৫৯ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ / ৫ ফাল্গুন, ১৪২৮
শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতির দায়ে হাইকোর্টে ভর্ৎসিত রাজ্য সরকার
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ স্কুলস্তরে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আবার সামনে এলো রাজ্য সরকারের দুর্নীতির একটি নজির। এবার স্কুলের গ্রুপ ডি পদে ৫৭৩ জনের নিয়োগ বাতিল করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এই নির্দেশে মমতা ব্যানার্জির সরকার নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির আরও একটি ঘটনায় আবারও বেকায়দায় পড়ল। স্কুলে নিয়োগ হবার পর এই কর্মীরা যে বেতন পেয়েছেন, তা উদ্ধার করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, যত দ্রুত সম্ভব বেআইনি পদ্ধতিতে নিযুক্ত এই কর্মীদের বরখাস্ত করতে হবে। এই বিষয়ে জেলার স্কুল ইনস্পেক্টরদের দায়িত্ব নিতে হবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গ্রুপ ডি কর্মীদের বরখাস্তের রায়ে দু’সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
এদিকে এই মামলার শুরুতে চলেছে চাপানউতোর। এই ৫৭৩ জন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আদালতে দাঁড়িয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৫৭৩ জনের নিয়োগ বাতিল করে তাঁর নির্দেশে বলেছেন, এই কর্মী নিয়োগের জন্য আদালত যে তদন্ত কমিটি তৈরি করেছে সেই কমিটিকে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। আদালত তার পর্যবেক্ষণে আরও বলেছে, এই নিয়োগে স্বচ্ছতা নেই। কীভাবে এই মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে এই কর্মীদের নিয়োগ করা হলো সরকারকে আদালতকে তা জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের স্কুলগুলিতে গ্রুপ ডি পদে কর্মী নিয়োগ করা হবে বলে রাজ্যের তৃণমূল সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ২০১৬ সালে। এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালে পরীক্ষা নেয় এসএসসি। আবেদনকারীর আইনজীবী বিক্রম ব্যানার্জি বলেছেন, এসএসসি জানিয়েছিল ৬০০০ পদে কর্মী নিয়োগ হবে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় ১৩ হাজার কর্মী গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালের যে তালিকা এসএসসি তৈরি করেছিল তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০১৯ সালে। দেখা যাচ্ছে এখনও ওই পদের জন্য শিক্ষাকর্মী নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে তাঁর সওয়ালে বলেছিলেন, রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আপাদমস্তক দুর্নীতি হয়েছে। এর আগে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে আদালত বারবার এসএসসি-কে সতর্ক করেছে স্বচ্ছতা রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোর জন্য। আদালত বহু পরামর্শ দিয়েছে, কিন্তু আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই এসএসসি কাজ করে চলেছে।
গত নভেম্বর মাসে এই মামলায় হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আপিল মামলা করেছিল এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। গত ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করে দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। কমিটি এই নিয়োগের তদন্ত করতে আরও সময় চেয়েছে আদালতের কাছে।