৬১ বর্ষ ২ সংখ্যা / ১৮ আগস্ট, ২০২৩ / ৩২ শ্রাবণ, ১৪৩০
স্বপ্নের মৃত্যু
নন্দিনী মুখোপাধ্যায়
একটা স্বপ্নের মৃত্যু এবং তাই নিয়ে রাজনীতি। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে এটাই ধারা নাকি? গত কয়েকদিন ধরে সংবাদ মাধ্যম যে ধরনের খবর পরিবেশন করছে, বিশেষ করে রাজ্যের শাসক দলের কোনো কোনো নেতাদের এবং খোদ মুখ্যমন্ত্রীর যে বক্তব্য শোনা গেছে তাতে এ কথাই মনে হচ্ছে। কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্য থেকে জন্মগ্রহণ করেছে, তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মুক্ত চিন্তার লালন পালন দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে এসেছে। এই মুক্ত চিন্তার আবহাওয়ায় একটা বিষয় সুনিশ্চিত হয় যে, এখানে কোনো মতামতকেই দমিয়ে রাখার সংস্কৃতি নেই, ফলে ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠে নানান মতামত - দার্শনিক, রাজনৈতিক, এবং সামাজিক। এই আবহেই গত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ছাত্রদের মধ্যে গড়ে উঠেছে অনেকগুলি সংগঠন যারা ক্যাম্পাসে সক্রিয়। তার মধ্যে যেমন আছে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই, তেমনি আছে বাইরে অতিবাম বলে পরিচিত ডিএসএফ, এআইএ এবং কয়েকটি সংগঠন যারা নিজেদের স্বাধীন বলে যেমন উই দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টস, ফোরাম অফ আর্টস স্টুডেন্টস ইত্যাদি। ইতিমধ্যে অনেকেই খবরের কাগজ বা সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে জেনে গেছেন যে, এই তথাকথিত স্বাধীন সংগঠনগুলি পরিচালিত হয় কালেক্টিভস বলে একটি সংগঠনের দ্বারা যার মতাদর্শ সম্পর্কে এখনও সকলের পরিষ্কার বোঝাপড়া নেই। তবে পরিচালনা যার হাতেই থাক, বাস্তবে এই সংগঠনগুলিতে মিশে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং সমর্থকরা, যেমন গত কয়েক বছরে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি ইত্যাদি রাজনৈতিক দলের সমর্থক ছাত্ররা। ডি এস এফ-এর উত্থানের বীজ হয়তো কোনো সময়ে নকশাল রাজনীতিতে ছিল, কিন্তু শোনা যায় বর্তমানে তারা কালেক্টিভসেরই অংশবিশেষ। এই প্রত্যেকটি সংগঠনই আবার তীব্রভাবে বাম বিরোধী। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তিনটি ফ্যাকাল্টিতে ছাত্র ইউনিয়ন আছে, তার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি সর্ববৃহৎ এবং গত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ডিএসএফ এবং তার একটি দুটি সহযোগী দল দ্বারা পরিচালিত। আর্টস এবং সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতেও “স্বাধীন” সংগঠনগুলির যথেষ্ট প্রভাব। সায়েন্স ছাত্র ইউনিয়ন যেমন দীর্ঘদিন এসএফআই-এর হাতে নেই, উই দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টস-এর দখলে, তেমনি আর্টস ছাত্র ইউনিয়নে কখনো থাকে এসএফআই, কখনো ফোরাম অফ আর্টস স্টুডেন্টস। স্বাধীন ছাত্র সংগঠনের, বিশেষ করে যারা নিজেদের অরাজনৈতিক বলে থাকে তাদের দুটো বৈশিষ্ট্য আছে - প্রথমত বাঁধন ছাড়া হয়ে যেতে এদের বিশেষ একটা সময় লাগে না, অনেকসময়েই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সুস্থ চিন্তার বদলে হুজুগ এদের বেশি পরিচালিত করে। দ্বিতীয়ত, কোনো মতাদর্শ ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি না থাকার দরুণ যে কোনো সময়ে সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে দূরদর্শিতার বদলে দখলদারির রাজনীতি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরেই এই ধরনের ছাত্র সংগঠনগুলিকে সাথে নিয়েই চলতে হয়েছে। যদি আশির দশক, নব্বইয়ের দশকের দিকে তাকাই তবে এদের বিভিন্ন সময়ের ছাত্র আন্দোলনেও কিছুটা উচ্ছৃঙ্খলতা, দিশাহীনতা দেখা যাবে। কিন্তু ১৯৮১ সালে প্রথম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং তারপর স্ট্যাটুট গৃহীত হওয়ার পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণমূলক পরিচালনার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। যার অর্থ হলো পরিচালকমণ্ডলীতে ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, প্রাক্তনী ইত্যাদি সমস্ত অংশীদারদের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব থাকা। ফলে ১৯৮১ থেকে ২০১১ সাল পর্যান্ত বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলেও তা সামলে নেওয়া যেত এই পরিচালকমণ্ডলীতে এবং সামগ্রিকভাবে সকলে মিলে পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে। যদিও ২০০০ সালের পর থেকেই এক অংশের ছাত্রের মধ্যে, বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ দেখা যায় ঘেরাও-এর রাজনীতির প্রবণতা। বাইরের তৎকালীন বামবিরোধী রাজনীতি এই ছাত্রদের ব্যবহার করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিকে অশান্ত করার