E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা / ১৮ জুন, ২০২১ / ৩ আষাঢ়, ১৪২৮

২৬ জুন সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে দেশব্যাপী কৃষি বাঁচাও গণতন্ত্র বাঁচাও কর্মসূচি

বিভিন্ন রাজ্যে রাজভবনের সামনে অবস্থান কৃষকদের


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আগামী ২৬ জুন সংযুক্ত কিষান মোর্চা(এসকেএম)-র ডাকে দেশব্যাপী পালিত হবে ‘‘কৃষি বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও’’ কর্মসূচি। ওইদিন বিভিন্ন রাজ্যে রাজভবনের সামনে অবস্থান করবেন কৃষকরা। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন, বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল বাতিল সহ বিভিন্ন দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি করার অঙ্গীকার করেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা (এস কে এম)। রাজধানী দিল্লির সীমান্তবর্তী সিঙ্ঘু, টিকরি, শাহজাহানপুর প্রভৃতি সীমান্তে শুরু হওয়া আন্দোলন ২০০ দিন অতিক্রম করেছে। কেন্দ্রের মোদী সরকারের কালা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের তীব্রতা ছড়িয়েছে গোটা দেশে। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর দিল্লি সীমান্তে শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন। তারপর থেকে বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রের কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন হয়ে আসছে। কিন্তু আজও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কৃষকদের মৌলিক দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি।

এদিকে কেন্দ্রের জনবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এর প্রতিফলন পড়েছে বিভিন্ন রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে। প্রবল শীত, দাবদাহ, ঝড়, জল ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের আন্দোলন নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। সামনে বর্ষাকাল,তবুও আন্দোলনে অনড় কৃষকরা। গ্রামে ধান বোনার কাজ শুরু হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের ভিড় ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে ২৬ জুন দেশজুড়ে এসকেএম’র ডাকে ‘কৃষি বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও’ অভিযানের প্রস্তুতি। প্রসঙ্গত, ওই দিনই ভারতে জরুরি অবস্থা জারির ৪৬তম বার্ষিকী। ১৯৭৭ সালের ২৫ জুন রাত ১২টা নাগাদ অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল দেশে। এবছরের এই দিনটি জরুরি অবস্থা জারির ৪৬ বছর এবং এসকেএম'র ডাকে কৃষক আন্দোলনের সাত মাস পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজভবনের সামনে অবস্থান করবেন কৃষকেরা। একইসঙ্গে ২৬ জুন পালিত হবে সারা ভারত কৃষকসভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা স্বামী সহজানন্দ সরস্বতীর মৃত্যু বার্ষিকী। ২৪ জুন পালিত হবে কবীর জয়ন্তী।

সংযুক্ত কিষান মোর্চার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের ৩ কৃষি আইন বাতিলের দাবি সহ অন্যান্য দাবিতে হরিয়ানায় বিজেপি ও তার জোট শরিক জেজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রামবন্দির ডাক দেওয়া হয়েছে। এসকেএম এই দুই দলের নেতাদের কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানাতে মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছে। হরিয়ানার গ্রামে এই দুই দলের নেতাদের ঢোকার সময়ে এসকেএম’র কর্মীরা বাধা দেবেন বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বিজেপি এবং জেজেপি দলের যেকোনো সভা বা বৈঠকে কৃষকরা কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

হরিয়ানায় কৃষক আন্দোলন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষকরা বিজেপি'র একটি নতুন দপ্তর খোলার চেষ্টা বানচাল করে দিয়েছে। ঝাজ্জারের বিজেপি নেতা ওম প্রকাশ ধানকর দপ্তরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই খবর পেয়েই শয়ে শয়ে কৃষক এলাকায় চলে আসেন। বিজেপি দপ্তরের ভিত্তিপ্রস্তর ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়।

এসকেএম কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানোর তীব্র নিন্দা করেছে। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই বিভিন্ন মহল থেকে টিকরি সীমান্তে আন্দোলনে যোগ দেওয়া জনৈক যুবতীর শ্লীলতাহানির ঘটনা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রবল শোরগোল ওঠে। সংযুক্ত কিষান মোর্চা জানিয়েছে, আন্দোলনে মহিলাদের যোগদানের বিষয়টি কৃষকরা সম্মানের চোখে দেখেন এবং মহিলাদের নিরাপত্তা রক্ষায় তারা দায়বদ্ধ।

১৪ জুন এসকেএম'র পক্ষ থেকে গুরু অর্জুন দেবের শহিদিবরণ দিবস বিভিন্ন স্থানে পালিত হয়েছে। এর আগে ১৩ জুন টিকরি সীমান্তে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (একতা উগ্রাহান)

