E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা / ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ১ আশ্বিন ১৪২৭

স্বর্গ, বিসর্গ, উপসর্গ

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


এখন যেহেতু বাজারের হট টপিক করোনা, তাই তা নিয়ে দু’চারটে কথা বলি। গত পাঁচ-ছ মাসে আমরা সকলেই অল্পবিস্তর করোনা বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছি। করোনা ঠেকাতে কী করো, আর কী কোরোনা - তার তালিকা তৈরি আর পালন করতে, স্যানিটাইজার, মাস্ক সামলাতেই ২৪ ঘণ্টার বেশিরভাগ সময় কাবার। এর লক্ষণ নাকি জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, স্বাদ না পাওয়া, নাকে গন্ধ না পাওয়া, পেট খারাপ, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, সহজে হাঁপিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদির যে কোনোটাই হতে পারে। ইনকিউবেশন পিরিয়ড নাকি ১৪ দিনের। সংক্রমিত হলে প্রথমে বোঝা যায় না। পরে ধীরে ধীরে ১৪ দিনেই লক্ষণ-টক্ষণ প্রকাশ পায়। কো-মরবিডিটি তো আমাদের দেশে প্রতি পদে। এরপর আপনার সিদ্ধান্ত। আপনি একে করোনা সংক্রমণ বলবেন, নাকি করোনাটিক টাইপ - তা ভাবতে হবে আপনাকেই। তবে কোনো অসুখেই সংক্রমণ থেমে থাকে না। তাই সংক্রমিত হবেন নাকি সংক্রমণ আটকাবেন - যত দ্রুত দ্বিধা কাটিয়ে ভাবতে পারবেন লাভ আপনারই।

অসুখের লক্ষণ সময়মতো চিনতে পারাটা খুব জরুরি। একটু অপ্রাসঙ্গিক একটা কথা বলি কেমন? ১৯৮৪ সালের বাংলা সাদা-কালো সিনেমা ‘শত্রু’ তো আমরা মোটামুটি সবাই দেখেছি। সিনেমা টিনেমায় ডিটেলিং না কী যেন একটা কথা চালু আছে। আচ্ছা, দোর্দণ্ডপ্রতাপ থানার বড়বাবু শুভঙ্কর সান্যাল (রঞ্জিত মল্লিক) যখন বাজারে এক এসআই (অনুপ কুমার)কে লাউয়ের দাম দিতে বাধ্য করছিলেন, সেইসময় রঞ্জিত মল্লিকের পেছনের মাটির দেওয়ালে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক আঁকা ছিল খেয়াল আছে? নেই তো। না থাকাই স্বাভাবিক। আমরা তো তখন সামনে লাউয়ের দাম নিয়ে গরম গরম ডায়লগ শুনতে ব্যস্ত ছিলাম। আর পেছনের দেওয়ালে আঁকা রাজনৈতিক দলের প্রতীক অবচেতনে মনে গেঁথে গেছিল। একটু ভেবে বলুন তো ওই সিনেমায় দেখানো বিধায়ককে আপনার কোন্‌ রাজনৈতিক দলের বলে মনে হয়েছিল? কিংবা মনোজ মিত্রের চরিত্রটাই বা কোন্‌ রাজনৈতিক দলকে সিম্বলাইজ করিয়েছিল? প্রত্যক্ষে না হলেও পরোক্ষে? একবার ভেবে দেখতে পারেন। ভাবা দরকার। তখন থেকেই রাজনীতির প্রতি একটা গোপন ঘেন্না আপনার মনে তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল কিনা।

এই হয়েছে এক দোষ। এক বলতে গেলে আরেক হয়ে যায়। বলতে গেলাম করোনা নিয়ে। ১৪ দিনে লক্ষণ থেকে রোগমুক্তি নিয়ে। চলে এলো ‘শত্রু’। অথচ বলতে গেছিলাম লক্ষ্মণ নিয়ে। রাম মন্দিরের স্বর্ণযুগে রামের ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে নয়। অসুখের লক্ষণ। আমি দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদ নিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছি না। সত্যি বলছি কাঁপা কাঁপা গলায় অভিনয় করে আমার বলার ক্ষমতা নেই - দেশকে লিয়ে ম্যায়নে ঘর, পরিবার সবকুছ ছোড়া। ব্রিটিশদের উৎখাত করতে দলে দলে বিপ্লবীরা, যারা দেশের জন্য ঘর ছেড়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদেরও দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ বোঝানোর জন্য এসব বলার দরকার পড়েনি। কিন্তু এখন পড়ছে। উদ্দেশ্যে প্রয়োজন নাকি বিধেয়তে তা বিতর্কিত। তবে এগুলোও লক্ষণ। কথায় কথায় জাতীয়তাবাদের ঢেঁকুর তোলা, দেশপ্রেমের কথা বলা, দেশপ্রেমিক দেশপ্রেমিক ভাব দেখানো অসুখের প্রথম উপসর্গ।

