৫৯ বর্ষ ৬ সংখ্যা / ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৩১ ভাদ্র, ১৪২৮
পথ দেখাক শ্রমজীবী মানুষ
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও’
‘গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও’। জনপ্রিয় এক বাংলা গানের লিরিক্স। গীতিকার গভীরে যেতে বলেই ক্ষান্ত দিয়েছেন, আমরা শুনে। কিন্তু গভীরে আর যাই কে? সে অনেক ঝামেলার ব্যাপার। তখন আবার আমাদের ঢাল হয় রবীন্দ্রনাথের ফটিক। পাছে আবার বেশি গভীরে যেতে গিয়ে যদি “এক বাঁও মেলে না। দো বাঁও মেলে-এ-এ না।” দশা হয়। তার চেয়ে ওপরে ওপরে থাকাই ঢের ভালো। স্রোত কোন্ দিকে মালুম পাওয়া যায়। হালকা করে গা ভাসাতেও খুব একটা সমস্যা হয়না। দিনের শেষে দায় এড়াতেও। সুবোধ অবোধদের বোঝার সমস্যা আজকের নয়। চিরকালীন। মাঝখান থেকে জোয়ার ভাঁটায় ভাসাভাসির খেলা খেলতে খেলতে চোরা স্রোতের ঘূর্ণি কখন টুপ করে ভেতরে টেনে নেয় বোঝাই যায়না।
আমার লেখাতে কিছু শব্দেরা বারবার ফিরে ফিরে আসে। ঝামা মাথার দোষ। ঘঁষাঘেঁষিতে বিশেষ কিছু লাভ হয়না। কিলবিলিয়ে মরে পুরনো মরচে ধরা শব্দগুলোই। বারবার। সেই ক্রোনোলজি, সেই উন্নয়ন, সেই অনুপ্রেরণা। সাফল্য হয়তো বা সেইসব কইয়ে বলিয়েদের। যাঁদের শব্দভেদী বাণের আক্রমণ সরাসরি মাথা লক্ষ্য করে। মগজ ধোলাইয়ে যে সবের জুড়ি মেলা ভার। অবশ্য মিথ্যে বলা ঠিক নয়। মাঝে মাঝে ‘তাঁরা’ নতুন শব্দের সাপ্লাইও দেন। তা নিয়ে চলে আরও কিছুদিন। শব্দ থেকে শব্দে ভাসিয়ে নিয়ে বেড়ানোর ট্রাপিজের খেলা দেখতে দেখতে গভীরে যাবার আগেই অজান্তে কখন যেন সার্কাস শেষ হয়ে যায় ! খালি পকেটে পড়ে থাকে বহু দাম দিয়ে কেনা রঙবেরঙের টিকিট। সেটিং পলিটিকসের জনক, ধারক, বাহক, তল্পিবাহকদের কাছ থেকে এ বস্তু হয়তো সত্যিই শেখার। ‘আপ ক্রোনোলজি সমঝ লিজিয়ে’ থেকে ‘দিদিকে বলো’ হয়ে ‘দুয়ারে রেশন’ - সবই এক সুতোয় বাঁধা। নিখুঁত সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। কত গভীরে এর তল - হয়তো ফটিকও জানতো না!
