৬০ বর্ষ ২ সংখ্যা / ১৯ আগস্ট, ২০২২ / ২ ভাদ্র, ১৪২৯
স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে দেশের সংবিধান রক্ষার শপথ বামপন্থীদের
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ এবারের ১৫ আগস্ট দেশের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করেছেন রাজ্যের বাম আন্দোলনের কর্মীরা। এই দিনটিতে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা, নাগরিক স্বাধীনতা, সংসদীয় গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব সহ সংবিধানের মূল্যবোধ রক্ষার শপথ নিয়েছেন বামপন্থীরা। এদিন সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর মুজফ্ফর আহ্মদ ভবন সহ রাজ্যের সর্বত্র পার্টির দপ্তরগুলিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ‘ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা’ পাঠ করা হয়েছে।
এছাড়া কলকাতায় ১৪টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের উদ্যোগে বেলেঘাটায় গান্ধীভবনের সামনে কেন্দ্রীয়ভাবে সভা হয়েছে।
এর আগে এদিন সকাল দশটায় সিপিআই(এম)’র রাজ্য দপ্তর মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিমান বসু। উপস্থিত ছিলেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনাদি সাহু, কল্লোল মজুমদার সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা।
এদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সিপিআই(এম) এবং অন্যান্য বামপন্থী দলের পক্ষ থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর শহিদদের প্রতি। এছাড়া রক্তদান, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া সহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল রাজ্যজুড়ে।
‘স্বাধীনতা ৭৫: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ এই শিরোনামে প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশ ছাড়াও সুসজ্জিত পদযাত্রা, সম্প্রীতির রাখিবন্ধন, পোস্টার প্রদর্শনী প্রভৃতি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। এদিন বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র-যুবদের উদ্যোগে চারা গাছ বিতরণ করা হয়েছে।
এদিন বেলা ১২.১৫ মিনিটে সিপিআই(এম), সিপিআই, এআইএফবি, আরএসপি, সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন, আরসিপিআই, এমসএফবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বলশেভিক পার্টি, সিআরএলআই, সিপিবি, আরজেডি, এনসিপি এবং জেডি (ইউ)’র উদ্যোগে বেলেঘাটায় গান্ধীভবনের সামনে বেলেঘাটা মেইন রোডের ওপরে সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করে সমস্ত দেশবাসীর গর্বের ভারত নির্মাণের শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান।
বিমান বসু তাঁর ভাষণে বলেন, ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, গৃহহীন সব ভারতীয় পরিবারকে ঘর দেবেন। কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে জমা দেবেন। পানীয় জল, বিদ্যুৎ, বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি সহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন সবটাই ভুলে গেছেন। এখন বলছেন ‘হর ঘর মে তেরঙ্গা’। বেশিরভাগ মানুষের হাতে অর্থ নেই, বহু মানুষের ঘরই নেই, অথচ দেশের আমজনতার আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করার কোনো পরিকল্পনা নেই মোদি সরকারের। লোক ঠকানোর এই সরকার তাই বিভাজনের নীতি কায়েম করতে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে। জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ প্রভেদে বিভাজনের নীতি নিয়ে চলছে এই সরকার। আমরা এই বিভাজন ভেঙে সংবিধানের প্রস্তাবনা মতো এক বিভেদ বিষ ও বিভাজন মুক্ত ভারত গড়ার লড়াইকে তীব্র করে গড়ে তুলতে চাই।
স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সম্পর্কে বিমান বসু বলেন, পরিবারতন্ত্রের বিরোধিতার নামে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা আরএসএস পরিবারেরই বক্তব্য। দেশবাসীর সঙ্গে কপটতা করে সঙ্ঘ পরিবারের শাসন কায়েম করতে চায় ওরা। সমগ্র ভারতবাসীর দেশ হিসেবে ভারতকে গড়ে তোলার লড়াই-সংগ্রামের পথে আমাদের দৃঢ়ভাবে থাকতে হবে।
এই সভায় মহম্মদ সেলিম বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর কথা বলার নৈতিক অধিকারই নেই। তাঁর দল ও সরকার নীতিহীন রাজনীতিকদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠছে। ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় এসে ক্রমাগত মিথ্যাচার করে চলেছেন মোদি। তার আগে গুজরাটে কী করেছেন তা আজ দেশবাসীর জানা। আদানি, আম্বানিদের পাশে রেখে দারিদ্র্যমুক্ত ভারতের স্বপ্ন দেখানো হলো লোক ঠকানো। দেশাত্মবোধকে বিকৃতভাবে প্রচারে এনে জনমতকে বিভ্রান্ত করছে মোদি ও তাঁর দল বিজেপি। তাদের পথ ঠিক করে দেয় আরএসএস। সাভারকর, গোলওয়ালকরের মতো নেতারা স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন না, এইসব নেতা ব্রিটিশ সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিলেন। সেই আরএসএস এখন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান বদলে দিতে চাইছে। আমাদের তা রক্ষা করতেই হবে।
এখানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই’র কল্যাণ ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লকের গোবিন্দ রায়, আরসিপিআই’র মিহির বাইন, সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন-এর কার্তিক পাল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা সূর্য মিশ্র, রবীন দেব, মৃদুল দে, অনাদি সাহু, কল্লোল মজুমদার, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হাফিজ আলম সইরানি, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা জয়হিন্দ সিং, বলশেভিক পার্টির প্রবীর ঘোষ, ওয়ার্কার্স পার্টির শিবনাথ সিনহা প্রমুখ।
এদিন নেতৃবৃন্দ গান্ধীভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।