E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২ সংখ্যা / ১৯ আগস্ট, ২০২২ / ২ ভাদ্র, ১৪২৯

‘না বলিয়া পরের দ্রব্য লইলে চুরি করা হয়’

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


কিছু আগে পরে হতে পারে। তবে গত বছর মোটামুটি এই সময়টাতেই একটা বড়ো অংশের মধ্যে অক্সিমিটার কেনার ধূম পড়েছিল। বাজার থেকে প্রায় উধাও। মূলত শহরকেন্দ্রিক আর্টিফিশিয়াল ক্রাইসিস। কিছু ভাগ্যবান ভাগ্যবতীদের ব্যাগে পকেটে ঘুরে বেড়াত ছোট্ট যন্ত্র। আর দুর্ভাগ্যবানের দল জুলজুল করে অন্যের মেশিনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস...। হাপিত্যেশ করে পাড়ার ওষুধের দোকান থেকে বেপাড়ার স্টেশনারি। একটা অক্সিমিটার হবে নাকি? ওই গুপি যন্তর সঙ্গে না থাকলে জেবন বেথা। কালোবাজারি? তাই সই। কিন্তু ওটি চাই। পেটে গ্যাস থেকে শুরু করে একটু হাঁফ-মেশিনে যতক্ষণ না আঙুল গোঁজা হচ্ছে ততক্ষণ স্বস্তি নেই। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাটা ঠিকঠাক রাখতে হবে তো! এখন অবশ্য খুঁজলে আর সেগুলো পাওয়া যাবে না অনেক বাড়িতেই। বড়ো আদরের জিনিস এখন চরম অবহেলায় ঘরের কোন কোণায়, আলমারির নিচে বা খাটের তলায় কিংবা বইয়ের তাকের পেছনে চিরনিদ্রায় শায়িত। কেউ কেউ তো ডাস্টবিনে। বেচারি অক্সিমিটার। আপনার সেই স্বর্ণযুগের আর কিছুমাত্র অবশিষ্ট নাই...। হে মানবকুল! তোমরা এত নিষ্ঠুর কেন? ব্যবহারের পর এইভাবে ছুঁড়িয়া ফেলিতে হয়?

ধমনির রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকলে তাকে নাকি হাইপোক্সেমিয়া নাকি হাইপোক্সিয়া - কী যেন একটা বলে। চিকিৎসকরা ভালো বলতে পারবেন। আমি বিষয়টা ঠিক জানিনা। তাই এর ভেতরে ঢোকা ঠিক নয়। তবে এর লক্ষণগুলো নাকি বড়ো ভয়ংকর। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে মাথাব্যথা, অস্থিরতা, বুকে ব্যথা, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, বিভ্রান্তি, মাথা ঘোরা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিণ্ডের দ্রুত স্পন্দন এবং সমন্বয়ের অভাব - এগুলোর যে কোনোটাই ঘটতে পারে। তবে এ তো গেল ধমনির কথা। মাথায় অক্সিজেন কম ঢুকলে কী কী হতে পারে তার হাতে কলমে প্রমাণ তো এখন চোখের সামনে। পুরো অক্সিজেন ঢুকলে তাহলে আর কী কী হতে পারতো?

