E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ / ৫ ফাল্গুন, ১৪২৮

এলআইসি’র বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপ

শংকর মুখার্জি


ভারতীয় জীবন বিমা নিগমে (এলআইসি)’র ৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত কাগজপত্র সংস্থার পক্ষ থেকে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া)’র কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ইনিশিয়াল পাবলিক অফারে (আইপিও)’র মধ্যদিয়ে এই শেয়ার বিক্রি করা হবে। সংসদে ২০২২-২৩-র বাজেট পেশের বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছিলেন, চলতি আর্থিক বছর (২০২২ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে) শেষ হওয়ার আগেই এলআইসি ভারতীয় শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হবে। সে কথা তারা রাখল। অন্য কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষায় মোদি সরকার রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিক বা না দিক, দেশের সম্পদ বেচার ব্যাপারে তাদের কথার যে একবিন্দুও নড়চড় হয় না তার নমুনা দেশবাসী আবার দেখল। বিদেশি করপোরেট সংস্থাগুলিও ওঁৎ পেতে বসে ছিল কবে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এলআইসি’র আইপিও’র ঘোষণা করবে। এবার তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হলো। তাদের জন্য ২৪ কোটির মতো শেয়ার রাখা আছে।

এলআইসি’র ৬১৬ কোটিরও বেশি শেয়ারের ৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩১.৬ কোটি শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। তবে এলআইসি’র আইপিও’তে প্রতি শেয়ার কিনতে গেলে কত টাকা ব্যয় হবে তা এখনো জানা যায়নি। আইপিও’র আবেদনের সরকারি নোটিশ প্রকাশ হলেই তা জানা যাবে। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী এলআইসি’র এমবেডেড ভ্যালু (Embedded value) ৫ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই মূল্যায়ন করেছে‘ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকচুয়ারিয়াল ফার্ম মিলিমান অ্যাডভাইসর’। কোম্পানির বর্তমান মূল্য নির্ধারণে এমবেডেড ভ্যালুকে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত এমবেডেড ভ্যালুর আড়াই গুণ থেকে তিনগুণের আশেপাশে হয় কোম্পানির শেয়ারের মোট বাজার মূল্য। এর থেকেই অনুমান করা যাচ্ছে এলআইসি’র মোট বাজার মূল্য হতে চলেছে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ১৬ লক্ষ কোটি টাকার আশেপাশে। ২০০০ থেকে ২,৬০০ টাকার মধ্যে কোনো একটা দাম হবে এলআইসি’র আইপিও’তে প্রতি শেয়ারের। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী এখন মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের বিচারে দেশের প্রথম দুটি সংস্থা হলো রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (১৬ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা) এবং টিসিএস (১৩ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা)। এলআইসি’র শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হলে এই সংস্থার দেশের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে বিলগ্নিকরণের মধ্যদিয়ে মোদি সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৮ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া ও নীলাচল ইস্পাত টাটাদের কাছে বেচেছে সরকার। লক্ষ্যমাত্রার অবশিষ্ট অংশ তারা তোলার চেষ্টা করবে এলআইসি’র আইপিও থেকে।

● ● ●

কোভিড মহামারীর সময়ে সারা বিশ্বেই অর্থনীতি বিপর্যস্ত। বিমা ক্ষেত্রও এর বাইরে নয়। বিশ্বের সর্বাধিক লাভজনক একশ’টি বিমা কোম্পানির ব্যবসা গত বছরে ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমা কোম্পানি চীনের ‘পিঙ্গ অ্যান’-র ব্যবসা কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ। সেখানে বলা যায়, মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো অবস্থান আমাদের দেশের এলআইসি’র। ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রথম ছ’মাসে এলআইসি শুধু প্রিমিয়াম বাবদ আয় করেছে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছরের ওই সময়ের চেয়ে ২ হাজার কোটি টাকা বেশি । এর মধ্যে নতুন পলিসির প্রিমিয়াম থেকে আয় হয়েছে ১৫ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। নতুন পলিসি বেচে দেশের বিমা কোম্পানিগুলি ওই ছ'মাসে যা আয় করেছে তার ৭০ শতাংশই এসেছে এলআইসি’র ঘরে। তার আগের বছরে অর্থাৎ ২০২০-২১ আর্থিক বছরে, যখন কোভিডের ভরা সময় চলছে তখন এলআইসি নতুন ব্যবসা থেকে আয় করেছিল ৩৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা। কোভিড মহামারীর বছরে এলআইসি’র এই কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। এই কারণেই বর্তমানে বিশ্বের ১০০টা বিমা কোম্পানির মধ্যে তুলনামূলক বিচারে এলআইসি’র স্থান শক্তিশালী ব্রান্ড হিসেবে তৃতীয় এবং মূল্যবান ব্রান্ড হিসেবে দশম। আর প্রিমিয়াম থেকে আয়ের বিচারে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে এলআইসি বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক ক্ষেত্রে এলআইসি শুধু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাই নয়, এটা লাভজনকও। গত দুটি আর্থিক বছরে (২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১) এলআইসি’র নিট লাভের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২,৭১২ কোটি টাকা এবং ২,৯০৬ কোটি টাকা। আর চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসে লাভ করেছে ১৪৩৭ কোটি টাকা। এলআইসি’র যা উদ্বৃত্ত হয় তার বড়ো অংশটাই যায় পলিসি হোল্ডারদের কাছে। সংশ্লিষ্ট বছরে যাদের পলিসির মেয়াদ সম্পূর্ণ হয় তারাই এই উদ্বৃত্তের ভাগ পান। এটাকে বোনাস বলে। পলিসি হোল্ডারদের কাছে যা খুবই লোভনীয় বিষয়। চলতি আর্থিক বছরে বোনাস হিসেবে পলিসি হোল্ডারদের ভাগে পড়বে উদ্বৃত্তের ৯৫ শতাংশ। বাকি অংশটা যাবে শেয়ার হোল্ডারদের কাছে। একটা হিসেবে দেখা যাচ্ছে, এলআইসি’র শেয়ার বাজারে ছাড়ার ফলে আগামী তিন বছরের মধ্যেই এই বোনাসের পরিমাণ কমে ৯০ শতাংশ হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে তা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা এলআইসি’র ব্যবসাকে নিশ্চিতভাবেই আগামীদিনে আঘাত করবে।