এটা একেবারেই প্রাথমিক উপসর্গ। উপসর্গ আরও আছে। একটু উত্তরপ্রদেশের কথা বলি। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে একটা ট্যুইট করা হয়েছিল। যাতে বলা হয়েছিল, শেষ ২ বছরে ৫,১৭৮টা এনকাউন্টার করা হয়েছে। মৃত্যু ১০৩ জনের, ১,৮৫৯ জন আহত। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক রাজ্যেই এনকাউন্টার হয়েছে। আপনারা ভুল বুঝবেন না। আমি কিন্তু এখানে কিছু এনকাউন্টারে কিছু বিশিষ্ট নেতা-মন্ত্রীদের যুক্ত থাকার অভিযোগের কথা তুলছি না। তবে এনকাউন্টার মানে মানবাধিকার লঙ্ঘন। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে উপেক্ষা করা, মানুষকে ভয় দেখানো, বিনাবিচারে আটক রাখা, নিরাপত্তাহীনতার প্রচার করাটাও অসুখের উপসর্গের মধ্যেই পড়ে।

‘স্কেপগোট’ কথাটা আমরা জানতাম। কিন্তু হালে গত ২৩ আগস্ট এক মামলার রায় দিতে গিয়ে বোম্বে হাইকোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চে বিচারপতি টি ভি নালয়াদে এবং বিচারপতি এম জি সেওলিকর ‘স্কেপগোট’ কথাটা ব্যবহার করেছেন। তাঁরা যা বলেছেন, তার মোটামুটি বাংলা করলে দাঁড়ায় - করোনাজনিত পরিস্থিতিতে তবলিগি জামাত সদস্যদের ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে। এটা নিছকই উদাহরণ। দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ দেখানোর যে উপসর্গের কথা আগে বলেছি সেই উপসর্গ বজায় রাখতে বলির পাঁঠা যে কেউ হতে পারে। সেটা তবলিগি জামাতি হতে পারে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হতে পারে, মুক্তমনা হতে পারে, কমিউনিস্টও হতে পারে। আমি, আপনি যে কেউ হতে পারি। ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে গাত্রে ব্যথা হলেও মানুষের মধ্যে উত্তেজনা আনার জন্য, জাতীয়তাবাদের বেলুন ফোলানোর জন্য কাল্পনিক শত্রু তৈরি করে সামনে কাউকে খাড়া করে দেওয়াটা এই অসুখের আরও এক উপসর্গ। সেখান থেকে অসুখের নিয়মমেনেই টুক করে বাদ পড়ে যান অনুরাগ ঠাকুর, কপিল মিশ্র, পরবেশ বর্মারা।

এক মামলার রায় দিতে গিয়ে বোম্বে হাইকোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চে বিচারপতি টি ভি নালয়াদে এবং বিচারপতি এম জি সেওলিকর ‘স্কেপগোট’ কথাটা ব্যবহার করেছেন। তাঁরা যা বলেছেন, তার মোটামুটি বাংলা করলে দাঁড়ায় - করোনাজনিত পরিস্থিতিতে তবলিগি জামাত সদস্যদের ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে। এটা নিছকই উদাহরণ। দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ দেখানোর যে উপসর্গের কথা আগে বলেছি সেই উপসর্গ বজায় রাখতে বলির পাঁঠা যে কেউ হতে পারে। সেটা তবলিগি জামাতি হতে পারে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হতে পারে, মুক্তমনা হতে পারে, কমিউনিস্টও হতে পারে। আমি, আপনি যে কেউ হতে পারি। ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে গাত্রে ব্যথা হলেও মানুষের মধ্যে উত্তেজনা আনার জন্য, জাতীয়তাবাদের বেলুন ফোলানোর জন্য কাল্পনিক শত্রু তৈরি করে সামনে কাউকে খাড়া করে দেওয়াটা এই অসুখের আরও এক উপসর্গ। সেখান থেকে অসুখের নিয়মমেনেই টুক করে বাদ পড়ে যান অনুরাগ ঠাকুর, কপিল মিশ্র, পরবেশ বর্মারা।

