৬০ বর্ষ ১৪ সংখ্যা / ১৮ নভেম্বর, ২০২২ / ১ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
রুশ-চর্চা বিষয়ে দু-চার কথা
সুদিন চট্টোপাধ্যায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উনিশশো সতেরোর রুশ বিপ্লব দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই প্রথম অত্যাচার ও অবমাননায় নত হয়ে থাকা মানুষ নবীন প্রত্যাশার রবিকিরণে অবগাহন করে জীবনের সহজ সত্যটুকু উপলব্ধি করল যে শোষণ পীড়নের পুঞ্জীভূত পাহাড়টাকে সদর্পে বিচূর্ণ করার বিকল্প কিছু নেই। ‘ভয় ভাবনা সংশয়’-এর শেকড় উপড়ে ফেলে বিপ্লব যে অভূতপূর্ব জাগরণ নিয়ে এলো তার বিস্ময় ও বিমুগ্ধতা দেশবিদেশের লেখক, পর্যটক, দার্শনিক ও সমালোচকদের অভিভূত রচনায় ছড়িয়ে আছে। ১৯১৭’র ১৩ বছর পর রাশিয়ার বিপ্লব ধৌত মাটি ও মানুষের সংস্পর্শে এসে বিশ্ববন্দিত বাঙালি কবিকেও আমরা বলতে শুনেছি, “আপাতত রাশিয়ায় এসেছি - না এলে এজন্মের তীর্থদর্শন অত্যন্ত অসমাপ্ত থাকত।”
রুশ বিপ্লবের পর ১৯১৯-এ প্রথম ভারতীয় মানবেন্দ্রনাথ রায় তাঁর বিদেশিনী পত্নীকে নিয়ে রাশিয়ায় পৌঁছান। এছাড়াও অবনী মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, গোপেন চক্রবর্তী, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নলিনী গুপ্ত, ভূপেন দত্ত প্রমুখও বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় গিয়েছেন এবং এঁদের মধ্যে অনেকেরই লেনিন বা স্তালিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে।
রুশ দেশের বিপ্লবের সংবাদ ভারতে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পণ্ডিচেরী আশ্রম থেকে তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘Arya’ পত্রিকায় ১৯১৮ সালে শ্রী অরবিন্দ বেশ উচ্ছ্বসিত হয়েই লিখলেন, “First World War has come to an end. It will be memorable to our succeeding generation not for the defeat of Germany, but for Bolshevik Revolution, as a result of which the proletariat, for the first time in world politics, has come to seize the state power. This 'proletariat' is totally ignored now in Indian politics.” ১৯১৭’র বিপ্লব এবং সোভিয়েত সাম্যবাদ নিয়ে শ্রী অরবিন্দের বিক্ষিপ্ত মন্তব্যসমূহ পরবর্তী সময়ে একত্র করে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকাও প্রকাশিত হয়েছেঃ 'Arabinda's Observation on Proletariat Revolution and Soviet Socialism'.
মানবেন্দ্রনাথ রাশিয়া যাওয়ার অনেক আগে থেকেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অশান্ত পরিমণ্ডলে কিছুটা দিশাহীন, অপরিকল্পিতভাবে অংশ নিয়েছেন। পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে জাপান, ফিলিপিন, আমেরিকা, মেক্সিকো ইত্যাদি নানা দেশের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় নিয়ে তাঁর রাশিয়ায় আগমন। আমেরিকায় চরমপন্থী রাজনীতি এবং মেক্সিকোয় সোশ্যালিস্ট আন্দোলনের সংস্পর্শে এসে মার্কসীয় তত্ত্ব ও তার প্রয়োগের দর্শনে পূর্ণ আস্থা নিয়েই রাশিয়ার মাটিতে তাঁর পা। এর আগে বলশেভিক বিপ্লবের অন্যতম যোদ্ধা মাইকেল বোরোদিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ও সৌহার্দ্য তৈরি হয়েছে। পরের পর্বে ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত রাশিয়ায় মানবেন্দ্রনাথের কার্যকলাপের সঙ্গে ভারতবাসীর অল্পবিস্তর পরিচয় আছে।
