E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩১ সংখ্যা / ১৮ মার্চ, ২০২২ / ৩ চৈত্র, ১৪২৮

পশ্চিমবঙ্গে পার্টির স্বাধীন শক্তির বিকাশই দেশে অগ্রগতিকে সুনিশ্চিত করবে

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৬তম সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্যে বললেন প্রকাশ কারাত


সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখছেন প্রকাশ কারাত।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ এক মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সামনে পার্টি। এ চ্যালেঞ্জ পার্টির অস্তিত্বের। প্রতিষ্ঠার পর পার্টিকে কখনো এধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। রাজনৈতিক মতাদর্শগত এবং সাংগঠনিকভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে পার্টির সাংগঠনিক শক্তির ইতিবাচক পরিবর্তন না ঘটিয়ে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ অসম্ভব। - সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৬ তম সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্যে এ কথা বলেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত। তিনি বলেন, অতীতে পার্টির প্রতিটি রাজনৈতিক-মতাদর্শগত বাঁকমোড়ে লড়াইয়ের সূচনা পশ্চিমবঙ্গ থেকেই হয়েছিল। কেরালা সহ অন্যান্য রাজ্য অন্তঃপার্টি সংগ্রাম চালালেও সিপিআই(এম) প্রতিষ্ঠার আগে সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সূত্রপাতও এরাজ্যেই হয়। এবারেও বড়ো দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গের পার্টির। গত এগারো বছর ধরে এখানে পার্টির ওপর তৃণমূলের হিংসা সন্ত্রাস চলছে। চলছে পুলিশি নির্যাতন। একে প্রতিহত করেই গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে রয়েছে পার্টি। এর মধ্যদিয়ে পার্টির জনভিত্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।সমস্ত প্রতিকূলতার ব্যূহ ভেদ করে পশ্চিমবঙ্গে পার্টিকে তার অতীত গৌরবজনক ভূমিকায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। দ্বিতীয়দিন ১৬ মার্চ সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে এই বক্তব্য রাখেন প্রকাশ কারাত।

কোভিড মহামারীর সময়ে আর্ত অসহায় মানুষের সেবায় এরাজ্যে রেড ভলান্টিয়ার এবং গণসংগঠনের কর্মীদের ভূমিকার কথা অবতারণা করেন প্রকাশ কারাত। তিনি বলেন, কেরালায়েও কোভিড আক্রান্ত মানুষের পাশে পার্টি ও গণসংগঠনের কর্মীরা থেকেছেন।সেখানে সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহ ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রেড ভলান্টিয়ার এবং পার্টি ও গণসংগঠনের কর্মীরা যে ভূমিকা পালন করেছে তা একেবারেই নজিরবিহীন। এটা এ রাজ্যের পার্টির ঐতিহ্যও। এ প্রসঙ্গে গত শতকের চল্লিশের দশকে মন্বন্তরের সময়ে পার্টির এ ধরনের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন তিনি। কমরেড জ্যোতি বসু পার্টির ইতিহাসে এই বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিলেন।

কলকাতা প্লেনামে বলা হয়েছিল, তরুণদের আরও বেশি বেশি করে পার্টিতে নিয়ে আসতে হবে। প্রকাশ কারাত বলেন, প্লেনামের পর ছবছর অতিক্রান্ত। সময়টা কম নয়। রাজ্য পার্টিতে তরুণ অংশের পার্টি সদস্যের শতকরা হার বাড়েনি। যারা কোভিডের সময় আর্ত মানুষের পাশে থেকেছে, আন্দোলন-সংগ্রামে তারাই রয়েছে সামনের সারিতে। পুলিশের নিপীডনের শিকার হচ্ছেন তারা, জেলেও যাচ্ছেন। এদেরই পার্টির সহায়ক গ্রুপে, পার্টির মধ্যে নিয়ে আনা যেত। তা কেন ঠিকভাবে করা গেল না তার আত্মবিশ্লেষণ জরুরি।

পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচনী কৌশলগত লাইন প্রসঙ্গে প্রকাশ কারাত বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী ভোট সর্বোচ্চমাত্রায় একত্রিত করার জন্য বামফ্রন্ট ছাড়াও অন্য দলের সাথে আসন সমঝোতা করা যেতে পারে। কিন্তু প্রচারের সময় কংগ্রেস এবং আইএসএফ’র সাথে আসন সমঝোতাকে সংযুক্ত মোর্চা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিকল্প সরকার গড়ার কথা বলা হয়। কিন্তু মোর্চার সরকার গড়ার কথা বলার অর্থ কিছু সাধারণ মৌলিক কর্মসূচি থাকতে হবে। এটি ভুল ছিল এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অসমে বিজেপি ক্ষমতায়। বড়ো বিপদ। হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক-কৌশলগত লাইন অনুযায়ী বিজেপি’কে পরাস্ত করতে কংগ্রেসের সঙ্গে পার্টি সেখানে আসন সমঝোতা করে। পার্টির সাংগঠনিক শক্তি আছে এরকম দুটি কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়া হয়। এর মধ্যে কংগ্রেস সিপিআই(এম)-সিপিআই-কে নিয়ে মহাজোটের কথা বলে। পার্টি বলে শুধু আসন সমঝোতা হয়েছে, মহাজোটে পার্টি নেই। গৃহীত রাজনৈতিক-কৌশলগত লাইন অনুযায়ী এটা সঠিক অবস্থান ছিল। পার্টি একটা আসনে জয়লাভও করে। পরে দেখা গেল, নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ওই মহাজোট ভেঙে যায়।

পশ্চিমবঙ্গের গত বিধানসভা নির্বাচনের বিষয়েও আলোচনা করেন প্রকাশ কারাত। তিনি বলেন, তৃণমূল স্বৈরাচারী, সাম্প্রদায়িকতার নীতি নিয়েও চলে। তা সত্ত্বেও তৃণমূল এবং বিজেপি’কে এক করে দেখা যায় না। বিধানসভা নির্বাচনে এধরনের প্রচার বিজেপি'র বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থানকে দুর্বল করেছিল। সারা দেশে অনেকেই ভেবেছিল বিজেপি এখানে সরকার গড়তে চলেছে। কিন্তু নির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হয়। তা’বলে এটা মনে করা ভুল হবে যে, আরএসএস-বিজেপি’র বিষাক্ত রাজনীতির প্রভাব কমে গেছে। এখনো তারা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। সমাজে তারা বিভাজনের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে।তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে রাজ্য রাজনীতির দ্বিমেরুকরণ করার প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে। তাই শুধু তৃণমূলের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করলেই চলবে না, একইসাথে আরএসএস-বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক স্তরে লড়াই জারি রাখতে হবে।

প্রকাশ কারাত উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের ফলাফলের কথা উল্লেখ করে বলেন, মোদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে আমরা ২৮-২৯ মার্চ সারা ভারত সাধারণ ধর্মঘট সফল করার লড়াইয়ে নেমেছি।কিন্তু মোদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেয়েও আরএসএস-বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই আরও বড়ো। উত্তরপ্রদেশের মানুষের আর্থিক দুর্দশা আছে; তাদের ওপর কৃষক আন্দোলনের প্রভাবও ছিল। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারের ধারাবাহিক হিন্দুত্ববাদী বিভাজনের রাজনীতি বিজেপি’কে আবার ওই রাজ্যে ক্ষমতায় এনে দিল। নির্বাচনে মত প্রকাশে কৃষক সহ হিন্দু জনগণের কাছে তাদের ধর্মীয় সত্তাই অগ্রাধিকার পেয়েছে। তাই এক মুহুর্তের জন্য আরএসএস-বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শিথিলতা দেখানো চলবে না।

এই ভয়ানক শক্তি আরএসএস-বিজেপি'র বিরুদ্ধে একা লড়াইয়ে সিপিআই(এম)’র শক্তি যথেষ্ট নয়। এই কথার উল্লেখ করে প্রকাশ কারাত বলেন, এই পরিস্থিতিতে প্রথমে পার্টির স্বাধীন শক্তির এবং জনভিত্তির বিকাশ ঘটাতে হবে। এর উপর ভিত্তি করেই বামফ্রন্ট, বামফ্রন্টের বাইরে বৃহত্তর বামশক্তি, গণতান্ত্রিক শক্তিকে একত্রিত করে আরএসএস-বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এবং তৃণমূলের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

তৃণমূলের নির্বাচনী সাফল্য প্রসঙ্গে প্রকাশ কারাত বলেন, শুধু বিরোধী দলগুলির ওপর সন্ত্রাস হিংসা চালিয়েই তাদের এই সাফল্য আসেনি। সরকারের বিভিন্ন জনমোহিনী প্রকল্প তৃণমূল কংগ্রেসকে নির্বাচনী ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের বৈশিষ্ট্য নয়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলির সরকারও একই পথে চলছে। প্রকাশ কারাত সম্মেলনে জানান, এ ব্যাপারে পার্টি সমীক্ষা আলোচনা চালচ্ছে। সমস্ত বিষয়টিকে নিয়ে শীঘ্রই একটি দলিল তৈরি করবে পার্টি পলিট ব্যুরো।