৫৮ বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা / ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ১ আশ্বিন ১৪২৭
দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে সীতারাম ইয়েচুরি সহ বিশিষ্টদের নাম
বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার ষড়যন্ত্র
সীতারাম ইয়েচুরি
জয়তী ঘোষ
যোগেন্দ্র যাদব
অপূর্বানন্দ
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে সংঘটিত দাঙ্গার ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত চার্জশিটে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ, স্বরাজ অভিযানের নেতা যোগেন্দ্র যাদব, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা রাহুল রায়ের নাম ‘সহ-ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়। দিল্লি পুলিশের এই নির্লজ্জ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, সংবিধান রক্ষা করা আমার কর্তব্য। সাংবিধানিক মূল্যবোধ লঙ্ঘন করা হলে প্রতিবাদ করবো। সেটা সরকার করলেও করবো। ভারতের সংবিধানের উপরে কোনো ধরনের আক্রমণের সঙ্গে আমরা সমঝোতা করবো না। ১৩ সেপ্টেম্বর সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এই দৃঢ় বক্তব্য রাখার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ভয় দেখাবেন না, যে ষড়যন্ত্র করেছেন তা কাজে দেবে না। তিনি সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নেবার কথা স্পষ্টতই উচ্চারণ করে বলেছেন, হ্যাঁ, আমি অংশ নিয়েছিলাম। সেটা আমার সাংবিধানিক অধিকার। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেছেন, এইভাবে মানুষকে বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মীদের দমিয়ে রাখা যাবে না। তিনি বলেছেন, সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ এবং দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, আমরা এখনো লড়াই করবো।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি আরও বলেছেন, দিল্লির হিংসাত্মক ঘটনার অনেক আগে থেকেই বিজেপি নেতারা ঘৃণার ভাষণ দিচ্ছিলেন। কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সহ বিজেপি নেতারা প্ররোচনাদায়ক বক্তৃতা করেছেন। তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো চার্জশিট হয়নি। পুলিশ কী তদন্ত করছে? আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে ছিলাম।
এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, বিজেপি’র শীর্ষ নেতাদের রাজনীতিই প্রতিফলিত হচ্ছে এই অবৈধ চার্জশিটে। তিনি বলেন, দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন। তাদের এই অবৈধ, বেআইনি কাজ বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের রাজনীতির প্রতিফলন। মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেও তারা আতঙ্কিত। বিরোধীদের আক্রমণ করতে রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সংসদে, মিডিয়ায়, আরটিআই কোনো কিছুতেই সরকার উত্তর দেয় না। তারা মনে করছে এভাবে রাজনৈতিক বিরোধীদের চুপ করিয়ে রাখবে। ভয় দেখিয়ে সিএএ’র মতো বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন রোখা যাবে না।
এদিকে পার্টির পলিট ব্যুরো এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এর তীব্র প্রতিবাদ করে এক বিবৃতিতে বলেছে, দিল্লি পুলিশের নির্লজ্জ আচরণে বিস্মিত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ’র আওতাধীন দিল্লি পুলিশ চেষ্টা করছে পরিচিত রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী, সমাজ কর্মীদের গত ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হিংসার সঙ্গে জড়িত বলে দেখানোর। পুলিশের এই নির্লজ্জ পক্ষপাত এবং প্রতিহিংসার মনোভাবের নিন্দা করার জন্য কোনো শব্দই যথেষ্ট নয়। দিল্লির দাঙ্গা সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদকারীদের গভীর ষড়যন্ত্র বলে আরএসএস-বিজেপি যে তত্ত্ব দাঁড় করাতে চাইছে, দিল্লি পুলিশ নিজেদের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে তাকেই প্রমাণ করতে চাইছে। এই কাজে দিল্লি পুলিশের সর্বশেষ পদক্ষেপ হলো সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ, স্বরাজ অভিযান নেতা যোগেন্দ্র যাদব এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা রাহুল রায়ের নাম যুক্ত করা হয়েছে এই অভিযোগে যে, তাঁরা প্রতিবাদকারীদের উৎসাহিত করেছেন ‘পরিকল্পনা’র অংশ হিসেবে।