জন্য। ফলে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বেশ কিছু পড়ুয়া এক দিশাহীন রাজনীতির কবলে পড়ে এমন কিছু দাবি দাওয়ার মধ্যে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে যে প্রকৃতপক্ষে ছাত্রস্বার্থ পরিপন্থী, যেমন ২০০৩ সালে পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আন্দোলন, ২০০৫ সালে পরিচালকমণ্ডলীর দ্বারা শাস্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের শাস্তি মকুবের দাবিতে আন্দোলন ইত্যাদি। এখানে বলে নেওয়া দরকার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র ইউনিয়ন ডি এস এফ-এর দখলে থাকলেও এক বিরাট অংশের ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পড়ুয়া এই সমস্ত কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকত। যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্ররা বেশিরভাগই ক্যারিয়ার তৈরির দিকে বেশি নজর দেয়, এই আন্দোলনগুলিতে প্রকৃতপক্ষে অংশগ্রহণ করত ছাত্রদের একাংশ।
ভারতের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতই যাদবপুরেও হোস্টেল বা ক্যাম্পাসে কিছু উচ্ছৃঙ্খলতা ছিল, রাগিংয়ের কিছু ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাস এবং হোস্টেল থাকত কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে। হোস্টেলে তখন শিক্ষকরাই সুপারের দায়িত্ব নিতেন। শিক্ষক এবং আধিকারিকরা নিয়মিত হোস্টেল এবং ক্যাম্পাস পরিদর্শন করতেন, শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা নন, কোর্ট এবং কাউন্সিলের নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিরা এই পরিদর্শনের কাজে যুক্ত থাকতেন। তাই সমস্ত সমাজে যেমন অপরাধমূলক কাজকর্ম নির্মূল করা না গেলেও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তেমনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাগিং এবং উচ্ছৃঙ্খলতার ঘটনা যাতে না ঘটে এবং মাত্রাছাড়া না হয়ে যায়, তার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হতো। যেমন বিভিন্ন সময়ে রাগিংয়ের অভিযোগ পেলে প্রশাসন তদন্ত কমিটি করেছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ছাত্রকে হোস্টেল থেকে বহিষ্কার করা, কিছুদিনের জন্য সাসপেন্ড করা এমনকী বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও কর্তৃপক্ষ নিয়েছে। বেশ কিছু ঘটনার কথা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্তগুলিকে একবার ফিরে দেখলেই জানা যাবে।
তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সালে সমস্ত রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরও আইন পরিবর্তিত হয়। এই আইনের ফলে প্রশাসকমণ্ডলী থেকে ছাত্র এবং অন্যান্য অংশের প্রতিনিধিত্ব সরিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বের কথা আইনে থাকলেও স্ট্যাটিউট পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের যে প্রয়োজন ছিল তা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নানান টালবাহানায় দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ফেলে রাখা হয়। এইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মেরুদণ্ডটাই ভেঙে রাখা হয় যাতে রাজ্য সরকার তার দখলদারি চালাতে পারে। এইভাবে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করা হয় এমনভাবে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাতাটি খসলেও রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে। অর্থাৎ দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক দক্ষতাকে সম্পূর্ণভাবে বাইরে রেখে কিছু অদক্ষ ব্যক্তিকে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে আসা হয় যাতে শাসকদলের দখলদারি বজায় থাকে। অন্যান্য দিক থেকেও, যেমন শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নানানভাবে বাধার সৃষ্টি করে পদগুলিকে শূন্য রেখে দেওয়া হয়। নজরদারির জন্য এবং যে কোনো অসামাজিক কাজ প্রতিরোধের জন্য যে সংখ্যক শিক্ষাকর্মীর প্রয়োজন, এবং একই সাথে শিক্ষকের প্রয়োজন সেখানেও রয়ে গেল বিরাট শূন্যতা।
অতিমারীর সময় থেকেই এই স্বাধীন ছাত্র সংগঠনগুলির কয়েকজন নেতা নিজেদের প্রায় কর্তৃপক্ষের সমতুল্য ভেবে নিলেন। বিস্ময়করভাবে কর্তৃপক্ষও এই ছাত্রনেতাদের প্রায় উপাচার্যের মর্যাদা দিয়ে দিলেন। প্রত্যেক বিষয়ে, এমনকী নতুন পাঠক্রম চালু করতে গেলেও তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। ফলে এরা ক্যাম্পাসে তো বটেই, তার সাথে হোস্টেলেও নিজেদের রাজা মনে করতে লাগল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহুবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও সেই দিকে নজর দেওয়ার বা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নিদর্শনই দেখা গেল না। কিছু ছাত্রের এই দখলদারি মানসিকতার সঙ্গে যে এতটাই বিকৃত মানসিকতা যুক্ত হয়ে পড়েছিল সেটা বোঝা গেল স্বপ্নদীপের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে।
