E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা / ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ১ আশ্বিন ১৪২৭

১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে পার্টির আহ্বানে পালিত হচ্ছে প্রতিবাদ কর্মসূচি


দেশজুড়ে ভয়াবহ মহামারীর প্রেক্ষিতে জনগণের জীবনজীবিকার ওপরে আক্রমণ এবং গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকারের ওপরে ক্রমবর্ধমান আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। ১২ সেপ্টেম্বর পলিট ব্যুরোর বৈঠক হয় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। সংসদের অধিবেশন চলাকালীন ১৭ থেকে ২২সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। ইতিমধ্যেই সেই আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও নাগরিক অধিকারের ওপরে বড়ো মাপের আক্রমণ, মহিলা, দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য প্রান্তিক অংশের ওপরে নির্মম আক্রমণ, বেসরকারিকরণের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদের লুট, শ্রমআইন শিথিল করার মতো বিষয়ের প্রতিবাদ এই কর্মসূচির অঙ্গ। দাবি করা হচ্ছে জনগণের জরুরি সমস্যা মোকাবিলায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে দাবি তোলা হচ্ছেঃ আয়কর দেয় না এমন সমস্ত পরিবারকে আগামী ছ’মাস নগদে ৭,৫০০ টাকা দিতে হবে। আগামী ছ’মাস যাদের প্রয়োজন তাদের সকলকেই মাথাপিছু দশ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য বিনামূল্যে দিতে হবে। বর্ধিত মজুরি সহ রেগার কাজ অন্তত বছরে ২০০ দিন করতে হবে; শহরে কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন চালু করতে হবে। বেকার ভাতা চালু করতে হবে। ভারতের সংবিধান ও সকল নাগরিকের জন্য সংবিধান-প্রদত্ত স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্বের মৌলিক নিশ্চয়তাকে রক্ষা করতে হবে।

মহামারীর প্রসারে উদ্বেগ জানিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর পলিট ব্যুরো বলেছে, দেশজুড়ে সংক্রমণ ভয়াল আকার নিয়েছে। দৈনিক সংক্রমণে বিশ্বে সর্বোচ্চ স্থানে চলে গেছে ভারত। কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী কার্যত তাদের দায়িত্ব পরিত্যাগ করেছে, জনগণের ওপরেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে। অপ্রতিহত এই সংক্রমণের মুখে চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা প্রয়োজন, এই সংক্রমণ রোধে ভূমিকা পালনে বেসরকারি ক্ষেত্রকে নামতে বাধ্য করা উচিত। এই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় কিছুই করছে না।

অন্যদিকে, কেরালায় এলডিএফ সরকার পরীক্ষা থেকে হাসপাতালে ভর্তি, চিকিৎসা সবই বিনামূল্যে করছে। তার ফলে সে রাজ্যে মোট রোগীদের মাত্র ২ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন। রাজ্য সরকার বেসরকারি হাসপাতালের চার্জও বেঁধে দিয়েছে। পলিট ব্যুরো দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকারকে হাসপাতালের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, সমস্ত রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে হবে, বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য যুক্তিসঙ্গত চার্জ ঠিক করে দিতে হবে।

পলিট ব্যুরো বলেছে, মহামারীর আগে থেকেই ভারতের অর্থনীতির ধ্বংসের পালা শুরু হয়েছিল। নোটবাতিল এবং জিএসটি রূপায়ণের সময় থেকেই অধোগতিতে যেতে থাকা অর্থনীতির এখন এই দশা দাঁড়িয়েছে যে, বড়ো অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারতেই জিডিপি হ্রাস হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তা এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে (-)২৩.৯ শতাংশে সঙ্কুচিত হয়েছে। বেকারি জোর গতিতে বাড়ছে, ২ কোটি ১০ লক্ষ নিয়মিত বেতনপ্রাপ্তও কাজ খুইয়েছেন। কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যে ডুবে যাচ্ছেন, তাঁদের দুর্দশা ও যন্ত্রণা বাড়ছে। এর ওপরে খাদ্য, তরিতরকারি, দুগ্ধজাত পণ্য, জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অসহনীয় মাত্রায় বেড়ে চলেছে।

এই পরিস্থিতিতে পলিট ব্যুরো দাবি করেছে, আয়কর দেয় না এমন সমস্ত পরিবারকে আগামী ছ’মাস নগদে ৭,৫০০টাকা দিতে হবে। আগামী ছ’মাস যাদের প্রয়োজন তাদের সকলকেই মাথাপিছু দশ কিলোগ্রাম খাদশস্য বিনামূল্যে দিতে হবে। বর্ধিত মজুরি সহ রেগার কাজ অন্তত বছরে ২০০ দিন করতে হবে; শহরে কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন চালু করতে হবে। বেকার ভাতা চালু করতে হবে।