১৯২২ সালে প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ ‘ইণ্ডিয়া ইন ট্রানজিসন’-এ আমরা দেখলাম রাশিয়ার বিপ্লব সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতা এবং পরিবর্তনের পথে এগিয়ে চলা ভারতের পূর্ণ ও প্রাণবন্ত বিকাশে রুশ বিপ্লবের প্রভাবে আলোকিত হওয়ার প্রত্যাশা। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত তাঁর আর একখানি বই ‘দি ফিউচার অফ ইণ্ডিয়ান পলিটিক্স-এ’ এই আকাঙ্ক্ষা আরও পূর্ণতর রূপ পেল। দুটি গ্রন্থেই তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন শুধু ভারত নয়,ভারতের মতো পৃথিবীর পরাধীন দেশগুলোতে ঔপনিবেশিক শোষণ মুক্তির ও স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের প্রত্যাশা সঞ্চারিত করেছে এই বিপ্লব। দেশে দেশে মুক্তির আন্দোলন গতি পেয়েছে, নতুন সম্ভাবনার জন্ম হয়েছে। ভারত সহ ক্ষুধাতুর, সর্বহারা শ্রমিক ও কৃষিজীবী মানুষের দেশগুলোতে রুশ বিপ্লব নতুন বার্তা বয়ে এনেছে, নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে এরপরেই তাঁর চিন্তাভাবনা এবং মতাদর্শে বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি দেখা দিতে শুরু করে। হারিয়ে যান বিপ্লব উপাসক মানবেন্দ্রনাথ। পরবর্তীকালে তিনি যে সোভিয়েত বিপ্লবের ইতিহাস লিখেছেন তাতেও তাঁর বিভ্রান্তির বিস্তার চোখে পড়বে।
সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঠাকুরবাড়ির সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা আমরা বিশেষ মনে রাখিনি। আভিজাত্যের বাঁধন ছিঁড়ে তিনিই কিন্তু প্রথম জোড়াসাঁকোতে রুশ বিপ্লবের ঝোড়ো হাওয়ার প্রবেশ ঘটিয়েছিলেন। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র এবং সুধীন্দ্রনাথের পুত্র সৌমেন্দ্রনাথ, প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময়েই রুশ বিপ্লবের প্রভাবে কমিউনিস্ট পার্টির নৈকট্যে আসেন, ব্রিটিশ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও মেহনতি মানুষের যুদ্ধের অংশীদার হতে শুরু করেন। সর্বহারার আন্দোলন থেকে তাঁকে দূরে সরানোর জন্যে বাড়ির লোকজন তাঁকে বিলেতে পাঠিয়ে দিলেও, তাঁকে প্রগতিশীল মার্কসীয় কর্মধারা ও ভাবনার বৃত্তচ্যুত করা যায়নি। ১৯৩০ সালে বার্লিন থেকে বেরলো তাঁর বই ‘বিপ্লব বৈশাখী’, যাতে রাখঢাক না করেই খোলাখুলি তুলে ধরলেন ভারতে বিপ্লব প্রচেষ্টার রূপরেখা এবং সম্ভাবনার কথা। সমুদ্র পেরিয়ে সেই বই ভারতে এসে পৌঁছাতেই টনক নড়ে ওঠে সরকারের, বাজেয়াপ্ত করা হয় বইটি। পরের বছর ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বইটি প্রকাশিত হলে আবারও বাজেয়াপ্ত হলো। তারপরেও লেখা বন্ধ করলেন না সৌমেন্দ্রনাথ। ১৯৩২ সালে আবার লিখলেন ‘লাল নিশান’। সোভিয়েত বিপ্লবের আলোয় পথ চিনে চিনে ভারতের স্বাধীনতা ও ঔপনিবেশিক দাসত্ব থেকে মুক্তির ঠিকানা খুঁজেছেন সৌমেন্দ্রনাথ। ভারত সরকার রীতিমতো হুলিয়া জারি করে দেন সৌমেন্দ্রনাথের লেখা কোনো বই যেন সীমানা ডিঙিয়ে ব্রিটিশ ভারতে ঢুকতে না পারে। বই না ঢুকলে কী হবে, তিনি নিজে সশরীরে ফিরে এসে লিখলেন ‘চাষীর কথা’, যেখানে সোভিয়েত কৃষি ও ভূমি সংস্কারের কথা এড়িয়ে যেতে পারেননি। এরপর সোভিয়েতের মতাদর্শ থেকে তিনি সরে