৫৯ বর্ষ ৬ সংখ্যা / ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৩১ ভাদ্র, ১৪২৮
বিচার-ব্যবস্থা আদালত সংবিধানের রক্ষাকর্তা?
অম্বিকেশ মহাপাত্র
১৯০ বছর ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকার পর, আমাদের দেশ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা প্রাপ্তি ঘটে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে ভারতের জাতীয় পতাকা তোলা হলো। ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ...। কিন্তু রাতারাতি পূর্ণ-স্বরাজ প্রতিষ্ঠিত হয় না। হওয়ার কথাও না। এত্তো বড়ো দেশ! এত্তো বৈচিত্র্য - ভূগোলে, ভাষায়, ধর্মে, বর্ণে, পোশাকে, খাদ্যাভ্যাসে, সংস্কৃতিতে...। এত্তো রকমের বিভিন্নতা! দেশকে অখণ্ড রাখতে, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং কবির ভাষায় - ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান’ ভারতবর্ষের প্রশাসন পরিচালনায় দরকার বিশেষ ধরনের সংবিধান। সেও রাতারাতি সম্ভব নয়। Provincial assembly থেকে প্রতিনিধি নিয়ে তৈরি হলো constituent assembly। সভাপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ। সঙ্গে draft committee; চেয়ারম্যান ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর। বহু আলোচনা, সংশোধনী, সংযোজনী...। দু’বছর পর, ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর ‘ভারতীয় সংবিধান’ গৃহীত হলো। ‘পূর্ণ-স্বরাজ দিবস (২৬ জানুয়ারি)’-কে স্মরণীয় রাখার প্রয়োজনে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ‘ভারতীয় সংবিধান’ লাগু হলো। সেই দিন থেকে ভারতবর্ষ ‘Sovereign Democratic Republic’ অর্থাৎ ‘সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’। জরুরি অবস্থার সময়কালে সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে ভারত আজ ‘Sovereign, Socialist Secular Democratic Republic’ অর্থাৎ ‘সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’।
‘ভারতীয় সংবিধান’ অনুযায়ী দেশের প্রশাসনিক কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয়। ভাষা ভিত্তিক রাজ্য, তার পরিচালনায় রাজ্যের সরকার। রাজ্যের সরকার রাজ্যের চাহিদা অনুয়ায়ী কাজ করবে। পাশাপাশি সব রাজ্য মিলে ‘ইউনিয়ন অফ স্টেটস’ Union Government বা কেন্দ্রীয় সরকার। মূল লক্ষ্য - দেশের ঐক্য এবং অখণ্ডতা বজায় রাখা। মোদ্দা কথা হলো আমাদের দেশের বনজ, খনিজ, জলজ সহ সকল সম্পদের মালিক দেশবাসী অর্থাৎ দেশের সকল নাগরিক। দেশের নাগরিক যাঁদের বয়স ১৮ বছরের উপর তাঁদের প্রত্যেকের একটি করে ভোটদানের অধিকার। অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটদানের মধ্যদিয়ে ‘জন প্রতিনিধিত্ব আইন’ অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটপ্রাপক ‘জনপ্রতিনিধি’ নির্বাচিত হবেন। ‘জনপ্রতিনিধি’ রাজ্যের ক্ষেত্রে বিধায়ক এবং দেশের ক্ষেত্রে সাংসদ। রাজ্যের বিধায়কগণ রাজ্য বিধানসভা অর্থাৎ আইনসভার সদস্য। বিধায়কগণ সংবিধান মেনে রাজ্যবাসীর জীবন-জীবিকা ও কল্যাণে আইন প্রণয়ন করবেন এবং মুখ্যমন্ত্রী সহ মন্ত্রীসভা আইন অনুযায়ী