E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা / ১৮ জুন, ২০২১ / ৩ আষাঢ়, ১৪২৮

রাজ্যে শিল্প সঙ্কট তীব্র হচ্ছে ক্রমাগত কাজ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা

বিপন্ন শ্রমিকদের স্বার্থে পথে নেমেছে সিআইটিইউ সহ অন্যান্য সংগঠন


কর্মহীনদের কাজ, বন্ধ চটকল খোলার দাবিতে কাঁকিনাড়ায় বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কোভিড মহামারীর ভয়াবহ সংক্রমণের আবহে গোটা দেশে যেমন শিল্পে সঙ্কট বাড়ছে,সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা, তেমনি পশ্চিমবঙ্গেও শ্রমিকদের দুর্দশা মারাত্মকভেবে বেড়ে চলেছে।একদিকে চটকলগুলি বন্ধ হচ্ছে,হোসিয়ারি শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না। এই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যের কৃষি খামারগুলোকেও বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় কৃষি দপ্তর জেলার কৃষি খামারগুলোর বীজ তৈরি, চারা রোপণ সহ বিভিন্ন দায়িত্ব বেসরকারি এজেন্সির হাতে দেবার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। এই অবস্থায় রাজ্যে কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের ইউনিটও বন্ধ হতে চলেছে। এমনই একটি পরিস্থিতিতে আগামী ৩০ রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পে ধর্মঘটের প্রস্তুতি চলছে। শ্রমিকদের এই বিপন্নতা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের কোনো ভাবান্তর নেই।

চটকলে সঙ্কট - কাজ হারাচ্ছেন অগণিত শ্রমিক

সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে চটশিল্পে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এছাড়া কাঁচা পাটের অনিয়মিত সরবরাহ এবং চটের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বিভিন্ন জুটমিলে দৈনিক কাজের ঘণ্টা ও দিন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে একের পর এক চটকল বন্ধের নোটিশ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে চট শিল্পের শ্রমিকদের জীবনে চরম সঙ্কট তৈরির পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে চটশিল্পে সঙ্কট নেমে এসেছে। হাওড়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি চটকল বন্ধ হয়েছে। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই এই অবস্থা শুরু হয়েছে রাজ্যে। ভোটপর্ব মিটতেই রাজ্যে একটার পর একটা মিলে কাঁচামালের অভাব দেখিয়ে কাজ বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া চলছে। ফলে চটকলের শ্রমিকরা নিদারুণ সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁরা রাজমিস্ত্রী বা দিনমজুরি করে অথবা সবজি বেচে কোনোভাবে দিনগুজরান করছেন।

নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগেই চটশিল্পের সঙ্কট মোকাবিলায় এবং প্রয়োজনে বাইরে থেকে পাট এনে মিলগুলির উৎপাদন স্বাভাবিক করা ও পাটের কালোবাজারি রুখতে হস্তক্ষেপ করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছিল ২১টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। একই দাবিতে শ্রম কমিশনার,জুট কমিশনার ও বস্ত্র মন্ত্রকের কাছেও ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই এই কোভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সঙ্কটে জর্জরিত শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে নানাভাবে আন্দোলন, বিক্ষোভ, ডেপুটেশন ইত্যাদি কর্মসূচি সংগঠিত করছে সিআইটিইউ সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন।

সম্প্রতি ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্নার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাজ্যের চটকলগুলির সমস্যা সমাধান, বিশেষকরে এ রাজ্যে বন্ধ ১৭টি চটকল খোলার ব্যাপারে শ্রমদপ্তরের কার্যকর হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও কাঁচা পাটের মজুতদারদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিও জানানো হয়েছে। চটকলে রাজ্য সরকার নিয়ম করেছে ৬০ শতাংশ শ্রমিকদের নিয়ে উৎপাদন চলবে। বাকি ৪০ শতাংশ শ্রমিকদের মজুরির দাবি জানানো হয়েছে। লকডাউন পর্বে সব শিল্পের শ্রমিকদের যাতে মজুরি দেওয়া হয়, তা নিয়ে নির্দেশিকা জারির দাবিও জানানো হয়েছে।