এসেছেন এবং কমিন্টার্নের সঙ্গে তাঁর সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। আরও একটি কথা, রাশিয়া সম্পর্কে যখন ধনতন্ত্র শাসিত দুনিয়ায় নেতিবাচক খবরের প্রাধান্য, তখন সেই অসঙ্গত, অন্যায় অপপ্রচার সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথকে সচেতন করেছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরই। আর সেই কারণেই তৃতীয় বার সোভিয়েতের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’ থেকে গিয়েছে সেই দেখার দলিল হয়ে। বাংলার কমিউনিস্টদের সঙ্গে কবির সুসম্পর্ক তৈরিতেও তিনিই সেতুর কাজ করেছিলেন।
১৯৩০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হিবার্ট বক্তৃতা’র পালা চুকিয়ে রবীন্দ্রনাথ মস্কো এলেন, সঙ্গে সৌমেন্দ্রনাথ, অমিয় চক্রবর্তী, হ্যারি টিম্বার্স এবং আরও কয়েকজন। ছিলেন ১১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর, দেখেছেন নানা প্রতিষ্ঠান, মত বিনিময় করেছেন ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকদের সঙ্গে। ১৯১৭’র বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত নবীন সোভিয়েত রাশিয়ার বিপুল কর্মকাণ্ড তাঁকে অভিভূত করেছে। ব্রিটিশ উৎপীড়নে ভারতের চরম দুর্দশার অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল বলেই এখানকার মানুষের অভূতপূর্ব জাগরণে তিনি মুগ্ধ। তাঁর মুগ্ধতা তিনি একের পর এক চিঠিতে ব্যক্ত করলেন। জমিদারি অর্থে জীবনধারণ তাঁর কাছে গ্লানিময় মনে হয়েছিল। তিনি লিখলেন, “এখানে এসে সবচেয়ে আমার চোখে যা ভালো লেগেছে সে হচ্ছে, ধনগরিমার ইতরতার সম্পূর্ণ তিরোভাব। এই কারণেই এ দেশে জনসাধারণের আত্মমর্যাদা এক মুহূর্তে অবারিত হয়েছে। চাষাভুষো সকলেই আজ অসম্মানের বোঝা ঝেড়ে ফেলে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে, এইটে দেখে আমি যেমন বিস্মিত তেমনি আনন্দিত হয়েছি।” বিপ্লব এবং সোভিয়েত স্থাপনের ফলে মানুষের মাথা তুলে দাঁড়ানোর গরিমা তাঁর নিজের চোখে দেখার অনুভব প্রকাশ বিশ্ব বুদ্ধিজীবী মহলকে নিশ্চয় ভাবিয়েছিল। অবশ্য এই বজ্র আঁটুনির অভ্যন্তরে ফসকা গেরোর বীজও যে নিহিত তাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ‘রাশিয়ার চিঠি’ ধারাবাহিক প্রকাশের সময় ব্রিটিশ সরকার বিশেষ চঞ্চলতা প্রকাশ করেনি। কিন্তু ১৯৩৪ সালে ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় শশধর সিংহের ইংরেজি অনুবাদ বেরনো শুরু হলেই সরকার নড়েচড়ে বসে, নিষিদ্ধ হয় শশধরের তরজমা। আমেরিকার ‘ইউনিটি’ পত্রিকায় বসন্তকুমার রায়ের অনুবাদ অবশ্য শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়ে বিশ্বমানসকে আন্দোলিত করেছে।
ঠাকুরবাড়ির আর এক সন্তান, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ১৯৪০ সালে মৃত্যুর আগে রুশ বিপ্লবকে স্মরণ করে লিখেছিলেন অনতিদীর্ঘ গ্রন্থ, নামকরণ করেছিলেন ‘বিশ্বমানবের লক্ষ্মীলাভ’। ‘বিশ্ব বিদ্যা সংগ্রহ’ গ্রন্থমালায় প্রকাশিত এই বইটির নামকরণ যথোপযুক্ত, কারণ তাঁর প্রতিপাদ্য ছিল রুশ বিপ্লবের মাধ্যমেই ‘সমাজতান্ত্রিক গৃহলক্ষ্মী’ দরিদ্র, নিঃস্ব, সব হারানো শ্রমিক-কৃষকের ঘরে ঘরে প্রতিষ্ঠা করেছে সোভিয়েত রাশিয়া। রুশ বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে আশা প্রকাশ করেছিলেন এ ‘লক্ষ্মী’ অনতিবিলম্বে বিশ্বের ঘরে ঘরে ‘ঠাঁই’ পাতবে। কালিম্পং পাহাড়ে বসে সুরেন ঠাকুরের বই পড়ে খুশি হন রবীন্দ্রনাথ, আশঙ্কাও করেন সোভিয়েত প্রশংসার জন্যে পুলিশ না তাকে জেলে পুরে দেয়।
