E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১৮শ সংখ্যা / ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ / ২ পৌষ ১৪২৭

ষোলো কলার গল্প গাথা

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


“সদা সত্য কথা কহিবে। যে সত্য কথা কয়, সকলে তাহাকে ভালবাসে।” ‘বামফ্রন্ট সরকার সহজপাঠ তুলে দিয়েছিল বলে বিদ্যাসাগরের লেখা সহজপাঠ’ হয়তো সকলের পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। তবে লেখাপড়ার একদম শুরুতেই ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্ণপরিচয় নিয়ে সকলকেই অল্পবিস্তর নাড়াচাড়া করতে হয়েছে। তা সে তিনি কোনো উপাচার্যই হোন অথবা নিতান্ত সাধারণ কেউ। কারো কারোর ক্ষেত্রে পড়া যে নিছক পড়া, উপলব্ধি না হয়েই থেকে যায়, তা পরবর্তী সময়ে ঘটনা পরম্পরায় ধরা পড়ে।

ক’দিন আগে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন ভিবিইউএফএ-র সঙ্গে এক বৈঠকে জানান, অমর্ত্য সেন তাঁকে ফোন করে ‘ভারতরত্ন অমর্ত্য সেন’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন এবং কিছু ব্যক্তিগত অনুরোধ করেছিলেন। এই বৈঠকের পর ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে অমর্ত্য সেন-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বিষয়টির সত্যতা জানতে চেয়ে। যার উত্তরে এক ই-মেল মারফত অমর্ত্য সেন-এর জবানীতে জানানো হয়েছে “আমার জ্ঞানত উপাচার্যের সঙ্গে এমন কোনো কথোপকথন হয়নি। আর আমি নিজেকে কখনও ‘ভারতরত্ন’ বলে পরিচয়ও দিই না।” প্রথম পাঠের তৃতীয় পঙ্‌ক্তিতে আগের কথার সঙ্গেই লেখা আছে “যে মিথ্যা কথা কয়, কেহ তাহাকে ভাল বাসে না, সকলেই তাহাকে ঘৃণা করে। তুমি কখনও মিথ্যা কথা কহিও না।” সত্য মিথ্যের বিচার এখানে করতে বসিনি। তবু এখনও পর্যন্ত আমাদের মনন অধ্যাপক, উপাচার্যদের যেহেতু অন্য চোখে দেখতে অভ্যস্ত তাই পাঁচিল কাণ্ডে আত্মরক্ষার জন্য প্রথম পাঠের পড়া বেমালুম ভুলে যাওয়া ভালো লাগে না। এ তো আর বাঙলা দখলে মরিয়া রাজনৈতিক দলের প্রধানের ‘বিশ্বভারতী হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান’ বলা নয়, যে বাঙলার অবাঙালি জামাই ক্ষমতার দখলের নেশায়, বাঙালির মন জয় করতে ভুল করে বলে ফেলেছেন বলে ক্ষমা ঘেন্না করে দিতে হবে!

“শত্রুদের মূল্যায়ন ব্যাঙ্গাত্মক উপায়ে করা ভুল’’। হিটলারের এই কথাটা যেদিন থেকে পড়েছি সেদিন থেকে বারবারই লিখতে বসে মনে হয় এবার একটু কংক্রিট একটা লেখা লিখতে হবে। কিন্তু লিখতে বসলেই কী-বোর্ড বিশ্বাসঘাতকতা করে। মানসচক্ষে ভেসে ওঠে অ্যাডলফ হিটলার টালির নালার ধারে বসে চা বিক্রি করছেন। বঙ্কিম, ত্রৈলোক্য, সুকুমার ধেই ধেই করে চোখের সামনে পালা করে নেত্য করেন। সে কথা থাক।

আগের কথাগুলো ছাড়াও হিটলার আরও অনেক কথাই বলে গেছেন তাঁর আত্মজীবনীতে। ‘জনসাধারণের ধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত পরিসীমিত; এবং তাদের বোঝার ক্ষমতাও দুর্বল। অপরদিকে, তাঁরা যে কোনো ব্যাপার দ্রুত ভুলে যায়। এরকম ক্ষেত্রে, সমস্ত প্রচারকার্যের গণ্ডী কয়েকটা অতি প্রয়োজনীয় ব্যাপারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত এবং বারবার একই কথা বলা উচিত।’ সেটা ‘বহুত হুয়া মেহেঙ্গাই কা মার, আব কী বার মোদী সরকার’-ও হতে পারে কিংবা ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ অথবা সবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা কিংবা ‘দিদিকে বলো’, বাঙলার গর্ব, ’দুয়ারে সরকার’ যা খুশি। মানুষ যেহেতু সবকিছুই দ্রুত ভুলে যায় তাই একমাসে দুবারে রান্নার গ্যাসের দাম ১০০ টাকা বাড়লেও কিছু মনে থাকে না। আলু, পেঁয়াজ একলাফে ৪৫, ৮০ হয়ে গেলেও ‘বহুত হুয়া মেহেঙ্গাই কা মার’ স্লোগান মনে পড়েনা।