এছাড়াও মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে চটকল শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের বকেয়া গ্র্যাচুইটি, পিএফ’র টাকা দেবার জন্য মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য দাবি করা হয়।

লকডাউনে মজুরি থেকে বঞ্চিত দেড় লক্ষ হোসিয়ারি শ্রমিক

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্বের লকডাউনে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় দেড়লক্ষ হোসিয়ারি শ্রমিক মজুরি পাচ্ছেন না। অথচ ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৫’ এবং ‘এপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৮৯৭’ অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি পাওয়ার কথা। সিআইটিইউ অনুমোদিত 'হোসিয়ারি শ্রমিক ইউনিয়ন(পশ্চিমবঙ্গ)'র পক্ষ থেকে হোসিয়ারি মালিকদের সংগঠন 'ওয়েস্টবেঙ্গল হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশন'কে শ্রমিকদের মজুরি দেবার দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে হোসিয়ারি শিল্পের সঙ্গে রাজ্যের সমস্ত শ্রমিকদের বিনামূল্যে কোভিড টিকাকরণের দাবিও জানানো হয়েছে। মালিকদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, গত বছরের ২০ মার্চের কেন্দ্রীয় স রকারের নির্দেশিকা এবং ২৯ মার্চ রাজ্যের মুখ্যসচিবের নির্দেশিকা সত্ত্বেও শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয়নি। এই মর্মে রাজ্যের শ্রম দপ্তরকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

লাক্স থেকে ডলার, রূপা থেকে কোঠারি সমস্ত নামী দামি হোসিয়ারি কোম্পানি গত বছরের মতো এবছরেও লকডাউন পর্বে শ্রমিকদের মজুরি দিচ্ছে না। শহরের ৮টি নামি ব্র্যান্ডের হোসিয়ারি কোম্পানি ঠিকা সংস্থার শ্রমিকদের দিয়ে উৎপাদন চালায়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা সত্ত্বেও এরা শ্রমিকদের মজুরি দিতে অস্বীকার করছে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই এই নামী হোসিয়ারি কোম্পানিগুলি কার্যত গায়ের জোরে শ্রমিকদের মজুরি দিতে অস্বীকার করছে। সিআইটিইউ অনুমোদিত হোসিয়ারি শ্রমিক ইউনিয়ন, পশ্চিমবঙ্গ-র পক্ষ থেকে সংস্থাগুলির কাছে মজুরি সংক্রান্ত দাবিদাওয়া জানানো হলেও তা অস্বীকার করা হচ্ছে।

লাক্স, ডলার, রূপা, কোঠারি, রাজু, বঙ্গলক্ষ্মীর মতো সুপরিচিত ব্র্যান্ডগুলির উৎপাদন চালায় শহরের ২১টি ছোটো উৎপাদন সংস্থা। ব্র্যান্ডেড সংস্থাগুলি তাদের স্থায়ী শ্রমিকদের মার্চ মাসের মজুরি দিলেও ঠিকা শ্রমিকদের একটি টাকাও মজুরি দেয়নি। শুধুমাত্র কলকাতারই কয়েকহাজার হোসিয়ারি শ্রমিক লকডাউন পর্বে একটি টাকাও মজুরি পাননি। হোসিয়ারি মালিকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশন এবং তাদের মার্চেন্ট সংস্থা ভারত চেম্বার্স অব কমার্স’র কাছে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হলেও মালিকরা মজুরি দিতে অস্বীকার করেন।

হোসিয়ারি শ্রমিক ইউনিয়ন (পশ্চিমবঙ্গ)-র সাধারণ সম্পাদক মৃণাল রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, গত বছরের মতো এবারেও লকডাউনের সময় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছেনা। আমরা মালিকদের কাছে মজুরি দেবার দাবি জানিয়েছি। যদি দাবি না মানা হয় তাহলে আগামীতে আরও তীব্র আন্দোলন, প্রয়োজন হলে হরতালের পথে যেতে বাধ্য হবেন শ্রমিকরা। গত ২৭ মে নিউ ব্যারাকপুরের বিলকান্দায় লাক্স ব্র্যান্ডের নিটিং কারখানায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে আগুন লেগে ৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের কাছে মালিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির পাশাপাশি মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধের উদ্যোগ