বিবৃতিতে সিপিআই(এম) বলেছে, অতিরিক্ত চার্জশিটে এই বিশিষ্টজনদের নাম যুক্ত করা হয়েছে। প্রধান বিরোধীদের পুলিশ নির্লজ্জভাবে হেনস্তা করছে এবং সিবিআই, এনআইএ, ইডি-র মতো সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এই প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাঁরাই সরকারের নীতির বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই দমনীয় এনএসএ, ইউএপিএ এবং দেশদ্রোহিতার ধারা লাগিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে। ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে এনআইএ-র ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ডাঃ কাফিল খানের বিরুদ্ধে এনএসএ ধারা খারিজ করেছে এবং তাঁকে জামিন দিয়েছে। সব মিলিয়ে সংবিধান এবং গণতন্ত্রের উপরে তীব্র আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিবৃতিতে সিপিআই(এম) আহ্বান জানিয়েছে, যাঁরা গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় দায়বদ্ধ তাঁরা গণতন্ত্রের উপর এই কাপুরুষোচিত হামলার প্রতিবাদে শামিল হোন। পলিট ব্যুরো দেশজুড়ে পার্টির সমস্ত শাখা, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং ব্যক্তিকেও এই প্রতিবাদে শামিল হবার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারকে উদ্দেশ্য করে পলিট ব্যুরো বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিবাদকে অপরাধীকরণ করা অবিলম্বে বন্ধ করুন। রাজনৈতিক প্রভুদের কথা শুনে দিল্লি পুলিশ ফের যে কদর্য ভূমিকা পালন করছে তার তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি ভুয়ো মামলায় কারারুদ্ধ থাকা রাজনৈতিক বন্দিদের বিনা শর্তে মুক্তির জোরালো দাবি জানিয়েছে।
দিল্লি পুলিশের এই কদর্য পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম। এছাড়া দিল্লি পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করেছেন প্রাক্তন আই পি এস আধিকারিক জুলিও রিবেইরো।
প্রতিবাদ চেন্নাইতে।
প্রসঙ্গত, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যাঁরা সামনের সারিতে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে অমিত শাহ’র পুলিশ। উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটকের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও একইরকম দমননীতি গ্রহণ করা চলছে। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, প্রথম দিকে ছাত্রছাত্রী, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদদের ফাঁসানো হচ্ছিল। এখন সীতারাম ইয়েচুরি সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম চার্জশিটে যুক্ত করায় প্রমাণ করছে, মোদী-শাহ’রা কতখানি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশের এফআইআর ৫০/২০ অতিরিক্ত চার্জশিটে সীতারাম ইয়েচুরি, জয়তী ঘোষ, অপূর্বানন্দ, যোগেন্দ্র যাদব এবং রাহুল রায়ের নাম যুক্ত করা হয়েছে। এই চার্জশিট জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী দেবাঙ্গনা কলিতা, নাতাশা নারওয়াল এবং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী গুলফিশা ফতিমার বিরুদ্ধে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, যেখানে হিংসা ছড়ানো হয়, সেখানের প্রতিবাদের সঙ্গেই এই তিন ছাত্রীকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ইউএপিএ ধারা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই জাফরাবাদেই পুলিশ কর্তাকে পাশে নিয়ে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র হিংসায় উস্কানি দিয়েছিলেন। যার ভিডিয়ো ফুটেজ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। যা আদালতেও পেশ হয়। কিন্তু পুলিশ এখনও পর্যন্ত কপিল মিশ্র সহ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
দুই ছাত্রী দেবাঙ্গনা কলিতা ও নাতাশা নারওয়ালের ‘ডিসক্লোজার স্টেটসমেন্টস’ বা ‘স্বীকারোক্তি’ বলে যে কথাগুলি যুক্ত করা হয়েছে, তা থেকেই স্পষ্ট দিল্লি পুলিশকে কীভাবে বিজেপি’র শাখা সংগঠনে পরিণত করা হয়েছে। যেখানে দিল্লি পুলিশের দাবি, ওই দুই ছাত্রী শুধু নিজেরা অপরাধে সহযোগিতা করেছেন তাই নয়, অধ্যাপক জয়তী ঘোষ, অপূর্বানন্দ তাঁদের পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেছেন! একইভাবে গুলফিশা ফতিমার নাম করে বলা হয়েছে, তিনি জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে নাকি ‘স্বীকারোক্তি’ দিয়েছেন, ভারত সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই সিএএ বিরোধী প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়। সীতারাম ইয়েচুরি, যোগেন্দ্র যাদব, চন্দ্রশেখর আজাদ রাবন, উমর খালিদ এবং আইনজীবী মহমুদ প্রাচা এবং চৌধুরী মতিনের নাম বলা হয়েছে চার্জশিটে। দাবি করা হয়েছে, গুলফিশা এদের নাম বলেছেন।
