৫৮ বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা / ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ১ আশ্বিন ১৪২৭
স্বামী অগ্নিবেশের মৃত্যুতে শোক সব মহলে কুরুচিকর মন্তব্যে ধিক্কৃত বিজেপি ঘনিষ্ঠ
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দেশের মানবাধিকার আন্দোলনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সমাজকর্মী স্বামী অগ্নিবেশের জীবনাবসান হয়েছে গত ১১ সেপ্টেম্বর। দিল্লির আইএলবিএস হাসপাতালে যকৃতের গুরুতর সমস্যা নিয়ে গত দু’মাস ধরে তিনি ভর্তি ছিলেন। শেষপর্যন্ত শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রতঙ্গের বিকল হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
দু’বছর আগে ঝাড়খণ্ডে বিজেপি-আরএসএস’র গুন্ডারা স্বামী অগ্নিবেশকে নৃশংসভাবে গণনিগ্রহ করে। এর দু’দিন পর দিল্লিতে তিনি ফের বিজেপি কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। বিজেপি-আরএসএস’র শারীরিক আক্রমণে তাঁর যকৃত ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন। পরবর্তী সময়ে যা আর ঠিক হয়নি। বিজেপি-আরএসএস’র একেবারেই অপচ্ছন্দের ছিলেন এই আর্যসমাজী স্বামী অগ্নিবেশ। যার মূল্য তাঁকে এইভাবেই দিতে হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছে রাজনীতি, শিক্ষাজগৎ সহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সমাজকর্মীরা। স্বামী অগ্নিবেশের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করে সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেনঃ ‘‘প্রান্তিক মানুষ, দেশের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে তিনি লড়াই করে গেছেন’’। শোকপ্রকাশ করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ প্রমুখ। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিংবা বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে।
বিজেপি-আরএসএস সামনে না এলেও, তাদের এক ঘনিষ্ঠ অনুগামী স্বামী অগ্নিবেশের মৃত্যুতে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন। ইনি হলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন সিবিআই প্রধান নাগেশ্বর রাও। স্বামী অগ্নিবেশের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি মন্তব্য করেনঃ ‘‘গেরুয়া পোশাক পরা হিন্দু-বিরোধী অগ্নিবেশের মৃত্যু আকাঙ্ক্ষিত নিষ্কৃতি’’। রাওয়ের এহেন কুৎসিত মন্তব্যে স্তম্ভিত হয়ে গেছেন সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষজন। সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেটিজেনরা। এমনকি পুলিশদের সংগঠন ইন্ডিয়ান পুলিশ ফাউন্ডেশনও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নাগেশ্বরের বক্তব্যে। তারা বলেছেঃ ‘‘নাগেশ্বর রাও পুলিশের উর্দির কলঙ্ক।’’ প্রসঙ্গত, এই প্রাক্তন সিবিআই প্রধান আর্থিক দুর্নীতি সহ একাধিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। তাঁর স্ত্রীর নামও একাধিক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। তাসত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ বলে রাওয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয় নি। সামাজিক মাধ্যমেও নেটিজেনরা বলেছেনঃ একাধিক দুর্নীতিতে জড়িত বিজেপি ঘনিষ্ঠ নাগেশ্বরের কাছে এমন মন্তব্যই প্রত্যাশিত।
স্বামী অগ্নিবেশের প্রকৃত নাম ভেপা শ্যাম রাও। অন্ধ্রপ্রদেশের এক ব্রাহ্মণ তেলেগু পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি আর্য সমাজে যুক্ত হন এবং সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৬৩-৬৯ সাল পর্যন্ত কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে শিক্ষকতাও করেন।
স্বামী অগ্নিবেশ আর্য সমাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেও ধর্মীয় পরিসরের বাইরে গিয়ে নানা সমাজসেবামূলক কাজ, সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত থেকেছেন। দাসশ্রমিক প্রথার অবসানে বন্ধুয়া মুক্তি মোর্চা তৈরি করেন। আদিবাসী মানুষের অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলনে এবং কৃষক আন্দোলনেও যুক্ত থেকেছেন। তিনি যুক্ত ছিলেন অন্না হাজারের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনেও। দেশের সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে তাঁর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। দিল্লি দাঙ্গায় নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে দাবিপত্রে স্বাক্ষরও করেছিলেন তিনি।
রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হয়ে ১৯৭৭ সালে হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে দাঁড়ান স্বামী অগ্নিবেশ। তিনি নির্বাচিত হন এবং শিক্ষামন্ত্রী হন। পরে হরিয়ানা সরকার শ্রমিকদের উপর গুলি চালালে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। খ্রিস্টান, মুসলিম সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রধানদের সঙ্গেও স্বামী অগ্নিবেশের মধুর সম্পর্ক ছিল।