স্বপ্নদীপের মৃত্যু সামগ্রিকভাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ভয়ংকরভাবে আঘাত হেনেছে। আঘাত হেনেছে আমাদের চারপাশের নাগরিক চেতনাতেও। কিন্তু এই মৃত্যু সমাজ থেকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনের অ্যান্টি রাগিং সেলের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশ জুড়ে ২০১৮ এবং ২০১৯ এ যথাক্রমে ১০১৬ এবং ১০৭০টি রাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। পরের দুই বছর যদিও লক ডাউনের জন্য সংখ্যাটি কিছুটা কমে গিয়েছিল। আইআইটি, মেডিক্যাল কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও এর থেকে মুক্ত নয়। এই রাগিং-এর ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্রদের যৌনতামূলক বিকৃত কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যও যেমন ইউজিসি নির্দেশিত ব্যবস্থাগুলি নেওয়া প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন আঠেরো থেকে বাইশ বছরের মনগুলিকে যথাযথভাবে পরিচালন করার জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিং।
কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই মুহূর্তে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে, সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে এবং রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে যে ধরনের আক্রমণ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চালানো হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেটা প্রাপ্য নয়। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বলে দিলেন “যাদবপুর হলো আতঙ্কপুর”। কিন্তু ২০০৯-১০ এর রাজ্য রাজনীতির উত্তাল সময়ে তৎকালীন বিরোধী নেত্রীর মিছিলে যাদের দেখা গিয়েছিল তারা এই স্বাধীন সংগঠনগুলিরই ছাত্রদের একটা অংশ এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক কয়েকজন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। বিরোধী নেত্রীর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পেছনে এদের অবদান তো আছেই। এক উপাচার্য কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার পরে শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনে তাঁর বিরুদ্ধে এই স্বাধীন ছাত্র সংগঠন এবং একটি ছোটো অংশের শিক্ষক এতটাই আক্রমণ করেন যে তিনি আত্মসম্মান বজায় রেখে পদত্যাগ করেন। তাঁর পরবর্তী উপাচার্যকে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে এসে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এইভাবে বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারের অনুপ্রেরণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে প্রশাসনিক অব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই এখানকার শিক্ষক ও ছাত্ররা অত্যন্ত কম আর্থিক সহায়তা পেয়েও উৎকর্ষতা বজায় রাখার লড়াই চালিয়ে গেছে এবং বারে বারে এই রাজ্যের জন্যও নিয়ে এসেছে উৎকর্ষতার শিরোপা। একই সঙ্গে লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশ জুড়ে প্রত্যেক বিচ্ছিন্নতাবাদী, সাম্প্রদায়িকতামূলক এবং সামাজিক অন্যায়ের ঘটনার প্রতিবাদ করেছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে র্যাজগিংকে নির্মূল করার পরিবর্তে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে দাঁড় করানো হচ্ছে কাঠগড়ায়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০০০ ছাত্রছাত্রী পড়ে এবং যে হোস্টেলকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা সেখানে ১০০০ জনও থাকে না। যারা থাকে তাদেরও নিশ্চয় সকলে যুক্ত নয়।
স্বপ্নদীপের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনার পরে যা ঘটছে তার পেছনে নিশ্চয় আছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি'র পক্ষ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক দখল নেওয়া এবং তার প্রতিবাদী চরিত্র মুছে দেওয়ার প্রয়াস। কিন্তু তার সঙ্গে কি যুক্ত নেই শিক্ষাকে বেসরকারীকরণ করার প্রচেষ্টা? পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে এই আক্রমণের পেছনে নিশ্চয় আছে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যারা এখনো অত্যন্ত কম খরচে গরিব ছাত্রছাত্রীদের পড়ার সুযোগ করে দেয়, তাদের দুর্বল করার প্রচেষ্টা। সামাজিকভাবে যাদবপুরকে অবনত করতে পারলে, শিক্ষার বেসরকারিকরণের উদ্দেশ্য আরও সফল হয়। তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, ছাত্ররা অবশ্যই এই অবস্থাকে কাটিয়ে উঠবে এবং আগামীদিনে যাতে আর একজনও স্বপ্নদীপের মতো ঘটনা না ঘটে সেইদিকে আমাদের কড়া নজর থাকবে।