‘মা’ থেকে ‘আব্বাজান’
১২ সেপ্টেম্বর। দিনটা ছিল রবিবার। বোমাটা ফেটেছিল সকাল সকালই। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রবিবারের কাগজ দ্য সানডে এক্সপ্রেসের প্রথম পাতা জুড়ে যোগী সরকারের বিজ্ঞাপন। শিরোনামে লেখা - ‘ট্রান্সফর্মিং উত্তরপ্রদেশ আন্ডার যোগী গভর্নমেন্ট’। এই শিরোনামের নিচে প্রায় বল্লভভাই প্যাটেলের স্ট্যাচুর স্টাইলে পাতা জুড়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ছবি। পাতার নিচে দুটো ছবি। যেগুলো নাকি যোগী সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ। অন্তত বিজ্ঞাপনে সেরকমই দাবি করা ছিল। জলঘোলা এরপর থেকেই।
যোগী আদিত্যনাথের ‘ট্রান্সফর্মিং উত্তরপ্রদেশ’-এর উন্নয়নের ফিরিস্তিতে বেমালুম ঢুকে গেছে হলুদ ট্যাক্সি সমেত কলকাতার ‘মা’ উড়ালপুল। আর দ্বিতীয় ছবিটা নাকি বিদেশের কোনো এক কারখানার। এরপরেই রে রে করে দেশের একমাত্র লোকদেখানো বিজেপি বিরোধী দল দাবি করে বসে, তাদের তৈরি করা উড়ালপুল নিয়ে আদিত্যনাথ বিজ্ঞাপন ছেপে দিয়েছে। অন্য রাজ্যের উড়ালপুল নিজের উন্নয়নের নামে চালিয়ে দেওয়া, আর অন্যের প্রায় শেষ করা উড়ালপুলের কৃতিত্ব নিয়ে রে রে করে তাঁর দিকে তেড়ে যাওয়া - দু’টোই সমগোত্রীয়। আর গত দশ বছরে শুধু রঙ আর ফলক পালটে উন্নয়নের কৃতিত্ব দাবি করা মানুষজনের সংখ্যাও তো কম নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর লড়াইয়ে উলুখাগড়া হয়ে লাভ নেই। তাতে বেমক্কা প্রাণ যাবে। তবে সত্যিটা একটু অন্যরকম। রাজ্যে বাম জমানা শেষ হবার বছর দুয়েক আগে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ৮.১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালপুলের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ মাসের। বাম বিদায়ের সময় যে উড়ালপুলের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছিল। ‘মা’কে নিয়ে ‘মানুষ’-এর এই প্রবল টানাটানি বড়োই দৃষ্টিকটু। তাই বাদ দিলাম।
যদিও এসবের থেকেও দৃষ্টিকটু লেগেছে এই ঘটনায় দেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিক্রিয়া। কেন সাত তাড়াতাড়ি তাদের এই প্রতিক্রিয়া তা এখনও স্পষ্ট নয়। ওইদিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে দুপুর ১২.৩৫ মিনিটে এক ট্যুইট করে জানানো হয় - উত্তরপ্রদেশ সম্পর্কিত এক বিজ্ঞাপনে সংবাদপত্রের মার্কেটিং বিভাগের ভুলে ভুল ছবি ছাপা হয়েছে। এই ভুল অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সমস্ত ডিজিটাল এডিশন থেকে এই ছবি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যদিও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ঘোষিত এবং মুদ্রিত বিজ্ঞাপনী নীতি অনুসারে, ‘আমরা কোনোভাবেই বিজ্ঞাপন বা তার বিষয়বস্তুর জন্য দায়ী নই’। অর্থাৎ বিজ্ঞাপনে কোনো ভুল তথ্য দেওয়া হলে তার দায় বিজ্ঞাপনদাতার। হয়তো গরজ বড়ো বালাই। তাই আগেভাগেই সাফাই।
তবে সকালে উন্নয়নের বিজ্ঞাপনের নামে এই ছবি চুরি হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন প্রবল পরাক্রমশালী যোগী আদিত্যনাথ। তাই ওইদিন দুপুরেই কুশিনগরে একটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান গিয়ে তিনি বলেন, "আজ আপনারা সবাই রেশন পাচ্ছেন। ২০১৭ সালের আগে কি এই রেশন পেতেন আপনারা? যারা ‘আব্বাজান’ বলে ডাকেন, তখন সব রেশন তাঁরা হজম করতেন। সেই সময় কুশিনগরের রেশন বাংলাদেশ এবং নেপালেও পৌঁছানো হতো। আজ যদি কেউ গরিবের রেশন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তাঁকে জেলে যেতে হবে। আমরা এই অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছি।" যোগীর এক বক্তব্যেই চাপা পড়ে যায় ছবি জালিয়াতি ইস্যু। সামনে উঠে আসে ‘আব্বাজান’ বিতর্ক। যে মন্তব্য প্রসঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মত - উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কোন্ সুরে কথা বলবে তা আগেভাগেই জানিয়ে দিল।