তখন কোভিড টোভিড কোথায়! নেই অক্সিমিটারের চাহিদাও। মানুষ জানতই না রক্তে কতটা অক্সিজেন থাকা দরকার। তা আছে না নেই তা নিয়েও বিশেষ হেলদোল ছিলনা। ‘রোটি কাপড়া মকান’-এর দৈনন্দিন লড়াই লড়ে চলা মানুষের ওসব ‘গুরুতর’ বিষয়ে মাথা ঘামালে চলেও না। তবু সেইসময়ই রাজ্যবাসী জানতে পেরেছিল এই রাজ্যে এমন একজন আছেন যার মাথায় অক্সিজেন কম ঢোকে। আর সেই রোগের উপসর্গ হিসেবে তিনি কখনও প্রশাসনকে বোম মারতে বলেন। কখনও বিরোধীদের ‘গুড় বাতাসা’, কখনও ‘নকুলদানা’ খাওয়ার নিদান দেন। আবার কখনও ‘চড়াম চড়াম’ করে ঢাক বাজাতে বলেন। এগুলো কোনোটাই ওনার দোষ নয়। রক্তে অক্সিজেন কম থাকলে তো অস্থিরতা, বিভ্রান্তি, মাথা ব্যথা হতেই পারে। তবে অক্সিজেন কম গেলেও মূল উপসর্গ ‘সমন্বয়ের অভাব’ কিন্তু কখনই তাঁর মধ্যে ঘটেছে তা অতি বড়ো নিন্দুকেও বলতে পারবে না। তাই গোরু পাচার থেকে শুরু করে, মেয়ের চাকরি থেকে শুরু করে, গোপন কোম্পানি থেকে শুরু করে, বেআইনি বালি খাদান থেকে শুরু করে, তোলাবাজি থেকে শুরু করে, আত্মীয় পরিজন ঘনিষ্ঠদের চাকরি থেকে শুরু করে, কারিগরি শিক্ষা থেকে শুরু করে, বেআইনি কয়লা পাচার থেকে শুরু করে...। এই শুরু করে করে বলে যেতেই হবে। শেষ আর হবে না। তবে এটা ঠিক। অক্সিজেনের অভাবের কারণে ‘সমন্বয়ের অভাব’ ঘটলে তিনি রবীন্দ্রভূমিতে এই বিশাল রাজ্যপাট গড়ে তুলতে পারতেন না। ফুল, ফল, মালা, সন্দেশ, প্রণামি ঠিকসময় দেবীর বাক্সে জমা পড়তো বলেই দেবীও তুষ্ট। ‘...ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ অত্রাধিষ্ঠানং...’ ‘দেখ্ খুলে তোর তিন নয়ন/ রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে/ দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।’

সহজপাঠ প্রথম ভাগের ষষ্ঠ পাঠে রবীন্দ্রনাথ বহুকাল আগে লিখে গেছিলেন ‘খেলা হবে’। কোনও কোনও ঘোষ-টোষ-এর অবশ্য সহজপাঠ বিদ্যাসাগর নাকি রবীন্দ্রনাথ - কার লেখা তা নিয়ে কনফিউসন আছে। আর কেউ কেউ তো এখন প্রকাশ্য মিটিং-এ দাঁড়িয়ে দাবি করছেন ‘খেলা হবে’ নাকি তাঁরই সৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথের চোদ্দ পুরুষের ভাগ্য ভালো যে তিনি বলে বসেননি তাঁরই অনুপ্রেরণায় রবীন্দ্রনাথ ‘খেলা হবে’ লিখেছিলেন। তবে এর ঠিক পরের লাইনে রবীন্দ্রনাথ আরও একটা কথা লিখেছিলেন। ‘একা একা খেলা যায় না’। বীরভূমের ভূমিপুত্র সম্ভবত সহজপাঠটা পড়েছিলেন। তাই একা একা খেলেননি। রীতিমতো সমন্বয় রক্ষা করেই খেলে গেছেন। সেই আপ্তবাক্য স্মরণ করেই পঁচাত্তর পঁচিশ-এর ভাগ বাঁটোয়ারাও করেছেন। অতএব আপাতত অপেক্ষা বালিঘাট টু কালীঘাট, মণ্ডল টু বন্দ্যোপাধ্যায়-এর মিসিং নয়, ‘ফিসি লিঙ্ক’ খুঁজে বের করার।

এখনও পর্যন্ত গোরু পাচারকাণ্ডে যেটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা খুব একটা কম নয়। সিবিআই-এর সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট অনুসারে অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সায়গল নাকি দাবি করেছেন গোরু পাচারের সমস্ত টাকা অনুব্রতর কাছে পাঠানো হতো। যদিও সেই দাবি অস্বীকার করেছেন অনুব্রত। উলটে তিনি জানিয়েছেন সায়গলকে তিনি চিনতেনই না। ৯ বার হাজিরা এড়ানোর পর ১১ আগস্ট বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করে সিবিআই। ২০ আগস্ট পর্যন্ত তাঁর সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। প্রথমে গোরু পাচারকাণ্ডে তদন্ত চালাতে গিয়ে সায়গলের বিপুল সম্পত্তির হদিশ পায় সিবিআই আধিকারিকরা। সেইসব সম্পত্তির আয়ের উৎস খুঁজতে গিয়ে তাঁদের হাতে আসে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও তাঁর মেয়ের প্রচুর সম্পত্তির কাগজ।