রাজ্যবাসীর জন্যে কাজ করবেন। একইভাবে সাংসদগণ দেশের সংসদ অর্থাৎ আইনসভার সদস্য। সাংসদগণ সংবিধান মেনে দেশবাসীর জীবন-জীবিকা ও কল্যাণে আইন প্রণয়ন করবেন এবং প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রীসভা আইন অনুযায়ী দেশবাসীর জন্যে কাজ করবেন। সেকারণে দুই ক্ষেত্রে সরকার সম্পর্কে বলা হয় - ‘by the people, of the people and for the people’। এবং রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে সেকারণে বলা হয় - ‘Government servant’।
***
আমরা সকলেই প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সহ প্রকৃতিতে অপরিমিত রহস্য ও বিস্ময়। পাশাপাশি রহস্যভেদ ও বিস্ময় নিরসনের প্রচেষ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত। বেশিরভাগ রহস্যের কিনারা আজও সম্ভব হয়নি। পৃথিবী জড় ও জীব জগতে বিভক্ত। জড় জগৎ ছাড়া জীব জগতের অস্তিত্ব সম্ভবপর নয়। জীবকুলের মধ্যে মানুষই বিদ্যা-বুদ্ধি ও জ্ঞান অর্জনে শ্রেষ্ঠ পরিগণিত। পৃথিবীর বৈচিত্র্যের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতি, সমাজ, সমাজ-ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েই চলেছে। সময়ের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালী ও ব্যবহার্য সামগ্রীর পরিবর্তন ঘটেই চলেছে। মানুষের জানার আগ্রহে ও জ্ঞান অর্জনের আকাঙ্ক্ষায় এসেছে বিজ্ঞান। তারই হাত ধরে এসেছে প্রযুক্তি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ। রুখবে কে? প্রকৃতির নিয়মেই এই পরিবর্তন ঘটেই চলেছে। ‘প্রস্তরযুগ’ থেকে আজকের ‘ডিজিটাল যুগ’; মানুষের মৌলিক চাহিদা - অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। মানুষের জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের জন্য অফুরান সম্পদ প্রকৃতিতেই রয়েছে। তা সত্ত্বেও, পৃথিবীর বহু দেশের গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষ ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। কারণ? বিভিন্ন দেশে যাঁরা শাসন ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশ শাসক নিজ শ্রেণিস্বার্থে সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে আগ্রহী নয়। সেকারণেই জীবনধারণের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দেশে দেশে নগরে প্রান্তরে সাধারণ মানুষ লড়াই-সংগ্রাম করে চলেছেন। এই লড়াইয়ের পথেই মানুষ অর্জন করেছেন তাঁদের মৌলিক অধিকার মানবাধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার।
***
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির পথে ১৮৯৭ সালে নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্যার জোশেফ জন থমসন অতি-পারমাণবিক ঋণাত্মক কণা ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন। ফলে নতুন বলবিদ্যা ইলেকট্রনিক্স এবং তার সঙ্গে ইলেকট্রনিক যন্ত্রসামগ্রী সহ নতুন প্রযুক্তি সহ তথ্য প্রযুক্তি অর্থাৎ Information Technology (IT) সামনে আসে। বিংশতিতম শতাব্দীর শেষ অর্ধার্ধে ভারতবাসী সহ বিশ্ববাসী এক নতুন বিশ্ব, ই-বিশ্বে প্রবেশ করেন। যে বিশ্বের কোনো দৃশ্যমান বা অদৃশ্য