অনেক শব্দই আমরা জানি। কিন্তু সেভাবে ব্যবহৃত হতে দেখিনা। যেমন ‘ফেস অফ’। ১৫ জুনের আগে আমরা অনেকেই হয়তো সেভাবে শব্দটার ব্যবহার শুনিনি। কিন্তু এখন সবাই জানি ওই দিন গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে চীনা বাহিনীর ‘ফেস অফ’ হয়েছে। গোদা বাংলায় হাতাহাতি। তারপর থেকে সীমান্ত বিবাদ নিয়ে চর্চা চলছে। আর ১৪ জুন সংসদে বাদল অধিবেশনের শুরুর দিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেনঃ ‘আমাদের সেনাবাহিনী অসীম সাহস, নিষ্ঠা ও দেশের প্রতি আত্মত্যাগের ভাবনা থেকে সীমান্তে শক্ত দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ...আমি আত্মবিশ্বাসী যে এই অবস্থায় সংসদ ও সাংসদরা এক হয়ে একটা বার্তা দেবেন, যে গোটা দেশ সেনার পাশে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।’ দেশের ভেতরে যখন একাধিক সমস্যা ঘাড়ে চেপে বসে, তখন সেই দিকে নজর না দিয়ে সামরিক সরঞ্জামে অতিরিক্ত খরচ, সামরিক বাহিনীকে আরও বড়ো করে দেখানোটাও এই অসুখের একটা উপসর্গ।

বিয়ে স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে এক সামাজিক চুক্তি। স্ত্রী তার কর্তব্য পালন না করলে তাকে পরিত্যাগ করা যেতে পারে। এটা ২০১৩ সালের মন্তব্য। করেছিলেন মোহন ভাগবত। কিংবা মধ্যপ্রদেশের গুণার বিধায়ক পান্নালাল শাক্য। যিনি ২০১৮ সালের জুন মাসে বলেছিলেন - মহিলারা শুধুমাত্র সংস্কারী সন্তানেরই জন্ম দিন, নাহলে বন্ধ্যা থাকুন। সন্তান সংস্কারী না হলে তাঁরা যখন ভবিষ্যতে নেতা হবে, তখন সমাজ রসাতলে যাবে। যার দায় পড়বে মায়েদের ওপর। এরকম আরও বহু স্বর্ণখচিত মন্তব্য আছে। শব্দে কুলোবে না। তবে ২০১৮-র এনসিআরবি-র পরিসংখ্যান অনুসারে দেশের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ এবং আসাম - ভারতের প্রথম পাঁচ রাজ্য, যেখানে মহিলারা সবথেকে বেশি অসুরক্ষিত। ওই রিপোর্ট অনুসারেই উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা ৫৯,৪৪৫। যে সংখ্যাটা এখন অনেক বেড়েছে। ঘাবড়াবেন না। আমি উপসর্গতেই আছি। অসুখের উপসর্গের সংখ্যা যত বাড়ে তত লিঙ্গবৈষম্য বাড়ে। মহিলাদের ওপর অত্যাচার বাড়ে। সমকামিতা, গর্ভপাত বিরোধিতা বাড়ে। পুরুষ নিয়ন্ত্রণ বাড়ে। পেত্রিয়ার্কি শব্দটা বড় কঠিন। তাই বললাম না।

মিডিয়া শব্দের ম-এ হ্রস্বইটা এখন নাকি ম ও-কার হয়ে গেছে। অনেকেই ব্যঙ্গ করে বলেন। গোদী মিডিয়াও বলেন কেউ কেউ। তবে এটা ঠিক যে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মোহন ভাগবত দিল্লির ছাতারপুরে দেশ থেকে বাছাই করা ৭০ জন সাংবাদিকের সঙ্গে সারাদিন ধরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন। এর আগে ২০১৯-এও একইরকম বৈঠক করেছিলেন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এত ভাবনার কিছু নেই। গোয়েবলসও মাঝেমাঝে এরকম করতেন। এটা অসুখেরই উপসর্গ। গণমাধ্যমকে পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে এনে দরকারে ব্যবহার করা। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে সরকারের প্রচারযন্ত্রে পরিণত করা।

এখন চারপাশটা দেখে আপনার মনে ক্রমশ একটা ভয় গেড়ে বসছে না যে, যে কোনো মুহূর্তে চীন আক্রমণ করতে পারে। অথবা পাকিস্তান হামলা চালাতে পারে আপনার ওপর। পান তো? ঠিক। মানুষের মনে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে ভয় তৈরি করা, তাকে বাড়িয়ে তোলাটাও অসুখের একটা উপসর্গের মধ্যেই আছে।