সূত্র অনুসারে, আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ৪৫টি জমি রয়েছে বাবা ও মেয়ের নামে। পরে আরও ১৫টি জমির খোঁজ পায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এছাড়াও রাইস মিল এবং ৫০ বিঘা জমির ওপর এক খামার বাড়ির খবর প্রকাশ্যে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি এই সবই অনুব্রতর। আবার ১৭ আগস্ট হদিশ পাওয়া গেছে প্রায় ১৭ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের। জানা যাচ্ছে, বোলপুর থেকেই নাকি মুর্শিদাবাদের গোরু পাচার নিয়ন্ত্রণ করা হতো। বিগত সময়ে লক্ষ লক্ষ টাকার গোরু পাচার করা হয়েছে বাংলাদেশে। যে কাজ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করত অনুব্রত ঘনিষ্ঠরা।

ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোনো এখানেই শেষ নয়। ন্যাশনাল স্কিল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (এনএসকিউএফ)-র অধীনে ২০১৩ সাল থেকে রাজ্যের বহু সরকারি এবং সরকার পোষিত মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তিমূলক পড়াশোনা করানো হয়। প্রথমে এই সংস্থা রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের অধীনে থাকলেও পরে তা কারিগরি দপ্তরের অধীনে যায়। শিক্ষক নিয়োগ থেকে ল্যাবের কাজ শেখার যন্ত্রপাতি ও পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ সবই বেসরকারি মাধ্যমে পরিচালিত হত। এই প্রকল্পে স্কুল তৈরি নিয়েও উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। দাবি করা হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রায় ৩০০টি স্কুল তৈরি হয়। যেখানে নিয়ম অনুসারে কোনও বেসরকারি সংস্থা ৪০টির বেশি স্কুল তৈরির বরাত পাবেনা। যদিও সূত্র জানাচ্ছে, মলয় পিট নামের অনুব্রত ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি ২০১৮ সালে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অনুব্রতর মধ্যস্থতায় গোটা রাজ্যের প্রায় ১৪০টি স্কুলের টেন্ডার পেয়ে যান। এই মলয় পিটের নামে রয়েছে একাধিক এজেন্সি এবং সেই এজেন্সি মারফত হয়তো দাদার অনুপ্রেরণাতে বীরভূমেই ৪৮টি স্কুলের এনএসকিউএফ-র টেন্ডার পেয়ে যান মলয়।

এরপর আছে অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ের সম্পদের হদিশ। সিবিআই সূত্রের খবর অনুসারে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার মেয়ের নামে শুধুমাত্র বোলপুরের নিচুপল্লি এলাকাতেই ১০টি সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। সেগুলোর প্রত্যেকটিই নাকি কেনা হয়েছে ২০১৪ থেকে ২০১৬-র মধ্যে। এছাড়াও অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর মেয়ের নামে মোট দুটি কোম্পানির হদিশ পেয়েছে সিবিআই। পাশাপাশি সিবিআই সূত্র মারফত আরও জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের পর থেকে অনুব্রত মণ্ডলের সম্পত্তির পরিমাণ ক্রমশই বেড়েছে। দুই কোম্পানি ছাড়াও অনুব্রত এবং তাঁর মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে সিবিআই। গোয়েন্দা আধিকারিকদের বক্তব্য, আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কোনো হিসেব তাঁরা মেলাতে পারছেন না। আর যেদিন থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় অনুব্রতর পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন সেদিন থেকে নাকি মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি।