● ● ●

ভারতের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব গড়ে তুলতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৫৬ সালে এলআইসি প্রতিষ্ঠার পর এগারোটা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলিতে বিনিয়োগের বিষয়ে ভারত সরকারকে সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয়েছে এলআইসি’র তহবিলের ওপরই। ১৯৫৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১১টা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট প্রায় ২৮ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এলআইসি। এই পরিমাণ অর্থ যদি এলআইসি’র কাছ থেকে না মিলতো তাহলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলিতে যতটা সাফল্য পাওয়া গেছে তাও অধরাই থেকে যেত।

এলআইসি তার সম্পদের সিংহভাগ দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বিমা ও শিল্পসংস্থাগুলিতে বিনিয়োগ করেছে। এলআইসি’র বিনিয়োগ রয়েছে এইরকম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি হলো হিন্দুস্তান এরোনেটিক্স, ভেল, নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসিউরেন্স, জেনারেল ইনস্যুরেন্স করপোরেশন অব ইন্ডিয়া, এমএমটিসি, ইঞ্জিনিয়ারস ইন্ডিয়া প্রভৃতি। অন্যদিকে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ার হাতে থাকায় তার মালিকানা এখন এলআইসি’র হাতেই। এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে সবমিলিয়ে এলআইসি’র বিনিয়োগের পরিমাণও খুব একটা কম নয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এর পরিমাণ ছিল ২৬ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এটা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

শেয়ার বাজারেও এলআইসি বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে। এটা সংস্থার বিজনেস স্ট্র্যাটেজির মধ্যেই পড়ে। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে শেয়ার বাজারে এলআইসি’র মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। দেশের শেয়ার বাজারে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এলআইসি’র ৬৫ বছরের ইতিহাসে শেয়ার বাজারে এতো বিনিয়োগ তারা এর আগে কোনোদিন করেনি। ২০২০-২১ আর্থিক বর্ষে এই বিনিয়োগের মধ্যদিয়ে এলআইসি’র শেয়ার বাজারে মোট বিনিয়োগ ৮ লক্ষ কোটি টাকা স্পর্শ করেছে। শেয়ার বাজারকে সুস্থির রাখতেও এলআইসি’র মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থার হস্তক্ষেপ খুব বেশিমাত্রায় জরুরি।

এলআইসি’র আছে কোটি কোটি পলিসিহোল্ডার অর্থাৎ বিমাগ্রাহক। বর্তমানে এলআইসি’র পলিসির সংখ্যা ৪০ কোটিরও বেশি। যেকোনো বিমা কোম্পানির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই বিমাগ্রাহকরা। দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষকে বিমার আওতায় আনার ক্ষেত্রে কোম্পানির এজেন্টরাই একেবারে সামনের সারিতে থেকে কাজ করেন। এলআইসি’র রয়েছে এক শক্তিশালী বিমা-এজেন্ট নেটওয়ার্ক। ২০২১ সালের মার্চ মাসের শেষে সংস্থার এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮০৮। ওই বছর শুধু নতুন এজেন্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ৩ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৬৯ জন । এঁরাই কোভিড মহামারীর সময়ে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছেন। শুধু এলআইসি’র বাণিজ্যটাই বিবেচ্য নয়, এই দুঃসময়ে এত মানুষের একটা আয়ের ব্যবস্থা করেছে তারা। ভারতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে এটা একটা বিরাট ব্যাপার।