১৯৯৮ সালের ১৩ নভেম্বর জওহরলাল নেহরু স্মারক বক্তৃতায় জ্যোতি বসু বলেছিলেনঃ “...এই ঐতিহ্যের ওপর সাম্প্রতিকতম আক্রমণটি এসেছে হিন্দু সমাজের একীকরণের উদ্ভট মতাদর্শগত ধারণাকে প্রচারের অপপ্রয়াসের মধ্যে। সংঘ পরিবারের এই জাতীয় ভাবনা থেকে উদ্ভূত হিন্দুরাষ্ট্রের ধারণা আমাদের সমাজের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেই ধ্বংস করতে চাইছে। এই বিষয়ে আমাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতেই হবে।’’ রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে ফেলা, সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে ব্যবহার করে শাসনক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা - এটাও অসুখের উপসর্গ। যাক। দেশে যতই সমস্যা থাক, রামমন্দিরের শিলান্যাস তো এই সময়েই হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গা, সংস্থার নাম বদল হচ্ছে। সংক্রমণ ক্রমশ প্রকট।

দেশে ২০১৫ সালে ১০৯জন কর্পোরেটের ৪০ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা ঋণমকুব হয়েছে। ২০১৬তে ১৯৯ জনের ৬৯ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ঋণ মকুব দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। ২০১৮তে তা আরও বেড়ে হয় ২ লক্ষ ১৭ হাজার ১২১ কোটি টাকা। বর্তমান আর্থিক বছরের প্রথম ৩ মাসে কর্পোরেটদের ঋণমকুব হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষা করে এক বিশেষ সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি করা আরও এক উপসর্গ।

এবার আসি শ্রমিকদমন নীতিতে। যা এক গুরুতর উপসর্গ। লকডাউন চলাকালীন উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব সহ একাধিক রাজ্যে কাজের সময় বাড়ানো সহ বিভিন্ন ভাবে শ্রমআইন লঘু করার চেষ্টা হয়েছে। যার প্রতিবাদে গত ১৩ মে নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিআই(এম)। যে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেনঃ করোনা মহামারীকে সামনে রেখে দেশে শ্রমআইনে বদল আনার চেষ্টা হচ্ছে। যা শ্রমিকের স্বার্থে নয়, পুঁজিপতিদের স্বার্থে। ২২ দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিটু সহ ১০ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। জল গড়িয়েছে আইএলও পর্যন্ত।

আপনি বোধহয় এতক্ষণে উপসর্গের পর উপসর্গ শুনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অথবা সংক্রমণের ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু আপনি ভয় পেলেও আমাকে ট্রেনের হকারভাইয়ের মতো বলতেই হবে এখানেই শেষ নয়। এরপরেও উপসর্গের মধ্যে আছে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি অশ্রদ্ধামূলক মন্তব্য, শিল্পকলার প্রতি অশ্রদ্ধা। অর্থনীতি বিষয়ে অমর্ত্য সেন আদৌ কিছু জানেন কিনা তা নিয়ে আপনিও তো মাঝেমাঝেই ধাঁধায় পড়ে যান। উপসর্গ অনুসরণ করেই উত্তরপ্রদেশে তৈরি হচ্ছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স বা UPSSF। যে বাহিনী কোনোরকম ওয়ারেন্ট ছাড়াই যেকোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি ও গ্রেফতার করতে পারবে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশ সরকার এই ঘোষণা করেছে। গতবছরের আগস্টে হয়েছে ইউএপিএ অ্যামেন্ডমেন্ট। এই উপসর্গ অনুসারেই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি। রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তির বেসরকারিকরণ। পছন্দসই ব্যক্তিকে উচ্চপদে বসিয়ে দেওয়া। এছাড়াও উপসর্গের মধ্যে আছে নির্বাচনকে নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করা, নিয়ন্ত্রণ করা।

মরিয়ম ওয়েবস্টার বলছে শব্দটা নাকি ১৯২১ সালে প্রথম ব্যবহৃত হয়। ল্যাটিন ‘ফ্যাসিস’ থেকে ইটালিয়ান ‘ফ্যাসিসমো’ হয়ে তারপর নাকি কীসব ইজম টিজম হয়েছে। নবরূপে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। তা সে যাই হোক। অসুখের নামে কিছু যায় আসে না। কোভিড-১৯ বলুন, নভেল বলুন বা সার্স - দিনের শেষে আমাদের করোনাই বুঝতে হবে। লক্ষণটাই আসল। ডাঃ লরেন্স ব্রিট অসুখের উপসর্গগুলো বলেছেন। তা দেখেই সাবধান হতে হবে। আপনি স্বীকার করুন বা না করুন - সংক্রমণ কিন্তু আপনার হয়ে গেছে। নিজেকে আইসোলেশনে রেখে সংক্রমণ ঠেকাবেন নাকি মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন আপাতত সেটা আপনাকেই ভাবতে হবে।