যোগীর ‘আব্বাজান’ মন্তব্যের বিরোধিতা হয়েছে দেশজুড়ে। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ট্যুইটারে লেখেন, "আমি সবসময় বলে আসছি মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো ছাড়া অন্য কোনো অ্যাজেন্ডা নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করার কোনো ইচ্ছা নেই বিজেপি’র। একজন মুখ্যমন্ত্রী যিনি পুনরায় নির্বাচনে দাঁড়াবেন, তিনি দাবি করছেন মুসলমানরা হিন্দুদের বরাদ্দ সমস্ত রেশন হজম করে নিয়েছে।" রাহুল গান্ধী নিজের ট্যুইটারে যোগী আদিত্যনাথকে কটাক্ষ করে লেখেন, "যিনি এতো হিংসে করেন, তিনি কেমন যোগী!" বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব ট্যুইটারে যোগী আদিত্যনাথকে প্রশ্ন করেন, "কথিত যোগীজি বলুন, যাঁরা ‘পিতা জান’ বলে ডাকেন তাঁদের কতজনকে চাকরি, কর্মসংস্থান, সুশিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রদান করা হয়েছে? আপনারা বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি এবং কৃষকদের ইস্যুতে কথা বলেন না কেন? নির্বাচনের সময় তুষ্টিকরণ এবং বক্তব্যের মাধ্যমে সন্ত্রাস ছড়ানো ছাড়া এঁদের আর কোনো যোগ্যতা নেই।" যোগীর ‘আব্বাজান’ প্রতিবাদে অবসরপ্রাপ্ত বিদেশ সচিব নিরুপমা মেনন রাও তাঁর বাবার ছবি ট্যুইটারে শেয়ার করে লেখেন, "আমার বাবা, ১৯৪১ সালে যখন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। আজ আমি যা হতে পেরেছি, উনিই তা করেছেন। আমার #AbbaJaan"।
সরকারও তাহলে দেশবিরোধী?
আমাদের দেশের সংবিধান সমস্ত নাগরিককে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিলেও সাম্প্রতিক ঘটনা পরম্পরা দেখে মনে হয়না আদৌ সেই অধিকার দেশের মানুষ পেয়ে থাকেন। তাই এই প্রশ্ন সকলের করার অধিকার থাকলেও করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। স্ট্যান স্বামীদের উদাহরণ তো হাতে গরম। ওপরের সাবহেডিং-এর কথাও আমার নয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের প্রশ্ন। বিষয়টা একটু খুলে বলা যাক।
সম্প্রতি পাঞ্চজন্যের শীর্ষ প্রতিবেদন ‘শক আউর আঘাত’-এ অভিযোগ করা হয়েছে ইনফোসিস ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-কে সাহায্য করছে, নকশালদের এবং অন্যান্য সমাজবিরোধী শক্তিকে সহায়তা করছে। ইনফোসিসের অধীনে থাকা দেশের আইটি পোর্টালে মাঝে মাঝেই বেশ কিছু সমস্যার কারণে করদাতা এবং বিনিয়োগকারীদের সমস্যায় পড়তে হয়। মূল অভিযোগ সেটাই। যদিও সরাসরি ইনফোসিসের বিরুদ্ধে আক্রমণ করা হয়েছে পাঞ্চজন্যের ‘নাম বড়ে আউর দর্শন ছোটে’ প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনের অভিযোগ - সরকারি প্রোজেক্টে ইনফোসিসের এই ধরনের গাফিলতি এবারই প্রথম নয়। প্রতিবেদন অনুসারে, প্রথমবারের ভুলকে কাকতালীয় বলা যেতে পারে। কিন্তু যদি বারবার একই ভুল হয় তখন সন্দেহ দানা বাঁধে। ইনফোসিস ম্যানেজমেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের অর্থনীতিকে বেহাল করতে চাইছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রতিবেদনেই অভিযোগ করা হয়, ইনফোসিস নকশাল, বামপন্থী এবং টুকরে টুকরে গ্যাংকে সাহায্য করছে।
এই বিতর্ক প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে সরকারের জিএসটি পরিষেবার কথা উল্লেখ করে রঘুরাম রাজন বলেন, "এটিকে আমি সম্পূর্ণরূপে অনুৎপাদনশীল বলে মনে করি। টিকাকরণের ক্ষেত্রেও সরকারের পারফরম্যান্স প্রথমদিকে ভালো ছিল না। তাহলে এগুলোর জন্য আপনি কী সরকারকেও দেশবিরোধী বলে অভিযোগ করবেন?..."
কাকতালীয়!