সীমারেখা নেই। যে বিশ্বের নতুন ঠিকানা শুরু হয় www অর্থাৎ World Wide Web দিয়ে। এই যুগকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘Digital Age’। যোগাযোগের দুনিয়ায় এসেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ই-মেল, ফেসবুক, ট্যুইটার, সোশ্যাল মিডিয়া, স্কাইপ, ভিডিয়ো কনফারেন্স, ই-ব্যবসা, ই-ট্রান্সফার... ইত্যাদি। এই সকলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানুষ মুহূর্তের মধ্যে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে ফেলছেন, নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলছেন।
***
ই-বিশ্বে বিশ্ববাসী প্রবেশ করায় ভারতীয় সংসদ ২০০০ সালে তথ্য প্রযুক্তি আইন বা IT Act 2000 প্রণয়ন ও গ্রহণ করে। ২০০৮ সালে ভারতীয় সংসদ সেই আইন সংশোধন করে নতুন সেকশন ৬৬এ যুক্ত করে। যা রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর পরবর্তী ফেব্রুয়ারি ২০০৯ চালু হয়। উল্লেখ্য, আইনে অন্তর্ভুক্তির আগে সেকশনটি খতিয়ে দেখার জন্যে ইউপিএ সরকারের আমলে জাতীয় কংগ্রেসের সাংসদ নিখিল কুমারের নেতৃত্বে বিভিন্ন দলের ৩১ জন সাংসদ নিয়ে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠিত হয়। ৩১ জনের কমিটি সদস্যর মধ্যে প্রাক্তন তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মাননীয় রবিশংকর প্রসাদ ছিলেন। কমিটি মোট ২৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট মিটিং করে। ৯ জন সাংসদ কোনো একটি কমিটি মিটিংয়েও অংশগ্রহণ করেননি। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন ২২ ডিসেম্বর ২০০৮, লোকসভায় ইউপিএ সরকার ৭ মিনিটের মধ্যে ৭টি বিল পাস করিয়ে নেয়। তারমধ্যে একটি বিল ছিল সেকশন ৬৬এ অন্তর্ভুক্তির বিল। তখন বিরোধীদল বিজেপি এই বিলের বিরোধিতা করেনি। কেবল সিপিআই(এম) সাংসদ এ বিজয়রাঘবন ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। বাকিরা বিলটি পাস করিয়ে দিতে তৎপর ছিলেন। এবং পরের দিন রাজ্যসভায় বিলটি পাস হয়। সেদিন রাজ্যসভার সাংসদরা বছর শেষে শীত অবকাশে নিজ এলাকায় ফিরবার জন্য ট্রেন/ প্লেন ধরার ব্যস্ততায় ছিলেন।
***
২০১২ সালের ১২ এপ্রিল, রাজ্যের শাসকদলের মদতপুষ্ট ৭০-৮০ জন দুষ্কৃতী পরিকল্পনামাফিক আমাদের সমবায় আবাসন অফিসে সন্ধ্যাবেলায় জড়ো হয়। একটি নিরীহ কোলাজ কার্টুন ই-মেলে ফরোয়ার্ড করার কারণে আমায় এলোপাতাড়ি মারধর করে; প্রাণনাশের হুমকি দেয়; জোর করে দুষ্কৃতীদের পছন্দমতো বয়ানে লিখিয়ে নেয়; পুলিশ ডেকে আমার সঙ্গে আবাসনের সম্পাদক সত্তরোর্ধ সুব্রত সেনগুপ্তকে গ্রেফতার করতে নির্দেশ দেয়; পুলিশ নির্দেশমতো অভিযোগপত্র ছাড়াই দু’জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে; অ্যারেস্ট মেমোতে সই করিয়ে থানার লক্আপে পুরে দেয়। পরের দিন আলিপুর ক্রিমিনাল কোর্টে কেস দায়ের করে। উল্লেখ্য, অভিযোগপত্র থানায় জমা পড়ে অনেক পরে। অভিযোগপত্রের বয়ান অনুযায়ী অভিযোগকারী স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য অমিত সরদার। অমিত সরদার ফরোয়ার্ড করা ই-মেলের গ্রাহক নয় এবং আমাদের সমবায় আবাসনের আবাসিকও নয়!