বোলপুরের কালিকাপুরে হারাধন মণ্ডল রোডের ঠিকানায় আরও দুই কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। সিবিআই সূত্র অনুসারে, এই রাইস মিলের মালিক নাকি মণ্ডল পরিবার এবং তার অন্যতম পার্টনার অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে। এই রিয়েল এস্টেট কোম্পানি তৈরি হয়েছিল ২০০৬ সালে। সেই সময় যে সংস্থার শেয়ার ক্যাপিটাল ছিল দেড় কোটি টাকা। উল্লেখযোগ্য ভাবে সন্দেহের তালিকায় থাকা অন্য সংস্থার ঠিকানাতেই তৈরি হয়েছে এই রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। এছাড়াও গোরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের নজরে উঠে আসছে একের পর এক নাম। বর্তমানে যে নাম নিয়ে তৎপর সিবিআই তিনিও বীরভূমের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার ‘ঘনিষ্ঠ’ বিদ্যুৎবরণ গায়েন। যিনি নাকি অনুব্রতকে বাবা বলে ডাকেন ! তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তেই ঘোরাফেরা করেন এই ব্যক্তি। সিবিআই'র নজরদারিতে এবার অনুব্রতকে বাবা বলে ডাকা সেই ‘ছেলে’ও। অভিযোগ, ২০১১তে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই তাঁর ফুলেফেঁপে ওঠা। একসময় বোলপুর পুরসভার গাড়ির খালাসি হিসেবে কাজ করা ওই ব্যক্তি ২০১১ সালেই বোলপুর পুরসভায় স্থায়ী চাকরি পেয়ে যান। বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলেছে ওই ব্যক্তিরও।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় টু অনুব্রত মণ্ডল। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে গোরু পাচার। প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু দুর্নীতির খবর আসছে। শাসকদলের নেতা মন্ত্রীরা দুর্নীতিতে কতটা ডুবে আছেন তা ক্রমশ প্রকাশ্য। ঠিক কত লক্ষ-কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সারদা, নারদের পর জোড়া দুর্নীতির ঠেলায় আপাতত নাভিশ্বাস তৃণমূলের। উল্লেখযোগ্য ভাবে এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়েও। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হবার পর তাঁকে তড়িঘড়ি দলের সব পদ থেকে সরিয়ে দিলেও সিবিআই-র হাতে গ্রেপ্তার হওয়া অনুব্রত মণ্ডলের পাশেই দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৪ আগস্ট ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেষ্ট কী এমন অপরাধ করেছে যে ওকে গ্রেপ্তার করল? কী করেছে কেষ্ট? কেষ্টকে জেলে আটকে কী হবে? মাঝরাতে কেষ্টর ঘরে তো তাণ্ডব করেছে। মাঝরাতে কেন সিবিআই বাড়িতে ঢুকেছে? যে জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কী ভয় লাগছে? কাল যদি আমার বাড়ি যায় কী করবেন? রাস্তায় নামবেন তো?’ মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ এমন কথা কেন বললেন তা স্পষ্ট নয়। তবে অতীতে তিনি এভাবে যার যার নাম বলেছেন তাদের অনেককেই গরাদের ওপারে যেতে হয়েছে। ২০১৩ সালের ৩ মে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলীয় বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, “কুণাল চোর? টুম্পাই চোর? মদন চোর? মুকুল চোর? আমি চোর?” এঁদের মধ্যে মুকুল রায় ছাড়া সকলেই কোনও না কোনও ঘটনায় গরাদের ওপারে গেছেন। তার কিছুদিন পরেই কলকাতা তৃণমূলের মিছিল দেখেছে ‘আমরা সবাই চোর’। সেটা ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর। আর ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি কালীঘাটে নিজের বাড়িতে দলীয় বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই তিনি জানিয়েছিলেন, ‘এরপর তো বলা হবে, অভিষেক চোর।’ (তথ্যসূত্র, আনন্দবাজার ডিজিটাল, ১৭.১.২০১৫)। আপ ক্রনোলজি সমঝ লিজিয়ে। বামেরা কিন্তু ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ স্লোগান তার অনেক পরে দিয়েছে।

গত ২২ জুলাই থেকে ১৯ আগস্ট। মাত্র ১ মাস আগে রাজ্যে যে ভূমিকম্প হয়েছে তার আফটারশক এখনও চলছে। টালিগঞ্জ, নাকতলা, বেলঘরিয়া, বোলপুর লন্ডভন্ড। চেতলা, কেশপুর, মধ্য হাওড়া, হাবড়া, দমদমে মৃদু কম্পন। কম্পন আরও অনেক জায়গায়। যদিও তা রিখটার স্কেলে ধরা পড়ছে না। এপিসেন্টার সম্পর্কে অনুমান করা হলেও এখনও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। ঠিক কোথায় গিয়ে থামবে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। কারণ অতীতই তো আমাদের শিখিয়েছে সেটিং অতি বিষম বস্তু। তাই কোনও একজনকে ‘জুতো ছুঁড়ে’ বা কাউকে ‘গোরু চোর’ বলে গায়ের ঝাল মিটলেও অন্য কোনও সুরাহা হবে না। এই তদন্ত আদৌ কোনও গন্তব্যে পৌঁছাবে নাকি অশ্বডিম্ব প্রসব করবে তা সময়ের হাতেই ছাড়া থাক।