি চ্যানেল কার্যত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, মানুষের মধ্যে প্রবল বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁরা ক্রমশ জীবন-জীবিকার প্রশ্নে সংগঠিত হচ্ছেন।