৫৮ বর্ষ ১৮শ সংখ্যা / ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ / ২ পৌষ ১৪২৭
কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিপদ থেকে কৃষকদের বাঁচাতে রাজ্যে আইন প্রণয়নের দাবি
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ অবিলম্বে বিধানসভার অধিবেশন ডেকে কেন্দ্রের নতুন কৃষি আইনের বিপদ থেকে রাজ্যের কৃষকদের রক্ষা করতে প্রস্তাব গ্রহণ এবং আইন তৈরির দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। অন্যথায় বিধায়করা নবান্নে গিয়ে ‘বিধানসভা বসাবেন’ বলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
১৪ ডিসেম্বর বিধানসভার প্রেস কর্নারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা এই দাবি উত্থাপন করেছেন। সুজন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, অন্য রাজ্যে বিধানসভা বসেছে, দিল্লিতে পার্লামেন্টও বসেছে। এরাজ্যের সরকার কোন্ কাজে ব্যস্ত আছে? সরকারের তো কোনো কাজই নেই। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে তিনবার চিঠি দিয়েছি বিধানসভার অধিবেশন ডাকার জন্য। এবার বিধানসভা না ডাকলে আমাদের অন্যভাবে ভাবতে হবে। দরকার হলে আমরা বাইরে বিধানসভার অধিবেশন বসাব, কিংবা নবান্নে বিধায়করা উপস্থিত হয়ে বিধানসভা বসাবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে আবদুল মান্নান বলেন, আমরা বিধায়করা জনগণের প্রতিনিধি। কৃষকদের সমস্যার কথা তুলে ধরে রাজ্য সরকারের কাছে আমরা তো প্রতিবিধান চাইবো। সরকারের বিধানসভা ডাকতে ভয় কীসের? বিজেপি’র কাছে তাদের কোনো কথা দেওয়া আছে?
সুজন চক্রবর্তী আরও বলেছেন, দিল্লিতে কৃষকরা আন্দোলন করছেন। এরাজ্যের কৃষকরাও ফসলের দাম পাচ্ছেন না। ধানের সরকারিভাবে সহায়কমূল্য ১৮৮৮ টাকা। কিন্তু ৭৫০ টাকা বস্তা মানে ১২০০ কুইন্টালে তাঁদের ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। কৃষকদের সর্বস্বান্ত করার চক্রান্ত চলছে। মাঝে দালালি চলবে না। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার বন্দোবস্ত করতে হবে। বিধানসভা ডাকুন, আমরা সদর্থক আলোচনা চাই। স্পষ্ট হয়ে যাক, রাজ্য সরকার কোন্ পক্ষে। কৃষকদের, নাকি কেন্দ্রীয় সরকারের।
আবদুল মান্নান এবং সুজন চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন তিনটি কৃষি আইনের যে বিপদ, তা এরাজ্যে আগেই মমতা ব্যানার্জির সরকার ডেকে এনেছে। সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ২০১৪ সালে কেন্দ্রের আইনের সমতুল আইন পশ্চিমবঙ্গে তৈরি করা হয়েছে। মার্কেটিং রেগুলেশন অ্যাক্ট পরিবর্তন করে কৃষিপণ্যের ব্যবসায় কর্পোরেটদের প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের আপত্তিতে সেই বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু মাত্র সাতদিনের মধ্যে তা আবার বিধানসভায় এনে অনুমোদন করানো হয়। কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কৃষিফসল কেনার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের কমিশন এজেন্টও নিয়োগ করে কিনতে পারবে - রাজ্যের এই আইনও বাতিল করতে হবে। এরাজ্যে ২০১৯-২০ সালে শুধুমাত্র ধান কেনায় চার হাজার কোটি টাকার দালালি হয়েছে। রাজ্যের ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের আইন বাতিল করা হোক এবং কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেওয়া হোক।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, সিঙ্গুরের সময়ে যেমন রাজনাথ সিংদের সঙ্গে নিয়ে কৃষকপ্রেমীভাব দেখিয়েছিলেন, এখনও তেমনই তাঁদের সঙ্গে নিয়ে কৃষকপ্রেমীভাব দেখালে কেউ বিশ্বাস করবে না। দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা হয়ে যাবে আপনি কৃষক-বিরোধী।
রাজ্যে সরকারি ও আধা-সরকারি ক্ষেত্রে শূন্যপদে নিয়োগ এবং দুর্নীতি বন্ধ করে শিক্ষক নিয়োগের দাবিও জানান আবদুল মান্নান ও সুজন চক্রবর্তী। তাঁরা বলেছেন, ব্যাপম কেলেঙ্কারির চেয়েও বড়ো কেলেঙ্কারি হয়েছে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। সরকারের মুখে আলকাতরা পড়েছে। সাড়ে পাঁচ লক্ষ শূন্যপদ পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও আধা-সরকারি ক্ষেত্রে। এগুলো পূরণ করতে হবে।