প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা থেকে বিজেপি-আরএসএস পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের ইউএপিএ, এনএসএ এবং দেশদ্রোহী আইনে ধৃত মানবাধিকার কর্মী, বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রছাত্রীদের মুক্তির দাবি জানানো হয়।

কিষান মোর্চার কর্মসূচির প্রতি শ্রমিক সংগঠনের সংহতি

আগামী ২৬ জুন সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে দেশজুড়ে ‘কৃষি বাঁচাও গণতন্ত্র বাঁচাও’ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ (সিটিইউ)। ১৫ জুন সিআইটিইউ, এআইটিইউসি, এইচএমএস, আইএনটিইউসি প্রভৃতি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দিল্লি সীমান্তে গত ২০০ দিনেরও বেশিদিন ধরে চলা লাগাতার কৃষক অবস্থানকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের আনা তিনটি কৃষি আইন এবং বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল বাতিল ও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের ক্ষেত্রে আইনি রক্ষা কবচের দাবিতে কৃষক আন্দোলন নজির সৃষ্টি করেছে।

দিল্লি সীমান্তে জাতীয় সড়কে প্রবল শীত, ঝড়, জল, দাবদাহকে উপেক্ষা করে লাগাতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কৃষকেরা তাঁদের দাবি আদায়ে অনড় এবং এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে ইতিমধ্যেই যে ৫০০-এর বেশি আন্দোলনকারী শহিদের মৃত্যুবরণ করেছেন তার উল্লেখ করে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের অবস্থানে অটল, কোনোমতেই তিন কৃষি আইন ও চারটি শ্রমকোড বাতিল করছে না।

আগামী ২৬জুন দিল্লি সীমান্তে কৃষক আন্দোলনের সাত মাস পূর্ণ হতে চলেছে। বর্তমানে দেশে কেন্দ্রের শাসক শ্রেণির চাপানো অঘোষিত জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে এই কৃষক আন্দোলন ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিবাদ ও কর্মসূচি চলছে। এমনকী লাক্ষাদ্বীপের অধিবাসীরাও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কেন্দ্রের সার্বিক ব্যর্থতার বিষয়ও।

আগামী ২৬ জুন, ১৯৭৫ সালে জারি করা জরুরি অবস্থার ৪৬ বছর পূর্তি এবং কৃষক নেতা স্বামী সহজানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুদিন। ওইদিন সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে সমস্ত রাজ্যে রাজ্যপালদের সরকারি বাসভবনের সামনে অবস্থান এবং জেলা ও তহশিল পর্যায়ে বিক্ষোভের কর্মসূচিকে শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ (সিটিইউ) শুধু সমর্থনই জানায়নি, কর্মী ও সমর্থকদের সাধারণ মানুষকে নিয়ে কর্মসূচি সফল করারও আহ্বান জানিয়েছে। সিটিইউ’র পক্ষ থেকে কেন্দ্রের মোদী সরকারের কাছে চারটি শ্রমকোড, তিন কৃষি আইন, বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল, ২০০০ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া নিশ্চিত করা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বজনীন টিকাকরণ, মাসে জনপ্রতি ১০ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য ও আয়করের আওতায় নেই এমন পরিবারগুলিকে মাসিক ৭৫০০ টাকা করে দেওয়া সহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছে।

কৃষকদের নেতৃত্বেই চলবে দিল্লির আন্দোলন

দিল্লির সীমান্তে গত সাত মাস ধরে যে নজিরসৃষ্টিকারী ঐক্যবদ্ধ কৃষক আন্দোলন চলছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের নেতৃত্বেই সেই আন্দোলন চলবে। সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন সারা ভারত কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক ও সংযুক্ত মোর্চার নেতা হান্নান মোল্লা। তিনি বলেছেন, যে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন এই আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারেন। কিন্তু আন্দোলন পরিচালনার জন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতা-নেত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রশ্নই উঠছে না। এটা কৃষক আন্দোলনের শীর্ষ মঞ্চ সংযুক্ত কিষান মোর্চার ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত নাকি কৃষক আন্দোলনে তাঁকে যুক্ত হবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি নেই। দিল্লির সীমান্তে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে ৫০০ কৃষক সংগঠনকে নিয়ে গঠিত সংযুক্ত কিষান মোর্চা। দাবি আদায়ে এককাট্টা হয়েই লাড়াই চালাচ্ছেন কৃষকরা। মোর্চার কোনো নেতা ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। কিন্তু এই সাক্ষাৎকারের সঙ্গে সংযুক্ত কিষান মোর্চার কোনো সম্পর্ক নেই। কৃষক আন্দোলনে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকে যুক্ত করার কোনো প্রশ্নই উঠছে না। সংযুক্ত কিষান মোর্চা ঐক্যবদ্ধভাবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছে। জয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কৃষকের স্বার্থে এই পথেই আন্দোলন চলবে।

পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে জমি ফেরত সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি টুইটারে যে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হান্নান মোল্লা বলেছেন, প্রথমত মমতা দাবি করেছেন, দশ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিল পাশ করিয়ে সিঙ্গুরের জমিহারা কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।এটা নাকি পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের বিরাট জয়! সে কথা মনে রেখে সারা দেশে এরকম কৃষক আন্দোলনে তিনি নাকি অংশগ্রহণ করবেন! মোল্লা বলেন, মমতা ব্যানার্জি তাঁর জনবিরোধী নীতিগুলি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন। অসত্য, বিকৃত, বিভ্রান্তিকর তথ্যকে মানুষের কাছে নানা কৌশলে সত্য হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন তিনি। সিঙ্গুর সম্পর্কেও টুইটার-বার্তায় তিনি একই কাজই করেছেন।

এর বাস্তব ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সিঙ্গুরে জমিদাতাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই শিল্প স্থাপনের জন্য টাকা নিয়ে জমি দিয়েছিলেন। অল্প কয়েকজন কৃষক সরকারের টাকা নেননি। তারপরে সেখানে কারখানা গড়ে উঠেছিল। বিল্ডিং তৈরি হয়ে গিয়েছিল। উৎপাদন শুরুর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল।সেখানে কৃষক পরিবারের ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ দেওয়া বা তাঁদের কাজের যোগ্য করে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সময় আন্দোলনের কারণে শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শেষ পর্যন্ত সেখানে কারখানা হয়নি। শিল্পের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শত শত ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যায়। সিঙ্গুর ঘটনাবলির এটি একটি দিক।

অন্যদিকে কয়েকশো কৃষক যাঁরা টাকা নিতে চাননি, মমতা ব্যানার্জি আইন করে তাঁদের টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। আজ ১০ বছর হয়ে গেল। কিন্তু সিঙ্গুরের আসল অবস্থা এখন কেমন? আমিও কিছুদিন আগে সিঙ্গুরে গিয়েছিলাম। যে কোনো মানুষ সিঙ্গুরে গিয়ে দেখতে পাবেন যে জমি ফেরত দেওয়া হয়েছে তা প্রায় পতিত হয়ে পড়ে আছে। সেই জমি চাষের উপযোগী করে দেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ জমি ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। কিছু কৃষক সেখানে চাষের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আগে যে ফসল হতো তার ১০-১৫ ভাগ ফসলও সেখানে হচ্ছেনা। ফলে কৃষকদের কোনো লাভ হয়নি। একদিকে কৃষকরা জমি হারালেন, জমি ফেরত পেয়ে আসলে তাঁরা পতিত জমির মালিক হলেন। সেই জমি থেকে তাঁদের কোনো আয় হচ্ছেনা। উলটো দিকে কারখানাটাও চিরকালের জন্য না হওয়ার ফলে ওই কৃষক পরিবারগুলির সামনে যে সুযোগ ছিল, তাও হারালেন তাঁরা। ফলে দু’দিক থেকেই সিঙ্গুরের কৃষক পরিবারগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই ঘটনা নিয়েই মমতা ব্যানার্জি এখন গর্বভরে টুইট করছেন, তিনি নাকি কৃষকদের বড়ো উপকার করে দিয়েছেন। কিন্তু আসল কথা হলো, তিনি যদি সত্যিই কৃষকদের উপকার করতে চাইতেন তাহলে তা করতেই পারতেন। এই পতিত জমি না দিয়ে অন্য জায়গায় চাষযোগ্য জমি কিনে দিলে কৃষকরা সেখানে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতেন। হান্নান মোল্লা বলেন, মমতার ওই আইনে কৃষকদের কোনো উপকার হয়নি। কেউ সিঙ্গুরে গেলেই বুঝতে পারবেন কৃষকরা কেমন আছেন। মমতার এই টুইট দেশের মানুষকে চিন্তার দিক থেকে বিপথগামী করবে।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ভূমিহীন কৃষকদের জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যেখানে খাস জমি ছিল তা কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। যেখানে তেমন জমি মেলেনি, সেখানে সরকারি টাকায় জমি কিনে ভূমিহীন কৃষকদের দেওয়া হয়েছিল। তাই তৃণমূল সরকারও ইচ্ছা করলে জমি দেওয়ার অর্থহীন নাটক বন্ধ করে অন্য জায়গায় চাষযোগ্য জমি কিনে কৃষকদের দিতে পারে। তাতেই বরং কৃষকেরা লাভবান হবেন। চাষ করে জীবিকা নির্বাহের উপায় খুঁজে পাবেন।