বর্তমানের এই করোনাজনিত পরিস্থিতিতে ঐতিহ্যমণ্ডিত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা অ্যান্ড্রু ইউল এবং সেইল-এর উপর কোপ বসিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। দেড়শো বছরের পুরনো দেশের অন্যতম প্রাচীন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা অ্যান্ড্রু ইউল গত ২ জুন সংস্থার বোর্ড মিটিংয়ে কলকাতার ইলেকট্রিক ডিভিশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে কলকাতার দুটি কারখানা। একইসঙ্গে দুটি কারখানা মিলিয়ে সংস্থার প্রায় দু’শো কর্মচারীকে স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য করছে কেন্দ্রীয় সরকার।

খিদিরপুরের ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডের ব্রেন্টফোর্ড ও ময়ূরভঞ্জ রোডে সংস্থার ইলেকট্রিক ডিভিসনে মূলত তৈরি হতো সুইচসহ নানা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ পর্ষদগুলির চাহিদা মতো তৈরি করা হতো সুইচ সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সামগ্রী। এই দু’টি কারখানা গুটিয়ে দেবার ফলে শুধুমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীরাই কাজ হারাবেন না, সংস্থার বিপুল জমি ও সম্পত্তি কার্যত জলের দরে বিক্রি করে দেওয়া হতে পারে বেসরকারি হাতে।

সংস্থার ইলেকট্রিক ডিভিসন বিক্রির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে সিআইটিইউ অনুমোদিত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। ইউনিয়নের সভাপতি খোকন মজুমদার জানিয়েছেন, কারখানা দুটির ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবেনা, আমরা কিছুতেই কারখানা বন্ধ হতে দেব না।কারখানা বিক্রির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলন চলবে।

সিআইটিইউ কলকাতা জেলার পক্ষ থেকে অ্যান্ড্রু ইয়ুলের কলকাতা ডিভিসন বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে সংস্থার পরিচালন পর্ষদের প্রত্যেক সদস্যকে। এছাড়া উপযুক্ত হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইটিইউ কলকাতা জেলার সম্পাদক দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এই সংস্থাকে বাঁচানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা।

এদিকে আরেকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেইল’র কাঁচামাল বা র মেটেরিয়াল ডিভিসনের দপ্তরও কলকাতা থেকে গুটিয়ে নেবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুধু কলকাতা থেকে গুটিয়ে নেওয়াই নয়, র মেটেরিয়াল ডিভিসনই তুলে দিতে চলেছে সেইল কর্তৃপক্ষ। কলকাতা থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে বোকারো ও রাউরকেলায় ক্যাপটিভ মাইন হিসেবে এই দপ্তরকে জুড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কাঁচামালের এই বিভাগ কলকাতা থেকে গুটিয়ে নেওয়ায় এ রাজ্যে সেইল’র তিনটি কারখানা দুর্গাপুর ইস্পাত, অ্যালয় স্টিল(এএসপি) ও ইস্কো গুরুতর সঙ্কটের মুখে পড়বে বলে শ্রমিক-কর্মচারীদের আশঙ্কা। গত ১০ জুন সেইল'র পরিচালন পর্ষদের সভায় সংস্থার র মেটেরিয়াল ডিভিসন কলকাতা থেকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হিন্দুস্তান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন(সিআইটিইউ)-র আরএমডি শাখার পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত রদ করার দাবি জানিয়ে নিজাম প্যালেসে কেন্দ্রের আঞ্চলিক শ্রম কমিশনারের কাছে শিল্পবিরোধ আইনের ধারায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে সেইল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন সিআইটিইউ’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সম্পাদক অনাদি সাহু এবং স্টিল ওয়ার্কার্স অব ইন্ডিয়া (সিআইটিইউ)-র সাধারণ সম্পাদক ললিত মিশ্র। এছাড়া কলকাতা থেকে সেইল’র এই কাঁচামাল বিভাগ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে রদ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে কলকাতায় সেইল’র এই বিভাগের সদর দপ্তরের শ্রমিক-কর্মচারীরা আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

৩০ জুন রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পে ধর্মঘটের প্রস্তুতি

রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পে বেসরকারিকরণ রোখা ও বেতন চুক্তি সহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ৩০জুন ধর্মঘটের নোটিশ দিয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। ১৪জুন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করেই দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি), অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট (এএসপি) এবং বার্নপুর ইস্কো স্টিল প্ল্যান্ট(আইএসপি)-র শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ সমাবেশে শামিল হন।এদিন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় ইডি (ওয়ার্কস) দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ জমায়েত হয়। সিআইটিইউ, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, এইচএমএস, আইএনটিটিইউসি এবং এআইইউটিইউসি একযোগে ধর্মঘটের নোটিশ দেয়। বার্নপুর আইএসপি-তে সিআইটিইউ, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি এবং এইচএমএস একযোগে নোটিশ দিয়েছে। এদিন কলকাতা, বোকারো, ভিলাই, কর্ণাটক প্রভৃতি জায়গাতেও ধর্মঘটের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, সেইল’র নিজস্ব লৌহ আকরিকের খনি রয়েছে ৭টি। ডলোমাইট ও লাইমস্টোনের খনি রয়েছে একটি করে। এই ৯টি খনি ছাড়াও রয়েছে নিজস্ব তিনটি কয়লা খনি। কর্তৃপক্ষ একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে লৌহ আকরিক, ডলোমাইট ও লাইমস্টোনের খনিগুলির জন্য গঠিত আরএমডি বিভাগ তুলে দিতে চাইছে। বেসরকারিকরণই মূল উদ্দেশ্য।

এদিন সর্বত্র ঠিকা শ্রমিকরাও বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। উৎপাদনের সর্বত্র যুক্ত রয়েছেন ঠিকা শ্রমিকরা। এই ধর্মঘটেরও অন্যতম দাবি, ঠিকা শ্রমিকদের জন্য বেতন চুক্তি চূড়ান্ত করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পে ধর্মঘটের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় ইউনিয়নগুলিও। ধর্মঘটের সমর্থনে ২৮ জুন প্রতিটি প্ল্যান্ট, খনিতে এবং কলকাতায় কালো ব্যাজ ও পতাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ দেখাবেন। ২৯ জুন সর্বত্র এক দিনের অনশনে শামিল হবেন ইস্পাত শ্রমিকরা।

উল্লেখ্য, সেইল এবং আরআইএনএল’র ৭১ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এবং ৭৫ হাজার ঠিকা শ্রমিক ৩০ জুনের ধর্মঘট সফল করতে জোট বেঁধেছ।

শ্রমজীবী মানুষের পাশে সিআইটিইউ সহ বামপন্থীরা

বর্তমানের এই কঠিন পরিস্থিতিতে বন্ধ কলকারখানা খোলা, শ্রমিকদের মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি দাবি নিয়ে পথে নেমেছে সিআইটিইউ সহ বিভিন্ন শ্রমিক ও গণ সংগঠন। রেড ভলান্টিয়াররা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি সঙ্কটে জর্জরিত শ্রমিকদের পাশেও সাধ্যমতো দাঁড়াচ্ছে। সিআইটিইউসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্যের অসংগঠিত শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিকদের সরকার ও শ্রমিকদের যৌথ সামাজিক সুরক্ষা তহবিল থেকে আর্থিক সাহায় করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে বন্ধ জুট মিল খোলা,অসংগঠিত-সংগঠিত সমস্ত শ্রমিক ও হকারদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া, আয়কর দেন না এমন অসহায় মানুষদের নগদ সাড়ে সাত হাজার টাকা দেওয়া ও পরিবারের সদস্য পিছু ১০ কেজি খাদ্যশস্যের ব্যবস্থা, অঙ্গনওয়াড়ি ও সাফাই কর্মীদের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম দেওয়া ও তাদের স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা করা, পেট্রোল-ডিজেলের দাম সহ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবিতে ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দুর্গাপুর সহ পশ্চিম বর্ধমান জেলা, কলকাতা সহ অন্যান্য স্থানেও বিভিন্ন অংশের বিপন্ন শ্রমজীবী মানুষদের স্বার্থে কোভিড বিধি মেনেই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।