২৩ মার্চ ১৯৩৩-এ জার্মানিতে এক আইনের প্রস্তাব করেন হিটলার। এনেবলিং অ্যাক্ট। যে আইন অনুসারে চ্যান্সেলর হিটলার দেশের সংসদ এবং প্রেসিডেন্টকে এড়িয়ে যে কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারবেন। এই আইনের আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চ্যান্সেলর কর্তৃক মূল্যায়ন করা আইনগুলো ব্যক্তিগত অধিকারকেও অতিক্রম করতে পারবে। নিজেকে একচ্ছত্রাধিপতি করে নেওয়া। ২৪ মার্চ ১৯৩৩ পক্ষে ৪৪৪ এবং বিপক্ষে ৯৪ ভোটে এই আইন পাশ হয়ে যায়। এর পরের ইতিহাস আমরা জানি। ওইসব ফ্যাসিবাদ, ট্যাসিবাদ কীসব যেন বলে! না, না। ঘাবড়াবেন না। ভারতে এখনও এই ধরনের কোনো আইন পাশ করানো হয়নি। তবে ভারতে ২৪ মার্চ ২০২০ মাঝরাত থেকে অপরিকল্পিত লকডাউন শুরু হয়েছিল। করোনার দোহাই দিয়ে সেই লকডাউনের পর থেকে দেশের বুকে যা যা ঘটেছে তাতে বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে মানুষের অধিকার। উঠে এসেছে স্বেচ্ছাচারিতার কথা। বিরোধীদের অভিযোগ সেরকমই।
অতি সম্প্রতি দেশে অতিমারীর সময় উচ্ছেদ সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। যে তথ্য অনুসারে অতিমারীর মধ্যেও উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে ২৪৫টি। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১-এর জুলাই মাস পর্যন্ত হওয়া উচ্ছেদের ঘটনায় ঘরছাড়া হয়েছেন প্রায় ৬১ হাজার ২৭৫টা পরিবার। হাউসিং অ্যান্ড ল্যান্ড রাইট নেটওয়ার্ক ভারতে জোর করে উচ্ছেদ সমীক্ষা-রিপোর্টে এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে। সরকারি সূত্র উল্লেখ করে এই সমীক্ষা রিপোর্ট জানিয়েছে, ২০২০ সালে ৪৯ শতাংশ উচ্ছেদ হয়েছে পরিবেশ প্রকল্পের নামে, ২৫ শতাংশ পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে এবং ১৯ শতাংশ বস্তি মুক্ত পরিবেশের নামে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, উচ্ছেদ করার আগে নোটিশ দিতে হবে, সমীক্ষা করতে হবে এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। লকডাউনে যখন সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল সেই সময় কয়েক হাজার পরিবারকে ঘর ছেড়ে খোলা আকাশের তলায় এসে দাঁড়াতে হয়েছে। যাদের অনেকেই এখনও মাথার ওপর ছাদ পাননি।
যে ঘটনা প্রসঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, ‘মানবাধিকার এবং নাগরিকের বেঁচে থাকার যে অধিকার সংবিধানে রয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে লংঘন করা হয়েছে। উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ পরিবারের সামান্য পুনর্বাসন মিলেছে। ২ শতাংশের মিলেছে আংশিক পুনর্বাসন। মাত্র দেড় শতাংশ পরিবারের মিলেছে সামান্য ক্ষতিপূরণ। বাকিরা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন।’
উপসংহার
গভীরে যাবার কথা বলে শুরু করেছিলাম। যদিও ধারাবাহিক নাটক গভীরে যেতে দিচ্ছেনা। এই ক্রমনির্লিপ্ততা বোধহয় আরও ভয়ঙ্কর। তাই দেশের শহরাঞ্চলে মোট সম্পদের ৫৫.৭ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের মোট সম্পদের ৫০.৮ শতাংশর মালিকানা দেশের মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে চলে গেলেও তা নিয়ে আলোচনা হয়না। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কোটি কোটি টাকা ঋণ মকুব করে দিলেও তা আলোচনায় আসেনা। সরকারি সম্পদ বিলগ্নীকরণের নামে বিক্রি করে দিলেও প্রতিবাদ দানা বাঁধে না। তবুও লড়াই জারি আছে। দিল্লির বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চলে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছেন কৃষকরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। শ্রমজীবী মানুষের এই লড়াই পথ দেখাক আগামীর ভারতকে।