E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৪ সংখ্যা / ১৮ নভেম্বর, ২০২২ / ১ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

বঞ্চনা ও পুলিশি আক্রমণের বিরুদ্ধে চাকরিপ্রার্থী এবং শিক্ষক সংগঠনের যৌথ কনভেনশন

গড়ে উঠল যৌথ মঞ্চ


কালীঘাটে আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশি নিগ্রহ।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ এরাজ্যে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন রুখতে পুলিশ প্রশাসন প্রতিবাদকারীদের ওপর দাঁত নখ বের করে চড়াও হয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর বারবার নেমে আসছে পুলিশি বর্বরতা। ঘুষ নিয়ে শিক্ষকের চাকরি দেওয়ার অভিযোগে যখন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে বিভিন্ন পদাধিকারী সহ প্রায় গোটা শিক্ষাদপ্তর জেলে, তখন মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ আঁচড়ে-কামড়ে দিচ্ছে প্রকৃত শিক্ষকদের। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন সমাজ গড়ার হবু কারিগররা। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে শামিল হতে ১২ নভেম্বর এক কনভেনশন আয়োজিত হয় কলকাতার ভারত সভা হলে।

শিক্ষাক্ষেত্র সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ নিয়োগ, স্থায়ী পদে স্থায়ী নিয়োগ, সম কাজে সম বেতন ও সামাজিক সুরক্ষা সহ কনভেনশনে উঠে আসে একাধিক ন্যায্য দাবি। যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন স্তরের সফল, কিন্তু নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষকসহ পার্শ্ব শিক্ষক, মাদ্রাসা শিক্ষক সহ অস্থায়ী চাকুরিরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের সংগঠনগুলি যৌথভাবে এই কনভেনশন আয়োজন করে। কনভেনশনে প্রস্তাব উত্থাপন করেন সিআইটিইউ নেতা ইন্দ্রজিৎ ঘোষ শিক্ষাক্ষেত্রকে বাঁচানো সহ রাজ্যের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একাধিক দাবি সংবলিত প্রস্তাব কনভেনশনে পেশ করা হয়। কনভেনশন থেকে ইন্দ্রজিৎ ঘোষকে আহ্বায়ক করে চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ৩০ জনের কমিটি গঠিত হয়েছে।

কনভেনশন থেকে উঠে আসে যোগ্য প্রার্থীদের দীর্ঘ বঞ্চনা এবং তাঁদের ওপর পুলিশি আক্রমণের কথা। যখনই এই শিক্ষকরা প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছেন তা শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পথে হলেও পুলিশের বর্বর আক্রমণের শিকার হয়েছেন তারা।‌ আন্দোলন কর্মসূচি বন্ধ করে দিতে বারবার লাঠি চার্জ থেকে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন।

কনভেনশনে বক্তব্য রাখছেন এক বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী।

বঞ্চনার পরিধি বোঝাতে ওই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে গত ১১ বছরে তৃণমূল জমানায় বিভিন্ন অস্বচ্ছতার নজিরের। শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির জেরে প্রবল সংকটের মুখে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্র। প্রাথমিক সহ প্রকল্প ভিত্তিক শিক্ষাঙ্গনেও দুর্নীতি এবং যোগ্য ও স্থায়ী শিক্ষকের অভাব এই সংকটকে আরও তীব্র করছে। এই পর্বে মাত্র দুবার শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা যা হয়েছে সেটাও দুর্নীতিতে ভরা। প্রাথমিক টেট (২০১৪ সাল), প্রাথমিক টেট (২০১৭ সাল), আপার প্রাইমারি, এসএলএসটি (নবম দশম এবং একাদশ দ্বাদশ), ২০১৬ গ্রুপ ডি এবং সি, ২০১৬ ডব্লিউবিজি, আর ডি গ্রুপ-ডি, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন-এর কোথাও পরীক্ষার পর সঠিক মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হয় নি। হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও চাকরি হয়নি। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দায়িত্বের যে দপ্তর সেখানেও প্রকাশ্যে তিনি ঘোষণা করার পরেও নিয়োগ করা হয় নি। প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে গত তিন বছর ধরে নতুন নিয়োগের কোনো নোটিফিকেশন না থাকার কথা। লাইব্রেরিতে নিয়োগ নেই গত ১০ বছর। ভেটারেনারি, বিদ্যুৎ দপ্তর, স্বাস্থ্য দপ্তর কোথাও নিয়োগ নেই। বলা হয়েছে, রাজ্যের কোনো স্কুল কলেজ শিক্ষার বেশিরভাগটাই নির্ভর করছে অস্থায়ী শিক্ষকদের ওপর, যাদের কোনো সঠিক পে স্কেল নেই সহ অন্যান্য সুবিধে নেই। যোগ্যতা সম্পন্ন এই শিক্ষকদের সরকার ব্যবহার করছে সম কাজে সম বেতন না দিয়ে, স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না করে। এঁদের দিয়ে স্কুলের প্রচুর অন্যান্য কাজ করানো হয়। একই অবস্থা কলেজ এবং মাদ্রাসা শিক্ষাক্ষেত্রেও। আবার রাজ্য সরকারি দপ্তরে ক্লার্ক, মিসলেনিয়াস সার্ভিস এমনকী বিসিএস আধিকারিক নিয়োগেও দুর্নীতি। বিপুল টাকার বিনিময়ে প্রচুর পরিমাণ অস্থায়ী নিয়োগ হয়েছে সরকারি সব দপ্তরে। সরকারের অঘোষিত নীতি হলো, স্থায়ী নিয়োগে সরকারের খরচ বাড়বে, ভোট লুট বাহিনী মোতায়েন রাখার খরচা জোগান কম পড়ে যাবে।

এদিন কনভেনশনে উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা তুলে ধরেন তাঁদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা। তাঁরা শ্লেষের সুরে বলেন, নিয়োগের সদর দপ্তরের বাড়িটি যার নাম আচার্য সদন এই দুর্নীতির প্রেক্ষিতে তার নাম হয়ে গেছে আশ্চর্য সদন। এই সরকারের আমলে যোগ্যতা এবং পরীক্ষায় সাফল্য নয়, ঘুষ দিতে পারাটাই একমাত্র মাপকাঠি। তাঁরা সরাসরি প্রশ্ন করেছেন, দু’বার ইন্টারভিউ দিয়েও আমরা কেন রাস্তায় বসে থাকবো? যারা দুর্নীতি করিনি তারা কেন চাকরি পাব না? তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে পূর্বমেদিনীপুর জেলায় অতিরিক্ত সংখ্যক শিক্ষক থাকার কথা, যেখানে শহরকেন্দ্রিকভাবেই তারা রয়েছেন নিয়োগ পাওয়ার পরে। অথচ প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো শিক্ষক নেই ওখানে। এমন নজির আরও রয়েছে।

তাঁরা প্রত্যয়ের সুরে বলেছেন, এই দুর্নীতিগ্রস্তদের হাত থেকে শিক্ষাক্ষেত্রকে বাঁচাতে হবে। বুথে বুথে প্রত্যেক পরিবারকে জানাতে হবে এই সরকারের দুর্নীতির কথা। রাস্তায় নেমে বৃহত্তর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খুঁটি নড়িয়ে দিতে হবে এই সরকারের। পুলিশ আমাদের কামড়ে দিয়েছে এর জন্য কি ভ্যাকসিন নিতে হবে সেটা আমরা ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞেস করব, কিন্তু রাস্তায় আমরা নামবই। রাজ্যটাকে বাঁচাতে হবে।

কনভেনশন পরিচালনা করেন মধুমিতা ব্যানার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, সুশান্ত ঘোষ, কল্যাণী সরকার, মৌসুমী ঘোষ দাস ও মহিদ আলী মোল্লাকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।