E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২ সংখ্যা / ১৯ আগস্ট, ২০২২ / ২ ভাদ্র, ১৪২৯

বিহারে পালাবদল

তৈরি হলো রাষ্ট্রীয় জনতা দল-জেডি ‍‌(ইউ)’র জোটের নতুন সরকার


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১০ আগস্ট বিহারে শপথ নিলো নতুন জোটের সরকার। বিজেপি’র সঙ্গ ত্যাগ করে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে জোট বাঁধল নীতিশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল। প্রত্যাশিতভাবে নতুন জোটের পক্ষ থেকে সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীপ্রসাদ যাদব। ২৪৩ সদস্য বিশিষ্ট বিহার বিধানসভায় ১৬৪ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে নতুন জোটের পক্ষে। কারণ, সর্বোচ্চ সংখ্যক বিধায়ক রয়েছে লালুপ্রসাদের আরজেডি’র ৭৯ জন। যেখানে বিজেপি’র বিধায়ক সংখ্যা ৭৭। বামপন্থীরা বিহারের বদলে যাওয়া পরিস্থিতির নিরিখে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, তারা বিজেপি বিরোধী যে কোনও বিন্যাসকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। অতএব ১৬ জন বামপন্থী বিধায়কের সমর্থনও রয়েছে নীতিশ-তেজস্বীর জোট সরকারের দিকে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ৩৬ জনের মন্ত্রীসভা গঠিত হবার কথা বিহারে। যেখানে কংগ্রেসের ৩ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং এনডিএ ছেড়ে আসা জিতন রাম মাঝির দলের ১ জন প্রতিমন্ত্রী থাকার আভাস রয়েছে। নীতিশ কুমার-তেজস্বী যাদব সহ অন্যান্য দলগুলি নিয়ে নয়া জোট রাজ্যে ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্পের লক্ষ্যেই তৈরি - এই বক্তব্যে অনড় রয়েছে সরকারে অংশ নেওয়া দলগুলি।

নীতিশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও মাসখানেক ধরেই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহ’র সভা এড়াচ্ছিলেন। দিল্লিতে বসে অমিত শাহ’রা জেডি(ইউ)-কে ভাঙার চেষ্টা করছে, উঠছিল এমন অভিযোগও। জেডি(ইউ) সাংসদ আরপি সিং সম্প্রতি দল ছাড়ার পর নীতিশ কুমার সহ দলকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলার পরই সরকার ছেড়ে নীতিশদের বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া গতি পায়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হতে থাকে বিহারকে মহারাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা হচ্ছে আরপি সিং সহ কয়েকজনকে ব্যবহার করে। দিল্লি থেকে রিমোট কন্ট্রোলে সরকার চালানোর চেষ্টা করছে অমিত শাহ অভিযোগ ওঠে জেডি(ইউ)’র পক্ষ থেকে। অবশ্য শুরু থেকেই বিজেপি-জেডি(ইউ)’র জোটের বোঝাপড়া নড়বড়ে ছিল। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক নিয়ে নীতিশ কুমারের দলকে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেওয়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই। কারণ দল ভেঙে সরকার পাল্টানোর বিজেপি ঘরানার সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল মহল বিজেপি’র এই আপাত ত্যাগের আড়ালে থাকা আসল উদ্দেশ্য কি সেটা জানত। এককথায় এই ঘটনা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতিতে জোট বদলে সরকারে টিঁকে থাকায় অভ্যস্ত নীতিশ কুমার বিজেপি’কে তাঁর দল ভাঙার সুযোগ দিতে রাজি ছিলেন না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ থেকে ঠিকা সেনা নিয়োগের অগ্নিপথ প্রকল্প - এরকম বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র নিয়ে বিহারের আমজনতার মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিজেপি’র বিরুদ্ধে। যার আঁচ পোহাতে হয়েছে নীতিশ কুমারের সরকারকেও। অসংখ্য বিহারবাসী যুবক পথে নেমেছেন অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে। স্বতঃস্ফূর্ত, অসংগঠিত সেই প্রতিবাদ দেখে পোড় খাওয়া রাজনীতিক নীতিশ কুমার বুঝেছিলেন, তাঁর সরকারকে এর মাসুল গুনতে হবে। অতএব রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য জোট বদলাতে বাধ্য হলেন তিনি।

সংবাদমাধ্যমের একাংশের প্রচার, বিজেপি বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে আরও একটা মুখ বাড়ল নীতিশ কুমারের পদত্যাগে। আর দলবদলে সরকার বদলে অভ্যস্ত বিজেপি’র বক্তব্য, বিহারের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন নীতিশ কুমার।

ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দুর্বল হবার হতাশার উচ্চারণ রয়েছে ওই বক্তব্যে। উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবার পর দিল্লিতে গিয়ে সোনিয়া গান্ধী, সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তেজস্বী যাদব।