৫৯ বর্ষ ৬ সংখ্যা / ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৩১ ভাদ্র, ১৪২৮
কারনালে পুলিশি বর্বরতা - কৃষক আন্দোলনের চাপে দাবি মানতে বাধ্য হলো হরিয়ানা সরকার
কারনালে শহিদ কৃষকের বাড়িতে সীতারাম ইয়েচুরি সহ নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ হরিয়ানার কারনালে কৃষকদের ওপর পুলিশের নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত কৃষকদের চাপে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হলো রাজ্যের বিজেপি সরকার। গত ২৮ আগস্ট তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কারনালের বাস্তারা টোল প্লাজার কাছে বিক্ষোভের সময় কৃষকদের উপর বেপরোয়া হামলা চালায় হরিয়ানা সরকারের পুলিশ। পুলিশের নির্মম লাঠির আঘাতে অন্তত দশজন কৃষক আহত হন। পরে আহত কৃষক সুশীল কাজলের হাসপাতালে মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় উপস্থিত, কারনালের এসডিএম আয়ুষ সিনহাকে সেখানে হাজির থাকা পুলিশ কর্মীদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, কৃষকদের মাথা গুঁড়িয়ে দাও। এদিন পুলিশের এই নির্মমতার প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে হরিয়ানা সহ পাঞ্জাব ও অন্যান্য রাজ্যে। কারনালের এই কৃষক আন্দোলনকে ভেস্তে দিতে কারনাল জুড়ে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখে প্রশাসন। এমনকী ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়। কিন্তু কোনোভাবেই আন্দোলনকে দমানো যায়নি।
২৮ আগস্টের ঘটনার পর সংযুক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম)-র পক্ষ থেকে রাজ্যের বিজেপি সরকারের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে দাবি জানিয়ে বলা হয়, কাজলের শহিদ সুশীল পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং পুলিশের লাঠির আঘাতে জখম প্রত্যেক কৃষককে ২ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। পাশাপাশি এসডিএম আয়ুষ সিনহার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার দাবি সহ অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানানো হয়েছিল। এই দাবি না মানা পর্যন্ত ৩১ আগস্ট থেকে কারনালের মিনি সচিবালয় ঘিরে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেন হাজার হাজার কৃষক। খোলা আকাশের নিচে টানা পাঁচদিন আন্দোলন চালিয়ে যান তাঁরা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ১১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় হরিয়ানা সরকার।
পুলিশি নির্মমতার শিকার কৃষকরা।
এই বৈঠক শেষে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৮ আগস্টের ঘটনায় হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করা হবে। এক মাসের মধ্যে এই তদন্তের কাজ শেষ করা হবে। তদন্ত চলাকালীন মহকুমাশাসক আয়ুষ সিনহা শাস্তিমূলক ছুটিতে থাকবেন। এছাড়া ওইদিন পুলিশের লাঠির আঘাতে নিহত সুশীল কাজলের পরিবারের দু’জন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ঘটনার দিন আহত ১০ জন কৃষককেও সরকারি ক্ষতিপূরণ দেবার কথা জানানো হয়। সরকারের সঙ্গে এদিনের আলোচনার সময়ে এসকেএম-র তরফে উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত কৃষক সভার নেতা কৃষ্ণ প্রসাদ, ইন্দরজিৎ সিং সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এদিন সরকারের এই ঘোষণায় মুহূর্তের মধ্যে জয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন কৃষকরা। তাঁরা ব্যাপক স্লোগানের মধ্যদিয়ে আন্দোলনের এই জয়কে স্বাগত জানান। এই জয়ে সারা ভারত কৃষক সভার পক্ষ থেকে কৃষকদের অভিনন্দন জানানো হয়। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এই জয় থেকে অর্জিত আত্মবিশ্বাস দিল্লির সীমান্তে টানা ৯ মাসের ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবে।
কারনালের কৃষক আন্দোলনের এই জয়ের জন্য সংযুক্ত কিষান মোর্চার পক্ষ থেকেও আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে এসকেএম জানিয়েছে, কৃষকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-প্রতিবাদের উপর পুলিশ প্রশাসন কোনো দমনপীড়ন চালাতে পারবে না। সরকারকে এই ঐতিহাসিক শিক্ষা দিয়েছে কৃষক আন্দোলন।
সচিবালয়ের সামনের ব্যারিকেড চুরমার আন্দোলনের চাপে।
গত কয়েক মাসে বড়ো বড়ো সাফল্য অর্জন করেছে হরিয়ানার ঐক্যবদ্ধ কৃষক আন্দোলন। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, একইভাবে টানা অবস্থান বিক্ষোভ-আন্দোলন চালিয়ে সম্প্রতি হিসার, তোহানা, সিরসায় কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করে এনেছেন।
এদিকে গত ১২ সেপ্টেম্বর কারনালের রায়পুর জত্তন গ্রামে পুলিশের আক্রমণে নিহত শহিদ সুশীল কাজলের বাড়িতে তাঁর মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানান সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পলিট ব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসু, পার্টি নেতা যোগীন্দর শর্মা, অশোক অরোরা, সুনীল দত্ত, কৃষক সভার সহ-সভাপতি ইন্দরজিৎ সিং, মহিলা আন্দোলনের নেত্রী জগমতী সাঙ্গওয়ান প্রমুখ।
এদিন সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, দেশজোড়া কৃষক আন্দোলন ও মানুষের বিক্ষোভের যে বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, তাতে উদ্বিগ্ন মোদী সরকার। বিজেপি-শাসিত চার রাজ্যে ঘনঘন মুখ্যমন্ত্রী বদল, সেই উদ্বেগেরই কারণ। শহিদ পরিবারের প্রতি সংগ্রামী অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি সীতারাম ইয়েচুরি শহিদ সুশীলের স্ত্রী সুদেশের চরম সাহসী ভূমিকার কথাও স্মরণ করে বলেন, সুদেশ কৃষক আন্দোলনের প্রথম সারির সহযোদ্ধা।