অঙ্কা, বঙ্কা, শঙ্কা কিংবা রক্ষক, তক্ষক, ভক্ষকের মধ্যে সহজ অন্ত্যমিল খুঁজে পেয়ে মন যতটা ফুরফুরে হয়, তেমনই আরও অনেক কিছুতেও দাড়ি, কমা, সেমিকোলন মিলে গেলে মাথা চুলকোতে হয়। ‘‘ক্ষত্রিয় মহিলাদের আরও বেশি বেশি করে সন্তানের জন্ম দেওয়া উচিত। এই সন্তানরা বড়ো হয়ে দেশের সুরক্ষা মজবুত করতে এবং দেশের হয়ে লড়াইয়ের জন্য সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেবে। আজকের ক্ষত্রিয়দের নিজেদের কর্তব্য বোঝা উচিত।’’ গত ১২ ডিসেম্বর শনিবার মধ্যপ্রদেশের শেহোরে ক্ষত্রিয় মহাসভা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিতর্কিত এই মন্তব্য করেছেন মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার প্রধান অভিযুক্ত তথা বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর। আর গত শতাব্দীর চারের দশকে, আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে সুদূর জার্মানিতে বসে একজন বলেছিলেন - স্ত্রী শিক্ষার অন্তিম উদ্দেশ্যই হবে ভবিষ্যৎ মাতৃত্ব। জার্মান নারীরা যোদ্ধা পুরুষের জন্ম দিক এবং তাদের লালন পালনের আনন্দ লাভ করুক। বিশুদ্ধ আর্য রক্তে বীর্যবান জার্মান যোদ্ধার জন্মদানই নারীদের জীবনের লক্ষ্য। চমকে উঠে বিশেষ লাভ নেই। বিজেপি সভাপতির কনভয় আক্রান্ত হলে তাঁর মা দুর্গার কথাই মনে পড়ে। যে মা দুর্গাকে বহুদিন আগেই চিনতে পেরেছিল আরএসএস। জন্মলগ্ন থেকেই রাজ্যে আরএসএস’র ত্রাতা তো তাদের বেছে নেওয়া ‘মা দুর্গা’ই।

‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ স্লোগান তোলার ৬ বছর পরে সরকারি তথ্য অনুসারে জানা গেছে ভারতের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৬০ শতাংশের বেশি মহিলা জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেনি। সম্প্রতি জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা থেকে জানা গেছে দেশের মোট ৪০ শতাংশেরও কম মহিলা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।... ওই সমীক্ষাই বলছে - ৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৪০ শতাংশের কম মহিলারা স্কুলে গিয়েছেন এবং ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছেন।

এ লেখাটা নিতান্তই মামুলি। কোনো গভীর তত্ত্বকথা এর পেছনে খুঁজতে না যাওয়াই ভালো। ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরো। এর সূচনাও নেই, উপসংহারও। তার চেয়ে বরং লেখাটাকে দাঁড় করানোর জন্য একটু শক্তপোক্ত, গম্ভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।

‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ স্লোগান তোলার ৬ বছর পরে সরকারি তথ্য অনুসারে জানা গেছে ভারতের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৬০ শতাংশের বেশি মহিলা জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেনি। সম্প্রতি জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা থেকে জানা গেছে দেশের মোট ৪০ শতাংশেরও কম মহিলা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্ধ্রপ্রদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন ২১ শতাংশ মহিলা, অসমে ২৮.২ শতাংশ মহিলা ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। বিহারে ২০.৬ শতাংশ, গুজরাটে ৩০.৮ শতাংশ, কর্নাটকে ৩৫ শতাংশ, মহারাষ্ট্রে ৩৮ শতাংশ, মেঘালয়ে ৩৪.৪ শতাংশ, তেলেঙ্গানায় ২৬.৫ ত্রিপুরায় ২২.৯ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গে ২৫.৫ শতাংশ, দাদরা নগর হাভেলিতে ৩৬.৬ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ২৪.৮ শতাংশ মহিলা ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। ওই সমীক্ষাই বলছে - ৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৪০ শতাংশের কম মহিলারা স্কুলে গিয়েছেন এবং ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছেন। যার মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশে ৩৯.৬, অসমে ২৯.৬, বিহারে ২৮.৮, গুজরাটে ৩৩.৮, মেঘালয় ৩৫.১, ত্রিপুরায় ২৩.২, পশ্চিমবঙ্গে ৩২.৯, দমন ও দিউ ৩৫.৮ শতাংশ। প্রজ্ঞা ঠাকুরের কথা, নাৎসি নেতার কথার সঙ্গে এই পরিসংখ্যানের যদি কোনো যোগাযোগ আছে বলে মনে হয় তা নিতান্তই কাকতালীয়। মাথা ঘামাতে বসবেন না যেন!