রাহুল সাংকৃত্যায়ন
রাহুল সাংকৃত্যায়ন আজন্ম পরিব্রাজক। তাঁর পর্যটন বিনোদনের জন্যে ছিল না, মানব সভ্যতার উৎস ও ক্রমবিকাশের ধারা অন্বেষণ করাই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। ১৯৩৫ এবং ১৯৩৭ সালে তিনি দুবার বিপ্লবোত্তর রাশিয়া ঘুরে আসেন। ১৯৪৪-৪৭, এই পরিব্রাজক পণ্ডিত লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেন। বিপ্লবের পদচিহ্নে প্রাণবন্ত রাশিয়ার জীবন ও সোভিয়েত সাম্যবাদের চেহারা ও চরিত্র তাঁর নানা লেখায় আত্মপ্রকাশ করেছে। ১৯৩৫-এর আগেই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত হয়ে তিনি কারাবাস করেছেন এবং জেলগারদের মধ্যেই সোভিয়েত ব্যবস্থায় মানব উত্তরণের কাহিনি পড়ে ফেলেছেন এবং লিখেছেনও ‘সাম্যবাদ হী কিউ’, ‘তুমহারী ক্ষয়’, ‘মানব কী কাহানী’। প্রতিটি গ্রন্থে তিনি সোভিয়েতের আলোকিত সম্ভাবনার উল্লেখ করেছেন। তাঁর 'ভোলগা থেকে গঙ্গা' তো সমাজ পরিবর্তনের ইতিহাস যা এ্যাঙ্গেলসের 'Origin of the Family Private Property and State'-এর তত্ত্ব অনুসরণে রচিত।
রাশিয়ার বিপ্লব মানব ইতিহাসে শতাব্দীর উজ্জ্বলতম তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। মহাযুদ্ধে, মন্বন্তরে, ধনতন্ত্রের শোষণ ও ঔপনিবেশিক অনাচারে পীড়িত মানুষকে মুক্তির আলোকরেখা দেখিয়েছে এই বিপ্লব। বাংলার অসংখ্য,কবি, সারস্বত, সাহিত্যিক, সাংবাদিকের কলমে বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ার স্বপ্ন ও সম্ভাবনার কথা পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়েছে। ১৯২৫ সালে, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষায় ‘মাদার’-এর অনুবাদ করেন। উপন্যাসটি সাপ্তাহিক ‘লাঙল’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সে সময় ‘লাঙল’ শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলেন স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম। মনে পড়ে, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণের অনুবাদেই আমরা গোর্কি প্রথম পড়েছি। সাবলীল সহজ অনুবাদ; আমাদের অনুভূতিপ্রবণ নবীন মন আলোড়িত হয়েছিল। নিজের ঘরের উঠোনে অনেকদিন পাভেলের, তার মায়ের নীরব পদসঞ্চার টের পেয়েছি। আনন্দবাজার পত্রিকার এক সময়ের সম্পাদক সত্যেন মজুমদার লিখেছিলেন ‘আমার দেখা রাশিয়া’। শিবরাম চক্রবর্তীর ‘মস্কো বনাম পণ্ডিচেরী’র কথাও বিস্মৃত হওয়ার নয়। বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ও সোভিয়েতের গরিমা সম্পর্কে তাঁর কলমকে নীরব রাখেননি। লিখেছেন সাবিত্রী রায়,স্বর্ণকমল ভট্টাচার্য, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়,গোপাল হালদার, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, মণিকুন্তলা সেন, গোলাম কুদ্দুস, সুকান্ত ভট্টাচার্য, দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁরা লিখেছেন কবিতায়, গানে, গল্পে, নিজেদের অভিজ্ঞতার বিবরণে, ডায়েরির পাতায় অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে যাদের বুকে মধ্যে জমে থাকা নক্ষত্রের দীপ্তি আজও আমাদের আলোকিত, আনন্দিত ও আশান্বিত করে।