অমিত শাহ’র পুলিশ ঘটা করে যে ‘ডিসক্লোজার স্টেটসমেন্টস’ দিয়ে বিশিষ্টজনদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে সেটার নিচে দেবাঙ্গনা কলিতা এবং নাতাশা নারওয়াল স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করার কথা লিখে দিয়েছেন। অর্থাৎ পুলিশের সাজানো বিবৃতি তাঁরা নিজেদের বয়ান বলে মানতে অস্বীকার করেছেন। তারপরেও নির্লজ্জভাবে দুই ছাত্রীর ‘স্বীকারোক্তি’ বলে আদালতে পেশ করে দিল্লি পুলিশ।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, দু’টি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন নিজেদের ‘অনুসন্ধানকারী দল’ হিসেবে পরিচিতি দিয়ে দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে দু’টি রিপোর্ট জমা দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। প্রথমটি ১১ মার্চ, দ্বিতীয়টি ২৯ মে। দ্বিতীয়টি অমিত শাহ’র হাতে আর প্রথমটি তাঁর প্রতিমন্ত্রী জিকে রেড্ডিকে। দু’টি রিপোর্টেরই মূল লক্ষ্য সিএএ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা। আরএসএস-বিজেপি সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনকে দিল্লি হিংসার জন্য দায়ী করে ষড়যন্ত্র করেছে। এই ষড়যন্ত্রেরই অঙ্গ হিসেবে সীতারাম ইয়েচুরিদের নাম যুক্ত করা হয়। একে হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসা বলেও দাবি করা হয়েছে। পরিসংখ্যান হলো, দিল্লির হিংসায় নিহত ৫৩জনের মধ্যে ৪০জন মুসলিম। ১৪-১৫টি মুসলিম ধর্মস্থান ধ্বংস করা হয়। এছাড়া মুসলিমদের অসংখ্য ঘর-দোকান, ঠেলা-রিকশা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিপিআই(এম) অন্য সব ক্ষেত্রের মতোই দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসার সময়েও উভয়পক্ষের সম্প্রীতি ও ঐক্য রক্ষার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। সাম্প্রদায়িক হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষের পাশে যথাসম্ভব দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। দাঙ্গায় নিহত প্রায় প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাতের মতো সিপিআই(এম)-র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে পার্টির পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যখন কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি তখন সিপিআই(এম)’র সংসদীয় দল ও নেতৃবৃন্দ উভয় পক্ষের মানুষের কাছে গেছেন এবং তাঁদের অভিজ্ঞতা ও অভিযোগ তুলে এনেছেন। পুলিশ যেসব ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেইসব প্রান্তিক মানুষকে আইনি সহায়তারও ব্যবস্থা করেছে পার্টি। ঠেলায় করে যাঁরা সবজি, ফল বিক্রি করে সংসার চালাতেন, দাঙ্গায় তাঁদের উপার্জনের একমাত্র সম্বল সেই ঠেলাগাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে অনেককে সেই ঠেলাগাড়ি কিনে দিয়েও জীবিকার পথ করে দিয়েছে সিপিআই(এম)। এই কাজ কোনোমতেই মেনে নিতে পারেনি সরকার। সেই কারণেই ফাঁসানো হয় সীতারাম ইয়েচুরিকে।
দিল্লির দাঙ্গার তদন্তের শুরু থেকেই পদে পদে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। ২৭ বছরের গবেষক সন্তানসম্ভবা সাফুরা জারগার থেকে সমাজকর্মী হর্ষ মান্দার - সকলকে দিল্লি হিংসার ষড়যন্ত্রকারী বানানোর চেষ্টা হয়েছে। শাহিনবাগে লঙ্গর খুলে খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন ডি আর বিন্দ্রা, তাঁকে পুলিশ কর্মী রতনলাল হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। ডাঃ এম এ আনোয়ারের নাম দাঙ্গাকারী হিসেবে চার্জশিটে দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি দিল্লির হিংসায় জখম ৫০০-র বেশি মানুষের চিকিৎসা করেছেন।
এছাড়া সিএএ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বহু ছাত্র-যুবকে ডেকে পুলিশ ভয় দেখাচ্ছে, বিশিষ্ট সমাজকর্মীদের নাম বলানোর জন্য ‘ডিল’ করতে চাইছে। ‘হাম ভারতকে লোগ’, ‘পিঞ্জরা তোড়’ প্রভৃতি সংগঠনের নাম বলানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। সিএএ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা সমাজকর্মী হর্ষ মান্দার, যোগেন্দ্র যাদবদের নাম বলানোর জন্যও চাপ দেওয়া হয়েছে বলে অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু এর বিপরীতে মোদী-শাহ-অনুরাগ ঠাকুর-পরবেশ ভার্মা, কপিল মিশ্রদের প্ররোচনামূলক বক্তব্য সম্পর্কে চার্জশিটে কিছুই বলা হয়নি। একটা এফআইআর পর্যন্ত হয়নি। দিল্লি পুলিশের এই কুৎসিত ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছে।