E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৪ সংখ্যা / ১৮ নভেম্বর, ২০২২ / ১ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের সংরক্ষণ প্রসঙ্গে


পাঁচ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ ১০৩ নং সংবিধান সংশোধন বৈধ বলে রায় দিয়েছেন। এই সংবিধান সংশোধনে সাধারণ বিভাগের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাংবিধানিক বেঞ্চের তিন বিচারপতি এর পক্ষে ছিলেন, দুজন বিপক্ষে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সিপিআই(এম) সংসদে এই সংবিধান সংশোধনীকে সমর্থন করেছিল।

এই সংশোধনীর ফলে সাধারণ বিভাগের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ কার্যকর হবে। অর্থাৎ যাঁরা অনগ্রসর শ্রেণি, তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতির মধ্যে নন, তাঁরাই এর আওতায় আসবেন।

অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণের জন্য ১৯৯০ সালে মণ্ডল কমিশনের রূপায়ণের সময়ই সিপিআই(এম) এই দাবি তুলেছিল যে, সাধারণ বিভাগের মধ্যে যাঁরা গরিব তাঁদের জন্য কিছু পরিমাণ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক।

অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)’র জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণকে সম্পূর্ণ সমর্থনের সাথেই সিপিআই(এম) সাধারণ বিভাগের মধ্যে গরিব মানুষের জন্য আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে কিছু কোটার ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছিল। পার্টি মনে করেছিল, সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনের ফলে যে তীক্ষ্ণ মেরুকরণ ঘটেছে, এই ধরনের ব্যবস্থা তাকে নমনীয় করতে পারে। শ্রেণি দৃষ্ঠিভঙ্গিগতভাবে পার্টি এটাও চাইত যে, ওবিসি কোটার মধ্যেও একটা অর্থনৈতিক মানদণ্ড থাকুক। এই শ্রেণির যাঁদের প্রকৃতই দরকার তাঁরাই সংরক্ষণের সুবিধা পাক। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট ‘ক্রিমি লেয়ার’ বলার মধ্যদিয়ে এটাকে গ্রহণ করেছিল।

শতশত বছর ধরে জাতপাতব্যবস্থার নিপীড়নের কারণে “সামাজিক ও শিক্ষাগত”- দিক দিয়ে পিছিয়ে-পড়া শ্রেণিগুলির জন্য সংরক্ষণের দাবিকে তুলে ধরার সাথেই সিপিআই(এম) এবিষয়েও অবগত ছিল যে, সমস্ত জাত এবং সম্প্রদায়ের গরিব ও শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এই পথেই বিরাজমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে। সাধারণ বিভাগের মধ্যে গরিব অংশের মানুষের জন্য সামান্য কিছু সংরক্ষণের ব্যবস্থার কথা সিপিআই(এম) এই কারণেই বলেছিল যাতে সমস্ত জাতের গরিব অংশের মানুষের মধ্যে ঐক্য দৃঢ় হয় এবং তাঁদের মধ্যে যে বিভেদ-বিভাজন রয়েছে তা দূর হয়। অবশ্যই, এটা যেন বর্তমানে ওবিসি, এসসি এবং এসটি’দের জন্য শতকরা যে সংরক্ষণ রয়েছে তাকে যেন কোনোভাবেই প্রভাবিত না করে। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের জন্য এই সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যা বর্তমানে চালু সংরক্ষণের কোটায় পড়ে না এমন সমস্ত ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়কেও অন্তর্ভুক্ত করবে।

এতদসত্ত্বেও, মোদি সরকার একটি অফিস মেমোরানডামে যে মানদণ্ড নির্ধারণ করার মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশকে সংজ্ঞায়িত করেছে তার সমালোচনা করেছে সিপিআই(এম)। কাজ এবং শিক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের কোটায় অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশ বলে বিবেচিত হবে সেইসব পরিবার যাদের বাৎসরিক আয় আট লক্ষ টাকার নিচে এবং যাদের পাঁচ একরের কম চাষজমি কিংবা এক হাজার বর্গফুটের কম বাসস্থান এবং একশ বর্গগজের কম বাস্তুজমি থাকবে। এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে, যারা গরিব নন তারাই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের জন্য সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করবে। আয়কর ছাড়ের সীমা হচ্ছে বাৎসরিক ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এর বেশি কেউ আয় করলে তাকে আয়কর দিতে হয়। একইভাবে পাঁচ একর চাষজমি কাউকে গরিব করে না।

অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের মানদণ্ডের ঊর্ধ্বসীমা এতটাই উচ্চ এবং বিস্তৃত যা এই সংরক্ষণের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে নষ্ট করবে। সুপ্রিম কোর্ট এখনও এই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেনি যদিও এই অফিস মেমোরানডামকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পিটিশন জমা পড়েছে।

রাজ্যস্তরে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের জন্য কতটা সংরক্ষণ থাকবে তা রাজ্যের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের মানদণ্ড এবং সংরক্ষণের বিস্তৃতি কতটা হবে তা নির্ধারণের জন্য কেরালার এলডিএফ সরকার একটা কমিশন গঠন করেছে। বিচারপতি শশীধরণ কমিশন সুপারিশ করেছে, যে পরিবারের আয় বাৎসরিক ৪ লক্ষ টাকার কম এবং যে পরিবারের হাতে আড়াই একরের বেশি চাষজমি নেই সেই পরিবার অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের সংরক্ষণের আওতাভুক্ত হওয়ার জন্য বিবেচিত হবে।

কেরালা মন্ত্রীসভা ২০২০ সালে এই সুপারিশসমূহকে অনুমোদন দিয়েছে এবং কেরালায় এখন কাজ ও শিক্ষায় ১০ শতাংশ সংরক্ষণ রূপায়িত হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশকে সংজ্ঞায়িত করতে গৃহীত এই মানদণ্ড সাধারণ বিভাগে গরিব অংশকেই প্রতিনিধিত্ব করছে।

অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিতদের কাছে যদি সত্যসত্যই এই সংরক্ষণের সুবিধাকে পৌঁছে দিতে হয় তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারকে শীঘ্রই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশকে সংজ্ঞায়িত করার যে মানদণ্ড তারা তৈরি করেছে তাকে সংশোধন করতে হবে।


(পিপলস ডেমোক্রেসি, নভেম্বর ৭-১৩, ২০২২ সংখ্যার সম্পাদকীয়।)

(ভাষান্তরঃ শংকর মুখার্জি)