কোভিড মহামারীর বছরে বিমা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও নতুন নজির তৈরি করেছে এলআইসি। ওই বছর পলিসিহোল্ডারদের পলিসির মেয়াদ শেষের প্রাপ্ত এবং মৃত্যুজনিত বিমা নিষ্পত্তি এই দুই মিলিয়ে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে এলআইসি।এর মধ্যে মৃত্যুজনিত বিমা নিষ্পত্তি রয়েছে ৯ লক্ষ ৫৯ হাজারটি, অর্থের হিসেবে এর পরিমাণ ১৮ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। আর ২ কোটি ১৯ লক্ষ পলিসির মেয়াদ শেষে বিমাগ্রাহকদের এলআইসি দিয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার কোটি টাকা। কোনো বিমা কোম্পানি কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নির্ভর করে বিমা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে তার সফলতার ওপর। এক্ষেত্রে এলআইসি সারা বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন।

● ● ●

১৯৫৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর এলআইসি অ্যাক্টের মধ্যদিয়ে ভারতীয় জীবন বিমা করপোরেশন তৈরি হয়। ১৯৫৬ সালের ১৯ জুন ভারতীয় সংসদে এই বিলটি পাশ হয়। সেসময়ে ২৪৫টা কোম্পানি এক করে এলআইসি গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে ছিল ১৫৪টা বেসরকারি বিমা কোম্পানি, ১৬টা বিদেশি কোম্পানি ও ৭৫টা প্রভিডেন্ট সোসাইটি। সেসময়ে মাত্র ৫ কোটি টাকা প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিল ভারত সরকারের। তারপর ভারত সরকার আর এক পয়সাও বিনিয়োগ করেনি। পরে মূলধন বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা করা হয়। এই মূলধনের হিসেবে এলআইসি’র ৬১৬ কোটিরও বেশি শেয়ারের প্রতিটার জন্য সরকারের খরচ হয়েছে মাত্র ১৬ পয়সা। এখনও একশ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে ভারত সরকারের হাতে। বর্তমানে সারা ভারতে এলআইসি’র ২০৪৮টা সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজ শাখা, ১১৩টা ডিভিশনাল দপ্তর, ৮টা জোনাল দপ্তর ১৫৪৬টা স্যাটেলাইট দপ্তর রয়েছে। এই দপ্তরগুলিতে ১ লক্ষ ১৪ হাজার কর্মী-অফিসার কাজ করেন। বিশাল কর্মীবাহিনী, শহর ও গ্রামাঞ্চল মিলিয়ে ১৩ লক্ষের বেশি এজেন্ট এবং সুবিস্তৃত প্রশাসনিক নেটওয়ার্কের সাহায্যেই লক্ষ-কোটি গ্রাহকের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেয় এলআইসি। এইরকম পরিষেবা দেবার ব্যবস্থা দেশের অন্য কোনো বেসরকারি বিমা কোম্পানির নেই।

দেশের আর্থিক সার্বভৌমত্ব গড়ে তুলতে এলআইসি গত ৬৫ বছর ধরে যে ভূমিকা পালন করে চলেছে তার কোনো দ্বিতীয় নজির মিলবে না। আজকের এই ভয়াবহ বেকারের যুগে এলআইসি কর্মসংস্থান তৈরিরও একটা বড়ো জায়গা। এলআইসি’র এই বিলগ্নিকরণের মধ্যদিয়ে এক্ষুণি হয়তো সংস্থার মালিকানা ভারত সরকারের হাত থেকে হস্তান্তরিত হবে না ঠিকই কিন্তু তার পথ প্রশস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হলো। দেশের অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নিরঙ্কুশ উপস্থিতিই দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আজ সেখানেই আঘাত করতে চাইছে। একদিকে করছাড়, ব্যাঙ্কের ঋণমকুব করে করপোরেট, ধনী ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলতে সাহায্য করছে ; অন্যদিকে এরফলে সৃষ্ট আর্থিক ঘাটতিকে মোকাবিলা করতে লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে নির্বিচারে জলের দরে বেচে চলেছে। আর সরকারের স্নেহধন্য ওই করপোরেটরাই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, খনিজ সম্পদকে কিনে নিচ্ছে। এই লুটের ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে করপোরেট সংস্থাগুলির শত শত কোটি টাকার ভেট জমা পড়ছে বিজেপি’র তহবিলে।

দেশের আর্থিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে এলআইসি’র বিলগ্নিকরণ একটা বড়ো আঘাত। বামপন্থী দলগুলি, সিআইটিইউ, এআইটিইউসি সহ বাম কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি, ব্যাঙ্ক-বিমা ক্ষেত্রের বামপন্থী কর্মী সংগঠনগুলি নীতিগতভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে। দেশে উদার অর্থনীতির যুগ শুরু হওয়ার সময় থেকেই তাদের এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। রাষ্টায়ত্ত শিল্পের বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে আরও নতুন নতুন মিত্র জোগাড় করতে হবে। দেশের বামপন্থী আন্দোলনের কাছে এটাই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব।