৫৯ বর্ষ ৬ সংখ্যা / ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৩১ ভাদ্র, ১৪২৮
কমরেড গৌতম দাশ-এর জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, পার্টির ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক কমরেড গৌতম দাশ ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে কলকাতার আপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। তিনি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিছুদিন আগরতলায় চিকিৎসার পর ৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। এখানেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর জীবনাবসান হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তাঁর স্ত্রী ও এক কন্যা রয়েছেন।
কমরেড গৌতম দাশের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেছে, ত্রিপুরাতে পার্টি যখন হিংস্র এবং ভয়াবহ আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে লড়াই করছে, তখন তাঁর মৃত্যু পার্টির জন্য বিরাট ক্ষতি।
পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্রও কমরেড গৌতম দাশের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
কমরেড গৌতম দাশ ১৯৫১ সালের ২৬ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কলেজে পড়াকালীন তিনি পার্টির সাপ্তাহিক মুখপত্র ‘দেশের কথা’র কাজে যুক্ত হন। ১৯৭৯ সালের ১৫ আগস্ট ‘ডেইলি দেশের কথা’ পার্টির দৈনিক মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হতে থাকে। ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিনি পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬ সালে তিনি পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য হন। এরপর ১৯৯৪ সালে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ২০১৮ সালে তিনি পার্টির রাজ্য কমিটির সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন।
রাজ্যের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী সৈনিক হিসেবে তিনি ছিলেন ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। পার্টি এবং গণসংগঠনের কাজেই তিনি আমৃত্যু জড়িয়ে ছিলেন। আগরতলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি।
ত্রিপুরার প্রতিবেশী বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনাবলি সম্পর্কে তাঁর সম্যক ধারণা ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বিশেষ অবদান ছিল। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা জ্ঞাপন করেছিল।
'দেশহিতৈষী' পত্রিকার সঙ্গেও কমরেড গৌতম দাশের সম্পর্ক ছিল নিবিড়। ১৯৭৭ সাল থেকে তিনি নিয়মিত 'দেশহিতৈষী'-তে লিখেছেন। এছাড়া প্রতি বছর শারদ সংখ্যায় তিনি লিখেছেন। এবারেও শারদ সংখ্যায় ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর’ সম্পর্কে লেখার কথা ছিল তাঁর, যা অপূর্ণই থেকে গেল।
কমরেড গৌতম দাশের আকস্মিক প্রয়াণ পার্টি ও রাজ্যের গণআন্দোলনের অপরিসীম ক্ষতি।