E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ৬ ফাল্গুন, ১৪২৭

জেলায় জেলায় সমাবেশ মিছিলের উদাত্ত আহ্বান

● নির্বাচনে তৃণমূল-বিজেপি উভয়কে পর্যুদস্ত করো ● ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড চলো


পশ্চিম বর্ধমানে কাঁকসার সমাবেশে বলছেন সূর্য মিশ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের অপশাসনের অবসান ঘটাও, হিংস্র সাম্প্রদায়িক বিজেপি-কে দূর হটাও এবং বাম-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্প গড়ার লক্ষ্যে ব্যাপক অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করো - এই স্লোগানকে সামনে রেখেই আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই সমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে এখন জেলায় জেলায় মিছিল-সমাবেশে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গ‍‌নে নতুন আবহ সৃষ্টি হচ্ছে।

সিপিআই(এম)-সহ বামপন্থীদের আহ্বানে এই কর্মসূচিগুলিতে রাজ্যের নানা প্রান্তে লালপতাকার প্লাবন বইতে দেখা যাচ্ছে। আবার কোথাও বামপন্থী ‍‌ও সহযোগী দলগুলির সাথে কংগ্রেস দলের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে বাম-গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যের জোরালো বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী পদক্ষেপ ও অপশাসনে উপেক্ষিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া, বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া প্রতিনিয়ত কেড়ে নেওয়া হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার। একইসঙ্গে কর্মহীনতা-তীব্র বেকারি জনজীবনে সঙ্কট তৈরি করছে। বিশেষকরে কেন্দ্রের সরকার উদারীকরণ ও বেসরকারিকরণের নীতির মধ্যদিয়ে দেশের অর্থ‍‌নৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে মারাত্মক আঘাত নামিয়ে আনছে। একের পর এক জনবিরোধী নীতি, বিশেষকরে সর্বশেষ কেন্দ্রের সর্বনাশা কৃষি আইন, শ্রমকোড ইত্যাদির মধ্য দিয়ে প্রকট হয়েছে এই সরকার কীভাবে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষায় মগ্ন। এসবের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে। কৃষি ও কৃষক বিরোধী কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি সীমান্তে লক্ষ-অযুত কৃষকের অবস্থান-বিক্ষোভের রেশ ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। এ রাজ্যেও কৃষকদের প্রতিবাদ-কর্মসূচি ব্যাপক সাড়া ফেলছে।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, এরাজ্যে তৃণমূল সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি, গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপের ফলে যখন জনমানসে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ পুঞ্জিভূত হচ্ছে, তখন জনরোষ থেকে নিজেদের বাঁচাতে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়করা দলে দলে ভিড় জমাচ্ছেন সাম্প্রদায়িক বিজেপি দলে। অন্যদিকে ছলে বলে কৌশলে এরাজ্যের ক্ষমতা দখল করার লক্ষ্য নিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক বিজেপি নানা অনৈতিক খেলায় মত্ত হয়েছে। দুই দলের এই নীতিহীন অবস্থান পরিবর্তনের জেরে রাজনীতির অঙ্গন নানাভাবে কলুষিত হচ্ছে। তাই আজ রাজ্যজুড়ে সাধারণ মানুষের রুটি-রুজির সমস্যা সমাধান সহ দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে প্রচার আন্দোলন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। পাশাপাশি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জনস্বার্থবিরোধী, স্বৈরাচারী তৃণমূল সরকারের অবসান ঘটিয়ে এবং সাম্প্রদায়িক বিজেপি-কে পর্যুদস্ত করে বাম-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্পের সরকার গড়ার প্রস্তুতিতে সাধারণ মানুষের সমর্থনও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

এই লক্ষ্য নিয়েই ১৪ ফেব্রুয়ারি সিপিআই(এম)’র কাঁকসা ১ এবং কাঁকসা ২ এরিয়া কমিটির ডাকে কাঁকসার বামুনাড়া গ্রামের ময়দানে সুবিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্গাপুর-শিবপুর রোডের ধারে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিপুল অংশের মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল উপচে পড়েছিল। কাঁকসার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসীরাও এসেছিলেন দলে দলে।

এই সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র বলেছেন, বাংলার মাটিতে তৃণমূলকে হারাতে পারলে এবং বিজেপি-কে তাড়াতে পারলে দেশ থেকে বিজেপি-কে হটানো হবে কেবল সময়ের অপেক্ষা। রাজনৈতিকভাবে মানুষকে জোটবদ্ধ করে নির্বাচনী সংগ্রামে জয়ের বাস্তবতা সম্পর্কে সূর্য মিশ্র বলেছেন, ইতিহাস দাবি করছে এ‍‌ই ঐক্যের। শুধু বামপন্থীরা এই লড়াই করতে পারবে না, তাই আমরা সহযোগীদের নিয়েছি, কংগ্রেসকে নিয়েছি, আরও অন্যান্য দলের সঙ্গেও কথা বলছি। এনসিপি, আর‍‌জেডি সবাইকে চাইছি। ব্রিগেডের সমাবেশে সীতারাম ইয়েচুরি এবং রাহুল গান্ধীকে চেয়েছি। তারসঙ্গে তেজস্বী যাদবকে চেয়েছি। তেজস্বী যাদবের দলের সঙ্গে তৃণমূলের ফারাক আছে। আরজেডি কখনো তৃণমূলের মতো বিজেপি’র কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। এছাড়াও তপশিলি জাতি, আদিবাসী, অন্যান্য অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু অংশের যাঁরা বৈষম্যের শিকার সেইসব সামাজিক শক্তিকেও চাইছি। আমাদের বিকল্প নীতির কথা বলে মানুষকে জয় করতে পারব, এক‍‌জোট করতে পারব - এই বিশ্বাস আমাদের আছে।

এদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টি নেতা বীরেশ মণ্ডল। বক্তব্য রাখেন পার্টির পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি। উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী, বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সন্ত্রাসের আগল ভেঙে হুগলির পুরশুড়ায় বামপন্থী ও কংগ্রেসের যৌথ মিছিলে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। এদিন দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার মিছিল এবং মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। এই মিছিল পুরশুড়ার চিলাডাঙি থেকে শুরু হয়ে গোপীমোহনপুর, ঘোলদিগরুই হয়ে ৬ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে বালিপুর বাজারে পৌঁছায়। মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, পার্টির হুগলি জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য সুদর্শন রায়চৌধুরী, কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় চ্যাটার্জি প্রমুখ। মিছিল যত এগিয়েছে, মিছিলের অবয়ব তত বৃদ্ধি পেয়েছে।

মিছিল শেষে বালিপুর বাজারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিমান বসু বলেন, আমরা তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছি। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন বোঝাপড়া হয়েছে, কিছু বাকি আছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন এক শক্তি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। সত্যিকারে তারা সেকুলার রাজনীতি নিয়ে চলতে চাইছে। বামপন্থীরা, কংগ্রেস আর এই নতুন সংগঠন মিলে আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যাচারী সরকারকে আমরা রেড কার্ড দেখিয়ে বলতে চাই যাও, বেরিয়ে যাও। এই কাজ করতে শুধুমাত্র হালকা স্লোগানে হবে না, মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে।

খানাকুলে মহামিছিলে বিমান বসু, আবদুল মান্নান, সুদর্শন রায়চৌধুরি, দেবব্রত‍‌ ঘোষ সহ নেতৃবৃন্দ।

১৪ ফেব্রুয়ারি হাওড়া দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের ডাকে বেলেপোল মোড় থেকে একটি সুসজ্জিত মিছিল ছয় কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে চুনাভাটিতে শেষ হয়। এই মিছিলে অংশনেন বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা সুজয় ঘোষ, কংগ্রেস নেতা পলাশ ভাণ্ডারি প্রমুখ। মিছিলের আগে এক সংক্ষিপ্ত সভায় সুজন চক্রবর্তী বলেন, বাংলার রাজনীতিকে কলুষিত করছে তৃণমূল-বিজেপি। বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিকে মানুষের কাছে বিকল্পের বার্তা নিয়ে পৌঁছাতে হবে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচ‍‌নে পশ্চিমবাংলায় বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার বামপন্থীদের দ্বারাই গঠিত হবে।

এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে বাম-কংগ্রেসের আহ্বানে এক মহামিছিলে পা মেলান কয়েক হাজার মানুষ। রায়দিঘির কাছারি মোড় থেকে কোম্পানির ঠেক পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার পথ জুড়ে দৃপ্ত মিছিলের সাক্ষী থাকেন রায়দিঘির মানুষ। এদিনের মহামিছিলের পুরোভাগে ছিলেন সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী, পার্টিনেতা কান্তি গাঙ্গুলি, রামশংকর হালদার, দেবাশিস দে, জয়দেব পাইক প্রমুখ। এদিন মহামিছিল শেষে একটি সভায় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

তৃণমূলের সন্ত্রাস ও ফতোয়াকে উপেক্ষা করে দৃপ্ত জাঠা সংগঠিত হলো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। এদিন মোহনপুর ব্লকের শ্রীরামপুরের মদন মোড় থেকে ১২ কিলোমিটার ব্যাপী দীর্ঘ মিছিল ১৭টি মৌজার ২৪টি বুথ ধরে সংগঠিত হয়।

এছাড়া নারায়ণগড় ব্লকের বেলদার রানিসরাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২টি পদযাত্রা ২১ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে। একটি পদযাত্রা হয়েছে রানিসরাই থেকে নইপাড়, অন্যটি হয় বাবলপুর থেকে কুটকি। খড়গপুরের গ্রামীণ ব্লকের গোপালী‍তেও ব্রিগেড সমাবেশকে সফল করতে মিছিল ও প্রচারসভা সংগঠিত হয়েছে।

পার্টির অশোকনগর শহর এরিয়া কমিটির ডাকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-বিজেপি-কে পর্যুদস্ত করা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে বিশাল সমাবেশ হয়। স্থানীয় মিলন সঙ্ঘের মাঠের এই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন পার্টি নেতা সুশান্ত ঘোষ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সত্যসেবী কর, গোপাল দত্ত। সভাপতিত্ব করেন বাবুল কর।