E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা / ১৮ জুন, ২০২১ / ৩ আষাঢ়, ১৪২৮

প্রয়াত অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলার নাট্যমঞ্চের অন্যতম অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত ১৬ জুন, বুধবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন। পরিবারে তাঁর স্বামী অভিনেতা-নির্দেশক রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, একমাত্র কন্যা অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত রয়েছেন।

১৯৫০ সালের ২২ মে এলাহাবাদে জন্ম বাংলা স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের। অভিনয়ের পাশাপাশি সঙ্গীতের প্রতি স্বাতীলেখার আগ্রহ ছিল বরাবরের। লন্ডনে ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে পাশ্চাত্য মার্গ সঙ্গীতে ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত তিনি। এলাহাবাদে বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে সাত বছর বয়সে প্রথম অভিনয় করেন মন্মথ রায়ের ‘কারাগার’ নাটকে ‘কীর্তিমান’ চরিত্রে। এরপর ১৯৫৭ থেকে ১৯৭২ টানা পনেরো বছর এলাহাবাদে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি নাটকের নানা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেই সময়ে নির্দেশক অনুকূলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসাহ তাঁকে অভিনয়ের জগতে নিয়ে আসে। স্বাতীলেখা কলকাতায় আসেন ১৯৭২সালে। কলকাতার ইলেকট্রা নাটকে তাঁর অভিনয় দেখে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত তাঁকে নান্দীকারে অভিনয়ের প্রস্তাব পাঠালে তিনি নান্দীকারে যোগ দেন ১৯৭৭-৭৮ সাল নাগাদ। শুধুই সঙ্গীত কিংবা অভিনয় নয়, নাট্য প্রযোজনার নানা শাখায় কাজ করেছেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। মঞ্চে যাঁদের নির্দেশনায় কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুহৃদ চট্টোপাধ্যায়, বিভাস চক্রবর্তী, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং ফ্রিৎস বেনেভিৎস। স্বাতীলেখা অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক কারাগার, নূরজাহান, মিড সামার নাইটস ড্রিম, ওথেলো, মার্চেন্ট অব ভেনিস, কাঞ্চনরঙ্গ, নটী বিনোদিনী, ফুটবল, খড়ির গণ্ডি, আন্তিগোনে, যখন একা, নাট্যকারের সন্ধানে ছটি চরিত্র, মুদ্রারাক্ষস, ব্যতিক্রম, মাননীয় বিচারকমণ্ডলী, শঙ্খপুরের সুকন্যা, শেষ সাক্ষাৎকার, ফেরিওয়ালার মৃত্যু, গোত্রহীন, শানু রায়চৌধুরি, ব্রেষটের খোঁজে, এই শহর এই সময়, পাতা ঝরে যায়, নগরকীর্তন, সোজন বাদিয়ার ঘাট, অজ্ঞাতবাস, শোয়াইক গেল যুদ্ধে, গ্যালিলেওর জীবন, সাঁঝবেলা, নাচনী ইত্যাদি। তিনি আন্তিগোনে ও ফুটবল নাটকের হিন্দি অনুবাদ করেন এবং বাংলায় রূপান্তর করেন মাননীয় বিচারকমণ্ডলী, এক থেকে বারো এবং মুন্সী প্রেমচন্দের বড়দা। নান্দীকারের বেশ কিছু নাটকে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। সীমা মুখোপাধ্যায়ের রঙরূপ প্রযোজিত ‘খুঁজে নাও’ নাটকের নির্দেশক ছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মান। যার মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ নাট্য সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ মঞ্চ অভিনেত্রী, রাজ্য নাট্য আকাদেমির শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত নির্দেশক ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার, এসএনএ আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড এবং ভারত সরকারের সংস্কৃতি বিভাগের ফেলোশিপ। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় লেখা ‘থিয়েটার গেমস ফর স্কুল চিলড্রেন’ তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বই। নাট্যজীবনে বিভিন্ন সময় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যপ্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করেছেন। পাশাপাশি পথশিশু, বস্তিবাসী, দৃষ্টিহীন, যৌনকর্মী এবং সংশোধনাগারের আবাসিকদের নিয়ে নাট্যশিবির পরিচালনা করেছেন। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতে ‘বিমলা’ চরিত্রে তাঁর অভিনয় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এছাড়া শিবপ্রসাদ ও নন্দিতা পরিচালিত ‘বেলাশেষে’ এবং সাম্প্রতিককালে আরও একটি বাণিজ্যিক বাংলা ছবি ‘বরফ’-এ অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ‘বেলাশুরু’ মুক্তি প্রতীক্ষায়। মহাশ্বেতা দেবীর ‘হাজার চুরাশির মা’ টিভি সিরিয়ালে ‘মা’র চরিত্রে অভিনয় করেন।

স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের প্রয়াণে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্য মিশ্র বলেছেন, বাংলা সাংস্কৃতিক জগতের কৃতী শিল্পী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের প্রয়াণে আমরা শোকাহত। বিকল্প সংস্কৃতির লড়াইয়ে তাঁর অভাব অনুভূত হবে। এছাড়াও শোকজ্ঞাপন করেছেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ, পশ্চিমবঙ্গ-র রাজ্য সম্পাদক দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়, অভিনেতা ও সংস্কৃতি সমন্বয়-এর সম্পাদক কুন্তল মুখোপাধ্যায়, স্বাতীলেখার কন্যা সোহিনী সেনগুপ্ত,অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার প্রমুখ। এদিন সন্ধ্যায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।