৬০ বর্ষ ২ সংখ্যা / ১৯ আগস্ট, ২০২২ / ২ ভাদ্র, ১৪২৯
রাজ্যজুড়ে সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদের ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১২ আগস্ট সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ (ইউসিআরসি)-র ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হলো রাজ্যের ২০টি জেলাতে। এই দিনেই ১৯৫০ সালে দেশভাগের করুণ পরিণতিতে লাঞ্ছিত, রিক্ত, অপমানিত নিজ ভূমে পরবাসী লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু প্রতারিত হয়ে সংঘবদ্ধভাবে গড়ে তুলেছিল এই সংগঠন। ১৯৪৭ সালে আরএসএস-র রাজনৈতিক সংগঠন হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লিগের সাম্প্রদায়িক চাপে ক্ষমতালিপ্সু কংগ্রেস সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের কৌশলের কাছে আত্মসমর্পণ করে ও ভারত ভাগ হয়। সেই সময়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন না করা বাংলার উদ্বাস্তুদের এক চরম দুর্বিষহ ও অনিশ্চিত জীবনে ঠেলে দিয়েছিল। সরকারি উদাসীনতায় শুধু পঞ্চাশের দশকেই প্রায় দুই লক্ষ শিশু নারী অকালে হারিয়ে যায়। সরকারের, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার করুণার পাত্র হয়ে না থেকে দাঁতে দাঁত চেপে উদ্বাস্তু চেতনায় বিক্ষিপ্তভাবে দাবি তুললে জুটতো লাঠি গুলি। এরকমই ছোটো ছোটো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ একসময় বামপন্থী শক্তি ও সহযোগীদের সহায়তায় দাবানল হয়ে আছড়ে পরে মুসলিম ইনস্টিটিউট-এর প্রথম সম্মেলনে সংঘবদ্ধতার প্রতীক লাল ঝান্ডা সাথে নিয়ে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সহমর্মিতা জানিয়ে এগিয়ে আসে অসংখ্য সাধারণ মানুষ ও গণ সংগঠনগুলো। বাংলার বুকে সূচনা হয় নতুন দৃষ্টান্ত - প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লড়াই।
ধারাবাহিক গণসংগ্রামের ও বহু আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দুর্বার আন্দোলনের প্রতিফলনে রাজ্য সরকারের পরিবর্তনে ও কেন্দ্রীয় সরকারের অনিচ্ছুক হাত থেকে বামফ্রন্ট সরকারের সহযোগিতায় উদ্বাস্তুদের কিছু দাবি আদায় হলেও বহু দাবি, সমস্যা আজও রয়ে গিয়েছে। উপলব্ধির বিচারে নতুন প্রজন্মের অভিজ্ঞতাহীনতায়, উদাসীনতা সাংগঠনিক শক্তি কিছুটা দুর্বল হলেও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা বর্তমান সরকারের প্রতারণার শিকার হয়ে আবার নতুন করে বাঁচার তাগিদে, নতুন করে উচ্ছেদে উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কায় লাল ঝান্ডাকেই সঞ্জীবনী শক্তি হিসেবে আঁকড়ে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হচ্ছে। তার ঝলক দেখা গেল আজকে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে।
সারা রাজ্যের ২০টি জেলায় অঞ্চল, কলোনি কমিটি স্তরে বিপুল উদ্দীপনায় পতাকা উত্তোলন, শহিদ স্মৃতিচারণ ও বর্তমান সময়ে সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনায় ছিল সংগ্রামী চেতনা। বিগত সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ কলোনি ও কলোনিবাসীর অংশগ্রহনে সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ, সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্ব বোধ গড়ে তুলতে রাখীবন্ধন, চেতনার বিকাশে আলোচনা সভা, সংগঠনের বার্তা পৌঁছে দিতে পথসভা, শিশুদের চিন্তা চেতনার বহিঃপ্রকাশে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য বিতরণ, মিছিল-সমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি ছিল প্রাণবন্ত। উল্লেখ্য, উৎসবের বাতাবরণে বিভিন্ন অঞ্চলে সমাগত কর্মী নেতৃত্বের অংশগ্রহণে জমায়েতে মহিলা সহ শিশুদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়ার মতো। ১৫ আগস্ট দিনটিতে উদ্বাস্তুদের কাছে স্বাধীনতা দিবস গর্বের হলেও ওইদিনই দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবন যন্ত্রনার সূচনা যা আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বহন করতে হচ্ছে তা পীড়াদায়ক। এই যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে মর্যাদা আদায়ের আরেক লড়াইয়ের অঙ্গীকার দেখা গেছে আজকে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। দেশ ও বাংলা বিভাজনের অন্যতম কাণ্ডারী সাম্প্রদায়িক আরএসএস-র রাজনৈতিক মুখ তৎকালীন হিন্দু মহাসভা ওরফে ভারতীয় জনসংঘ বর্তমানে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারে এসে আধুনিক বিজ্ঞান মনস্কতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি এবং স্বাধীনতালব্ধ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস তো করছেই তার সাথে এনআরসি, সিএএ নামক আইন সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে নস্যাৎ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ করিয়ে উদ্বাস্তুদের নতুন করিয়ে উদ্বাস্তু করার চেষ্টা করছে।
বিজেপি’র এই গণতন্ত্র বিরোধী ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমের দোসর পশ্চিমবঙ্গের সরকারি দল মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস।
আজকের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই দুই ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালাবার শপথ গ্রহণ করেছে সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ। এই লক্ষ্যে আগামী ২৫ আগস্ট সারা রাজ্যে প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে ও ২৬ আগস্ট কেন্দ্রীয়ভাবে রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের কাছে মিছিল জমায়েতের মধ্যে দিয়ে বকেয়া সমস্যা ও দাবি সনদ নিয়ে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে শামিল হবে ইউসিআরসি। তার পাশে থাকবে সাধারণ মানুষসহ ঐতিহ্যবাহী লাল ঝান্ডা ও গণতান্ত্রিক শক্তি। জেলা, অঞ্চল, কলোনি স্তর পর্যন্ত ধারাবাহিক সেমিনার, সভার মাধ্যমে প্রচার প্রস্তুতি শুরুর আহ্বান ধ্বনিত হলো এদিন থেকেই।