একইভাবে মাথা ঘামানো উচিত নয় দেশে গত ২২ দিন ধরে চলা কৃষক আন্দোলন নিয়েও। কারণ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ গত ১৩ ডিসেম্বর রবিবার পাটনায় জানিয়ে দিয়েছেন - ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ দেশে কৃষক আন্দোলন থেকে সুবিধা নিচ্ছে। দেশ ভাঙার এই কারিগরদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে তিনি দিল্লি হিংসা এবং মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁও হিংসাকে জুড়ে দিয়ে আরও বলেছেন - আমি জানতে চাই এরা কারা যারা দেশ ভাঙতে চাইছে? যারা দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রে দাঙ্গার সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে জেলে আটক তাদের মুক্তি চাইছে? পুলিশ চার্জশিট দাখিল করেছে। বিচার প্রক্রিয়া চলছে বলে তাঁরা জামিন পাচ্ছে না। এখন তারাই কৃষক আন্দোলনকে ব্যবহার করে মুক্তি চাইছে। কিন্তু আমরা এসব কিছুতেই বরদাস্ত করবো না। কৃষক আন্দোলনে দেশ এবং দেশের বাইরে সমালোচিত হলেও একই সুরে একাধিক বিজেপি নেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিরোধিতা জারি আছে। জারি আছে দেশভাঙার জুজু, এই আন্দোলনের পেছনে খালিস্তান, পাকিস্তান, চীনের ষড়যন্ত্র, বামপন্থী, মাওবাদীদের ইন্ধনের নাগপুরি তত্ত্ব।

তবে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী যাই বলুন না কেন কৃষক আন্দোলন থামার এখনও কোনো লক্ষণ নেই। ১৬ ডিসেম্বর বুধবার সিঙ্ঘু-দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের সমর্থনে নিজের শরীরে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক প্রবীণ সন্ত। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে হরিয়ানার কারনাল নিবাসী সন্ত রাম সিং তাঁর মৃত্যুর আগে লেখা এক চিরকুটে বলে গেছেন ‘কৃষকদের ওপর জুলুমের এটাই আমার প্রতিবাদ। কেউ নিজের পুরস্কার ত্যাগ করেছে। আমি নিজের জীবন ত্যাগ করলাম।’ কৃষক আন্দোলনে বিক্ষোভরত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩০ জন কৃষকের।

১৬ ডিসেম্বর, বুধবার কৃষি আইনের বিষয়ে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে জানিয়েছেন - “কৃষকদের প্রতিবাদ খুব শীঘ্রই জাতীয় বিষয় হয়ে উঠবে।” কৃষক আন্দোলন যে ইতিমধ্যেই জাতীয় বিষয় হয়ে গেছে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে গত ৮ ডিসেম্বরের ভারত বন্‌ধে। এখনও প্রতিদিন কৃষক আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রাজ্যে রাজ্যে চলছে বিক্ষোভ। ১৬ ডিসেম্বর কলকাতায় কৃষক আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিরাট সমাবেশ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কৃষি আইন নিয়ে শুনানিতে সরকার এবং কৃষকপক্ষের প্যানেল তৈরি করে আলোচনার প্রস্তাব দেয়। যে প্রস্তাব কার্যত খারিজ করে দিয়েছেন কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব। এই বিষয়ে সারা ভারত কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা জানিয়েছেন - সুপ্রিম কোর্ট যা বলেছে তা কেন্দ্র আগেই বলেছিল। তাতে কৃষকরা রাজি নয়।