এই ঘটনার পর দেশ-দুনিয়ার সংবাদ মাধ্যম, বিশিষ্টজন, বিভিন্ন দেশের কার্টুনিস্টদের সংগঠন সহ সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে এই গ্রেফতারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার বিরোধী চিহ্নিত করে। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতারের পক্ষে দাঁড়ান প্রকাশ্যে, একাধিকবার। এবং পুলিশকে দিয়ে কেবলই 66A of IT Act ব্যবহার করে দীর্ঘ ৯৬ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন। গত ৯ বছরের বেশি সেই ক্রিমিনাল কেস চলছে। সঙ্গে উপরি পাওনা - হেনস্তা ও হয়রানি। পাশাপাশি মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশও রাজ্য সরকার খারিজ করে। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ ৬ বছর পেরিয়েছে; আজও কার্যকর হয়নি। অপরদিকে ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ, দেশের শীর্ষ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে 66A of IT Act স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার বিরোধী তথা সংবিধান বিরোধী ঘোষণা করে এবং সেকশনটি চিরতরে বাতিল করে। বাতিলের পর ৬ বছরের বেশি অতিক্রান্ত। তা সত্ত্বেও কেবলই ৬৬এ সেকশনের ভিত্তিতে চলা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা আলিপুর ক্রিমিনাল কোর্টে বহাল তবিয়তে ! অর্থাৎ দেশের আইন, সংবিধান, আদালত, বিশিষ্ট মানুষ সহ সাধারণ মানুষজন কী বলছে, তা রাজ্য প্রশাসনের কাছে ধর্তব্যের বিষয়ই নয়। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে সহ-অভিযুক্ত সুব্রত সেনগুপ্ত ১১ মে ২০১৯ চিরতরে চোখ বুজেছেন। সকল কিছুর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছেন।
শুধু পশ্চিমবাংলা নয়; ওডিশা, তামিলনাডু, পুদুচেরি, মহারাষ্ট্র, গোয়া, উত্তর প্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যের সরকার IT Act-এর ৬৬এ সেকশন প্রয়োগ করে সাধারণ মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সহ মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। প্রতিটি ঘটনার বিশ্লেষণে এটাই পরিষ্কার, বেশিরভাগ শাসকদল কোনো সমালোচনা বা বিরুদ্ধমত সহ্য করতে চায় না। তাই যে কোনোভাবেই হোক শাসকদল সমালোচক বা বিরুদ্ধমতপোষণকারীকে চুপ করিয়ে দিতে চায়। সেক্ষেত্রে IT Act-এর দানবীয় ৬৬এ সেকশন সহজে ব্যবহৃত হতে পারে, হয়েছেও। স্বাধীন মতপ্রকাশ বিরোধী ৬৬এ সেকশন সাধারণ মানুষজনের ক্ষেত্রে বার বার অপপ্রয়োগ ঘটছে। সাধারণ মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের উপর আক্রমণ হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে দিল্লি নিবাসী আইনের ছাত্রী শ্রেয়া সিঙ্ঘাল ৬৬এ সেকশন বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল। পূর্বতন ইউপিএ সরকার যে আইন তৈরি করেছিল, সেই আইন বাতিলের ক্ষেত্রে বর্তমান এনডিএ সরকার বিরোধিতা করে। কিন্তু শেষমেষ সুপ্রিম কোর্ট আইটি অ্যাক্ট-এর দানবীয় ৬৬এ সেকশন স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার বিরোধী তথা সংবিধান বিরোধী ঘোষণা করে চিরতরে বাতিল করে।
66A of IT Act বাতিল হওয়ার পরও সারাদেশে এই সেকশনে এক হাজারের বেশি গ্রেফতার এবং বিভিন্ন কোর্টে কেস রয়েছে। শীর্ষ আদালত জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। কিন্তু এর বেশি কিছু করার নেই, এমনই অবস্থা।
সেকারণেই স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার বিরোধী তথা সংবিধান বিরোধী দানবীয় ৬৬এ সেকশন শীর্ষ আদালতে বাতিল হলেও আমাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস প্রত্যাহৃত হয়নি। অর্থাৎ রাজ্যে শাসকদলের দৃষ্টিভঙ্গিরও কোনো পরিবর্তন হয়নি। শাসকদল সমালোচক বা বিরুদ্ধমতপোষণকারীদের চুপ করিয়ে দিতে অন্য কোনো অস্ত্র প্রয়োজনে মিথ্যার আশ্রয়, গায়ের জোর, বিভেদের খেলায় মাতবে। অর্থাৎ আইনি রক্ষা কবচ বা সেকশন ৬৬এ বাতিল, কখনও সাধারণ মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের গ্যারান্টি নয়। সাধারণ মানুষের মানবাধিকার, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারের গ্যারান্টি নির্ভর করবে শাসকদলের দৃষ্টিভঙ্গির উপর। শাসকদল যদি চায়, তাহলেই গ্যারান্টি। ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃতি বা সুপ্রিম কোর্টের রায় কোনো দিনও সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারে না; কেবল সহায়ক হতে পারে। ‘অধিকার রক্ষা’ নির্ভর করবে প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির উপরে, যা কার্যত নির্ভর করবে শাসকদলের দৃষ্টিভঙ্গির উপরে।