৫৮ বর্ষ ২৭ সংখ্যা / ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ৬ ফাল্গুন, ১৪২৭
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সংস্কৃতি কর্মীদের আহ্বানে সেমিনার
সংবাদদাতাঃ সৌম্যদীপ রাহা
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, দুপুর ৩টায়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীদের আহ্বানে বারুইপুর, পদ্মপুকুর সিআইটিইউ হলে - ‘‘সময়ের সঙ্কট উত্তরণের পথ, সাংস্কৃতিক কর্মীদের ইতিকর্তব্য’’ বিষয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আলোচক হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন ডঃ পবিত্র সরকার এবং অধ্যাপক অঞ্জন বেরা। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (পঃবঃ)-এর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার শিল্পীরা ‘এসো মুক্ত করো’ সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সেমিনারের সূচনা করেন। সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে, জেলার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যমতম নেতৃত্ব রঞ্জন সেন বলেন, ‘মানুষের উপর পরিকল্পিতভাবে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সঙ্কটকে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কখনই সঙ্কট থেকে মুক্ত হতে পারে না। উদারনৈতিক অর্থনীতি মানুষের মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে চৈতন্যের বিলোপ ঘটাচ্ছে। তীব্র হচ্ছে শ্রেণি বিভাজন। যে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি আমরা দাঁড়িয়ে তাঁর উত্তরণের পথে আমাদের ইতিকর্তব্য স্থির করার জন্য এই সেমিনার।’
এরপর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার তাঁর মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন - ‘সারা পৃথিবী জুড়েই ফ্যাসিজিমের একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কোথাও বর্ণ আবার কোথাও কোনও এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে চলছে শোষণ। ভোগবাদী সংস্কৃতিতে বিজ্ঞাপনকেন্দ্রিক জীবন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়ে উঠছে শাসকশ্রেণি। তবে আশার আলো এই যে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দিকে দিকে সংগঠিত হচ্ছেন সংস্কৃতি কর্মীরা। তাঁরা এখনও রাস্তাতেই আছেন। জনসাধারণের সাথে একাত্ম হয়েই তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। এই কাজ করাই এখন আমাদের ইতি কর্তব্য।
অধ্যাপক অঞ্জন বেরাও তাঁর মূল্যবান আলোচনায় সংস্কৃতি কর্মীদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, চলতি সময়ের নয়া-উদারবাদে ভোগবাদী সংস্কৃতির যে আক্রমণ, যার ফলে আজ ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত নেমে এসেছে। আহত হচ্ছে শুধু দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাই নয়; তার সাথে আহত হচ্ছে ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি। সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা তার চরিত্র পালটেছে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বামপন্থীদের যে ঐক্যের সাধনার ব্রত তা প্রতিষ্ঠিত করাই আজ আমাদের চ্যালেঞ্জ। নয়া-উদারবাদ আগ্রাসী নীতিতে বিশ্বাসী, কোনো রকম সমঝোতায় নয়। তা আরও স্পষ্টই হচ্ছে এই সময়ে। এই শাসক দায়বদ্ধ কর্পোরেটদের কাছে, নাগরিকদের কাছে নয়। অজস্র চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা আজ। এই সমস্ত চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করাই হবে আমাদের ইতি কর্তব্য। সচেতন গণতান্ত্রিক সমস্ত অংশের মানুষকে সাথে নিয়ে এ লড়াই লড়তে হবে আমাদের।
তাঁদের আলোচনায় সমৃদ্ধ হন উপস্থিত সকলেই। সেমিনারে সঙ্গীত পরিবেশন করেন অনন্ত বৈদ্য এবং প্রদীপ দত্ত। উপস্থিত ছিলেন জেলার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম প্রাবন্ধিক ও কবি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়, ভারতীয় গণনাট্য্ সংঘ (পঃবঃ)-এর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক অমিয় চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ’র দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বনাথ রাহা, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী লোক ও শিল্পী সংঘ’র দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক শিশির হালদার সহ জেলার বহু বিশিষ্ট মানুষ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (পঃবঃ)-এর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সভাপতি বিভাস চক্রবর্তী।