৫৮ বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা / ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ১ আশ্বিন ১৪২৭
হরিয়ানায় কৃষকদের সমাবেশে পুলিশের হামলা
প্রতিবাদ দেশজুড়ে
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কৃষিক্ষেত্রে বৃহৎ পুঁজির দ্বার অবারিত করতে এবং কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ আরও নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার যে তিনটি অর্ডিন্যান্স এনেছে তা আইনে পরিণত করতে উদ্যত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন কৃষকরা। গত ১০ সেপ্টেম্বর হরিয়ানায় কৃষক-বিরোধী তিনটি অর্ডিন্যান্স বাতিল সহ মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায় রাজ্যের বিজেপি সরকার। পুলিশের এই বর্বরোচিত আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সারা ভারত কৃষক সভা। এছাড়া পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা করেছে অল ইন্ডিয়া কিষান সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি (সারা ভারত কিষান সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি)। এদিন হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টার সরকারের পুলিশ শুধু কৃষকদের ওপর হামলাই করেনি, এরপরদিনই কৃষকনেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এর প্রতিবাদে ১৪ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
প্রসঙ্গত, কৃষক স্বার্থবিরোধী অর্ডিন্যান্স বাতিল সহ বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই এরাজ্যে আন্দোলন চালাচ্ছে সারা ভারত কৃষক সভা সহ বিভিন্ন সংগঠন। ১০ সেপ্টেম্বর ‘কিষান বাঁচাও, মান্ডি বাঁচাও’ স্লোগান দিয়ে হরিয়ানার পিপলিতে আন্দোলনের কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন (বিকেইউ) সহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। এই উপলক্ষে সমাবেশের কর্মসূচিও ছিল এদিন। কিন্তু করোনার অজুহাত দিয়ে এই কর্মসূচি ভেস্তে দিতে উদ্যোগী হয় রাজ্যের বিজেপি সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় পিপালিতে। জারি হয় ১৪৪ ধারা। এই সমস্ত কিছু বাধা সত্ত্বেও কয়েক হাজার কৃষক গ্রামের রাস্তা দিয়ে এসে শাহবাদ অঞ্চলের কাছে ২২ নম্বর জাতীয় সড়কে উপস্থিত হন। জমায়েত হওয়া কৃষকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন কৃষক আহত হন। এরপরই কৃষকরা টানা চারঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পরে অবস্থা বেগতিক বুঝে ব্যারিকেড তুলে নিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এরপর সমাবেশে অংশ নেন কৃষকরা।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্যের দায়ে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন (বিকেইউ)-র রাজ্য সভাপতি গুরনাম সিং চারুনি সহ ‘অজ্ঞাতনামা’ প্রায় ৩০০ জন কৃষকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। সারা ভারত কৃষক সভার পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, একদিকে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে সরকার কৃষকের জীবন-জীবিকার সর্বনাশ করে চলেছে, অন্যদিকে করোনা মহামারীর অজুহাতে কৃষক বিক্ষোভে হামলা চালানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে দেওয়া যায় না। তাই কৃষকের অসন্তোষ আরও তীব্র হয়ে রাস্তায় আছড়ে পড়বে।
এদিন কৃষক বিরোধী অর্ডিন্যান্স বাতিল সহ মোদী সরকারের বিদ্যুৎ বিল এবং পেট্রোপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। এদিন পুলিশের নৃশংস হামলা-আক্রমণ সত্ত্বেও কৃষকদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে দমানো যায়নি। বিজেপি’র দুই সাংসদ ধর্মেন্দ্র সিং ও ব্রজেন্দ্র সিংও পুলিশের লাঠিচালনার প্রকাশ্য নিন্দা করেছেন। কৃষকদের ক্ষোভ সামলাতে এই দুই সাংসদ সহ তিন সদস্যের কমিটি গড়েছে রাজ্য বিজেপি। বিরোধী কংগ্রেস দল সহ সরকারে বিজেপি-র শরিক জননায়ক জনতা পার্টি (জেজেপি) সরাসরি লাঠিচালনার সমালোচনা করেছে।
এদিকে শুধু হরিয়ানাই নয়, কেন্দ্রের জনবিরোধী ও কৃষক-বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ প্রভৃতি উত্তর ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও বিশাল বিশাল কৃষক বিক্ষোভ হয়েছে। এই প্রতিবাদের ঢেউ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র।