এই প্রসঙ্গেও কেরালার উদাহরণ টেনে পলিট ব্যুরো বলেছে, এলডিএফ সরকার রাজ্যে ৭৮ লক্ষ মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করছে, ৫৮ লক্ষ মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা দিচ্ছে। কেরালা সরকার যখন সবচেয়ে কার্যকরভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে তখন কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ এবং বিজেপি একসঙ্গে সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করছে, মহামারী মোকাবিলা ও জনগণকে ত্রাণের প্রত্যেক পদক্ষেপে বাধা দেবার চেষ্টা করছে।

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বড়ো ধস নেমেছে অর্থনীতিতে। মহামারীর আগে থেকেই অধোগতি চলছিল। সবচেয়ে বড়ো কারণ অর্থনীতিতে কোনও চাহিদা নেই। প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভরতার নামে দেশি-বিদেশি পুঁজির মালিকদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। বাঁচার একমাত্র পথ সরকারি বিনিয়োগ, বিশেষ করে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে। তাহলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আয় বাড়বে, চাহিদাও বাড়বে। কিন্তু মোদী সরকার সে-পথে হাঁটবে না। মুষ্টিমেয় ঘনিষ্ঠ পুঁজির মালিককে সাহায্য করাই এদের কর্মসূচি।

পলিট ব্যুরো বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তব্য ছিল পূর্ণ মনঃসংযোগ দিয়ে মহামারী মোকাবিলার কাজ করা। তার বদলে তারা সংবিধানকে খর্ব করে ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের চরিত্রই পরিবর্তনের আরএসএস’র কর্মসূচি আগ্রাসীভাবে রূপায়ণে ব্যস্ত। গত ছ’সপ্তাহে সরকার নয়া-উদারনীতির সংস্কার আরও জোরের সঙ্গে রূপায়ণ করেছে; সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে আরও তীব্র করেছে; বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যালঘুদের আক্রমণের লক্ষ্য করা হয়েছে; সংখ্যালঘু, প্রান্তিক অংশের মানুষের ওপরে স্বৈরাচারী আক্রমণ তীব্র করার সঙ্গে সঙ্গে এইসব অংশের অধিকারের সপক্ষে সোচ্চার হওয়া সমাজকর্মীদের দানবীয় আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে খর্ব করে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছে; সমস্ত স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে খর্ব করা হচ্ছে; গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে অস্থির করা হয়েছে; মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে ভারতের অনুগত মিত্রের সম্পর্ককে আরও জোরদার করা হয়েছে।

ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার সম্পূর্ণ অন্তর্ঘাত ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন এজেন্সিগুলিকে নির্লজ্জভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশ, এনআইএ, সিবিআই, ইডি প্রভৃতি সংস্থাকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হচ্ছে, বিজেপি’র নিজস্ব ভাষ্য চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রের ওপরে সর্বাত্মক আক্রমণ হচ্ছে।

পলিট ব্যুরো দাবি করেছে, নির্দোষ সংখ্যালঘু, সমাজকর্মীদের সাজানো অভিযোগে ইউএপিএ, এনএসএ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইনে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

পলিট ব্যুরো রাজ্যের হাত থেকে ক্রমশ ক্ষমতা কেড়ে নেবার বিরোধিতা করেছে। জিএসটি প্রশ্নে বলেছে, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার ঋণ নিয়ে রাজ্যগুলির প্রাপ্য মিটিয়ে দিক। মহামারী মোকাবিলার জন্য রাজ্যগুলিকে অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়া দরকার কেন্দ্রের।

ভারত-চীন সীমান্ত সমস্যা প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, ভারত ও চীনের বিদেশমন্ত্রীরা মস্কোয় বৈঠকে বসে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা সরিয়ে নেওয়া ও উত্তেজনা প্রশমনের কথা বলা হয়েছে। কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে। মতপার্থক্য যেন বিরোধে পরিণত না হয় সে-কথা পুনরায় বলা হয়েছে। ১৫ জুন সংঘাতে ভারতের সেনাদের প্রাণহানি ঘটেছিল, সম্প্রতি আবার দু’পক্ষের শূন্যে গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে। ৪৫ বছর পরে এই ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি উত্তেজনাপ্রবণ ও গুরুতর হয়ে রয়েছে, তা প্রশমিত হওয়া প্রয়োজন। সিপিআই(এম) কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের দৃষ্টিভঙ্গিকেই সমর্থন করে।