লেখাটার এখনও পর্যন্ত মাত্র চার কলা পূর্ণ হয়েছে। বাকি বারো কলা পূর্ণ করার জন্য সিলো নিয়ে বলা যাক। তাহলেই ষোলো কলা পূর্ণ। এফসিআই-এর নাম তো আমরা সকলেই জানি। সরকারি সংস্থা। এর পাশাপাশি আদানি এগ্রি লজিস্টিক্স নামেও একটা কোম্পানি আছে। সিলো স্টোরেজ টেকনোলজি তাদেরই। আদানি এগ্রি লজিস্টিকস-এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে এফসিআই-এর সঙ্গে তাদের প্রায় ৭০০ কোটি টাকার এক চুক্তি হয়েছে। যে চুক্তি অনুসারে ক্ষতি কমাতে খাদ্যশস্য মাঠ থেকে তুলে পরিষ্কার করে শুকিয়ে তা গুদামজাত করা এবং পরিবহণের দায়িত্ব আদানি লজিস্টিকস-এর ওপর বর্তেছে। আদানিদের যেসব সিলো স্টোরেজে এইসব খাদ্যশস্য রাখা হবে সেগুলো সবই ‘এফসিআই প্রোকিওরমেন্ট সেন্টার’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। যেখানে কৃষকরা সরাসরি তাদের উৎপাদিত ফসল রাখবেন। এর ফলে কৃষকরা সঠিক সময়ে তাদের ফসলের দাম পাবেন।

ওই ওয়েবসাইটেই নিচের দিকে ‘ফিচার্স’ বিভাগে বলা আছে আদানি গোষ্ঠী এখন এফসিআই-এর হয়ে ৫,৭৫,০০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গে দেখভাল করে। এছাড়াও আরও ৩,০০,০০০ মেট্রিক টন খাস্যশস্য দেখভাল করার জন্য মধ্যপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আরও ৪,০০,০০০ মেট্রিক টন শস্য গুদামজাত করার ক্ষমতাসম্পন্ন সিলো ইউনিট তৈরি হচ্ছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটে। অর্থাৎ আদানির হাতে থাকবে মোট ১২,৭৫,০০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য গুদামজাত করে রাখার ক্ষমতা। ইতিমধ্যেই দেশের ১৪ রাজ্যে সিলো স্টোরেজ তৈরি করেছে আদানি গোষ্ঠী।

গত ১১ মে, ২০২০ দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে লকডাউন চলাকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় নিজেদের মালিকানাধীন সাতটি ট্রেনে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৩০,০০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পরিবহণ করেছে এবং এর সবটাই করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’র অংশ হিসেবে। লকডাউনের সময়েও এই গোষ্ঠী গম সংগ্রহ করেছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ থেকে।

সত্যি, মিথ্যে, কৃষক আন্দোলন, আদানি সব মিলিয়ে আশাকরি ষোলোকলা পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার কেউ কাঁচকলা খাবেন নাকি ভোট তা তো সময়ই বলবে। জলপাইগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী ভোটের সঙ্গে কাঁচকলার এরকমই একটা উদাহরণ টেনেছেন। আর কোচবিহারের জনসভায় ১৬ ডিসেম্বর বলেছেন - ‘মানুষ রোজ রোজ তার চরিত্র বদল করতে পারেনা। …কাপড় জামা বদলানো যায়, আদর্শ বদলানো যায়না’। তিনি জানিয়েছেন - ‘মা মাটি মানুষ প্রতারক হতে পারেনা, প্রতারণা করতে পারেনা। বঞ্চনা করতে পারেনা। লাঞ্ছনা করতে পারেনা।’ ‘তৃণমূল মিথ্যে বলেনা।’ ‘সিপিএম সারাক্ষণ ফুটুস ফুটুস করে’। আবারও প্রথম পাঠের ‘সদা সত্য কথা কহিবে’ মনে পড়ে গেল।

যেহেতু ‘সিপিএম সারাক্ষণ ফুটুস ফুটুস করে’ তাই আগের কথাগুলোয় হো হো করে হেসে ওঠার কোনো প্রশ্নই নেই। বরং লেখা শেষ করার আগে আরও একবার ‘ফুটুস ফুটুস’ করে নেওয়া যাক মানুষের স্বার্থে। গত ১৩ ডিসেম্বর এক ট্যুইটবার্তায় সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন - ‘‘কেবলমাত্র নভেম্বর মাসেই ৩৫ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। প্রায় ৯৫ শতাংশ পরিবারে উপার্জন কমেছে। এই সরকারের জনসংযোগ প্রতিদিন নতুন নতুন মিথ্যা বলে মানুষকে পিষে চলেছে, কিন্তু জনগণ প্রকৃত সত্য জানে।’’ তাই এসব কিছুর জবাব জনগণই দেবে। আজ কাল বা পরশু - যেদিনই হোক।